আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
19 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (7 points)
১ বছর ৩/৪ মাস আগে আমি একটি গরু ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে একজনের কাছে বর্গা দেই। চুক্তির শর্ত ছিল লাভের টাকা হাফ হাফ পাবো ২ জন আর আমি কিছু এক্সট্রা টাকা উনাকে খরচ বাবদ বেশী দিবো। মূল ৫০ হাজার আমার থাকবে। চুক্তির টাইমে আমি বর্গা রিলেটেড ইসলামী শরিয়ার নিয়ম জানতামনা। চুক্তির প্রায় ৮ মাস পর যখন আমি শরিয়ার নিয়ম জানতে পারলাম তখন গরু পালনকারীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম লাভ হাফ হবে, গরুর খরচ ও হাফ আমি বহন করবো। এর ভিতরে গরু টা অনেক অসুস্থ হয়ে যায়। আমি চিকিৎসার খরচ হাফ দিতে রাজি ছিলাম (বিক্রির পর হিসাব শেষে)। কিছুদিন পর গরুর বাছুর হয়। আমি দুধ এর হিসাব নেইনি। রিসেন্ট গরু টা টোটাল ৭০ হাজার টাকায় সেল করা হয়েছে বাছুর সহ। গরু পালনকারী ব্যাক্তি আমাকে মোট ৫০হাজার+লাভ১০ হাজার ফেরত দিতে চাচ্ছে খুশি মনে। আমার প্রশ্ন হলো -

১) পালনকারী ব্যাক্তি যে আমার শরিয়াসম্মত প্রস্তাব পেয়েও খরচ এর টাকা খুশিমনে না নিয়ে আমাকে ১০ হাজার লাভ দিচ্ছে এটা আমার জন্য হালাল হচ্ছে কিনা? না হলে আমার করণীয় কী?

২)দুধ বিক্রির টাকার হিসাব ও আমি নেইনি আবার অসুস্থতার সময় চিকিৎসা খরচ ও দেইনি। এই ২ হিসাব কাটাকাটি হবে কী?

1 Answer

0 votes
by (641,400 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

ওয়াবিসা ইবনে মা'বাদ রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻭﻋﻦ ﻭﺍﺑﺼﺔَ ﺑﻦِ ﻣَﻌْﺒِﺪٍ  ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﷺ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺟِﺌْﺖَ ﺗﺴﺄَﻝُ ﻋﻦِ ﺍﻟﺒِﺮِّ؟ » ﻗُﻠْﺖُ : ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺍﺳْﺘَﻔْﺖِ ﻗَﻠْﺒَﻚَ، ﺍﻟﺒِﺮُّ : ﻣَﺎ ﺍﻃْﻤَﺄَﻧَّﺖْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲُ، ﻭﺍﻃْﻤَﺄَﻥَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻘَﻠْﺐُ، ﻭﺍﻹِﺛﻢُ : ﻣَﺎ ﺣﺎﻙَ ﻓﻲ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ، ﻭﺗَﺮَﺩَّﺩَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪْﺭِ، ﻭﺇِﻥْ ﺃَﻓْﺘَﺎﻙَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺃَﻓْﺘَﻮﻙَ » ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ، ﺭﻭﺍﻩُ ﺃﺣﻤﺪُ ﻭﺍﻟﺪَّﺍﺭﻣِﻲُّ ﻓﻲ " ﻣُﺴْﻨَﺪَﻳْﻬِﻤﺎ ."

তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট গেলাম।রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে বললেন,তুমি কি নেকীর কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছ?আমি বললাম জ্বী হ্যা, ইয়া রাসূলাল্লাহ!

তখন তিনি আমাকে বললেন,তুমি তোমার অন্তরের নিকট ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করো।নেকি হল সেটা যার উপর অন্তর প্রশান্তিবোধ করে,এবং যে জিনিষের উপর অন্তর শান্ত থাকে।আর গোনাহ হল সেটা,যা অন্তরে অশান্তি সৃষ্টি করে নাড়িয়ে দেয়,এবং অন্তরকে দ্বিধান্বিত করে ফেলে।যদিও উক্ত কাজ সম্পর্কে মুফতিগণ বৈধতার ফাতাওয়া প্রদাণ করুক না কেন।(মুসনাদে আহমদ-১৭৫৪৫)

রাসূল (সাঃ) বলেনঃ

أتقوا الظلم فإن الظلم ظلمات يوم القيامة
তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো। কেননা কিয়ামতের দিন জুলুমের পরণিাম হবে খুবই অন্ধকার। (মুসলিম)

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমানগণ তার শর্তের উপর থাকবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৯০, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪০৩৯}

★শরীয়তে ধোকামুলক কোনো চুক্তি বৈধ নয়। 

সহীহ পদ্ধিত হল, গরুর মালিক লালন-পালনকারীর সাথে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চুক্তি করবে। সেক্ষেত্রে গরু থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় আয় গরুর মালিক পাবে আর লালন-পালনকারী খাবারের খরচ ও নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে। (আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩৮)

কেউ গরু ছাগল বর্গা দিতে চাইলে তার জায়েয পদ্ধতি হল, প্রথমে গরু বা ছাগলের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যেমন একটি গরুর মূল্য চল্লিশ হাজার টাকা। অতপর অর্ধেক গরু অর্ধেক দামে তথা বিশ হাজার টাকায় বর্গা গ্রহণকারীর নিকট বিক্রি করবে। এরপর বর্গা গ্রহণকারী গরু বা ছাগল লালন-পালন করতে থাকবে। লালন-পালন শেষে তারা উভয়ে গরু ছাগল, দুধ ও বিক্রি পরবর্তি লভ্যাংশতে অর্ধা অর্ধি মালিক হবে। আর লালন-পালনের খরচ উভয়ে সমান ভাবে বহন করবে। আর এ পদ্ধতিই উত্তম।

