আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
13 views
in সালাত(Prayer) by (21 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারোকাতুহ উস্তাজ
এক বোনের প্রশ্ন:

"আমাদের বাসায় আমাদের সাথে আমার বড় চাচা থাকেন। উনি কখনো ডেকে যদি দেখেন আমি সলাতে আছি, এবং এর ফলে পরে উত্তর নিয়েছি উনি মাঝে মাঝেই বলেন প্রয়োজনে সালাত ভেঙে উত্তর নিতে হয়। তবে এমন প্রয়োজন থাকে না যে তখনি উত্তর নিতে হবে। যেমন একবার উনার কাছে একজন বেড়াতে আসবেন, আপ্যায়ন করতে হবে কিছু, সেটা ইনফরম করার জন্য ডাকছিলেন। আজকে উনি বাহিরে থেকে সালাতের সময় আসছেন। গেট খুলার জন্যে আমাকে ফোন দিয়ে না পেয়ে আম্মু কে কল দিয়ে বলছেন যে আমি ফোন ধরি না।- আম্মু বলছে আমি হয়তো সলাতে (যদিও ওয়াসরূমে ছিলাম), তখন আম্মু কে বলছেন সালাতের মাসালা জানতে হবে। সালাত ভেঙে ফোন ধরতে হয়।

১/ আমার  প্রশ্ন আসলেই কি তাই? যেমন উনি তো এমন পরিস্থিতিতে নাই যে সালাত ভেঙে ফোন ধরতে হবে বা উনাকে গেট খুলে দিতে হবে। কিছু টা অপেক্ষা তো করতে পারেন। এমনিতে এমন হলে সালাত নিজেই সংক্ষিপ্ত করে নিই, কিন্তু ভাঙি না। আমার করনীয় কি?
বি দ্র: এমন না যে উনি সলাত পড়েন না। নামাজী মানুষ। তবে বয়স্ক মানুষ হয়তো তাই অধৈর্য হয়ে যান।

২/ বাসায় রান্নার কাজ সহ অসুস্থ এবং বয়স্কদের দেখা শুনা করতে গিয়ে অনেক সময়ই ইবাদত মন দিয়ে করতে পারি না। যারা আছে সাহায্য করার মত তারাও নিজেদের কাজ ও বলতে গেলে অনেক সময় চাপায় দেয়। এতে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে, মেজাজ খারাপ থাকে। তার ভিতরে এভাবে সলাত ভেঙে জবাব দিতে বলায় মেজাজ খারাপ লাগে। মনে হয় উনি নিজেকে কি মনে করেন যে আল্লাহ্ র ইবাদত ভেঙে উনার কথা শুনতে হবে। এ মনোভাবের জন্য কি আমার গুনাহ হবে?
৩/ আজকে যখন আম্মু কে বলার পর- আবার আমাকে বলছেন সলাতের মাসালা জানতে হবে। তখন আমি কিছুটা রূঢ় ভাবে বলেছি ওয়াস রূমে ছিলাম, উনি দুইবার বলেছেন আমি ও দুই বার এইভাবে উত্তর দিয়েছি। উনি পরে হেসে দিয়েছেন। আমি যদিও কাভার করার জন্য উনার শারীরিক খোঁজ খবর নিয়েছি।  আমার খারাপ লাগছে চাচাকে এভাবে বলায়। আমার কি গুনাহ হবে? রূঢ় ভাবে বলায় বান্দার হক নষ্ট হবে? উনি মাঝে মাঝে আমাদের ইবাদত নিয়ে কিছুটা কটাক্ষ করেন। এটা ও আমার বিরক্ত লাগার একটা কারন। উনি শাজলিয়া নামক তরিকার। আমরা সেই তরিকা অনুসরণ না করায় খুব সম্ভবত এভাবে বলেন।
উপরের অবস্থায় আমার করনীয় কি?"

