আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
296 views
in সালাত(Prayer) by (22 points)
closed by
সব মাযহাব মিলিয়ে
closed

1 Answer

0 votes
by (660 points)
selected by
 
Best answer

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

উত্তর-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামায পড়তেন। এটি ছিল নবীজীর সাধারণ অভ্যাস। বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে তাহাজ্জুদের রাকাতসংখ্যা কম-বেশি হত। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন। এক রাকাত বিতর পড়া নবীজী থেকে প্রমাণিত নয়। যে সব রেওয়ায়াতে পাঁচ, সাত বা নয় রাকাতের কথা এসেছে, তাতেও বিতর তিন রাকাতই। বর্ণনাকারী আগে-পরের রাকাত মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। হাদীসের রেওয়ায়াতসমূহে ব্যাপকভাবে বিতর ও তাহাজ্জুদের সমষ্টিকে ‘বিতর’ বলা হয়েছে। এটি একটি উপস্থাপনাগত বিষয়। মূলত বর্ণনাকারী ও ব্যখ্যাকারীদের উপস্থাপনাগত ভিন্নতার কারণেই বিভিন্ন অভিমত সৃষ্টি হয়েছে।

নবীজী বিতর তিন রাকাত পড়তেন। এটিই তাঁর অনুসৃত পন্থা। নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত।

আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।-সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩

সা‘দ ইবনে হিশাম রাহ. বলেন, হযরত আয়েশা রা. তাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮; হাদীস ১৬৯৮; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৫১ (বাবুস সালাম ফিল বিতর) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৪, হাদীস ৬৯১২; সুনানে দারাকুতনী ২/৩২, হাদীস ১৫৬৫; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১

এই হাদীসটি ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ রাহ.ও ‘মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।' ইমাম হাকেম (রহ.) তা বর্ণনা করার পর বলেন- هذا حديث صحيح على شرط الشيخين অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. ‘তালখীসুল মুস্তাদরাক’-এ হাকেম রাহ.-এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। (মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮০)

এই হাদীস দ্বারা একদিকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন তেমনি একথাও প্রমাণিত হয় যে, তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে। যদি দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করার নিয়ম না থাকত তাহলে সালাম করার বা না করার প্রসঙ্গতই আসত না। কেননা সালাম তো ফেরানো হয়ে থাকে।

ইমাম ইবনে হাযম যাহেরী রাহ. ‘মুহাল্লা’ কিতাবে বিতরের বিভিন্ন পদ্ধতির মাঝে আলোচিত পদ্ধতিটিও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিতর তিন রাকাত পড়া হবে। দ্বিতীয় রাকাতে বসবে এবং (তাশাহহুদ পড়ে) সালাম ফেরানো ছাড়াই দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাত পড়ে বসবে, তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফেরাবে, যেভাবে মাগরিবের নামায পড়া হয়। এটিই ইমান আবু হানীফা রাহ.-এর মত। এর দলিল হচ্ছে, সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস, যাতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। (মুহাল্লা ইবনে হাযম ২/৮৯)

সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর রেওয়ায়াতটি আরও একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, - كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهن অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শুধু সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। হাকেম রাহ. এই রেওয়ায়াতের পর লেখেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদীনাবাসীগণ তা গ্রহণ করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮১

(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন- আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। (নানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯)

চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামায কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত, কখনো দশ রাকাত পড়তেন; কিন্তু মূল বিতর সর্বদা তিন রাকাতই হত।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ফাতহুল বারী ৩/২৬) এ লেখেন- আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব।

(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এক রাতে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমূনা রা.-এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন বর্ণনা করেছেন। তাঁর শাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। আমি এখানে সুনানে নাসায়ী ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করছি- ‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে শযা্য থেকে উঠলেন, এরপর মেসওয়াক করলেন, এরপর দুই রাকাত পড়লেন, এরপর শুয়ে গেলেন। তারপর পুনরায় শয্যা ত্যাগ করলেন, মেসওয়াক করলেন, অযু করলেন এবং দুই রাকাত পড়লেন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়লেন। এরপর দুই রাকাত পড়েন। (সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯, হাদীস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদীস ৩২৭১; তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২)

(৫) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর, যিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর বিশিষ্ট শাগরেদ, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন- 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন, প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। (সুনানে দারেমী ১/৩১১, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী ১/৬১, হাদীস ৪৬২; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯; হাদীস ১৭০২; তহাবী শরীফ ১/২০১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১২, হাদীস ৬৯৫১)

ইমাম নববী রাহ. ‘আলখুলাসা’ কিতাবে উক্ত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন। -নাসবুর রায়াহ, জামালুদ্দীন যাইলায়ী ২/১১৯ বিতরের তিন রাকাতে উপরোক্ত তিন সূরা, এক এক রাকাতে এক এক সূরা, পড়া সম্পর্কে একাধিক সাহাবী থেকে রেওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিটি রেওয়ায়াত প্রমাণ করে যে, বিতরের নামায তিন রাকাত। মোটকথা, বিতরের নামায তিন রাকাত হওয়ার বিষয়ে হাদীস ও সুন্নাহর বহু প্রমাণা রয়েছে এবং অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমলও তাই ছিল।

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সাবেত বুনানী রাহ., বলেন, আমাকে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাহ. বলেছেন, হে আবু মুহাম্মাদ! (সাবেত রা.-এর কুনিয়াত-উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে নিয়েছেন। তুমি শেখার জন্য আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য কাউকে পাবে না। একথা বলে তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করেন। এরপর ছয় রাকাত পড়েন, তা এভাবে যে, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন এবং সবশেষে সালাম ফেরান। -মুসনাদে রুয়ানী, তারীখে ইবনে আসাকির; ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন, এই হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য (কানযুল উম্মাল ৮/৬৬-৬৭, হাদীস ২১৯০২ ‘আলবিতরু মিন কিতাবিস সালাত, কিসমুল আফআল)

হানাফী মাযহাবের ন্যায় অন্যান্য মাযহাবের অধিকাংশ আমল বিতর নামাজ তিন রাকাত। তবে পদ্ধতিতে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। যথা-

মালেকী মাযহাব মতে, বিতরের নামাজ তিন রাকাত। প্রথমে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে অতঃপর এক রাকাত আরেক সালামে সমাপ্ত করবে। পূর্বে দুই রাকাতের সাথে পরের রাকাত মিলিয়ে পড়া মাকরুহ।

শাফেয়ী মাযহাব মতে, সর্বনিম্ন বিতিরের পূর্ণাঙ্গ পরিমাণ তিন রাকাত। এক রাকাত বিতর পড়া অনুত্তম। সে দুইভাবে নামাজ আদায় করতে পারে। প্রথমত দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে। অতঃপর এক রাকাত পরে পুনরায় সালাম ফিরাবে। অথবা এক তাশাহুদ এর মাধ্যমে তিন রাকাত আদায় করবে।

হাম্বলী মাযহাব মতে, বিতরের পূর্ণাঙ্গ পরিমাণ তিন রাকাত। এক রাকাত বিতর পড়া অনুত্তম। সে দুইভাবে নামাজ আদায় করতে পারে। প্রথমত দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে। অতঃপর এক রাকাত পরে পুনরায় সালাম ফিরাবে। অথবা দুই তাশাহুদ ও এক সালামের মাধ্যমে তিন রাকাত আদায় করবে। যেমনটি হানাফিগণ করে থাকেন। এমনিভাবে এক রাকাত বিতর পড়াও তার জন্য সহিহ হবে।

আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

উত্তর প্রদান

মুফতি মুহাম্মাদ মাহবুবুল হাসান

ফাতওয়া বিভাগ, IOM

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...