জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
নামাযে দ্রুত তিলাওয়াত করতে গিয়ে এক হরফের জায়গায় আরেক হরফ,বা এক বাক্যের স্থানে আরেক বাক্য,যার দ্বারা নামাজ নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়, নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ভুল হওয়ার কারনে উক্ত নামাজই হবেনা।
নামাজ নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অর্থ পরিবর্তন না হয়,তারপরেও উচ্চারণে মাকরূহ পর্যায়ের বিঘ্ন যদি ঘটে, তাহলে সেই নামাযও ত্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে।
মাকরুহ পর্যায়ের তিলাওয়াত করে নামাজ পড়াও ঠিক নয়, অর্থ যেনো পরিবর্তন না হয়, এমন ভাবেই কুরআন তেলাওয়াত করে তারাবীহ পড়তে হবে।
,
মহান আল্লাহ তাআলার কালাম তিলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম ও আদব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরস্থির ভাবে, স্পষ্টরূপে। -সূরা মুযযাম্মিল (৭৩) : ৪
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
زينوا القرآن بأصواتكم
সুন্দর সূরের মাধ্যমে কুরআনকে (এর তিলাওয়াতকে) সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ইরশাদ করেছেন, (কিয়ামতের দিন) কুরআনের তিলাওয়াতকারী বা হাফেজকে বলা হবে-
اقْرَأْ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.
তিলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। ধীরে ধীরে তিলাওয়াত কর, যেভাবে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে যা তুমি তিলাওয়াত করতে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১৪
এই ধীরস্থির বা তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কেমন হবে তা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখিয়ে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন। হযরত উম্মে সালামাহ রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায ও তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল-
قِرَاءَةً مُفَسَّرَةً حَرْفًا حَرْفًا
প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯২৩
অর্থাৎ কোনো জড়তা, অস্পষ্টতা ও তাড়াহুড়া ছিল না।
হযরত আনাস রাযি.-কে নবীজীর তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল (মদের স্থানে) টেনে পড়া। এর পর তিনি بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ পাঠ করে শোনান এবং اللهِ , الرَّحْمٰنِ ও الرَّحِيمِ এ সব জায়গার মদগুলো টেনে উচ্চারণ করে দেখান। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৪৬
.
বিস্তারিত জানুনঃ
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি ইমাম সাহেব এত দ্রুত পড়েন,যাহা কিছুই বুঝা যায়না,বা যা দ্বারা নামাজ মাকরুহ বা ফাসিদ হওয়ার আশংকা থাকে,তাহলে এক্ষেত্রে সুরা তারাবিহ পড়াই উচিত।
,
তাহা সম্ভব না হলে একাকী তারাবীহ পড়া ভালো হবে।
,
(০২)
দোয়ায়ে মাছুরা পড়া সুন্নাত,সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা।
তবে সুন্নাতের খেলাফ হবে।
,
(০৩)
সুন্নত নামাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত।
হাদিসে এর প্রভূত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যা অন্য সুন্নতের ক্ষেত্রে হয়নি।
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، حَدَّثَنِي عَطَاءٌ، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : إِنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَكُنْ عَلَى شَىْءٍ مِنَ النَّوَافِلِ أَشَدَّ مُعَاهَدَةً مِنْهُ عَلَى الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الصُّبْحِ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পূর্বে দু’ রাক‘আত সলাতের চেয়ে অধিক দৃঢ় প্রত্যয় অন্য কোন নফল সলাতে রাখেননি।
(বুখারী (অধ্যায় : তাহাজ্জুদ, অনুঃ ফাজরের দু’ রাক‘আত (সুন্নাতের) হিফাযাত করা, হাঃ ১১৬৯), মুসলিম (অধ্যায় : মুসাফিরের সলাত, অনু, ফাজরের দু’ রাক‘আত সুন্নাত পড়া মুস্তাহাব.আবু দাউদ ১২৫৪)
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، - يَعْنِي ابْنَ إِسْحَاقَ الْمَدَنِيَّ عَنِ ابْنِ زَيْدٍ، عَنِ ابْنِ سِيْلَانَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " لَا تَدَعُوهُمَا وَإِنْ طَرَدَتْكُمُ الْخَيْلُ "
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ফজরের দু’ রাক‘আত কখনো ত্যাগ করো না, যদিও তোমাদেরকে ঘোড়া পদদলিত করে।
(আবু দাউদ ১২৫৮)
شرح مشكل الآثار (10/ 320،321)
'' عن عائشة رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " ركعتا الفجر خير من الدنيا وما فيها۔
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭২৫)।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " لا تتركوا ركعتي الفجر وإن طردتكم الخيل۔ "
مصنف عبد الرزاق الصنعاني (2/ 444)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও তোমরা এই দুই রাকাত কখনো ত্যাগ কোরো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৫৮)।
★যদি জামা'আত দাড়িয়ে যায়,তাহলে দেখতে হবে যে
যদি ইমামের সাথে শেষ বৈঠকে শরীক হওয়ার আশা থাকে,তাহলে এক্ষেত্রে আগে সুন্নাত পড়বে,তারপর জামা'আতে শরিক হবে ।
,
যদি শেষ বৈঠকে শরীক হওয়ার আশা না থাকে,
বরং জামা'আত শেষ হওয়ার আশংকা থাকে,তাহলে আগে সুন্নাত পড়বেনা।
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (1/ 377)
''(وكذا يكره تطوع عند إقامة صلاة مكتوبة) أي إقامة إمام مذهبه ؛ لحديث: «إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة» (إلا سنة فجر إن لم يخف فوت جماعتها) ولو بإدراك تشهدها، فإن خاف تركها أصلاً۔
সারমর্মঃ
ফরজ নামাজের জামা'আত দাড়িয়ে গেলে নফল ইত্যাদি পড়া মাকরুহ।
তবে ফজরের সুন্নাত,যদি জামা'আত ছুটে যাওয়ার ভয় না থাকে।
যদিও তাশাহুদে এসে ইমামকে পাওয়ার আশা রাখুক,,,
আরো জানুনঃ
,
এক্ষেত্রে যদি সুন্মাত আদায় করা সম্ভব না হয়,তাহলে কাজা আদায় করবেন।
ফজরের সুন্নাত কাযা হয়ে গেলে সূর্য উদিত হওয়ার পর থেকে নিয়ে জোহরের ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত (নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ব্যাতিত) পড়া যাবে।
এর পরও যদি পড়া না হয়,তাহলে আর সেটার কাযা আদায় করার সুযোগ নেই।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/১১২)
হাদীস শরীফে এসেছে
وفى جامع الترمذى- عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يصل ركعتي الفجرفليصلهمابعد ما تطلع الشمس (جامع الترمذى-أبواب الصلاةعن رسول الله صلى الله عليه وسلم، باب ماجاءفي إعادتهمابعدطلوع الشمس،رقم-423)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত যে, নবীজি সা: বলেন-যে ফজরের দুই রাকআত সুন্নত (সময়মতো) পড়ল না সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে। ( জামে তিরমিজী-১/৯৬)
আরো জানুনঃ
(০৪)
ঝিমুনি আসার দ্বারা নামাজ ভঙ্গ হবেনা।