আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
13 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম। (একটু বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা দেবার অনুরোধ থাকবে মিন ফাদ্বলিক)

আমরা জানি বর্তমান যুগ ফেসবুকের যুগ। বর্তমানে মানুষ এমন হয়ে পড়েছে যে, মানুষের পুরো দেনিক রুটিন ও ফেসবুকে দিয়ে দেয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ফেসবুকে প্রাচুর্য মূলক পোস্ট করা যাবে কী না? (যেমনঃ আমি একটা আইফোন কিনলাম, আমি তা পোস্ট করে সবাইকে জানালাম। কিংবা আমি একটা ভালো খাবার খেলাম, ফেসবুকে তা পোস্ট করে জানালাম। আমি রাজার হালতে জীবন পাড় করি, আমি তা ফেসবুকে জানালাম।) এমন পোস্ট করা ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পছন্দনীয় নাকি অপছন্দনীয় হবে?

জাযাকাল্লাহ

1 Answer

0 votes
ago by (674,970 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলামে কোনো কিছু তখনই গ্রহণযোগ্য হয়, যখন তাতে রিয়া (দেখানো/গর্ব করা), কিবর (অহংকার) বা ইসরাফ (অতিরিক্ত ব্যয়) না থাকে।

প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয় গুলো পোস্ট করাতে অনেকক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য হয় মানুষকে দেখানো, গর্ব করা বা অন্যকে ছোট করে দেওয়া।

এমন পোস্টে অনেক ক্ষেত্রেই অন্যরা ঈর্ষা বা হিংসায় ভোগে থাকে।

এটি অনেক ক্ষেত্রে অহংকার প্রকাশ করে বা “আমি সবার চেয়ে ভাল অবস্থায় আছি” বোঝাতে চাওয়া হয়।

হাদীস শরীফে আছে

  حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالاَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمَّادٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبَانَ بْنِ تَغْلِبَ، عَنْ فُضَيْلِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ وَلاَ يَدْخُلُ النَّارَ يَعْنِي مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ " . قَالَ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ إِنَّهُ يُعْجِبُنِي أَنْ يَكُونَ ثَوْبِي حَسَنًا وَنَعْلِي حَسَنَةً . قَالَ " إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْجَمَالَ وَلَكِنَّ الْكِبْرَ مَنْ بَطَرَ الْحَقَّ وَغَمَصَ النَّاسَ " .

.আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকারও আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমানও আছে সে জাহান্নামে যাবে না। তখন একজন বলল, আমার নিকট এটা তো খুবই পছন্দনীয় যে, আমার জামা-কাপড় সুন্দর হোক এবং আমার জুতা জোড়াও সুন্দর হোক। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। কোন ব্যক্তির সদৰ্পে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজান করাই হলো অহংকার।
(সহীহ মুসলিম ১৬২৬, তিরমিজি১৯৯৯)

নবী ﷺ বলেছেন: “যার অন্তরে সরিষা দানার সমান অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহিহ মুসলিম)

আবু সাঈদ আল খুদরী ও আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
 عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، وَأَبِي هُرَيْرَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  الْعِزُّ إِزَارُهُ، وَالْكِبْرِيَاءُ رِدَاؤُهُ، فَمَنْ يُنَازِعُنِي عَذَّبْتُهُ 
 তারা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইজ্জত ও সম্মান আল্লাহর ভূষণ এবং গর্ব ও অহংকার তার চাদর। যে লোক এ ক্ষেত্রে আমার সাথে টানা-হেঁচড়া করবে আমি তাকে অবশ্যই সাজা দিব।(সহীহ মুসলিম-২৬২০,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৪১, ইসলামিক সেন্টার ৬৪৯২)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ:   الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي ، فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا، قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ   .
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, অহংকার হলো আমার চাঁদর এবং মহত্ব হলো আমার লুঙ্গি। যে কেউ এর কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।(সুনানে আবু-দাউদ-৪০৯০)

