তাওয়াক্কুল হল, মানুষ কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবে আর ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করবে এবং তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখবে।
তাওয়াক্কুল অর্থ হল,আল্লাহর উপর ভরসা করা।তাওয়াক্কুলের পদ্ধতি হল,
কাজে নেমে আল্লাহর উপর ভরসা করা যে,আল্লাহ আমাকে এ কাজের মাধ্যমে খাওয়াবেন।
যেমন নদীতে বড়শি ফেলে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করা যে,আল্লাহ চাহে তো মাছ ধরবে।
আরো জানুনঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ
‘ভরসা কর পরাক্রমশালী করুণাময়ের উপর।’ (সূরা শুআরা : ২১৭)
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ
ভরসা কর চিরঞ্জীবের উপর, যার মৃত্যু নেই। (সূরা ফুরকান : ৫৮)
★কোনো উপায় অবলম্বন না করে হাত গুটিয়ে বসে থেকে আল্লাহর উপর ভরসা করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থি, এটি তাওয়াক্কুল নয়।
হযরত ইয়াকুব আ.-এর একটি ঘটনা সূরা ইউসুফে বর্ণিত হয়েছে। চারদিকে দুর্ভিক্ষ। ইয়াকুব আ.-এর সন্তানেরা খাদ্য-শস্য সংগ্রহের জন্য মিসরে যাচ্ছেন। তারা ছিলেন বারো ভাই। ইয়াকুব আ. বললেন, তোমরা যখন শহরে প্রবেশ করবে তো বারো ভাই এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। কারণ, সবাই তো ইউসুফ আ.-এর ভাই। রূপ-সৌন্দর্যে তাঁর মতো না হলেও কিছু মিল তো থাকবে। এ করকম বারোজন যুবক যদি একসাথে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাহলে মানুষের বদনজর লেগে যেতে পারে। ইয়াকুব আ. বললেন, তোমরা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। এই কথাটা আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে উল্লেখ করেছেন। এটা হচ্ছে সতর্কতা। এ উপায় বাতলে দেওয়ার পর ইয়াকুব আ. একথাও বললেন যে, ‘‘তবে এর দ্বারা আমি আল্লাহর ফয়সালাকে রদ করতে পারব না। আমি তো একটি উপায় নির্দেশ করলাম। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যদি তোমাদের তাকদীরে কোনো ক্ষতি লিখে রাখেন তাহলে উপায় অবলম্বন করে সেই ক্ষতি থেকে তোমরা বাঁচতে পারবে না। ফয়সালা তো একমাত্র আল্লাহ তাআলারই। তিনি যার সম্পর্কে ইচ্ছা কল্যাণের ফায়সালা করেন, যার সম্পর্কে ইচ্ছা অকল্যাণের ফায়সালা করেন। তার ফায়সালাকে কেউ কোনোভাবেই রদ করতে পারবে না। এজন্য আমি তার উপরই ভরসা করছি এবং তাওয়াক্কুলকারীদের তার উপরই তাওয়াক্কুল করা উচিত।’’ তো আল্লাহর নবী আলাইহিস সালাম উপায় অবলম্বন করেছেন এবং আল্লাহর উপরে ভরসা করেছেন।
হাসান বসরী (রহ.) বলেন, ‘রিজিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে কোনো উপায়-উপকরণ অবলম্বন করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। যেমন—কোনো যানবাহনে আরোহণ করেই গন্তব্যস্থলে কেউ নিরাপদে পৌঁছে যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই; বরং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।’
ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘তাওয়াক্কুল হলো ইমানের অর্ধেক। আর দ্বিতীয় অর্ধেক হলো, আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য শরিয়ত সমর্থিত বৈধ উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়।’ তাই জীবনে চলার পথে আমাদের যেমন বৈধ উপায়-উপকরণ অবলম্বন করতে হবে। তেমনি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থাও রাখতে হবে। এই দুই জিনিসের সংমিশ্রণেই সফলতা অর্জন সম্ভব।
যদি আপনার ফজরের আগে ঘুম থেকে সাধারণত জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস না থাকে,তাহলে ঘড়ি/মোবাইল থাকলে সেটিতে এলার্ম দেওয়া আপনার উপর আবশ্যক।
এক্ষেত্রে এলার্ম না দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থি, এটি তাওয়াক্কুল নয়।