শায়খ,আমি এখানে পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করছি।
আমি ২০১৯ সালে পরিবারের অগোচরে একটি ছেলে বিয়ে করে ফেলি।তখন আমার পক্ষে পরিবারকে জানানো সম্ভব ছিলো না।কারণ ছেলের আর্থিক অবস্থা,পড়াশুনা,বংশমর্যাদা আমাদের সমকক্ষ ছিলো না।এখানে আমি প্রথম থেকে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরছি।
প্রথমে ছেলের ব্যাপারে বলি -
-ছেলে বর্তমানে ঢাকায় একটি কোচিং সেন্টার চালায়।এটা ছাড়া তার বলতে গেলে উল্লেখযোগ্য কোনো ইনকাম সোর্স নেই।ছেলের শিক্ষাগত যোগ্যতা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত।
-ছেলের বাবা একটি গার্মেন্টস এ মাঝারি টাইপের পদে চাকরী করে।
- ছেলেদের ঢাকায় কোনো বাড়িঘর নেই।সিরাজগঞ্জে তাদের একটি একতলা বাড়ি আছে।এছাড়া তাদের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সম্পদ নেই।
- ছেলেদের বংশ ভালো।
- ছেলের পরিবার দীনদার নয়।
মেয়ের ব্যাপারে -
- মেয়ে বর্তমানে অনার্সের প্রায় শেষ দিকে।নিজের কোনো ইনকাম সোর্স নেই।
- মেয়ের বাবা সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশ ভালো পদে চাকরী করতেন।এখন অবসরপ্রাপ্ত।
- মেয়ের বাবার শহরে দুইতলা বাড়ি আছে,গ্রামেও বাড়ি আছে,জমিজমা আছে,শহরে আরো জায়গা আছে,গ্রামে বাগান আছে।
- মেয়েদের বংশ ভালো।
- মেয়ের পরিবার যথেষ্ট দ্বীনদার।
২০১৯ সালে যখন আমরা বিয়ে করি বিয়ের কিছুদিন আগে ছেলে আমাকে জানায় যে তার পড়াশুনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত।অথচ সম্পর্কের শুরুতে প্রথমে বলেছিল,সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে।
আমি সেই বিষয়টি মেনে নিয়ে হারাম সম্পর্কে থাকতে চাইনা বলে তাকে বিয়ে করে ফেলি।বিয়ের পরে আমি জানতে পারি যে,ছেলে যে কোচিং সেন্টার চালায় সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর দিয়ে চলে।অর্থাৎ,ছেলের আশেপাশের এলাকায় সবাই জানে যে ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেছে।কিন্তু আসলে তা মিথ্যা। আমি তাকে বারবার বলতে থাকি এই মিথ্যা থেকে বের হয়ে আসতে।এই মিথ্যার উপার্জনের সংসারে আমি যাবো না।ছেলে বারবার আমাকে বুঝাতে থাকে যে,সে চাইলেই এখন এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না।
এর কিছুদিন পর আমি জানতে পারি যে,ছেলে আমাকে আরো একটি বিষয়ে মিথ্যা বলেছিলো।ছেলে বলেছিলো,তার ছোট ভাই বুয়েটে পড়ে।অথচ পরে আমি জানতে পেরেছি যে সে বুয়েটে না বরং একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।ছেলে তার বাবার চাকরি সম্পর্কেও বিয়ের আগে আমাকে মিথ্যা বলেছিলো।
ছেলে তার নিজের সম্পর্কে আরও কোনো মিথ্যা বলেছে কিনা তা আজ পর্যন্ত আমি জানিনা।কারণ ছেলের সাথে আমার ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিলো।তার বাস্তব জীবন সম্পর্কে আমি শুধু ততটুকুই জানি,যতটুকু সে নিজে থেকে জানিয়েছে।