জাঝাকাল্লাহু খাইরন

1 Answer

0 votes
by (673,380 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/89397/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
এক হাদীসে নবী কারীম সাঃ বনী-ঈসরাইলের এক আবেদ (সূফী-দরবেশ)এর তার মার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা (নফল নামাযে মায়ের ডাকে সারা না দেয়া) বর্ণনা করে বলেন, "যদি তাঁর মাতা তার বিরুদ্ধে অন্য কোন বিপদে পতিত হওয়ার বদ দুআ করত তাহলে অবশ্যই সে সেই বিপদে পতিত হত।"

হাদীসে আছে যে,

، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قَالَ: كَانَ جُرَيْجٌ يَتَعَبَّدُ فِي صَوْمَعَةٍ، فَجَاءَتْ أُمُّهُ. قَالَ حُمَيْدٌ: فَوَصَفَ لَنَا أَبُو رَافِعٍ صِفَةَ أَبِي هُرَيْرَةَ لِصِفَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُمَّهُ حِينَ دَعَتْهُ، كَيْفَ جَعَلَتْ كَفَّهَا فَوْقَ حَاجِبِهَا، ثُمَّ رَفَعَتْ رَأْسَهَا إِلَيْهِ تَدْعُوهُ، فَقَالَتْ: يَا جُرَيْجُ أَنَا أُمُّكَ كَلِّمْنِي فَصَادَفَتْهُ يُصَلِّي، فَقَالَ: اللهُمَّ أُمِّي وَصَلَاتِي، فَاخْتَارَ صَلَاتَهُ، فَرَجَعَتْ، ثُمَّ عَادَتْ فِي الثَّانِيَةِ، فَقَالَتْ: يَا جُرَيْجُ أَنَا أُمُّكَ فَكَلِّمْنِي، قَالَ: اللهُمَّ أُمِّي وَصَلَاتِي، فَاخْتَارَ صَلَاتَهُ، فَقَالَتْ: اللهُمَّ إِنَّ هَذَا جُرَيْجٌ وَهُوَ ابْنِي وَإِنِّي كَلَّمْتُهُ، فَأَبَى أَنْ يُكَلِّمَنِي، اللهُمَّ فَلَا تُمِتْهُ حَتَّى تُرِيَهُ الْمُومِسَاتِ. قَالَ: وَلَوْ دَعَتْ عَلَيْهِ أَنْ يُفْتَنَ لَفُتِنَ

তরজমাঃ- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জুরাইজ (বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি) তাঁর ইবাদতখানায় সর্বদা ইবাদতে মশণ্ডল থাকতেন। (একবার) তাঁর মাতা তাঁর কাছে এলেন। হুমায়দ (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কাছে আবূ রা'ফে এমন আকারে ব্যক্ত করেন, যেমন ভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের ডাকের আকার আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর কাছে ব্যক্ত করেছেন। কিরুপ তিনি কপালের নিচে আব্রুর উপর হাত রেখেছিলেন। এরপর তাঁর দিকে মাথা উচু করে তাকে ডাকলেন। বললেন, হে জুরায়জ! আমি -তোমার মা, আমার সাথে কথা বল। এই কথা এমন অবস্থায় বলছিলেন, যখন জুরায়জ সালাতে মশগুল ছিলেন। তখন তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! (একদিকে) আমার মা আর (অপর দিকে) আমার সালাত (আমি কী করি।)”। রাবী বলেন-অবশেষে তিনি তাঁর সালাতকে অগ্রাধিকার দিলেন। এবং তার মা ফিরে গেলেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার আসলেন এবং বললেন, হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, তুমি আমার সংগে কথা বল। তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ! আমার মা, আমার সালাত। তখন তিনি তাঁর সালাতে মশগুল রইলেন। তখন তাঁর মা বললেন, হে আল্লাহ! এই জুরায়জ আমারই ছেলে। আমি তার সংগে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। সে আমার সংগে কথা বলতে অস্বীকার করল। হে আল্লাহ! তার মৃত্যূ দিয়ো না, যে পর্যন্ত না তাকে ব্যভিচারিনী দেখাও। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তাঁর মাতা তার বিরুদ্ধে অন্য কোন বিপদে পতিত হওয়ার বদ দুআ করত তাহলে অবশ্যই সে সেই বিপদে পতিত হত। (সহীহ মুসলিম-২৫৫০)

