আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
76 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
১.আস্সালামু আলাইকুম

স্বামী নিজের দ্বীন কে পরিপূর্ণ করতে। এবং দুইজন্য প্যাক্টিসিং হওয়ার লক্ষে বাচ্চাকে প্যাক্টিসিং ইসলামিক পরিবার দেওয়া লক্ষে বিয়ের পর বাচ্চা দেরিতে নেওয়া জায়েজ হবে কি না। রিযিকের ভয় না করে দুইজনের বোঝাপড়া বাড়ানোর লক্ষে সন্তান দেরিতে নেওয়া জায়েজ হবে কি না?

২.বিয়ের পর স্বামীর বাবা মাহরাম হয়ে যায় আমরা জানি।অন্য মাহরামের মত ওনার সামনেও যাওয়া যাবে। বিয়ের পর ওনি ছেলের বউকে বাচ্চা নেওয়া কথা বলে। ছেলের বউ ওনার ছেলেকে জানানোর পর ছেলে বাচ্চা নেওয়াতে  উপরোক্ত কারণে  দেরি করতে চাই। বাবা ও স্ত্রী অনুরোধে বেশি দেরি করবেনা এই কথা জানিয়েছে।  এই কথা কি ছেলের বাবাকে জানানো যাবে যেহেতু এটা স্বামী স্ত্রী একান্ত ব্যক্তিগত কথা৷ যা প্রকাশ্যে আনতে নিষেধ করা হয়েছে ইসলামে। বিয়ের দুইমাস পর বাচ্চা হয়নি বলে ওনি প্রথমে ব্যবহার খারাপ করে তারপর জানতে চাই না হওয়ার কারণ কি? ছেলের বউয়ের কাছে জানতে চাই কেনো হলনা,কি চিন্তা করেছে স্বামী স্ত্রী , কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে,ছেলে কিছু ব্যবহার করছে কি না বা ছেলের বউ  কিছু সেবন করছে কি না। আরো বলে বাচ্চা না নিয়ে স্বামী সাথে ফুরতি করা হয়েছে,সাময়িক মজা ওআনন্দ করা হয়েছে এইসব ঠিক হয়নি। এইসব কি একজন  শশুর ছেলের বউয়ের কাছ থেকে জানার অধিকার রাখে। ওনার বক্তব্য ওনি ছেলের বাবা। ছেলে, ছেলের বউ কি করছে রুমে, কি কি চিন্তা করছে সব কিছু জানার অধিকার রাখে। ছেলের বউকে জোর করা হয় বলতে। ওনি ফতুয়া দিয়েছে, বাচ্চা যদি না নিয়ে থাকা হয় তাহলে এই বিয়ে অবৈধ, স্বামী স্ত্রী পবিত্র সম্পর্ক হারম হয়ে গিয়েছে। ছেলের বউ তাদের, একান্ত বিষয়ে জানাতে অস্বীকার করায় ওনি ছেলের বউয়ের সাথে খারাপ আচরণ করছে। বলেছেন ফতুয়া দেখাতে কোন মুফতি সাহেবের তাহলে ওনি শান্ত হবে। রুমে ছেলের বাবা ছেলের বউয়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা স্বামী স্ত্রী একান্ত বিষয় জানার জন্য কথা বলে। কখনোও রুমে কেউ থাকে। কখনো বা থাকে না। ওরা একা রুমে ১/২/৩ঘন্টা কথা বলে। শশুর কথা বলে ছেলের বউ মাথা নিচু করে শুনেন। মেয়ে শরমে লজ্জায় কিছু বলেনা বলে ওনি বলে ওনার কাছে কোন কিছু গোপন রাখা যাবেনা। ওনার সাথে লজ্জার কিছুই নেই। এইসব বিষয়ে স্বামী স্ত্রী এখনো যথেষ্ট লজ্জা পাই কথা বলতে সেখানে একান্ত কথা বাইরের মানুষকে কিভাবে বলবে। ওনার শুরু থেকে পরিচালনা এমন ছিল যে স্বামী স্ত্রী বলে কিছু নেই৷ এটা ছাড়াও অন্য সববিষয়ে স্বামী -স্ত্রী-শশুর মিলে থাকতে হবে। ওনাকে সবাই বুঝাচ্ছে এটা ঠিক করছে না। কিন্তু ওনি কারো কথায় শুনেনা৷ বড় রাগারাগি বাড়াবাড়ি করছে। আর উওর চাইছে। আল্লাহর কাছে ধৈর্য্য ধরা হচ্ছে।
জানতে চাই, ছেলের বউয়ের সাথে কি এইভাবে এত গভীরে আলোচনা করা যাবে? এতে একজন পুরুষের ও মহিলার ইজ্জতের পর্দা খেলাফ হয় কিনা? মেয়ে খাস পর্দা করছে আলহামদুলিল্লাহ।
ওনার ফতুয়া অনুযায়ী কি বিয়ে অবৈধ বা হারম হয়েছে?মেয়ে জানতে চাই তাদের কি আসলেই গুনাহ হবে?

গৃহে শান্তির জন্য ওনাকে সব বলে দিতে হবে? বলে দিলে স্বামী স্ত্রী একান্ত বিষয় বলে তাহলে কি থাকবে?

