জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তে বিশেষ প্রয়োজনে,যখন স্বামী স্ত্রীর মাঝে বনিবনা কোনো ভাবেই সম্ভবপর হয়না,তখন এক তালাক দেওয়ার বিধান এসেছে।
বিনা কারণে তালাক প্রদাণ করা হারাম।এর শাস্তি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অবশ্যই পেতে হবে।
তালাক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত,
عن ابن عمر، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «أبغض الحلال إلى الله تعالى الطلاق»
অর্থ:রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাকের নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় হালাল হচ্ছে 'তালাক'।(আবু দাউদ-২১৭৮)
শরিয়তের পরিভাষায় প্রশ্নে উল্লেখিত জাতীয় শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷
সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)
,
হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ
وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.
احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية
সারমর্মঃ
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তুমি বিচ্ছিন্ন,তোমাকে ছেড়ে দিলাম,বাদ দিলাম,তোমাকে মুক্ত করে দিলাম,তুমি স্বামী খুজো,,,ইত্যাদি , এগুলো কেনায়া তালাক।
,
কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়।
কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়
الکنايات لا يقع الطلاق اِلا بالنية او بدلالة الحال.
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241
الشيخ نظام وجماعة من علماء الهند، الفتاوی الهندية، 1: 374، دار الفکر
কেনায়া শব্দ দ্বারা তালাক দিলে তালাক হয়নে,তবে যদি নিয়ত থাকে,বা দালালতে হাল তথা তালাকের আলোচনায় থাকে।
واما مدلولات الطلاق فهو مثل قوله اذهبى وقومى والحقى باهلك وما شاكلها اذا نوى بهذه الألفاظ يقع بائنا وان قال لم ارد به الطلاق او لم تحضره النية لا يكون طلاقا الخ (الفتاوى التاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل الخامس فى الكنايات-3/315، الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل الخامس فى الكنايات-1/375، البحر الرائق-3/30)
সারমর্মঃ উক্ত শব্দ গুলোর দ্বারা তালাকের নিয়ত থাকলে তালাক হবে।
অন্যথায় তালাক হবেনা।
★★প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্য "তোকে বাদ দিয়ে দিলাম"
"বিচ্ছিন্ন" বা অপর কাউকে স্ত্রী সম্বন্ধে বলে যে ""আমি তার সাথে সংসার করবোনা""
এগুলো কেনায়া তালাকের শব্দ।আর কেনায়া শব্দ দ্বারা তখনই তালাক পতিত হবে,যখন নিয়ত পাওয়া যাবে।নিয়ত পাওয়া না গেলে তালাক পতিত হবে না।স্বামী এক তালাকে নিয়ত করলে এক তালাক পতিত হবে,আর তিন তালাকের নিয়ত করলে তিন তালাকই পতিত হবে।
,
প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্য বারবার বলার দ্বারা যদি স্বামী প্রত্যেকবার তালাকের নিয়ত করে থাকে, তাহলে প্রত্যেকবার এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।
যেহেতু এগুলো অনেকবার বলেছে।
তাই এখানে প্রত্যেকবার বলার সময় তার নিয়ত কি ছিলো,সেটি দেখতে হবে।
যে কয়বার তালাকের নিয়ত ছিলো,সে কয় তালাক পতিত হবে।
,
তিন তালাকের কম পতিত হলে তাকে নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে পারবে।
তিন তালাক হয়ে গেলে তাকে নিয়ে আর কোনো ভাবেই সংসার জায়েজ হবেনা।
অন্যত্রে সেই স্ত্রীকে বিবাহ দিতে হবে।
,
স্বামীর সাথে এই ছুরতে তার বিবাহ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে
তার সাথে কোনো ভাবেই ঘরসংসার করা জন্য জায়েজ হবেনা।
যদি এর পরেও ঘর সংসার করা হয়,তাহলে যেনা হবে।
,
আর যদি উক্ত শব্দ বলার দ্বারা তালাকের নিয়ত না করে থাকে,বা সেটা তালাকের মজলিস না হয়,ঐ মজলিসে তালাক সম্পর্কেই আলোচনা না হয়ে থাকে, তাহলে কোন তালাকই পতিত হয়নি।