এভাবে করে ৬ বছর চলতে থাকে।এর মধ্যে ছেলে একটি উন্মুক্ত কলেজে প্রভাষকের চাকরী নেয়, জাল সার্টিফিকেট দিয়ে।আমি অনেকবার বলেছিলাম বিষয়টা ঠিক হচ্ছেনা।এভাবে করে উপার্জন হালাল হবে না।কিন্তু ছেলে বলেছিলো,সে এই চাকরী অল্প সময়ের জন্য নিয়েছে।পরে আবার ছেড়ে দিবে।কিন্তু চাকরী ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা না করে বরং সে তার কোচিংয়ের পোস্টারে তার এই নতুন পরিচয় যুক্ত করে।ছেলের চারপাশে শুধু মিথ্যা দিয়ে ভরপুর।এমনকি সে আমাকে নামাজ নিয়েও মিথ্যা বলেছে বহুবার।বিয়ের প্রথমদিকে ঠিকমতো নামাজও পরতো না।এখন আমাকে বলেছে যে,সে নিয়মিত নামায পরে।কিন্তু আমি তার কথা বিশ্বাস করতে পারছি না।
বর্তমান পরিস্থিতি -
আমার পরিবার এখনো জানে না।শুধু আমার বড়ো বোন আর দুলাভাই জানে।
আমার আব্বা আম্মা যদি কখনও জানে,তারা কোনোভাবেই এই ছেলেকে মেনে নিবে না।সে কোনোভাবেই আমাদের সমকক্ষ না।তার এই মিথ্যাচার,এই প্রতারণার করে উপার্জনের উপায় এইসব জানলে আমার পরিবার কোনোদিনও তাকে মেনে নিবে না।আর আমিও তাকে কোনোভাবেই ভরসা করতে পারছি না আর।এতবছর ধরে তাকে বলার পরেও যখন সে এই প্রতারণামূলক পেশা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি,পরবর্তীতে সে এটা থেকে বের হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা আমি পাচ্ছি না।
এখন আমিও এই ছেলের সংসারে যেতে চাইনা।বিয়ের পর তার প্রতারণা গুলো আমি জানতে পেরে সরে আসতে চাইলে সে আমাকে বলতো তাকে একটু সময় দিতে ভালো কিছু করার জন্য। ছেলেকে আমি ৬ বছর অনেকবার বুঝিয়েছি,অনেক চেষ্টা করেছি যেনো সে এই মিথ্যার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে।কিন্তু সে তা করেনি।এখন পর্যন্ত ছেলের কোনো নিজস্ব হালাল ইনকাম সোর্স নেই।যা আছে সব মিথ্যার উপর দিয়ে চলে।ছেলে আমাকেও ছোটখাটো যে কোনো বিষয়ে,যে কোনো সময় অনেক অনেক মিথ্যা কথা বলে।তার উপর থেকে আমার বিশ্বাস পুরোপুরি চলে গেছে।সে আদৌ কোনোদিন এই প্রতারণার জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে কিনা সন্দেহ।
আমি এখন তালাক নিতে চাই,কিন্তু ছেলে কোনোভাবেই তালাক দিতে রাজি নয়।কোনোভাবেই না।সে খোলা তালাকের ক্ষেত্রেও সমঝোতা করতে চায়না।আবার নিজেও তালাক দিবে না কোনোদিন।
যেহেতু আমাদের বিয়েটা শুধু মৌখিকভাবে পড়ানো হয়েছিলো তাই কোনো কাগজপত্র/ডকুমেন্টস নাই।এক্ষেত্রে তো আমি আদালতেও যেতে পারবো না।
এখন আমার করণীয় কি?সে আমাকে এখনো বিবাহের মোহর পরিশোধ করে নি।
আমি কি কাজীর কাছে গিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের কোনো আবেদন করতে পারবো?ছেলে যদি কাজীর কাছেও না যায় সেক্ষেত্রে কোনো উপায় আছে কি?
ছেলের সাথে কি আমার কুফু মিলে?
কুফু না মিলার কারণে কি আমার বড় বোন আর দুলাভাই আমার অভিভাবক হিসেবে বিয়ে ভাঙতে পারবে কোনোভাবে?
আমি তার থেকে মুক্তি পাবো কিভাবে?কোনো উপায় ই কি নেই?