আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
219 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (16 points)
edited by

সেহরীর সময় আমাদের মাসজিদ-সমূহে হুজুর-রা পবিত্র কালামুল্লাহ্ শারীফ থেকে তিলাওয়াত করেন, দরুদ শারীফ পড়েন। 

আমার বোন আজ সেহরী খাওয়ার পর এক প্রসংগে বলেই ফেললো যে, (হুবহু তুলে ধরছি যদিও বলেছে সিলেটি ভাষায় আমি শুদ্দ্ব ভাষায় সেগুলি উপস্থাপন করছি)

"সেহরীর সময় ঘুম ভেংগে উঠতে ভালো লাগে না, আবার হুজুরেরা তিলাওয়াত শুরু করে দেন, আমার ভালো লাগে না " 

যা সিলেটি ভাষায় হয়, "ফতা বালা উঠতে ভাল্লাগেনা, আবার মোল্লা-ইন তে পড়া আরম্ভ করি দেইন,, আমার ভাল্লাগেনা"

এই কথাগুলো বলে। এই কথা গুলো বলার কারনে ওর ঈমানের কোনো ক্ষতি হবে কি?

(বি:দ্র: বোনের পরিচয়-

--বয়স ১৬+। শরীয়ত সম্পর্কে জ্ঞান নেই। এছাড়া অনেক সময় কি থেকে কি বলে  ফেলে ও নিজেই না জেনে অনেক কিছু বলে ফেলে, যা বলা ইসলামে অনুচিত। কিন্তু ও বলে ফেলে। এই কথা বললে যে কুফর হবে,,ওই কথা বললে যে শির্ক ,,, সে সম্পর্কে আমার বোন বুজেই না। মহান আল্লাহ্ তা'য়ালা পাক এর হুকুম হলে আপনারা খেয়াল করে থাকবেন যে, আমার বোন সম্পর্কে বিগত অনেক প্রশ্ন করেছি আপনাদের কাছে, মহান আল্লাহ্ তা'য়ালা পাক এর হুকুম হলে আপ্নাদের খেয়াল হবে। আবার পাগল নয়  আমার বোন। এই আরকি 

এইটা বলা যে কুফরি,,সেঈটা বলা যে শির্ক,, এইটা বলা যে কবীরা, সগীরা গুনাহ তা বুজে না,,না বুজেই বলে,,কিন্তু বাহ্যিক কোনো লোক দেখলে বলবে, "এই মেয়েটা কি কথা বলে এসব, এত বড় মেয়ে" কিন্তু  আমার বোন যে এগুলো অজ্ঞতার বা কুফরি কিংবা শির্ক কোন কথা বললে হয় তা না জানার কারনে বলে,, তা তো বাইরের লোক জানে না))

 

এই আরকি মহান আল্লাহ্ তা'য়ালার ওয়াস্তে জানাবেন,,উপোরক্যতে প্রশ্নের উল্লেখিত আমার বোনের কথায় ওর ঈমানের সমস্যা হবে কি না?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


প্রথমেই একটি মাসয়ালা স্পষ্ট জেনে নেইঃ
 
মাইকে এভাবে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করার নির্দেশনা ইসলামে নেই।
,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ

“যে ব্যক্তি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য। (বুখারী, অধ্যায়: সন্ধি-চুক্তি।)

আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে:

مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

“যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নাই তা প্রত্যাখ্যাত।” (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: বিচার-ফয়সালা)

★সাহরীর সময় মানুষ নিজস্ব কথাবার্তা, কর্ম ব্যস্ততা, সাহরী খাওয়া,ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। 

ছোটরা সহ অনেক অপারগ ব্যাক্তিগন সেই সময়ে ঘুমিয়ে থাকে, 
তার মাঝে মাইকে উচ্চ আওয়াজে কুরআনের তিলাওয়াত প্লে করা কিভাবে সঠিক কাজ হতে পারে?
,
কারণ আল্লাহ বলেন,

وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

“ আর যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা চুপ থাকো ও মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো যেন তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও।” (সূরা আ’রাফ: ২০৪)

কিন্তু এভাবে কুরআন তিলাওয়াত প্লে করা হলে কি আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করা হচ্ছে? অবশ্যই নয়। তাহলে এতে কি প্রকারান্তরে কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে না?

