আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
965 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (27 points)
closed by

আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশের প্রায় আমার দেখা সবাই (হাতে গোনা কয়েকজন ব্যাতিত) আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যিকির করার সময় তাসবিহ ব্যাবহার করে থাকে।

তবে আমার জানা মতে হাতের আঙুলি দ্বারা যিকির করা সুন্নাহ। এক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন হলো-

 

১.যিকির করার ক্ষেত্রে সবাই(আল্লাহই ভালো জানেন) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং সওয়াব লাভের জন্য যিকির করে। তাহলে যদি তাসবিহ ব্যাবহার করা হয় -এটি কি বিদ'আত হবে? 

২.যদি হাতের আঙুল এবং তাসবিহ উভয় কম বেশি ব্যাবহার করা হয়।এটি কি ঠিক হবে করা? 

৩.তাসবিহ পরার বা যিকির করার জন্য সঠিক নিয়ম এবং কিছু পরামর্শ দিবেন।

 

জাযাকাল্লাহ খাইরান

closed

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
 
Best answer
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
যিকির করার ক্ষেত্রে তাসবিহ,দানা ব্যবহার নাজায়েজ বা বিদ'আত নয়।
,
হাদীস শরীফে এসেছে
   
উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ وَبَيْنَ يَدَيَّ أَرْبَعَةُ آلَافِ نَوَاةٍ أُسَبِّحُ بِهَا ، فَقَالَ : لَقَدْ سَبَّحْتِ بِهَذِهِ ، أَلَا أُعَلِّمُكِ بِأَكْثَرَ مِمَّا سَبَّحْتِ بِهِ ، فَقُلْتُ : بَلَى عَلِّمْنِي . فَقَالَ : قُولِي : سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ

একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে এলেন। আমার কাছে তখন চার হাজার খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দ্বারা আমি তাসবিহ পাঠ করছিলাম। তিনি বললেন, তুমি তো এগুলোর মাধ্যমে তাসবিহ পাঠ করছ। যে পরিমাণ তাসবিহ তুমি পাঠ করেছ, তদপেক্ষা বেশী পরিমাণের উপায় কি আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব? আমি বললাম, অবশ্যই আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি বলবে, (سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ) – সৃষ্টির পরিমাণ সংখ্যকবার সুবহানাল্লাহ। (তিরমিযি ৩৫৫৪)


সা’দ ইবন আবূ ওয়ক্কাস রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সঙ্গে এক মহিলার কাছে গেলেন। উক্ত মহিলার সামনে তখন কিছু খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দিয়ে তিনি তাসবিহ পাঠ করছিলেন। নবীজী ﷺ তাকে বললেন, এর চেয়ে সহজ ও উত্তম উপায় সম্পর্কে কি তোমাকে অবহিত করব? তা হল,

سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَلِكَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذَلِكَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ

অর্থাৎ, আল্লাহ মহাপবিত্র আকাশে তার সৃষ্টি জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ মহাপবিত্র দুনিয়াতে তার সৃষ্ট জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র এতদুভয়ের মধ্যকার সৃষ্টির সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র তিনি যে সকল প্রাণী সৃষ্টি করবেন তার সমসংখ্যক, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলা মহান, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, অনুরূপ সংখ্যকবার আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কল্যাণ করার বা ক্ষতিসাধনের আর কোন শক্তি নেই। (আবু দাউদ ১৩১৭)

ইবন নুজাইম আলহানাফি রহ. বলেন,

فلم ينهها عن ذلك وإنما أرشدها إلى هو أيسر وأفضل ولو كان مكروها لبين لها ذلك ، ثم هذا الحديث ونحوه مما يشهد بأنه لا بأس باتخاذ السبحة المعروفة لإحصاء عدد الأذكار

রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত মহিলাকে নিষেধ করেন নি। তিনি কেবল এর চেয়ে উত্তম ও সহজটা বলে দিয়েছেন। যদি এটি নিষিদ্ধ হত তাহলে তিনি বলে দিতেন। অতপর এই হাদিস ও অনুরূপ আরো হাদিস একথার দলিল যে, জিকিরের গণনার জন্য প্রচলিত তাসবিহ-দানা ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই। (আল বাহরুর রায়িক ২/৩১)
,
ইসলামী স্কলারগন বলেছেন 

তাসবিহ-দানা ব্যবহারকে নাজায়েয বা বেদআত বলা যাবে না। কেননা এটি কেবল জিকিরের উসিলা বা মুযাক্কির; যা আমাদেরকে জিকিরের কথা মনে করিয়ে দেয়। আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা (১১/২৮৩)-তে এসেছে,
  أجاز الفقهاء التسبيح باليد والحصى، والمسابح خارج الصلاة 

