শরীয়তের বিধান মতে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইসলামে যেমন ফরজ, পর্দা পালন করাও অনুরুপ একটি ফরজ বিধান। সুতরাং বিনা ওজরে পর্দা লঙ্গন হয় এ ধরণের সকল প্রকার কাজই হারাম। অনলাইনে মহিলাদের ছবি আপলোড দিলে হাজারো পুরুষ সেই ছবি দেখে। বেগানা মহিলাদেরকে দেখা যেমন নাজায়িজ তেমনি তাদের ছবি দেখাও নাজায়িজ, ইন্টারনেটের ছবি হোক অথবা অন্যকোন ছবি হোক সর্বাবস্থায় তাদের ছবি দেখা নাজায়েজ।
,
ফটো বা ছবি দেখার দ্বারা পাপের পাশাপাশী তা হ্রদয় যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাড়ায়। উপরন্তুু দেখা ও কল্পনার দ্বারা চোখের যিনার গুনাহ হতে থাকে। তাই মহিলাদের ছবি অনলাইনে আপলোড করা, দেখা কোন মতেই জায়িজ নয়।
ইন্টারনেটে মহিলাদের ছবি আপলোড করলে যত বেগানা পুরুষ আপলোডকৃত ছবি দেখবে তাদের সকলের সমপরিমাণ গোনাহ আপলোডকারীর আমল নামায় যোগ হবে।
[প্রমাণ : ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া-৪/১০৬, কিফায়াতুল মুফতী ৫/৩৮৮, হিদায়া ৪,/৪৫৮, মিশকাত ২ /২৮০, সুরা নূর ১৮ /৩০]
.
আমাদের ইন্টারনেটের জগতকে দেখতে হবে অফলাইনের জীবনের অবস্থা অনুপাতে। যেমন অফলাইনে বেগানা নারীদের সাথে অহেতুক কথা বলা, তাদের সাথে দেখা করা, তাদের ছবি দেখা হারাম। তেমনি অনলাইনের বিধানও তা’ই হবে।
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِن
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩।
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
.
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَاصِمٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ مُوَرِّقٍ، عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে বাইরে বের হলে শাইতান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। — সহীহ, তিরমিজি ১১৭৩ মিশকাত (৩১০৯), ইরওয়া (২৭৩), তা’লীক আলা ইবনি খুযাইমা (১৬৮৫)
,
চাইনিজ স্ট্রেচিং ব্যায়াম, যাকে বলে Tai ji
ঘরে যেখানে কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষ নেই,সেখানে মিউজিক ছাড়া পরিপূর্ণ পোশাক পড়ে Tai ji" প্র্যাকটিস করার অনুমতি রয়েছে।
তবে অমুসলিমদের অনুকরণ, সেই চিন্তা ধ্যান ভিতরে আনা যাবেনা।
,
তবে অনেক ইসলামী স্কলারদের মতে যেহেতু এটি ইয়োগা ব্যায়ামের মতো হওয়ার কারনে নাজায়েজ, তাই সতর্কতামূলক এটি না করাই উচিত।
,
★তবে এর ভিডিও ধারন করা জায়েজ হবেনা।
কারন সেই ভিডিও পুরুষ মানুষ দেখবে।
যাহা কোনোভাবেই জায়েজ নেই।
(০৩)
যদি উক্ত ভিডিও না পাঠালে পরের সেমিষ্টারে পুনরায় পরীক্ষা দিতে হয়,সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবে,বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বুঝানোর চেষ্টা করবে।
,
তারপরেও যদি কোনো ভাবেই তারা না বুঝে, এবং তারা এমবিবিএস আটকিয়ে দিবে বলে,তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে সর্বশেষে এ ভিডিও পাঠানো যেতে পারে।
তবে তওবা ইস্তেগফার চালিতে যেতে হবে।
قَاعِدَة الضرورات تبيح الْمَحْظُورَات
তীব্র প্রয়োজন হারামকে হালাল করে দেয়। [কাওয়ায়েদুল ফিক্বহ, কায়দা নং-১৭০]
قَاعِدَة الضرورات تقدر بِقَدرِهَا
জরুরত তার সীমায় সীমিত থাকবে। [কাওয়ায়েদুল ফিক্বহ, কায়দা নং-১৭১]
(০৪)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ عَوْفٍ، عَنْ أَبِي رَجَاءٍ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ . فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " عَشْرٌ " . ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ . فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ " عِشْرُونَ " . ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ . فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ " ثَلاَثُونَ " .