শরহুল মুনতাহা কিতাবে বলা হয়েছে:

لا يجوز رفع الصوت بالقرآن في الأسواق مع اشتغال أهلها بتجارتهم وعدم استماعهم له، لما فيه من الامتهان (شرح المنتهى)

“বাজারের মধ্যে মানুষ যখন ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকে এবং কুরআনে মনোযোগ সহকারে শুনতে পারে না তখন সেখানে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয নেই। কেননা এতে কুরআনের প্রতি অবমানা হয়।”

ইমাম বাইহাকী এই মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন:

فصل في رفع الصوت بالقرآن إذا لم يتأذ به أصحابه، أو كان وحده، أو كانوا يستمعون له
البيهقي في الشعب)

“অনুচ্ছেদ: যখন সঙ্গী-সাথীদেরকে কষ্ট না দেওয়া হবে অথবা যখন একাকী থাকবে এবং অন্যান্য লোকজন মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে তখন কুরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে আওয়াজ উঁচু করা।” (বাইহাকী, শুআবুল ঈমান)

শায়েখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল দাঃবাঃ লিখেছেনঃ        
এভাবে  মাইকে কুরআন প্লে করার কারণে আশেপাশে অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে অসুস্থ, শিশু এবং বাড়িতে যে সব মানুষ তাসবিহ, তাহলিল, জিকির, দুআ, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত করে ও ইসলামি বই পড়ে তারা ডিস্টার্ব অনুভব করে। এতে বাড়িতে অসুস্থ ও ছোট বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
,
এভাবে বাধ্য করে কুরআন তিলাওয়াত শুনানোর কারণে হয়ত কারো মনে কুরআন ও ইসলামের প্রতি বিরক্তি ও বিরূপ মনোভাবও সৃষ্টি করতে পারে।
হাদিসে পার্শবতী ব্যক্তির সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ-তাসবিহ ইত্যাদি ইবাদতে যেন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সে জন্য উচ্চ আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন:

عن أبي سعيدٍ قالَ اعتَكفَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليْهِ وسلَّمَ في المسجدِ فسمِعَهم يجْهَرونَ بالقراءةِ فَكشفَ السِّترَ وقالَ ألا إنَّ كلَّكم مُناجٍ ربَّهُ فلا يؤذِيَنَّ بعضُكم بعضًا ولا يرفعْ بعضُكم على بعضٍ في القراءةِ أو قالَ في الصَّلاةِ.

আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে (মসজিদে নববী) ইতিকাফ করছিলেন। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন, লোকেরা উঁচু স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করছে। তখন তিনি পর্দার কাপড় সরিয়ে তাদের লক্ষ্য করে বললেন, “মনে রাখবে, তোমাদের সবাই তার পালনকর্তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিমগ্ন রয়েছ। অতএব তোমাদের একজন অপরজনকে কষ্ট দিবে না এবং তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে (অথবা তিনি বলেছেন: সালাতের ক্ষেত্রে) একজন অপরজনের উপর আওয়াজ উঁচু করবে না।”
[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৩৩২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস: ১১৬৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১১৮৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩১০]

এসব কারণে এভাবে রাত-দিন মাইকে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত চালু রাখা মোটেও উচিৎ নয়।
,
আরো জানুনঃ 
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে  আপনার বোনের এসব কথা বলায় তার ঈমানের কোনো সমস্যা হবেনা।
তবে এই সময় উঠতে ভালো  লাগেনা,বলা পরিত্যাগ করতে হবে।
আর কুরআন তেলাওয়াত সংক্রান্ত তিনি যাহা বলেছেন,তাহা ঠিক।
এইভাবে মাইকে কুরআন তিলাওয়াত ইসলাম সমর্থন করেনা।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...