আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
134 views
in কুরবানী (Slaughtering) by (17 points)
মুহতারাম, আমি পারতপক্ষে চেষ্টা করব ভালো মানুষের সাথে কুরবানি করার । কিন্তু কারো মনের অবস্থা আমি  জানি না, রিয়া বা গোশত-খাওয়ার উদ্দেশ্য কার আছে কার নেই তা বলা মুশকিল। কিন্তু যদি অন্যের কারণে আমার কুরবানির সওয়াব বাতিল হয়ে যায় ব্যাপারটা দুঃখজনক না? শরিকে কাজ করলে কি অন্যের নিয়তের উপর আমার আমলনামা নির্ভর করে? যেমনঃ ৭ জনে একটা মসজিদ বানালে ১ জনের নিয়তে যদি গলদ থাকে তাহলে কি বাকি ৬ জনের দান বরবাদ হয়ে যায়?
আর এই যে কুরবানিতে বলা হচ্ছে ১ জনের নিয়তে গলদ থাকলে বাকিদের কুরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। আমার প্রশ্ন হলো যদি সকলেরই নিয়তই বিশুদ্ধ হয় তাহলে প্রতিজনে কি ৭ ভাগের সওয়াব পাবে নাকি নিজের ভাগের অংশেরই সওয়াব পাবে? যদি নিজের সওয়াবই পায়, তাহলে সওয়াবের বেলায় অন্যদের হিসাব আসছে না অথচ পাপের বেলায় অন্যের পাপের ভাগীদার কেন হতে হচ্ছে?

সত্যি বলতে কী, আমার আকীদায় কোন সমস্যা নেই, আমি কওমীপন্থী মানুষ এবং মাযহাব, ইজমা-কিয়াস সবই মানি। কিন্তু এই একটা মাসলা আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকে না। কুরআন-হাদিসে অনেক কিছুই আছে যেটা মাথায় না ঢুকলেও মেনে নিতে হয়, এর নামই ঈমান। কিন্তু কিয়াস তো সবসময় আকল দ্বারা সিদ্ধ হয়। যদি এটা হাদিসেই না থাকে তাহলে আমার মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটা আকল দ্বারা সিদ্ধ হচ্ছে না। কাজেই এটা কিয়াস হয়ে থাকলেও কিয়াসটা ভুল হয়েছে। কেউ যদি ঘুমের ঘোরে আল্লাহকে গালি দেয়, বউকে তালাক দেয়, প্রাণ বাঁচাতে হারাম খায়, কুফর, শিরক করে তার সেগুলো ধর্তব্য হয় না যেখানে, সেখানে কুরবানির মত একটি ওয়াজিব, মতান্তরে সুন্নাতে মুয়াক্কাদার ক্ষেত্রে এই মাসলাটা আমার কাছে বিবেক পরিপন্থী মনে হয়।


আর মুহতারাম, আপনি বলেছেন, গরু-কুরবানির জন্য আমি বাধ্য না । আমি তো ছাগল কুরবানিও করতে পারি। মুহতারাম, গরু কুরবানি তো জায়েজ আছে, একাধিক ভাগ দেওয়াও জায়েজ আছে। মাসলার স্বার্থে ধরে নেন যে পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি গরু কুরবানি দিতেই একরকম বাধ্য হয়ে পড়েছি, এবং একটা আস্ত গরু দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভবও নয়। বিভিন্ন কারণে এমন হতেই পারে। আমি উদাহরণ দিলাম না, কথা লম্বা হবে তাই। কিন্তু অংক করার মত মাসলাতেও তো অনেক কিছু ধরে নিয়ে মাসলা বের করা হয়। এটাও তেমন ধরে নেওয়া যাক।
সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি এরকম সিরিয়াস কিছু, নাকি শুধু সতর্কতার জন্য বলা, বাস্তবে অন্যের নিয়তের কারণে নিজের কুরবানি বাতিল হবে না?

