মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَىٰ مِنَ الْقَوْلِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا
অনুবাদ:
“তারা মানুষ থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখে, কিন্তু আল্লাহ থেকে লুকিয়ে রাখে না; অথচ তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন, যখন তারা রাত্রিতে এমন পরামর্শ করে যা তিনি পছন্দ করেন না। আর আল্লাহ তাদের সমস্ত কাজ ঘিরে আছেন।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এমন লোকদের নিন্দা করেছেন যারা লোকের চোখ রক্ষার জন্য গুনাহ থেকে বিরত থাকে, কিন্তু একা থাকলে আল্লাহর ভয় না করে গুনাহে লিপ্ত হয়। এটি কপটতার প্রকাশ।
একাকী অবস্থায় গুনাহকারীর আমল বাতিল হবে।
لَأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بَيْضَاءَ، فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُورًا
قَالَ ثَوْبَانُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، صِفْهُمْ لَنَا، جَلِّهِمْ لَنَا، أَنْ لَا نَكُونَ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَا نَعْلَمُ.
قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ، وَيَأْخُذُونَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُونَ، وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللَّهِ انْتَهَكُوهَا.
— سنن ابن ماجه (حديث: 4245),
অনুবাদ:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“আমি আমার উম্মতের কিছু লোককে জানি যারা কিয়ামতের দিন পাহাড়সম নেক আমল নিয়ে আসবে, কিন্তু আল্লাহ তা বাতাসে ছড়িয়ে দেবেন (অর্থাৎ ধূলিকণার মতো উড়িয়ে দেবেন)।”
সাহাবি ছাওবান (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাদের অবস্থা বর্ণনা করুন, যাতে আমরা অজান্তে তাদের মধ্যে না পড়ি।’
তিনি বললেন,
“তারা তোমাদের ভাই, তোমাদেরই জাতির; তোমরাও যেমন রাত জেগে ইবাদত করো, তারাও তাই করে। কিন্তু তারা যখন একা হয়, তখন আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো লঙ্ঘন করে।”
ব্যাখ্যা:
এই হাদীস স্পষ্ট করে যে, একাকী অবস্থায় গুনাহ করা — আল্লাহভীতির অভাব ও কপটতার লক্ষণ। তাদের আমল ধ্বংস হয়ে যাবে।
হাদীসে আল্লাহকে সর্বত্র ভয় করার নির্দেশ এসেছে,
اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ
— الترمذي (حديث: 1987), وقال: حديث حسن صحيح
অনুবাদ:
“তুমি যেখানে থাকো না কেন, আল্লাহকে ভয় করো। কোনো মন্দ কাজ করলে তার পরে একটি সৎ কাজ করো, যা সেটিকে মুছে দেবে। আর মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।”
ব্যাখ্যা:
এই হাদীসের প্রথম অংশে “اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ” (যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো) — এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, একাকী অবস্থাতেও তাকওয়া অবিচল থাকা উচিত।
একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে কাঁদার মর্যাদা
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ... وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ.
— صحيح البخاري (حديث: 660), صحيح مسلم (حديث: 1031)
অনুবাদ:
“সাত শ্রেণীর মানুষকে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়ায় রাখবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না...
তাদের একজন হল সেই ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে, আর তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়।”
الحقيقةُ أنَّ من خافَ اللهَ في الخَلْوةِ، فهو الصادقُ في إيمانه، ومن خافَ الناسَ دونَ اللهِ، فهو المُنافِقُ في قلبه.
“যে ব্যক্তি একাকী অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে, সে সত্যিকার মুমিন; আর যে মানুষকে ভয় করে কিন্তু আল্লাহকে নয়, সে অন্তরে মুনাফিক।”
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
একাকী অবস্থায় গুনাহের কারণ ও সমাধান
কারণ:
১. আল্লাহভীতির দুর্বলতা।
২. একাকীত্বে শয়তানের প্ররোচনা।
৩. আত্মনিয়ন্ত্রণের ঘাটতি।
৪. মানুষের দৃষ্টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, আল্লাহর দৃষ্টিকে উপেক্ষা করা।
সমাধান:
*তাকওয়া চর্চা করা: নিজেকে স্মরণ করানো — “আল্লাহ আমাকে দেখছেন।”
*একাকীত্বে ইবাদত বাড়ানো: যেমন নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া।
★একাকিত্ব পরিহার করার চেষ্টা করুন।
সর্বদা মানুষের মাঝে থাকুন।
নেককারদের সোহবত গ্রহণ করুন।
*পাপকর্মের পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন।।
*তওবা ও ইস্তেগফার করুন।