বিসমিহি তা'আলা
জবাবঃ-
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
وعن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((الفطرة خمس: الختان، والاستحداد، وقص الشارب، وتقليم الأظفار، ونتف الإبط)) متفق عليه.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,ফিতরাত তথা স্বভাবগত সুন্নত পাচঁটি।
(১)খৎনা করা।(২)খুর দ্বারা নাভীর নীচ পরিস্কার করা।(৩)মুছ কাট(৪)নক কাটা(৫)বগলের চুলকে উপড়িয়ে ফেলা।(মিশকাতুল মাসাবিহ-৪৪২০)
মুল্লা আলী ক্বারী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
(والاستحداد) : أي حلق العانة، وهو استفعال من الحديد، وهو استعمال الحديد من نحو الموسى في حلق العانة ذي الشعر الذي حوالي ذكر الرجل وفرج المرأة. زاد ابن شريح: وحلقة الدبر، فجعل العانة منبت الشعر مطلقا، والمشهور الأول، فإن أزال شعره بغير الحديد لا يكون على وجه السنة. كذا في شرح المشارق، ويجب أن يعلم أنه لا يقطع شيئا من شعر وهو جنب.
ইস্তেহদাদ অর্থ হলো,নাভীর নীচ কে খুর ইত্যাদি দ্বারা পরিস্কার করা। পুরুষাঙ্গ ও যোনিপথের আশপাশের সবকিছুকে খুর দ্বারা পরিস্কার করতে হবে।ইবনে শুরাইহ বলেন, মলমূত্রত্যাগের স্থানকেও খুর দ্বারা পরিস্কার করতে হবে।উনি নাভীর নীচের সকল চুলকে তাতে শামিল রাখেন তা যেখানেই হোকনা কেন।তবে প্রথম মতটাই অধিক প্রসিদ্ধ।যদি কেউ খুর ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা নাভীর চুলকে পরিস্কার করে,তাহলে সেটা সুন্নত অনুযায়ী হবে না।(শরহে মাশারিক্ব) সবার জানা থাকা উচিৎ যে,জুনুবী অবস্থায় নাভীর চুলকে কাটা যাবে না।
المفهوم من حديث أبي هريرة: أن حلق الإبط ليس بسنة، بل السنة نتفه لأن شعره يغلظ بالحلق، ويكون أعون للرائحة الكريهة. قال النووي: النتف أفضل لمن قوي عليه، لما حكي أن الشافعي كان يحلق إبطه فقال: علمت أن السنة نتفه، لكن لا أقوى على الوجع.
আবু হুরায়রা রাযি এর হাদীস থেকে বুঝা যায় যে,বগলের চুলকে মুন্ডানো সুন্নত নয়।বরং সুন্নত হলো,উপড়িয়ে ফেলা।কেননা মুন্ডানোর দ্বারা বগলের চুল আরো গাঢ়তম আকার ধারণ করবে, অতঃপর সেটা দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ বনে যাবে।ইমাম নববী রাহ বলেন,উপড়িয়ে ফেলার কষ্টকে যার সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে সে যেন উপড়িয়ে ফেলে।আর যার সহ্য করার ক্ষমতা নেই, সে যেন মুন্ডিয়ে ফেলে।যেমন ইমাম শাফেয়ী রাহ বগলের চুলকে উপড়িয়ে ফেলতেন।উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে উনি বলতেন,আমি জানি উপড়িয়ে ফেলা সুন্নত।তবে উপড়িয়ে ফেলার কষ্টকে আমি সহ্য করতে পারি না।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)
বগলের চুলকে উপড়িয়ে ফেলাই সুন্নত।তবে মুন্ডানোও জায়েয।
আর নাভীর নীচের চুলকে মুন্ডিয়ে ফেলা সুন্নত।তবে ঔষধ ব্যবহার করে পরিস্কার করা বা কেচি দ্বারা গোড়ায় কেটে ফেলারও অনুমোদন রয়েছে।
ইবনে হাজার আসক্বালানী রাহ বলেন,পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্য নাভীর নীচ মুন্ডানো সুন্নত।ইমাম নববী রাহ লিখেন,নাভীর নীচের চুলের ব্যাপারে পুরুষের জন্য মুন্ডানো এবং মহিলার জন্য উপড়িয়ে ফেলা উত্তম।(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১৯/৪৪৬)
নাওরাহ তথা চুল উপড়ানোর বিশেষ এক প্রকার ঔষধকে এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।যেমন রাসূলুল্লাহ সাঃ করেছেন।
হযরত উম্মে সালামাহ রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أم سلمة، «أن النبي صلى الله عليه وسلم كان إذا اطلى بدأ بعورته، فطلاهابالنورة، وسائر جسده أهله»
যখন রাসূলুল্লাহ নাওরাহ ব্যবহার করার ইচ্ছা করতেন,তখন তিনি সতরে আওরাত থেকে নাওরাহ-কে লেপ্টানো শুরু করতেন।অতঃপর নাওরাহ লেপ্টানো চুলকে শরীর থেকে সরিয়ে ফেলতেন।এবং উনার শরীর অন্যান্য অংশের চুল পরিস্কারের দায়িত্ব পরিবারের কাছে ছেড়ে দিতেন।(সুনানু ইবনি মা'জা-৩৭৫১)
(২)
নাভীর নীচের একটা খাদ রয়েছে, সেখান থেকে শুরু করে গোপনাঙ্গের আশপাশ,অন্ডকোষের চুল,এবং গুহ্যদ্বার এর চুল মুন্ডানো সুন্নত।কেউ কেউ বলেন,নাভীর নীচে যেখানেই চুল থাকবে সেখানকেই মুন্ডানো সুন্নত।আমি এই দ্বিতীয় মতকে পালন করার পরামর্শ দিবো।কেননা চুলই দুর্গন্ধের কারণ হয়।সুতরাং এমনভাবেই পরিস্কার করা উচিৎ যাতে দুর্গন্ধের কোনো কারণ আর বাকী না থাকে।সাপ্তাহে একবার বা দুই সাপ্তাহে একবার। চল্লিশদিন অতিক্রম করা মাকরুহে তাহরীমি।
(৩)
নাভীর নীচ এবং বগলের চুল ব্যতীত শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চুল প্রয়োজনে মুন্ডানো যাবে।তবে সেটা আদবের খেলাফ।আর অমুসলিমদের অনুসরণে হলে সেটা হারাম।
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে-
وفي حلق شعر الصدر والظهر ترك الأدب كذا في القنية
বুক এবং পিঠের চুলকে মুন্ডানো খেলাফে আদব।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৫৮)
আরো বর্ণিত রয়েছে-
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১৯/৪৪৬)
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, Iom.