★সুতরাং আপনি যদি ফরয নামাযে থাকেন, এবতাবস্থায় যদি আপনার মা-বাবা আপনাকে ডাকেন, তাহলে আপনি নামায ভঙ্গ করে তাঁদের ডাকে সাড়া দিতে পারবেন না। কেননা নামায পূর্ণ করা হল আল্লাহর হক্ব আর মা বাবার ডাকে সাড়া দেয়া, তাদের নাফরমানি না করা, অবাধ্য না হওয়া এসব হল বান্দার হক্ব। সুতরা এক্ষেত্রে আপনাকে আল্লাহর হক্বকেই প্রাধাণ্য দিতে হবে, তাই নামায ভঙ্গ করতে পারবেন না বরং নামাযের রুকুন সমূহে যাতে কোনোপ্রকার ব্যাঘাত না ঘটে সে দিকে লক্ষ্য রেখে যতদ্রুত সম্ভব নামায থেকে ফারিগ হয়ে মা-বাবার খেদমতে হাজির হবেন। কিন্তু যদি আপনার মা-বাবা বা অন্য কেউ কোনো বিপদে পড়ে আপনার কাছে সাহায্যের আবেদন করে তাহলে এক্ষেত্রে আপনি ফরজ নামাজে থাকলেও সেই আবেদনে সাড়া দিতে পারবেন।

আর যদি আপনি নফল বা সুন্নাত নামাযে থাকেন আর এমতাবস্থায় আপনার মা-বাবা আপনাকে ডাক দেন, তাহলে এমতাবস্থায় নামায ভঙ্গ করে মা বাবার ডাকে সাড়া দেওয়া আপনার জন্য বৈধ এমনকি আপনার জন্য সারা দেয়াটা উচিৎও বটে। কেননা মা-বাবার ডাকে সাড়া দেওয়া উত্তম নেকির কাজ আর এই উত্তম নেকীর কাজ অর্থাৎ-মা-বাবার সাথে সৎদ্ব্যবহার করা নফল ইবাদত অপেক্ষাও উত্তম। এজন্য নফল এবাদত যেমনঃ- নফল নামায অপেক্ষাও মা-বাবাকে খুশি করা উত্তম নেকির কাজ।

তবে কোন কোন আলেম বলেন, মায়ের তেমন কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়নি, সন্তানের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য যদি ডাক দেন, সে ক্ষেত্রে নফল সালাত ভঙ্গ করে সাড়া দিতে হবে না। আপনি নফল সালাত শেষ করে মায়ের প্রয়োজন মেটাতে পারেন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
উক্ত মাসয়ালাটি সম্পূর্ণই ভুল।
নামাজের মধ্যে আপনার চাচা আপনাকে ডাকলে কোনক্রমেই সে ডাকে সাড়া দেওয়া যাবে না।

নামাজ চালিয়ে যেতে হবে।

মোবাইলে ফোন আসলে সে ক্ষেত্রে ফোন ধরা যাবে না।

নামাজ শেষ করে তারপর ফোন ধরতে হবে, অন্যান্য কাজ করতে হবে।

(০২)
এ মনোভাবের জন্য আপনার গুনাহ হবেনা।

(০৩)
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার গুনাহ হবেনা।
তবে জোড়ে আওয়াজে কথা বলে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিবেন।

আপনি কোনভাবে নামাজের মধ্যে তার ডাকে সাড়া দিবেন না। 

আপনি আপনার মতো নামাজ চালিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে যে যাই বলুক না কেন। আপনি আপনার এবাদতের ক্ষেত্রে কারো কোন কথা শুনবেন না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...