জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
নামাযে দ্রুত তিলাওয়াত করতে গিয়ে এক হরফের জায়গায় আরেক হরফ,বা এক বাক্যের স্থানে আরেক বাক্য,যার দ্বারা নামাজ নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়, নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ভুল হওয়ার কারনে উক্ত নামাজই হবেনা।
নামাজ নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অর্থ পরিবর্তন না হয়,তারপরেও উচ্চারণে মাকরূহ পর্যায়ের বিঘ্ন যদি ঘটে, তাহলে সেই নামাযও ত্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে।
মাকরুহ পর্যায়ের তিলাওয়াত করে নামাজ পড়াও ঠিক নয়, অর্থ যেনো পরিবর্তন না হয়, এমন ভাবেই কুরআন তেলাওয়াত করে তারাবীহ পড়তে হবে।
,
প্রশ্নে উল্লেখিত যুক্তির কারনে তারাতাড়ি পড়া ঠিক নয়,কারন এই তারাতাড়ি পড়ার কারনে নামাজেরই সমস্যা হচ্ছে,সুতরাং সমস্যা যুক্ত নামাজ না পড়ে সঠিক ভাবে নামাজ পড়তে হবে।
,
প্রয়োজনে যাদের সমস্যা হয়,তারা সুরা তারাবিহতে অংশগ্রহণ করবেন।
মহান আল্লাহ তাআলার কালাম তিলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম ও আদব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরস্থির ভাবে, স্পষ্টরূপে। -সূরা মুযযাম্মিল (৭৩) : ৪
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
زينوا القرآن بأصواتكم
সুন্দর সূরের মাধ্যমে কুরআনকে (এর তিলাওয়াতকে) সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ইরশাদ করেছেন, (কিয়ামতের দিন) কুরআনের তিলাওয়াতকারী বা হাফেজকে বলা হবে-
اقْرَأْ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.
তিলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। ধীরে ধীরে তিলাওয়াত কর, যেভাবে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে যা তুমি তিলাওয়াত করতে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১৪
এই ধীরস্থির বা তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কেমন হবে তা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখিয়ে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন। হযরত উম্মে সালামাহ রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায ও তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল-
قِرَاءَةً مُفَسَّرَةً حَرْفًا حَرْفًا
প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯২৩
অর্থাৎ কোনো জড়তা, অস্পষ্টতা ও তাড়াহুড়া ছিল না।
আরো জানুনঃ
তারাবীহ এর সালাত প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের উপর সুন্নাতে মুআক্কাদা। এবং জামাতের সাথে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা আ'লাল কিফায়া।
ফেকহে হানাফির নির্ভর্যোগ্য প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে" বর্ণিত আছে,
وَنَفْسُ التَّرَاوِيحِ سُنَّةٌ عَلَى الْأَعْيَانِ عِنْدَنَا كَمَا رَوَى الْحَسَنُ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ - رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى - وَقِيلَ: تُسْتَحَبُّ وَالْأَوَّلُ أَصَحُّ. وَالْجَمَاعَةُ فِيهَا سُنَّةٌ عَلَى الْكِفَايَةِ، كَذَا فِي التَّبْيِينِ وَهُوَ الصَّحِيحُ، كَذَا فِي مُحِيطِ السَّرَخْسِيِّ.
তারাবীহ সুন্নাতে মুআক্কাদা আলাল আইন।যেমন ইমাম আবু-হানিফা থেকে হাসানের রেওয়াতে বর্ণিত আছে।কেউ কেউ অবশ্য মুস্তাহাব ও বলেছেন।তবে প্রথম অভিমতটাই অধিক গ্রহণযোগ্য।এবং জামাতের সাথে তারাবীহের সালাত আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা আলাল কিফায়া। এভাবেই "তাবয়ীনুল হাক্বাইক্ব" নামক কিতাবে বর্ণিত আছে। এবং "মুহিতে সারাখসীতে" বর্ণিত আছে।(ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া,১/১১৬)
অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে,
وَلَوْ تَرَكَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ كُلُّهُمْ الْجَمَاعَةَ فَقَدْ أَسَاءُوا وَأَثِمُوا، كَذَا فِي مُحِيطِ السَّرَخْسِيِّ.
যদি কোনো মসজিদের অধিবাসী সবাই জামাতকে ছেড়ে দেয়,তাহলে তারা গুনাহগার হবে,এভাবেই মুহিতে সারাখসীতে বর্ণিত আছে।
,
আরো জানুনঃ
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মসজিদে দ্রুত গতিতে তারাবিহ পড়ালে যদি তাহা মাকরুহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,পড়া অস্পৃশ্য ভাবে শোনা যায়, তাহলে বাসাতেই তারাবিহ পড়তে পারবেন।
এতে কোনো সমস্যা হবেনা।