আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
7 views
ago in সালাত(Prayer) by (20 points)
আসসালামু আলাইকুম হযরত,

(১)  একাকী মাগরিব/এশা/ফজর সালাতের ফরজ অংশ পড়ার ক্ষেত্রে কি কিরাত জোড়ে পড়তে হবে?

(২) যহরের নামাজের পুর্বের সুন্নাত ছুটে গেলে ফরজের পর ২রাকাত সুন্নাহ আগে না পরে পড়বে?

(৩) কেউ যদি যেকোন ফরজ নামাজের পরের সুন্নাহ নামাজে মধ্যে সুরাহ ফাতিহার সাথে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তবে কি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী আদায়কারীর বিশেষ সওয়াবের অধিকারী হবে?

(৪) সালাতের মধ্যে কেউ যদি সুরা ফাতিহার পরের সুরায় অধক্রম বজায় না রাখে, তবে কি নামাজ সহীহ হবে কিনা?

(৫) নামাজে সুরা ফাতিহার পর একাধিক ছোট সুরা পড়ার বিধান কি।

1 Answer

0 votes
ago by (649,710 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
নামাযে শব্দ করে পড়ার অর্থ হল, অন্তত এতটুকু আওয়াজে পড়া যাতে নিজের পিছনে দাঁড়ানো কিছু লোক তা শুনতে পায়। আর নামাযে আস্তে পড়ার অর্থ হল, মাখরাজ আদায় করে জিহবা ও ঠোঁট নেড়ে ভালোভাবে উচ্চারণ করে পড়া।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
  
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ، عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، قَالَ سَأَلْنَا خَبَّابًا أَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ قَالَ نَعَمْ. قُلْنَا بِأَىِّ شَىْءٍ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ قَالَ بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ.

আবূ মা‘মার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খাববাব (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও ‘আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কী করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাড়ির নড়াচড়ায়। (বুখারী শরীফ ৭৪৬, (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭২৪)

