আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
32 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ্।

হুজুর/ উস্তায, আশা করি, আমার বিষয়টি অনুগ্রহপূর্বক একটু ভালোভাবে দেখবেন ইং শা আল্লহ। আমার প্রশ্ন আসলে একটু অগ্রিম মনে হতে পারে, কিন্তু আমাকে অনেক ক্ষেত্রেই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও হবে এজন্যই প্রশ্ন করছি, আফওয়ান।

হুজুর, আমি একজন চিকিৎসক। আল্লহ তায়ালার এক অধম গুনাহগার বান্দা, ইলম আমল সব দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। তবে চেষ্টা করে চলছি এবং আজীবন আরও যতটা আন্তরিকভাবে সম্ভব চেষ্টা করে আল্লহ তায়ালার অশেষ অনুগ্রহে উনার প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল হওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা রাখি। আমি নিজের দ্বীন ও চরিত্র হিফাজত, ইলম আমলের উন্নতি, আল্লহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুনিয়ার জীবনে আজীবন একসাথে চলার পাশাপাশি একজন জান্নাতের জীবনের জন্যও একজন সঙ্গী চাই- এজন্য বিয়ে করতে চাই। পারিবারিকভাবে বিয়ের কথা-বার্তা হচ্ছে, এক জায়গায় বেশ কিছুদূর এগিয়েছে। আমার আব্বু-আম্মু ইসলামিক মাইন্ডের ও মোটামুটি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম। সর্বদা দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করলেও তাঁরা আমার ওয়াইফ হিসেবে মন থেকে আসলে সর্বদাই একজন দ্বীনদার ডাক্তারকেই বেশি পছন্দ করেন। আমার কাছে যদিও এটা কখনোই বাধ্যতামূলক কোন বিষয় নয়। আমি এটা উনাদের জানিয়েছি এবং উনারাও বিষয়টা বুঝেছেন, তবুও প্রায় সর্বদাই উনারা খোঁজ খবর করতে গেলে ডাক্তারকেই প্রাধান্য দেন। এজন্যই প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই কিছু বিষয় সামনে চলে আসে, এজন্যই আমার প্রশ্ন করা। বর্তমানে যে জায়গায় কথাবার্তা চলছে উনিও ডাক্তার এবং মোটামুটি দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করেন এবং আরও উন্নতি করতে চান।
আমি জানি, আমাদের দেশে দ্বীনদার নারী ডাক্তারের প্রয়োজন রয়েছে। তবে আশার কথা হল বর্তমানে  চিকিৎসা পেশায় অনেক নারী রয়েছেন, (সবাই হয়ত দ্বীনদার না), জেলা শহর গুলোতে এখনই তেমন ঘাটতি নেই বলা যায়, তবে গ্রাম এলাকায় আছে; সামনে তো আরো অনেক নারী চিকিৎসক আসবেন।
আমাদের পর্যবেক্ষণ থেকে, প্রায় সকল দ্বীনদার নারী চিকিৎসকই এমবিবিএস পাস করার পরেও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন চান এবং সরকারি/বেসরকারি চাকুরী বা ব্যক্তিগত চেম্বারের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিতে চান, কেউবা শুধু গাইনি পেশেন্ট দেখতে চান, (<১% এর চেয়েও কম ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম থাকতে পারে)। আমার যেখানে কথা হচ্ছে, উনিও অধিকাংশের মত এমন মনোভাবই পোষণ করেন, বোরকা-নিকাব ইত্যাদির মাধ্যমে পর্দা রক্ষা করে পরিবারকে সময় দেয়ার পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন (সেটাও গাইনীতেই) করতে চান এবং চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকতে চান। তবে আপনি তো সবক্ষেত্রে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোর পরিবেশ, পরিস্থিতি জানেন। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়াশোনা, হাসপাতালে রোগী দেখা থেকে শুরু করে চেম্বার, অপরেশন থিয়েটার সব জায়গায় নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করে থাকেন। অপরেশন থিয়েটারে তো প্রতিটা রোগীর অপারেশন করার জন্য আলাদাভাবে প্রতিবার পোশাক/গাউন পরিবর্তন, হাতে জীবাণুনাশক নেয়া এবং হ্যান্ডওয়াশিং করা অত্যাবশ্যক এবং হ্যান্ডওয়াশিং এর জন্যও কনুই পর্যন্ত উন্মুক্ত করতে হয় এবং অধিকাংশ হাসপাতালেই এজন্য নারী পুরুষ চিকিৎসকদের জন্য আলাদা কোন সেটআপ থাকে না। আর হাসপাতালের ওয়ার্ড, ওটির মধ্যে তো অবশ্যই পুরুষ সহকর্মীরা উপস্থিত থাকেন।তাই চাইলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনভাবে সেপারেটেড ভাবে থাকা থাকা সম্ভব নয়, যেহেতু আমাদের দেশে শারই হাসপাতাল বা সেরকম সেটআপ নেই।