মুহাম্মদ ইবন কাছীর (রহঃ) .... ইমরান ইবন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা একব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেঃ আসসালামু আলায়কুম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলে সে ব্যক্তি বসে পড়ে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে দশটি নেকী পেয়েছে। এরপর একব্যক্তি এসে বলেঃ আসসালামু আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি তার সালামের জবাব দিলে সে ব্যক্তি বসে পড়ে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বিশটি নেকী পেয়েছে। এরপরএকব্যক্তি এসে বলেঃআসসালামু আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লাহে ওয়া বারকাতুহু। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলে সে বসে পড়ে। তখন তিনি বলেনঃ সে ত্রিশটি নেকী পেয়েছে।
(আবু দাউদ ৫১০৫)
,
এর পরের হাদীসে এসেছে
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ سُوَيْدٍ الرَّمْلِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ أَظُنُّ أَنِّي سَمِعْتُ نَافِعَ بْنَ يَزِيدَ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو مَرْحُومٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِمَعْنَاهُ زَادَ ثُمَّ أَتَى آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ فَقَالَ " أَرْبَعُونَ " . قَالَ " هَكَذَا تَكُونُ الْفَضَائِلُ " .
ইসহাক ইবন সুওয়েদ রামলী (রহঃ) ... মুআয ইবন আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পূর্বোক্ত হাদীছের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে যে, এরপর এক ব্যক্তি আসে এবং বলেঃ আসসালামু আলায়কুম ওয়া-রহমাতুল্লাহে ওয়া-বারকাতুহু ওয়া-মাগফিরাতুহু। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে ব্যক্তি চল্লিশ নেকী পেয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ ভাবেই নেকী বেশী হতে থাকে।
(আবু দাউদ ৫১০৬)
,
★সুতরাং সালামের শেষে ও "ওয়া মাগফিরাতুহু" বলা যাবে।
,
তবে এই বিষয় নিয়ে ফুকাহায়ে কেরামগদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
সালামের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে “ওয়াবারাকাতুহু” এর পরে অনেকে “ওয়ামাগফিরাতুহু/ ওয়া জান্নাতু” বা এ জাতীয় অন্য বাক্য বৃদ্ধি করে থাকে। – এটি একটি ভুল আমাল। পূর্ণ সালাম হল আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু এবং পূর্ণ উত্তর হল ‘ওয়া আলাইকুমুস্সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’। সালামের সাথে ‘ওয়াবারাকাতুহু’ এর পরে আরো অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কোন কোন বর্ণনায় ‘ওয়াবারাকাতুহু’ এর পরে কিছু বাড়ানোর কথাও আছে। কিন্তু সেগুলো সনদের বর্ণনা সূত্রের নিরিখে সহীহ নয়। সুতরাং ‘ওয়াবারাকাতুহু’ এর পরে নিজ থেকে কিছু বাড়ানো ঠিক নয়। – সূরা হুদ–তাফসীরে কুরতুবী ৯/৭১; তবারানী, আওসাত, হাদীস ৭৮৬; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৭০; মিরকাত শরহে মিশকাত ৯/৫৫, আদ্দুরুল মুখতার ৬/৪১৫; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলা ১১৭। [মাসিক আল কাউসার, আগস্ট -২০০৬, পৃষ্ঠা-৩০] এবং [মাসিক আল কাউসার, সেপ্টেম্বর -২০০৮, পৃষ্ঠা-৩৩]