আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
999 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমার নানা-নানী [বর্তমানে উভয়ই মৃত] প্রায় পঁচিশ বছর আগে এক পালক কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছিলেন যার পিতা-মাতার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় নি(রাস্তায় পাওয়া গিয়েছিল)।এবং তখন থেকেই নিজ সন্তানের মতো পালন করেছেন এবং আপন সন্তান বলে পরিচয় দিয়েছেন।উল্লেখ্য যে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হয় নি।বর্তমানে তিনি(পালক কন্যা) বিবাহিত এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা সত্যটা জানলেও সেটা তাকে কোনোভাবে জানতে দেয় নি,তার মানসিক ক্ষতির আশংকা করে।এছাড়া তারা পরিবারের রক্ত সম্পর্ক পরিচয়েই সাচ্ছন্দ বোধ করে থাকেন।আমি এই ব্যাপারে ইসলাম কি বলে তা জানার জন্য কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানায় যে," পালকসন্তান রহিত হওয়ার বিধান এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কেননা তার পিতা-মাতারও পরিচয় পাওয়া যায় নি(তাকে রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া গেছিলো)।এটা তখন খাটে  যখন পরিচয় জেনেও পালন করে থাকে"।আমরা তাকে খালা (মাহরাম) বলে গণ্য করে থাকি।তার জাতীয় পরিচয়পত্র সহ অন্যান্য সব কাগজপত্রে পিতা-মাতা হিসাবে আমার নানা-নানির উল্লেখ্য আছে,বিভিন্ন মাধ্যমে সত্যটা বেরিয়ে আসতে চাইলেও সেটাকে কৌশলে গোপন করা হয়েছে।

এখন এই ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? এবং আমাদের করণীয় কি? এক্ষেত্রে  পূর্ণ বিধান জানানো গেলে তাতে অবশ্যই খুব উপকার হতো।

1 Answer

+3 votes
by (574,260 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

ইসলামে অন্য কারো সন্তান লালন-পালন ও তার অভিভাবকত্ব নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। যদি কোনো এতিম, গৃহহীন বা অবহেলিত শিশুকে নিজের সন্তানের ন্যায় অন্ন-বস্ত্র ও সব ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে লালন-পালন করে অথবা নিঃসন্তান দম্পতি কোনো শিশুকে স্নেহ করে লালন-পালন করে তাকে স্বেচ্ছায় কিছু দান করে, তাহলে শরিয়তে তা নিষিদ্ধ নয়। এতিম-অনাথ ও গরিব শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে তার দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাকে ইসলাম উত্সাহিত করে। ইসলাম এ ধরনের কাজকে অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে দুই আঙুলের ন্যায় অতি কাছাকাছি থাকব।’ (বুখারি : ৬০০৫)
,
নবী করিম (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এতিমের খোরপোশ ও লালন-পালনের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত দান করবেন।’ (তিরমিজি : ১৯১৭)
,
পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা অবৈধ।

হযরত আবু-যর রাযি থেকে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: (لَيْسَ مِنْ رَجُلٍ ادَّعَى لِغَيْرِ أَبِيهِ وَهُوَ يَعْلَمُهُ إِلا كَفَرَ، وَمَنْ ادَّعَى قَوْمًا لَيْسَ لَهُ فِيهِمْ نَسَبٌ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ)

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,

যে ব্যক্তি নিজ পিতা ব্যতীত সেচ্ছায় অন্য কারো দিকে নিজের পিতৃত্ব কে সম্পৃক্ত করল,বা যে ব্যক্তি নিজে গোষ্ঠী ব্যতীত ভিন্ন কোনো গোষ্টি থেকে আপন বংশধারা সাব্যস্ত করল, সে যেন তার শেষ ঠিকানা জাহান্নামকে বানিয়ে নেয়। (সহীহ বুখারী-৩৫০৮, সহীহ মুসলিম-৬১)

সুতরাং দত্তক নেওয়ার সময় স্মরণ রাখতে হবে, চুক্তিপত্রে সই করে সন্তানের পিতৃপরিচয়স্বত্ব ত্যাগ করে এমনভাবে দেওয়া যাবে না যে মা-বাবা আর কখনো ওই শিশুর মা-বাবা হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। ইসলাম এ কাজ কখনো সমর্থন করে না। কেননা ইসলাম সওয়াবের নিয়তে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে বলেছে, কিন্তু সন্তান দখল করা কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় বিলুপ্ত করার অনুমতি দেয়নি। অনেক সময় দেখা যায়, টাকার বিনিময়ে গরিব মা-বাবা সন্তান দত্তক দেন। এটাকে এক ধরনের সন্তান বেচাকেনাও বলা যেতে পারে। এটি কেবল অমানবিকই নয়, ঘৃণ্যও বটে। ইসলামে এ ধরনের স্বাধীন মানুষ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হারাম। 
,
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব—এক. ওই ব্যক্তি, যে কোনো কাজে আমার নামে কারো সঙ্গে কসম করার পর তা ভঙ্গ করেছে। দুই. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে সম্পদ অর্জন করেছে। তিন. আর যে ব্যক্তি কোনো লোক দিয়ে কাজ করিয়ে তার বিনিময় দেয়নি।’ (বুখারি : ২২২৭)
,
★লালন-পালনকারীর সঙ্গে পালিত সন্তান পর্দার ক্ষেত্রেও পুরোপুরি ইসলামের বিধান রক্ষা করে চলতে হবে। নিজ হাতে লালন-পালন করেছি বলে পর্দার বিধান লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। অর্থাত্ পালক নেওয়া শিশুটি ছেলে হলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে পালক নেওয়া মায়ের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। অন্যদিকে পালক নেওয়া শিশুটি মেয়ে হলে তাকে পালক নেওয়া বাবার সঙ্গে পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। কেননা ইসলামী শরিয়ত মতে, দত্তকসংক্রান্ত সম্পর্ক কখনো বংশীয় সম্পর্কে পরিণত হয় না। এমনকি তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কও অন্য সাধারণ মানুষের ন্যায়ই বৈধ। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। (তুহফাতুল ফুকাহা : ২/১২৩)

আরো জানুনঃ 
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তার সাথে পর্দা করতে হবে।
তাকে সমস্ত সত্য জানাতে হবে।
সত্য গোপন করা জায়েজ হবেনা।   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (3 points)
+1
যদি উনার মানসিক ক্ষতির আশংকা করা হয় তাহলেও কি জানাতে হবে?বড় ধরনের মানসিক বিপর্যয়ের আশংকা করা হয় কেননা এই সুদীর্ঘ সময় রক্তসম্পর্কের পরিচয়েই ছিলেন।জানাবেন দয়ে করে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...