(১)
ওজু করার সময় যদি নাকের ভিতর পানি দিতে কেউ ভুলে যায় আর ওই অবস্থাতেই যদি সালাত আদায় করা হয়, তাহলে তার সালাত আদায় হবে, কেননা নাকে পানি দেওয়া মুস্তাহব।
(২)
অজুতে তিনবার ধৌত করা অর্থ হল, প্রত্যেক ধৌত করার অঙ্গ সমূহকে নতুন পানি দ্বারা তিনবার ধৌত করা উদ্দেশ্য।
ওজুর নিয়মঃ-ওজুর কিছু ফরয(অত্যাবশ্যকীয় পালনীয়) রয়েছে এবং কিছু সুন্নাত(অত্যাবশ্যকীয় নয় তবে সচরাচর রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে প্রমাণিত) এবং কিছু মুস্তাহাব(উত্তম ও ভালো)। এবং কিছু মাকরুহ রয়েছে যা বর্জনীয়।
ওজুর ফরয চারটি যথাঃ-
(১)
চুলের গুড়া থেকে তুথনীর নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মূখ ধৌত করা।
(২)
দুনু হাত কনুই সহ ধৌত করা।
(৩)
দুনু পা টাখনু সহ ধৌত করা।
(৪)
মাথার এক চতুর্তাংশ মাসেহ করা।
ওজুর সুন্নাত ১৮ টি।
(১)কব্জি সহ দুনু হাত ধৌত করা।
(২)প্রথমে বিসমিল্লাহ বলা।
(৩)প্রথমে মিসওয়াক করা।
মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে দাত পরিস্কার করা।
(৪)গড়গড়া করে কুল্লি করা যদিও এক চিল্লু পানি দ্বারা হয়।
(৫)তিন চিল্লু পানি দ্বারা নাক পরিস্কার করা।
(৬-৭)রোজাদার না হলে ভালভাবে কুল্লি ও নাকে পানি দেওয়া।
(৮)ঘন দাড়ি হলে নিচের দিক থেকে এক চিল্লু পানি দ্বারা দাড়িকে খিলাল করা।
(৯)আঙ্গুল সমূহকে খিলাল করা।
(১০)প্রত্যেকটা ধৌতকে তিনবার করে ধৌত করা।
(১১)সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
(১২)দুনু কান মাসেহ করা যদিও মাথা মাসেহের পানি দ্বারা হয়।
(১৩)প্রতিটা অঙ্গকে মলা।
(১৪)এক অঙ্গ অপর অঙ্গর অভ্যাহতির পর ধৌত করা।
(১৫)নিয়্যাত করা
(১৬)কোরআনে বর্ণিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
(১৭)আঙ্গুলের মাথা, মাথার অগ্রভাগ সহ প্রত্যেকটা অঙ্গের ডান দিক থেকে শুরু করা।
(১৮)গর্দনা মাসেহ করা(হলক্বুম ব্যতীত)।
ওজুর আদাব বা মুস্তাহাব নিয়ম-পদ্ধতি হচ্ছে।
(১)উচু স্থানে বসা।
(২)ক্বিবলা দিক করে বসা।
(৩)অন্যর কাছ থেকে কোনো প্রকার সাহায্য গ্রহণ না করা।
(৪)দুনিয়াবী কথাবার্তা না বলা।
(৫)অন্তরের নিয়্যাত ও মুখের উচ্ছারণের মধ্যে সমন্বয় সাধন রাখা।
(৬)ওজু করার সময় হাদীসে বর্ণিত দু'আ সমূহ পড়া।
(৭)প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহ পড়া।
(৮)দুই কানের ছিদ্রে কনিষ্টা আঙ্গুল প্রবিষ্ট করা।
(৯)ঢিলা আংটি নাড়া।
(১০)ডান হাত দ্বারা কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া।
(১১)বাম হাতে নাক পরিস্কার করা।
(১২)মাযূর নয় এমন লোকের ওয়াক্তের পূর্বে ওজু করা।
(১৩)ওজুর পর কালেমায়ে শাহাদত পড়া।
(১৪)ওজুর পর বদনায় বেঁচে থাকা পানি থেকে কিছু পানি পান করা।এবং দু'আ পড়াঃ
اللهم اجعلني من التوابين واجعلني من المتطهرين".
উচ্ছাঃ-আল্লাহুম্মা ইজ আলনি মিনাততাওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাতাহহিরিন।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমাপ্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করুন,এবং আমাকে পবিত্রদের মধ্যে শামিল করুন।
ওজু কারীর জন্য ছয়টি কাজ করা মাকরুহ।
(১)প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পানি ব্যয় করা।
(২)প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি ব্যবহার করা।
(৩)সজোরে চেহারায় পানি মারা।
(৪)দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা।
(৫)ওজর ব্যতীত ওজুতে অন্যর সাহায্য নেওয়া।
(৬)নতুন পানি দ্বারা তিনবার (মাথা)মাসেহ করা।
নুরুল ইযাহ পৃঃ২২।
কেউ যদি শুধমাত্র ফরয আদায় করে নেয় তাহলে তার ওজু হবে কিন্তু উত্তমরূপে হবেনা।উত্তমরূপে ওজু হতে হলে সুন্নাত এবং মুস্তাহাবকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।এবং মাকরুহ থেকে বেচে থাকতে হবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/6410
(৩)
আউযু বিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ্ যেহেতু ক্বেরাতের সুন্নাত।তাই যার যিম্মায় ক্বেরাত রয়েছে,অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত কারী চায় ইমাম হোক বা মুনফারিদ(একাকী নামায আদায় কারী)তিনিই একমাত্র আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ্ পড়বেন।এবং পড়াই সুন্নাত।
আল্লাম কা'সানি রাহ লিখেন,
ان التعوذ سنة للقراءة فيأتي به كل قارئ للقرآن .....لا يأتي به المقتدي
আউযুবিল্লাহ ক্বেরাতের সুন্নত। সুতরাং ক্বারী সাহেবগণই একমাত্র পড়বেন।মুক্বতাদি পড়বেন না।(আল-বাহরুর রায়েক্ব-১/৩১১)
আউযু বিল্লাহ শুধুমাত্র প্রথম রাকাতে পড়া সুন্নত।
আর নামাযের প্রত্যেক রা'কাতে সূরায়ে ফাতেহার পূর্বে নিম্নস্বরে বিসমিল্লাহ্ পড়া সুন্নত।এবং সূরায়ে ফাতেহার পর সূরা মিলানোর পূর্বে বিসমিল্লাহ্ পড়া উত্তম।অবশ্য এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।তবে সুন্নত না হওয়ার উপর সবাই-ই একমত।(কিতাবুন-নাওয়াযিল-৪/৫১,কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১৭২) বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/1300
সূরা ফাতিহা পড়ার পর যদি সূরা আবাসা পড়া হয়, তাহলে শুধু [বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম] পড়লেই হবে, [আউজু-বিল্লাহিমিনাস শাইতনির রজিম] পড়তে হবে না।
(৪)
ফরয নামায দাড়িয়ে আদায় করতে হবে।দাড়িয়ে আদায় করা সুন্নত। ফজররে সুন্নত ব্যতীত বাকী সুন্নত নামাযকে কাযা করত হবে ।