আমি মোটামুটি জানি, নারীদের চাকুরীর বিষয়টি নিয়ে অনেক কথাবার্তা রয়েছে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক কিছু বিবেচনায় আসে।
তবে আমি মূলত দ্বীনের দিক থেকে কোনভাবেই ছাড় দিতে চাই না। আমি কোনভাবেই চাই না যে আমার স্ত্রীর সামান্যতম পর্দার খেলাফ হোক, আমি চাই কণ্ঠের ব্যাপারেও উনি সচেতন হবেন। আমি আমার দিক থেকে আজীবন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে হবে চাই ইং শা আল্লহ। উম্মাহর উপকার করতে গিয়ে যেন সেটা আবার আমার স্ত্রীর নিজের ঈমান আমল, পর্দা রক্ষা তথা আল্লহর সন্তুষ্টির পথে একটুও বাধা সৃষ্টি হোক সেটা কোনভাবেই চাই না।
তবে আমি এটাও চাই, আমার নিজের, আমার স্ত্রীর এবং আমার পরিবারের সকল সদস্যের মাধ্যমে আল্লহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যেভাবে যতটা সম্ভব আজীবন উম্মাহর খিদমতে কাজ করে যেতে চাই এবং সদকায়ে জারিয়ার উৎস হিসেবে কিছু রেখে যেতে চাই ইং শা আল্লহ।

# এখন আমার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্বীনের পথে চলতে চাওয়ার তীব্র ইচ্ছা পোষণকারী একজন মুসলিম স্বামী হিসেবে আমার কি করা উচিৎ?
# আমার কি মেডিকেল নাকি নন মেডিকেল কাউকে বিয়ে করা উচিত যিনি শুধু পরিবারে সময় দিবেন, কি করা শরীয়ার আলোকে আমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে?

# ডাক্তার কাউকে বিয়ে করলে আমার স্ত্রীর জন্য কি করা বা কতটুকু পারমিট করা স্বামী হিসেবে আমার জন্য সর্বোচ্চ তাকওয়ার পরিচয় হবে এবং সেটা আমাদের উভয়ের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লহ তায়ালার অনুগ্রহ লাভ করা সবচেয়ে সহজ হবে, উম্মাহর খিদমত, নববি আদর্শে মুত্তাকীদের নেতা হিসেবে উত্তম সন্তান রেখে যাওয়া এবং আল্লহ তায়ালার অনুগ্রহে জান্নাতে যাবার পথ একটু হলেও আমার/আমাদের জন্য সহজ হবে - আপনার নিকট থেকে অনুগ্রহপূর্বক তা জানতে চাই।
সবকিছুর জন্য একটু বিস্তারিত উত্তর প্রত্যাশা করব। কোন ভুলত্রুটি হলে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লহ তায়ালার অধম গুনাহগার এই বান্দার জন্য খাস করে দোয়ার অনুরোধ রইল।
জাযাকুমুল্লহি খইর ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরহ।

1 Answer

0 votes
by (741,060 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!

إِنَّ اللهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِقَوْمٍ سُوءاً فَلاَ مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ-(الرعد 11)
‘নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের প্রতি অমঙ্গল ইচ্ছা করেন, তখন তা রদ হবার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (রা‘দ ১৩/১১)।

বর্ণিত আয়াতাংশটি মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের পক্ষে কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। একই মর্মে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,
 لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلاَّ مَا سَعَى 
‘মানুষ তার চেষ্টার বাইরে কিছুই পায় না’ (নাজম ৫৩/৩৯)।

বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষকে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে। সাথে সাথে এটাও বলে দিয়েছেন যে, তিনি আগ বেড়ে কোন জাতির বা সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করবেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তনে সচেষ্ট হবে। রাসূল (ছাঃ) স্বীয় জীবন দিয়ে সেটা বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন।


সম্মাণিত প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
আমাদেরকে সমাজ পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকলে হবে না বরং সমাজকে পরিবর্তন করতে এবং ইসলামি করণ করতে এগিয়ে যেতে হবে। কাউকে না কাউকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেই হবে। সমাজে নারী পুরুষের জন্য পৃথক পৃথক চিকিৎসালয় অতীব জরুরী। এর জন্য আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টিও লক্ষণীয়। বিশেষকরে গাইনী বিভাগের জন্য অভিজ্ঞ দ্বীনদার নারী চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সুতরাং সার্বিক দিক বিবেচনায় আমাদের পরামর্শ থাকবে, আপনি জীবনসঙ্গী হিসেবে এমন কোনো বিজ্ঞ নারী চিকিৎককে বাচাই করতে পারেন, যিনি চিকিৎসালয়কে ইসলামী করণ করতে বদ্ধপরিকর। আপাতত যদিও ফ্রিমিক্সিং পরিবেশে থাকতে হবে, তবে উনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা মহৎ থাকতে হবে। আল্লাহ আপনার জন্য কল্যাণের ফয়সালা করুক।আমীন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...