ফকিহগণ নামাজের বাইরে হাত, কংকর ও তাসবিহ-মালা দ্বারা তাসবিহ পাঠের অনুমতি দিয়েছেন। 

এমনকি আল্লামা মানাবি রহ. বলেন,
 لم ينقل عن أحد من السلف ولا الخلف كراهتها
 পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কোনো ফকিহ একে মাকরূহ বলেন নি। (ফয়যুল কাদির ৪/৩৫৫)
,
 তবে জিকির গণনায় তাসবিহ-দানা ব্যবহার করার চাইতে উত্তম হল, হাতের আঙ্গুল বা আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা। কেননা তাসবিহমালা হাতে থাকলে রিয়া আসতে পারে। তাছাড়া হাদিস শরিফে এসেছে, 

ইয়ুসাইরাহ রাযি. বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ أَمَرَهُنَّ أَنْ يُرَاعِينَ بِالتَّكْبِيرِ وَالتَّقْدِيسِ وَالتَّهْلِيلِ وَأَنْ يَعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ

রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাকবির, তাকদিস এবং তাহলিল এগুলো খুব ভালভাবে স্মরণে রাখবে এবং এগুলোকে আঙ্গুলে গুণে রাখবে। কেননা আঙ্গুলগুলোকে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এগুলোও সেদিন (কেয়ামতের দিন) কথা বলবে। (আহমাদ ২৫৮৪১ আবু দাউদ ১৫০১)

একারণে ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন,
عد التسبيح بالأصابع سنة كما قال النبي ﷺ للنساء: «واعقدن بالأصابع فإنهن مسئولات مستنطقات» وأما عده بالنوى والحصى ونحو ذلك، فحسن وكان من الصحابة – رضي الله عنهم – من يفعل ذلك، وقد رأي النبي ﷺ أم المؤمنين تسبح بالحصى وأقرها على ذلك وروى أن أبا هريرة كان يسبح به

আঙ্গুল দ্বারা তাসবিহ গণনা করা সুন্নাত। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তোমরা আঙ্গুলে গুণে রাখবে। কেননা আঙ্গুলগুলোকে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এগুলোও সেদিন (কেয়ামতের দিন) কথা বলবে।’ তবে বিচি, কংকর ও অনুরূপ বস্তু দ্বারা গণনা করাও ভাল। কেননা সাহাবায়ে কেরামের অনেকে তা করতেন। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ উম্মুল মুমিনীনকে কংকর দ্বারা গণনা করতে দেখেছেন এবং এর সমর্থন করেছেন। আর বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা রাযি.ও এরূপ করতেন। (মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/৫০৬)

আরো জানুনঃ 
,
(০২)
কম বেশি হতে পারে,কোনো সমস্যা নেই। 


(০৩)
যিকিরের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কয়েকটি শর্ত পূরণ করা অত্যাবশ্যক। যথা : ১. লোক দেখানোর উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হওয়া।

 ২. কোনো ব্যক্তির নামাযে বা অন্য কোনো ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটানো। 

৩. কোনো ব্যক্তির বিশ্রামে সমস্যা না হওয়া।

 ৪. আওয়াজ স্বাভাবিক হওয়া, চিৎকার করে বা অতিরিক্ত উঁচু আওয়াজে না হওয়া।

৫. সাধারণভাবে এবং সহীহ-শুদ্ধ করে যিকির করা। 
,
শায়েখ মাশায়েখ গন বলেছেনঃ
প্রথমে উযূ করে নিতে হবে। তারপর অতি উত্তম পোশাক পরিধান করে, শরীরে সুগন্ধি মেখে, দুই জানু হয়ে নামাযের সুরতে কিবলামুখী হয়ে বসতে হবে। 

 এখন দুই চোখ বন্ধ করে যিকিরের নিয়্যাত করে ক্বলবের দিকে মনোযোগের সাথে ধ্যান করতে হবে। 

হালকা আলো বা অন্ধকারে যিকির করা ভাল। তাতে মন (mind) ও একাগ্রতা (concentration) ভালভাবে চলে আসে। যথাসম্ভব কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ যিকিরের জন্য উত্তম।
,
যিকির করার সময় অমনোযোগী হওয়া যাবে না। অন্তরে খেয়াল করতে হবে যে, আমি আল্লাহ তায়ালাকে দেখতে পাচ্ছি। যদি এ খেয়াল না আসে তাহলে অন্তত মনে করতে হবে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেখছেন। তিনি আমার যিকির শুনছেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 154 views
0 votes
1 answer 174 views
...