বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/69174/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,
বিবাহ পূর্ব প্রেম পুরোপুরি নাজায়েজ।
■ মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
,
■ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
তওবার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/5905/
গোনাহের শাস্তি ও তাওবা সম্পর্কে জানুন- https://www.ifatwa.info/906
,
১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ছেলের সাথে কথা-বার্তা, দেখা সাক্ষাত করা, মেসেজ করা, মেসেজের উত্তর ও ঐ মেয়ের জন্য হারাম ও কবিরা গোনাহ। ইসলাম এগুলোর অনুমতি দেওয় না। করলে গোনাহ হবে। তাই এগুলো পরিহার করা চায় এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা ও তাওবা করতে হবে।
প্রিয় বোন! প্রথম থেকেই তার সাথে কথা-বার্তা না বললে এমন হতো না। এখন যেমন কষ্ট অনুভব হচ্ছে। তারপরও আল্লাহ তায়ালার জন্য জাহান্নামের ভয়ে ঐ ছেলের সাথে কথা-বার্তা, দেখা সাক্ষাত করা, মেসেজ করা, মেসেজের উত্তর দেওয়া সব কিছু বন্ধ করে দিবেন। কারণ,
,
■ আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ. لَا يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ. وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَـٰكِن كَانُوا هُمُ الظَّالِمِينَ. وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ۖ قَالَ إِنَّكُم مَّاكِثُونَ
নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে চিরকাল থাকবে। তাদের থেকে আযাব লাঘব করা হবে না এবং তারা তাতেই থাকবে হতাশ হয়ে। আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি; কিন্তু তারাই ছিল জালেম। তারা ডেকে বলবে, হে মালেক, পালনকর্তা আমাদের কিসসাই শেষ করে দিন। সে বলবে, নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে। সূরা যুখরুফ, আয়াত নং-৭৪-৭৭
,
■ হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِسِ بْنِ جَزْءٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فِى النَّارِ حَيَّاتٍ كَاَمْثَالِ الْبُخْتِ تَلْسَعُ اِحْدَهُنَّ الْلَسْعَةَ فَيَجِدُ حمَوَتَهَا اَرْبَعِيْنَ خَرِيْفًا وَاِنَّ فِى النَّارِ عَقَارِبَ كَاَمْثَالِ الْبِغَالِ الْمُؤْكَفَةِ تَلْسَعُ اِحْدَهُنَّ الْلَسْعَةَ فَيَجِدُ حَمْوَتَهَا اَرْبَعِيْنَ خَرِيْفًا.
আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস ইবনে জাযয়ে (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, জাহান্নামের মধ্যে ‘খোরাসানী’ উটের ন্যায় বিরাট বিরাট সাপ আছে। সে সাপ একবার দংশন করলে তার বিষ ও ব্যাথা চল্লিশ বছর পর্যন্ত থাকবে। আর জাহান্নামের মধ্যে এমন সব বিচ্ছু আছে যা পালান বাঁধা খচ্চরের মত। যা একবার দংশন করলে তার বিষ ব্যথার ক্রিয়া চল্লিশ বছর পর্যন্ত অনুভব করবে (আহমাদ, মিশকাত হা/৫৬৯১)
,
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ غِلْظَ جِلْدِ الْكَافِرِ اِثْنَانِ وَاَرْبَعُوْنَ ذِرَاعًا وَاِنَّ ضِرْسَهُ مِثْلُ اُحُدٍ وَاِنَّ مَجْلِسَهُ مِنْ جَهَنَّمَ مَا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِيْنَةِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, জাহান্নামের মধ্যে কাফেরের গায়ের চামড়া হবে বিয়াল্লিশ হাত মোটা, দাঁত হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান এবং জাহান্নামীদের বসার স্থান হবে মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী ব্যবধান পরিমাণ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৭৫; হাদীছ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৩১)।
,
২. আপনার প্রধান কাজ তো হলো আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তাওবা করা। আর যদি আপনি আসলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন। এক কথায়, ছেলেটির সঙ্গে সব ধরণের যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিন। যোগাযোগ বন্ধ করার কারণে ছেলেটি যদি মনোকষ্ট নেয় তাহলে আপনার কোনো গুনাহ তো হবেই না; বরং নিজে গুনাহ থেকে বাঁচার এবং ছেলেটিকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর সাওয়াব পাবেন।
,
তার কথা মনে পড়ে, এমন কোনো কাজ, স্থান সবকিছু থেকেই দূরে থাকবেন। মনের কামনার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রধান অস্ত্র হল ঈমান। ঈমান সুদৃঢ় রাখতে হবে। ধৈর্য ও মনের দৃঢ়-সংকল্পতা এবং সুপুরুষের মত মনের স্থিরতা। মনের খেয়াল-খুশীকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দৃঢ়-সংকল্প হোন, যে আপনি ঐ শয়তানী কুমন্ত্রণায় সায় দেবেন না। অতএব ধৈর্যের সাথে শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন এবং তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন।
,
নির্জনতা ত্যাগ করুন। কারণ, নির্জনতায় ঐ শ্রেণীর কুবাসনা মনে স্থান পায় বেশী। অতএব সকল অসৎ-চরিত্রের বন্ধু থেকে দুরে থেকে সৎ-বন্ধু গ্রহণ করে বিভিন্ন সৎ আলোচনায় প্রবৃত্ত হোন। আল্লাহর যিকরে মনোযোগ দিন। বিভিন্ন ফলপ্রসু বইপুস্তক পাঠ করুন। সম্ভব হলে সে জায়গা একেবারে বর্জন করুন, যে জায়গায় পা রাখলে তার সাথে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফোন/মেসেজ এলে তার উত্তর দিবেন না।
,
প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে-বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি পুনরায় এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন।
,
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
,
১. শরীয়তের বিধান হলো যদি দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সমঝদার সাক্ষ্যির সামনে প্রাপ্ত বয়স্ক পাত্র ও পাত্রি যদি প্রস্তাব দেয় এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নেয়, তাহলে ইসলামী শরীয়াহ মুতাবিক বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। অভিভাবকের সম্মতি থাকুক বা না থাকুক। অভিভাবক জানুক বা না জানুক।
,
২. যেহেতু তার সাথে অনেক ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। তাই তাকেই বিয়ে করবে। মাতাপিতার সন্তুষ্টি ও অনুমতি নিয়ে সবাইকে অগ্রসর হতে হবে এবং মাতাপিতার সন্তুষ্টিই দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের উত্তম মাধ্যম। আপনি প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মহব্বত, ভালোবাসা ও নরম ভাবে পিতা-মাতাকে আরো বুঝাতে থাকুন। প্রয়োজনে আপনি নিজে না বুঝিয়ে আপনার নিকট আত্মীয়দের কারোর মাধ্যমেও বুঝাতে পারেন যাদের কথা আপনার পিতা-মাতা শুনবে। সর্বোপরি আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দুআ করতে থাকুন।