আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
345 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
কিছুদিন আগে শবে মেরাজের ঘটনায় আমার নিকটস্থ বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেই দুইটা দল হয়ে যায়। একদল বলে, শবে মেরাজের হাদিসটা জাল, এমন অনেক আলেম বলেছেন। রেফারেন্স হিসেবে শায়খ আহমাদুল্লাহ, ড. খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহিঃ) এর আলোচনা এবং বইয়ের রেফারেন্স দিচ্ছেন। তাই এটা মানা যাবে না।
আবার সেই হাদিসটাকেই আরেকদল বলতেসে, এটা জাল না। যারা এটাকে জাল বলে তারা ওহাবী, তোমরা ওই আলেমদের নিয়েই থাকো, এটা জাল হলে রাস্ট্রীয়ভাবে মানা হতো না ইত্যাদি।
এই মুস্তাহাব বিষয়টা নিয়ে তাদের দুইদলের অবস্থাই এমন যে, আমার দলের আলেম ভালো, তোমার দলের আলেম খারাপ। আমার দল জান্নাতী, তোমার দল জাহান্নামী।
১. এমতাবস্থায় আমি কিভাবে তাদেরকে উম্মাহর ঐক্যের দিকে ডাকতে পারি?
২. আমি কি বলতে পারি যে, "এটা মুস্তাহাব বিষয়, যে পালন করতে চায় সে পালন করুক। যে না চায়, তার করার দরকার নেই। তবে এটা নিয়ে দ্বন্ধ না করাই উত্তম।"  এই কথার মাধ্যেমে কি আমি বিদায়াতকে সমর্থন করছি??

1 Answer

0 votes
by (713,000 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
কিন্তু রজব মাসে রোজা রাখা বা রজব মাসের কিছু অংশে রোজা রাখার ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। কিছু কিছু মানুষ রজব মাসের বিশেষ ফজিলত রয়েছে মনে করে এ মাসের বিশেষ কিছু দিনে যে রোজা রাখে এ ধরণের বিশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই।

তবে হারাম মাসসমূহে (রজব একটি হারাম মাস) রোজা রাখা মুস্তাহাব মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখ; এবং রোজা ভঙ্গও কর”[আবু দাউদ, হাদিস নং- ২৪২৮, আলবানী হাদিসটিকে যয়ীফ বা দুর্বল বলেছেন]

এ হাদিসটি যদি সাব্যস্ত হয় তাহলে হারাম মাসে রোজা রাখা মুস্তাহাব প্রমাণ হবে। অতএব, যে ব্যক্তি এ হাদিসের ভিত্তিতে রজব মাসে রোজা রাখে এবং অন্য হারাম মাসেও রোজা রাখে এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে রজব মাসকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে রোজা রাখা যাবে না।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) মাজমুউল ফাতাওয়া (২৫/২৯০) গ্রন্থে বলেন:
পক্ষান্তরে রজব মাসে রোজা রাখা সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস দুর্বল; বরঞ্চ মাওযু (বানোয়াট)। আলেমগণ এর কোনটির উপর নির্ভর করেন না। ফজিলতের ক্ষেত্রে যে মানের দুর্বল হাদিস বর্ণনা করা যায় এটি সে মানের নয়। বরং এ সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস মাওজু (বানোয়াট) ও মিথ্যা।

মুসনাদে আহমাদ ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি হারাম মাসসমূহে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হারাম মাসগুলো হচ্ছে- রজব, যুলক্বদ, যুলহজ্জ, মুহাররম। এটি চারটি মাসের ব্যাপারেই এসেছে। বিশেষভাবে রজব মাসের ব্যাপারে নয়। সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
“রজব মাসে রোজা রাখা ও নফল নামায পড়ার ব্যাপারে যে কয়টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে সব ক’টি মিথ্যা”[আল মানার আল-মুনিফ, পৃষ্ঠা- ৯৬]

ইবনে হাজার (রহঃ) ‘তাবয়িনুল আজাব’ (পৃষ্ঠা- ১১) বলেন:
রজব মাসের ফজিলত, এ মাসে রোজা রাখা বা এ মাসের বিশেষ বিশেষ দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। অথবা এ মাসের বিশেষ কোন রাত্রিতে নামায পড়ার ব্যাপারে সহিহ কোন হাদিস নেই। সমাপ্ত

শাইখ সাইয়্যেদ সাবেক (রহঃ) “ফিকহুস সুন্নাহ’ গ্রন্থে (১/৩৮৩) বলেন:
অন্য মাসগুলোর উপর রজব মাসের বিশেষ কোন ফজিলত নেই। তবে এটি হারাম মাসসমূহের একটি। এ মাসে রোজা রাখার বিশেষ কোন ফজিলত কোন সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়নি। এ বিশেষ যে ক’টি বর্ণনা রয়েছে এর কোনটি দলিল হিসেবে গ্রহণ করার উপযুক্ত নয়। সমাপ্ত

শাইখ উছাইমীনকে ২৭ শে রজব সিয়াম ও কিয়াম পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন: “সবিশেষ মর্যাদা দিয়ে ২৭ শে রজব সিয়াম ও কিয়াম পালন- বিদআত। আর প্রত্যেকটি বিদআতই ভ্রান্তি।” সমাপ্ত [মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ উছাইমীন, (২০/৪৪০)]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
রাসুল (সা.)-এর জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত্রি ছিল এই শবে মেরাজ। কিন্তু এ রাতে উম্মতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আমল সাব্যস্ত হয়নি। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো আমল সাব্যস্ত হতো, তাহলে অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর সহিহ হাদিসের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হতো। কিন্তু আল্লাহর বান্দারা মনে করে থাকেন যে, রজব মাসের ২৭ তারিখ রাত্রিতে তারা ব্যক্তিগত ইবাদত করবেন, তাহলে এতে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। যেহেতু আমরা ভালো কাজগুলো যেকোনো সময় করতে পারি।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি এভাবে বলতে পারবেন যে, "এটা উত্তত অনুত্তম বিষয়, যে পালন করতে চায় সে পালন করুক। যে না চায়, তার করার দরকার নেই। তবে এটা নিয়ে দ্বন্ধ না করাই উত্তম।"  এই কথার মাধ্যেমে  বিদায়াতকে সমর্থন হবে না। বরং মূলত এ কথার দ্বারা পালন না করার প্রতিই উৎসাহিতে করা হচ্ছে…...


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...