1 Answer

0 votes
by (709,920 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
এ বিষয়ে আপনাকে ইতিপূর্বে কয়েকবার জবাব দেয়া হয়েছে। সুতরাং আবার জবাব দেওয়ার পূর্বে আপনার সাথে মুবাইলে কথা বলতে চাই। আমার নাম্বার প্রুফাইলে পাবেন। না পাইলে কমেন্ট করবেন। 
আপনার প্রশ্নের জবাব পেতে কিছুক্ষণ দেড়ী হবে। এ জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

https://www.ifatwa.info/18148 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে, 
কুরবানির পশু যদি গরু কিংবা উট বা মহিষ হয় তাহলে তাতে কয়েকজন শরীক হয়ে কুরবানি দিতে পারবে।তবে বকরিতে অন্য কেউ শরীক হতে পারবে না।

একটি উট বা গরু মহিষে সাতজন পর্যন্ত শরীক হওয়া যায়। সাহাবায়ে কেরাম হাদী-তে শরীক হয়েছিলেন।

হযরত জাবের রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رضي الله عنهما قَالَ : نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ، وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ- 
وفي رواية : عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ : حَجَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَحَرْنَا الْبَعِيرَ عَنْ سَبْعَةٍ ، وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ .
তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার বছর (৬ষ্ঠ হিজরী) আমরা রসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে প্রতি সাতজনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং প্রতি সাতজনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছি।(সহীহ মুসলিম-১৩১৮)

হযরত জাবের রাযি থেকে বর্ণিত
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ ، وَالْجَزُورُ - أي : البعير - عَنْ سَبْعَةٍ )
তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,গরু সাতজনের পক্ষ্য থেকে যথেষ্ট হবে।এবং উট ও সাতজনের পক্ষ্য থেকে যথেষ্ট হবে।(সুনানু আবি-দাউদ-২৮০৮)

ইমাম নববী রাহ বলেন 
قال النووي في "شرح مسلم" :
" فِي هَذِهِ الأَحَادِيث دَلالَة لِجَوَازِ الِاشْتِرَاك فِي الْهَدْي , وَأَجْمَعُوا عَلَى أَنَّ الشَّاة لا يَجُوز الاشْتِرَاك فِيهَا
এই সমস্ত হাদীস শরীর হয়ে কুরবানি জায়েয হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে।এবং ফুকাহায়ে কেরাম একমত যে,বকরীতে শরীকানা জায়েয হবে না।

وإن كان كل واحد منهم صبيا أو كان شريك السبع من يريد اللحم أو كان نصرانيا ونحو ذلك لا يجوز للآخرين أيضا كذا في السراجية.
তরজমাঃযদি সাত শরীকের সাতজনই শিশু হয়,বা একজন গোস্তের নিয়তে শরীক হয় বা একজন খৃষ্টান হয়, তাহলে অন্যান্য শরীক(যাদের নিয়্যাত কুরবানি করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন )তাদের কারো কুরবানি সহীহ হবে না, বরং সবার কুরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া;৫/৩০৪) (শেষ)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
হানাফি ফিকহে একজন শরীকানের কুরবানিতে বেজাল থাকলে বাকী শরীকানের কুরবানি হবে না। তবে অন্যান্য ফিকহে হবে। এটা ফুকাহায়ে কেরামের ইজতেহাদ দ্বারা রচিত। সুতরাং এখানে আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞান প্রদর্শন করা কখনো জায়েয হবে না। 

ويصح الاشتراك في الأضحية سواء كان ذلك في ثمنها أو في ثوابها. باتفاق ثلاثة، وخالف المالكية

(আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ-১/৬৪৮)



لا يشارك المضحي فيما يحتمل الشركة من لا يريد القربة رأسا، فإن شارك لم يجز عن الأضحية، وكذا هذا في سائر القرب إذا شارك المتقرب من لا يريد القربة لم تجز عن القربة، ولو أرادوا القربة - الأضحية أو غيرها من القرب - أجزأهم سواء كانت القربة واجبة أو تطوعا أو وجب على البعض دون البعض، وسواء اتفقت جهات القربة أو اختلفت بأن أراد بعضهم الأضحية وبعضهم جزاء الصيد وبعضهم هدي الإحصار وبعضهم كفارة عن شيء أصابه في إحرامه وبعضهم هدي التطوع وبعضهم دم المتعة أو القران وهذا قول أصحابنا الثلاثة رحمهم الله تعالى، وكذلك إن أراد بعضهم العقيقة عن ولد ولد له من قبل، كذا ذكر محمد - رحمه الله تعالى - في نوادر الضحايا، ولم يذكر ما إذا أراد أحدهم الوليمة وهي ضيافة التزويج وينبغي أن يجوز، وروي عن أبي حنيفة - رحمه الله تعالى - أنه كره الاشتراك عند اختلاف الجهة، وروي عنه أنه قال: لو كان هذا من نوع واحد لكان أحب إلي، وهكذا قال أبو يوسف - رحمه الله تعالى -، وإن كان كل واحد منهم صبيا أو كان شريك السبع من يريد اللحم أو كان نصرانيا ونحو ذلك لا يجوز للآخرين أيضا كذا في السراجية.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...