ছেলের বাবা বলে এইসব সহ ছেলের বউয়ের সম্পূর্ণ অধিকার কি শশুরের থাকবে?( যেমন কোথাও যাওয়া, কার সাথে কথা বলা,কার সাথে সম্পর্ক রাখবে না রাখবে, বাড়ী বাড়ীকে ভুলে যেতে। এমন কি ছেলে তার বউ নিয়ে কতদূর যাবে হাটঁতে সীমানা দিয়ে দেওয়া,ঘুরতে ত যেতে পারবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।)ওনার অধিকার কতটুকু?
ওনি আমাদের কাছে সম্মানিত একজন ব্যক্তি। কিন্তু নিজের কাজের জন্য সম্মান নষ্ট করছে। তারপরও স্বামী বাবার সম্মান কিভাবে কত টুকু দিব এটা জানতে চাই।বাবা বয়সি লোকদের সাথে বেয়াদবি যেনো না করা হয় কিভাবে কি করব?

1 Answer

0 votes
by (677,640 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

https://ifatwa.info/9675/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,
ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে।

 রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة

“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে  সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণ  করা হয়।
,
এক.স্থায়ী পদ্ধতি–যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। 

আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)

দুই.অস্থায়ী পদ্ধতি– যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো), Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রকার শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত মাকরুহে তানযিহি।তবে শরীয়ত সম্মত নিম্নোক্ত প্রয়োজনে বৈধ রয়েছে।
(ক)মহিলা এত দুর্বল যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
(খ)মহিলা নিজ বাসস্থান থেকে এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপতত কোনো মনোবাসনা নেই।আবার নিজ বাসস্থানে আসতেও কয়েক মাস লেগে যাবে বা কয়েক মাসের প্রয়োজন।
(গ)স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক চূড়ান্ত নিম্ন পর্যায়ের,এমনকি উভয়ের অন্তরে বিচ্ছেদের চিন্তাভাবনা চলছে।
(ঘ)পূর্বের বাচ্চার সু-সাস্থ্যর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
(ঙ)স্থান-কালের ফাসাদ অর্থাৎ দ্বীনী পরিবেশের চূড়ান্ত পর্যায়ের অবনতির ধরুন বাচ্চা বদ-আখলাক বা অসচ্চরিত্র এবং মাতাপিতার বে-ইজ্জতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করলে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عن جابر قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب العزل

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)

★বিঃদ্রঃ
সম্পদ কমে যাবে বা মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে সমাজে লজ্জিত হতে হবে মনেকরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ কখনো বৈধ হবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 

ولا تقتلوا أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً. 

‘’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি।নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ . 
“শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,আজকাল যদিও সন্তান হত্যার পরিবর্তে নানাবিধ উপায়ে তাদের জন্মের পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, তবুও সন্তান জন্মানোর ফলে আর্থিক আশংকাজনিত ভুল ধারণা জন্মনিরোধের অন্যতম কারণ। 

সুতরাং এবিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে ভেবে চিন্তে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাতকে বরবাদ না করে দেই।

বিস্তারিত জানুনঃ 
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা হারাম হবেনা।
তবে এটি মাকরুহে তানযিহি তথা অনুত্তম হবে।
,
হ্যাঁ যদি উপরোক্ত বৈধ পদ্ধতির মধ্যে কোনো একটা যদি এখানেও পাওয়া যায়,যেমন যদি মহিলা এত দুর্বল যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
বা মহিলা নিজ বাসস্থান থেকে এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপতত কোনো মনোবাসনা নেই,বা স্থান-কালের ফাসাদ অর্থাৎ দ্বীনী পরিবেশের চূড়ান্ত পর্যায়ের অবনতির ধরুন বাচ্চা বদ-আখলাক বা অসচ্চরিত্র এবং মাতাপিতার বে-ইজ্জতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করলে অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা জায়েজ হবে।

(০২)
এগুলো স্বামী স্ত্রীর একান্ত গোপনীয় বিষয়। 
এগুলো কেহই জানার অধিকার রাখেনা।

শশুরের এহেন প্রশ্ন করার কোনো অধিকার নেই। এহেন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চুপ থাকতে হবে বা অন্য কোনো প্রসঙ্গ এনে এড়িয়ে যেতে হবে,বা অন্যত্রে চলে আসতে হবে। তবে বেয়াদবি করা যাবেনা।

স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের গোপন কথা সংরক্ষিত রাখা,পারিবারিক গোপন কথা সংরক্ষিত রাখা ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « إنَّ مِنْ أشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ القِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى الْمَرْأةِ وتُفْضِي إِلَيْهِ، ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا »

আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ সেই ব্যক্তি হবে, যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে এবং স্ত্রী তার সঙ্গে মিলন করে। অতঃপর সে তার (স্ত্রীর) গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়।’’
(মুসলিম ১৪৩৭, আবূ দাউদ ৪৮৭০, আহমাদ ১১২৫৮)

আরো জানুনঃ- 

ছেলের বউয়ের উপর শশুর শাশুড়ীর হক সংক্রান্ত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...