আরো জানুনঃ 

بدائع الصنائع  :
’’وَإِنْ كَانَ مُنْفَرِدًا فَإِنْ كَانَتْ صَلَاةً يُخَافَتُ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ خَافَتَلَا مَحَالَةَ، وَهُوَ رِوَايَةُ الْأَصْلِ، وَذَكَرَ أَبُو يُوسُفَ فِي الْإِمْلَاءِ إنْ زَادَ عَلَى مَا يُسْمِعُ أُذُنَيْهِ فَقَدْ أَسَاءَ. وَذَكَرَ عِصَامُ بْنُ أَبِي يُوسُفَ فِي مُخْتَصَرِهِ وَأَثْبَتَ لَهُ خِيَارَ الْجَهْرِ وَالْمُخَافَتَةِ، اسْتِدْلَالًابِعَدَمِ وُجُوبِ السَّهْوِ عَلَيْهِ إذَا جَهَرَ، وَالصَّحِيحُ رِوَايَةُ الْأَصْلِ لِقَوْلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «صَلَاةُ النَّهَارِ عَجْمَاءُ مِنْ غَيْرِ فَصْلٍ» ؛ وَلِأَنَّ الْإِمَامَ مَعَ حَاجَتِهِ إلَى إسْمَاعِ غَيْرِهِ يُخَافِتُ فَالْمُنْفَرِدُ أَوْلَى وَلَوْ جَهَرَ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ فَإِنْ كَانَ عَامِدًا يَكُونُ مُسِيئًا، كَذَا ذَكَرَ الْكَرْخِيُّ فِي صَلَاتِهِ وَإِنْ كَانَ سَاهِيًا لَا سَهْوَ عَلَيْهِ نَصَّ عَلَيْهِ فِي بَابِ السَّهْوِ بِخِلَافِ الْإِمَامِ. (وَالْفَرْقُ) أَنَّ سُجُودَ السَّهْوِ يَجِبُ لِجَبْرِ النُّقْصَانِ، وَالنُّقْصَانُ فِي صَلَاةِ الْإِمَامِ أَكْثَرُ؛لِأَنَّ إسَاءَتَهُ أَبْلَغُ؛ لِأَنَّهُ فَعَلَ شَيْئَيْنِ نُهِيَ عَنْهُمَا: أَحَدُهُمَا - أَنَّهُ رَفَعَ صَوْتَهُ فِي غَيْرِ مَوْضِعِ الرَّفْعِ، وَالثَّانِي - أَنَّهُ أَسْمَعَ مَنْ أُمِرَ بِالْإِخْفَاءِ عَنْهُ، وَالْمُنْفَرِدُ رَفَعَ صَوْتَهُ فَقَطْ فَكَانَ النُّقْصَانُ فِي صَلَاتِهِ أَقَلَّ، وَمَا وَجَبَ لِجَبْرِ الْأَعْلَى لَا يَجِبُ لِجَبْرِ الْأَدْنَى وَإِنْ كَانَتْ صَلَاةً يُجْهَرُ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ فَهُوَ بِالْخِيَارِ، إنْ شَاءَ جَهَرَ وَإِنْ شَاءَ خَافَتَ، وَذَكَرَ الْكَرْخِيُّ إنْ شَاءَ جَهَرَ بِقَدْرِ مَا يُسْمِعُ أُذُنَيْهِ وَلَا يَزِيدُ عَلَى ذَلِكَ، وَذَكَرَ فِي عَامَّةِ الرِّوَايَاتِ مُفَسَّرًا أَنَّهُ بَيْنَ خِيَارَاتٍ ثَلَاثٍ: إنْ شَاءَ جَهَرَ وَأَسْمَعَ غَيْرَهُ، وَإِنْ شَاءَ جَهَرَ وَأَسْمَعَ نَفْسَهُ، وَإِنْ شَاءَ أَسَرَّ الْقِرَاءَةَ، أَمَّا كَوْنُ لَهُ أَنْ يَجْهَرَ فَلِأَنَّ الْمُنْفَرِدَ إمَامٌ فِي نَفْسِهِ، وَلِلْإِمَامِ أَنْ يَجْهَرَ. وَلَهُ أَنْ يُخَافِتَ بِخِلَافِ الْإِمَامِ؛ لِأَنَّ الْإِمَامَ يَحْتَاجُ إلَى الْجَهْرِ لِإِسْمَاعِ غَيْرِهِ وَالْمُنْفَرِدُيَحْتَاجُ إلَى إسْمَاعِ نَفْسِهِ لَا غَيْرُ، وَذَلِكَ يَحْصُلُ بِالْمُخَافَتَةِ، وَذُكِرَ فِي رِوَايَةِ أَبِي حَفْصٍ الْكَبِيرِ أَنَّ الْجَهْرَ أَفْضَلُ؛ لِأَنَّ فِيهِ تَشْبِيهًا بِالْجَمَاعَةِ، وَالْمُنْفَرِدُ إنْ عَجَزَ عَنْ تَحْقِيقِ الصَّلَاةِ بِجَمَاعَةٍ لَمْ يَعْجِزْ عَنْ التَّشَبُّهِ، وَلِهَذَا إذَا أَذَّنَ وَأَقَامَ كَانَ أَفْضَلَ هَذَا فِي الْفَرَائِضِ وَأَمَّا فِي التَّطَوُّعَاتِ فَإِنْ كَانَ فِي النَّهَارِ يُخَافِتُ، وَإِنْ كَانَ فِي اللَّيْلِ فَهُوَ بِالْخِيَارِ إنْ شَاءَ خَافَتَ وَإِنْ شَاءَ جَهَرَ، وَالْجَهْرُ أَفْضَلُ؛ لِأَنَّ النَّوَافِلَ أَتْبَاعُ الْفَرَائِضِ، وَالْحُكْمُ فِي الْفَرَائِضِ كَذَلِكَ....‘‘الخ (١/ ١٦١)

সারমর্মঃ  জোড়ে কিরাআতের নামাজে মুনফারিদ তথা একাকী নামাজ আদায় কারীর ইখতিয়ার রয়েছে,সে চাইলে জোড়েও কিরাআত পড়তে পারে।
চাইলে আস্তেও কিরাআত পড়তে পারে।

জামাতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে যেসব নামাজে কিরাত জোরে পড়া হয়, সেই নামাজগুলো একাকী পড়ার সময় কিরাত আস্তে ও জোরে, উভয় পদ্ধতিতেই পড়া যায়। তবে অধিক জোরে না পড়ে স্বাভাবিক আওয়াজে পড়বে। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/২৫১)

ইবনু কুদামা (রহ.) বলেন:

"إذا صلى المنفرد صلاة يجهر فيها، فله الجهر، لأنه لا يختلف حكمها في الانفراد والجماعة" — المغني لابن قدامة (১/৪৩৩)

অনুবাদ:
"যদি একাকী ব্যক্তি এমন কোনো নামাজ পড়ে যাতে জোরে পড়া হয়ে থাকে (যেমন ইশা), তাহলে তার জন্যও জোরে পড়া বৈধ, কারণ এই নামাজের হুকুম জামাআতে ও একাকী একই।"

ইমাম নববী (রহ.) বলেন:

"وإذا صلى منفردا فله الجهر في موضع الجهر، والإسرار في موضعه" — الروضة (১/৩৭১)

অনুবাদ:
"যদি কেউ একাকী নামাজ পড়ে, তবে যেখানে জোরে পড়া সুন্নত, সেখানে জোরে পড়তে পারবে, আর যেখানে আস্তে পড়া সুন্নত, সেখানে আস্তে।"

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
একাকী মাগরিব/এশা/ফজর সালাতের ফরজ অংশ পড়ার ক্ষেত্রে একাকী নামাজ আদায় কারীর ইখতিয়ার রয়েছে,সে চাইলে জোড়েও কিরাআত পড়তে পারে।
চাইলে আস্তেও কিরাআত পড়তে পারে।

তবে কিরাআত জোড়ে পড়াই উত্তম। (অধিক জোরে না পড়ে স্বাভাবিক আওয়াজে পড়বে।)

(০২)
এক্ষেত্রে জোহরের ফরজ নামাজ আদায় করার পর দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে তারপর যোহরের পূর্বের সেই চার রাকাত সুন্নত আদায় করবে।

ইবনে মাজাহ এর ১১৫৮ নং হাদীসে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، وَزَيْدُ بْنُ أَخْزَمَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ مَعْمَرٍ، قَالُوا حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ دَاوُدَ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا قَيْسُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ شَقِيقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ إِذَا فَاتَتْهُ الأَرْبَعُ قَبْلَ الظُّهْرِ صَلاَّهَا بَعْدَ الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের চার রাকআত সুন্নাত ছুটে গেলে, তিনি তা যোহরের দু রাকআত সুন্নাতের পর পড়তেন।
(তিরমিযী ৪২৬)

আরো জানুনঃ- 

(০৩)
এক্ষেত্রে যদি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি আর পাঠ না করে,সেক্ষেত্রে সে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী আদায়কারীর ন্যায় বিশেষ সওয়াবের অধিকারী হবেনা।

(০৪)
নামাজ সহীহ হবে।
তবে ফরজ নামাজের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সুরার ক্রম বজায় না রাখলে নামাজ মাকরুহ হবে।

(০৫)
পড়া যাবে।
তবে সুরার ক্রম বজায় রাখতে হবে। মাঝে কয়েক সূরা বাদ দিয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে কমপক্ষে দুটি সূরা বাদ দিতে হবে একটি সূরা বাদ দিয়ে পরের সূরা পড়া যাবে না।

উদাহরণস্বরূপ সূরা হুমাযাহ এরপর সূরা ফীল এরপর সূরা কুরাইশ এরপর সূরা মাউন।

আপনি যদি ফরজ নামাজে সূরা হুমাযাহ পাঠ করে মাঝে সুরা ফিল বাদ দিয়ে সূরা কুরাইশ তেলাওয়াত করেন, তাহলে এটি মাকরুহ হবে।

আর যদি সূরা হুমাযাহ পাঠ করে মাঝে কোন সূরা বাদ না দিয়ে সুরা ফিল তিলাওয়াত করেন,অথবা মাঝে দুটি সুরা বাদ দিয়ে সূরা মাউন হতে তেলাওয়াত করেন, তাহলে কোন সমস্যা হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...