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ ভালো খাবার খেলে তার খাবারের ভিডিও আপলোড করে,এর বিধানঃ-
https://ifatwa.info/35028/  ফতোয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ-
 
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَبِي الزَّرْقَاءِ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ الْخِرِّيتِ، قَالَ: سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ، يَقُولُ كَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُولُ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ طَعَامِ الْمُتَبَارِيَيْنِ أَنْ يُؤْكَلَ،

‘ইকরিমাহ্ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লৌকিকতা প্রদর্শনকারী দুই প্রতিযোগীর খাদ্য আয়োজনে যেতে নিষেধ করেছেন।
সহীহ : আবূ দাঊদ ৩৭৫৪, সহীহাহ্ ৬২৭, সহীহ আল জামি‘ ৬৯৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ২১৫৮।

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ-
মানুষকে খানা খাওয়ানো উত্তম ‘ইবাদাত। এটা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে, গর্ব-অহংকার কিংবা নাম যশের উদ্দেশে নয়। কেউ যদি ফখর বা গর্ব অহংকার নিয়ে কাউকে দা‘ওয়াত করে অথবা গর্ব-অহংকার প্রকাশার্থে দা‘ওয়াত করে তবে তাদের এ অনুষ্ঠানের খাদ্য খেতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। বিশেষ করে দু’জন বা ততোধিক ব্যক্তি যদি পরস্পর গর্ব অহংকারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় যে, কে কার উপর প্রাধান্য লাভ করতে পারে। তবে এ শ্রেণীর মানুষের খাদ্য খাওয়া নিষেধ।

এটা নিষেধ এজন্য যে, এতে রয়েছে আত্মঅহংকার ও রিয়া, আর লৌকিকতা হলো সূক্ষ্ম শির্ক যা গুনাহে কবীরা বা মহাপাপ।

অনেক ‘আলিমকে দা‘ওয়াত করা হলে তারা তা কবুল করতেন না। তাদের যদি বলা হতো সালাফদের অনেককেই তো দা‘ওয়াত করা হতো এবং তারা তা কবুলও করতেন? উত্তরে বলতেন, তারা দা‘ওয়াত গ্রহণ করতেন পরস্পর সৌহার্দ ও সস্প্রীতি রক্ষার জন্য আর তোমাদের এ দা‘ওয়াত তো চলছে অহংকার ও প্রতিদানের ভিত্তিতে।

বর্ণিত আছে, একদা ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ) একটি খাদ্যানুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন এবং তারা দা‘ওয়াত কবুল করেন। দা‘ওয়াতে রওয়ানা হয়ে ‘উমার ‘উসমান -কে বললেন, আমি তো উপস্থিত হলাম বটে কিন্তু মন চাচ্ছে যে, অংশগ্রহণ না করি। ‘উসমান বললেন, কেন? উত্তরে ‘উমার বললেন, আমি ভয় পাচ্ছি যে, খাদ্যানুষ্ঠানটি গর্বাহংকারের হয় কিনা? (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৫০; মিরকাতুল মাফাতীহ)

★যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় খাবারের ভিডিও  আপলোডে লোক দেখানো ও আত্ম অহংকারের সম্ভাবনা রয়েছে,এবং এতে গরীবদের আফসোসের ক্ষেত্র তৈরী হয়,তাই সতর্কতামূলক খাবারের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া যাবে না।

বিস্তারিত জানুনঃ-

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এ ধরনের পোস্ট করাতে অনেক ক্ষেত্রে অহংকার,রিয়ার বিষয় ফুটে উঠে। এতে অন্যদের মধ্যে হিংসা, কষ্ট বা অনুপ্রবেশের ঝুঁকিও তৈরি হয়।

সর্বদিক বিবেচনা করে উলামায়ে কেরামগন এ ধরনের পোস্ট করাকে অনুমোদিত নয় বলেছেন,অপছন্দনীয় বলেছেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...