আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
411 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (9 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু উস্তাজ। প্রশ্নটা একটু বড় হবার কারণে আফওয়ান। উত্তর জানাটা আমার জন্য জরুরি     

আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার এবং আমার যাওজের অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। 

 

আমার যাওজের পড়াশোনা ঢাকায়। উনার পড়ালেখা শেষ হবার আরো ৪\৫ বছর রয়েছে। উনার পড়ালেখা শেষ হবার আগ পর্যন্ত আমার পরিবার আমার দায়িত্ব পালন করবেন ইনশাআল্লাহ। অর্থাৎ সকল প্রকার ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার আব্বুর। সুতরাং এ ৪\৫ বছর আমার বাপের বাড়িতেই আমার আব্বুর তত্ত্বাবধানে থাকতে হতে পারে। 

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগ পর্যন্ত আমি আমার শ্বশুরালয়ে আছি আমার যাওজের সাথে ইনশাআল্লাহ। 

 

বর্তমানে আমার মা বাবা এটি চাচ্ছেন না যে আমি কন্সিভ করি কারণ আমার এবং আমার যাওজের পড়ালেখা। কে বাবুকে দেখবে বাবু কীভাবে বড় হবে ইত্যাদি। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে দুনিয়াবি পড়াশোনার প্রতি তেমন আগ্রহী নই। আমার যাওজও আমার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী নন। 

 

এখন আমি কন্সিভ করতে চাচ্ছি ইনশাআল্লাহ কিন্তু আমার পরিবার উপর্যুক্ত চিন্তার কারণে আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন না। উনারা কোনো ভাবেই আমার কন্সিভ করার পক্ষে নন। কিন্তু আমি এটা ভেবে আগাতে চাচ্ছি যে যদি আল্লাহর ইচ্ছায় কন্সিভ করি তাহলে উনারা সেটা মেনে নিবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহই উনাদের মন বদলে দিবেন। 

 

আমার শ্বশুর শ্বাশুড়িও আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমার যাওজ চাচ্ছেন যতদিন না পর্যন্ত উনি নিজে আমার আর বাবুর দায়িত্ব নেবার জন্য কেপাবল হবেন ততদিন পর্যন্ত বার্থ কন্ট্রোল করতে। আর উনার চিন্তা এরকম যে উনি যখন ঢাকা যাবেন ইনশাআল্লাহ তখন যেকোন এক হালাল পন্থায়(যেমন- টিউশনি)  রুজি করে আমাকে ঢাকা নিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ আর তখন বাবু নেবার চিন্তা করবেন।    

 

এর আগ পর্যন্ত উনি চাচ্ছেন না আমি কন্সিভ করি। কারণ একে ত আমার পরিবার বিয়ের পরও আমার দায়িত্ব নিচ্ছেন আবার বাবু হলে সেও আমার পরিবারের তত্ত্বাবধানে থাকবে। তখন তারা বিষয়টি কীভাবে নিবেন, মেনে নিবেন কীনা ইত্যাদি চিন্তা ভাবনা করে উনি আগাতে চাচ্ছেন না। কিন্তু আমি খুব করে চাচ্ছি আমি কন্সিভ করি। 

 

এমন অবস্থায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা টা আর আমার যাওজের এই চিন্তাভাবনা এবং পদক্ষেপ কী জায়েজ হচ্ছে?                                            

1 Answer

0 votes
by (559,530 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে।

 রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة

“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে  সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণ  করা হয়।
,
এক.স্থায়ী পদ্ধতি–যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। 

আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)

দুই.অস্থায়ী পদ্ধতি– যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো), Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রকার শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত মাকরুহে তানযিহি।তবে শরীয়ত সম্মত নিম্নোক্ত প্রয়োজনে বৈধ রয়েছে।

(ক)মহিলা এত দুর্বল যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
(খ)মহিলা নিজ বাসস্থান থেকে এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপতত কোনো মনোবাসনা নেই।আবার নিজ বাসস্থানে আসতেও কয়েক মাস লেগে যাবে বা কয়েক মাসের প্রয়োজন।
(গ)স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক চূড়ান্ত নিম্ন পর্যায়ের,এমনকি উভয়ের অন্তরে বিচ্ছেদের চিন্তাভাবনা চলছে।
(ঘ)পূর্বের বাচ্চার সু-সাস্থ্যর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
(ঙ)স্থান-কালের ফাসাদ অর্থাৎ দ্বীনী পরিবেশের চূড়ান্ত পর্যায়ের অবনতির ধরুন বাচ্চা বদ-আখলাক বা অসচ্চরিত্র এবং মাতাপিতার বে-ইজ্জতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করলে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عن جابر قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب العزل

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)

★বিঃদ্রঃ
সম্পদ কমে যাবে বা মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে সমাজে লজ্জিত হতে হবে মনেকরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ কখনো বৈধ হবে না।

আল্লাহ বলেছেন, 

ولا تقتلوا أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً. 

‘’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি।নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ . 
“শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)

বিস্তারিত জানুনঃ 
,

★★★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
পড়াশোনার অজুহাতে বা চাকুরীর নেই,এই  জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি ইসলামে নেই। 
এটি মাকরুহে তানযিহি  হবে। 

উপরোক্ত বৈধ পদ্ধতির মধ্যে কোনো একটা যদি এখানেও পাওয়া যায়,যেমন যদি স্ত্রী এত ছোট বা দুর্বল যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
বা স্ত্রী নিজ বাসস্থান থেকে এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপাতত কোনো মনোবাসনা নেই।
বা তিনি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে,তাহলে এহেন ছুরতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
,
অন্যথায় মাকরুহে তানযিহি তথা অনুত্তম হবে।

★তবে স্থায়ী পদ্ধতি অবলম্বন করলে হারাম হবে।  
,
আরো জানুনঃ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...