বৈধ পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয় যে,

  والحیلة فی ذلک أن یبیع نصف البقرة من ذلک الرجل ونصف الدجاجة ونصف بذر الفیلق بثمن معلوم حتی تصیر البقرة وأجناسھا مشترکہ بینھما فیکون الحادث بینھماعلی الشرکة کذا فی الظھیریة(فتاوی عالمگیری ۲: ۳۳۵)۔

যার কাছে বর্গা দিতে চাচ্ছে তার সাথে এভাবে চুক্তি করবে যে, তুমি এক বছর আমার পশুটি লালন পালন কর, আমি তোমাকে কথার কথা একশত টাকা দিব। তারপর এক বছর পর যদি মালিক বাছুর নিতে চায়, তাহলে একশত টাকা পরিশোধ করে বাছুর নিয়ে নিবে। আর যদি লালনপালনকারী বাছুর নিতে চায়, তাহলে একশত টাকা নেবার বদলে বাছুরটি নিয়ে নিবে উভয়ের সন্তুষ্টিতে। এভাবে চলতে থাকলে এতে কোন শরয়ী বিধিনিষেধ নেই।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-২/৩৩৫)

আরো জানুনঃ- 

জায়েজ পদ্ধতি হলোঃ প্রথমে পশুর মালিক বাছুরটি ক্রয় করে যে লালন পালন করবে, তাকে বলবে যে, আমি তোমার কাছে আমার পশুটির অর্ধেক বাকিতে বিক্রি করে দিলাম। বিক্রির মূল্য ধরবে যতটাকা দিয়ে পশুটি ক্রয় করেছিল তত টাকা।

অর্ধেকের মূল্য পরিশোধ করবে পরবর্তীতে। এবার লালনপালনকারী উক্ত পশুর অর্ধেকের মালিক হয়ে গেল। পশুটির লালন পালনের অর্ধেক খরচ মূল মালিক বহন করবে। তারপর যখন উক্ত পশুটি বড় হবে। বিক্রি করা হবে, তখন প্রথমে ঋণ আদায় হিসেবে পশুটির মূল্য পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা উভয়ের মাঝে সমান হারে বন্টন করে নিবে। এভাবে লেনদেন ও চুক্তি করলে তা শরীয়ত সিদ্ধ হবে।

উদাহরণতঃ আব্দুল্লাহ দশ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাছুর ক্রয় করল। তারপর সেটিকে আব্দুর রহীমের কাছে লালনের জন্য দিতে চাচ্ছে। তখন আব্দুল্লাহ বলবে যে, আমি আমার বাছুরটির অর্ধেক অংশ দশ হাজার টাকার বিনিময়ে আব্দুর রহীমের কাছে বিক্রি করলাম। আব্দুর রহীম পরবর্তীতে উক্ত টাকা পরিশোধের শর্তে তা ক্রয় করে নিবে।

এরপর সে তা লালন পালন করবে। লালন পালনের অর্ধেক খরচ আব্দুল্লাহও প্রদান করবে। কয়েক বছর পর উক্ত পশুটি কথার কথা বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করা হল। তখন প্রথমে দশ হাজার টাকা আব্দুর রহীম আব্দুল্লাহকে প্রদান করবে পূর্বের ঋণ পরিশোধ হিসেবে। তারপর বাকি দশ হাজার অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিবে। অর্থাৎ পাঁচ হাজার আব্দুর রহীম। আর পাঁচ হাজার আব্দুল্লাহ।

গরুর মালিক লালন-পালনকারীর সাথে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চুক্তি করবে। সেক্ষেত্রে গরু থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় আয় গরুর মালিক পাবে আর লালন-পালনকারী খাবারের খরচ ও নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে।

মোটকথা দুটি জায়েয পদ্ধতি রয়েছে:-

১ম পদ্ধতি: যে পশুটি বর্গা দিতে চাচ্ছে, একটি নামমাত্র দাম ধরে যার কাছে বর্গা দিতে চাচ্ছে তার কাছে অর্ধেক পশুটি বিক্রি করে দিবে। আর যে টাকাটি বিক্রি হিসেবে মালিক পেল তা এক বা দুই বছর নির্ধারিত করে লালন পালনের মুজুরী হিসেবে পশু গ্রহিতাকে প্রদান করবে। এখন উভয়ে উক্ত পশুটির অর্ধেক অর্ধেক মালিক। সে হিসেবে পশুটির বাচ্চা ও দুধ ইত্যাদি সমান সমান ভোগ করতে পারবে। শরয়ী কোন সমস্যা এতে নেই।

২য় পদ্ধতি: যার কাছে বর্গা দিতে চাচ্ছে তার সাথে এভাবে চুক্তি করবে যে, তুমি এক বছর আমার পশুটি লালন পালন কর, আমি তোমাকে কথার কথা একশত টাকা দিব। তারপর এক বছর পর যদি মালিক বাছুর নিতে চায়, তাহলে একশত টাকা পরিশোধ করে বাছুর নিয়ে নিবে। আর যদি লালনপালনকারী বাছুর নিতে চায়, তাহলে একশত টাকা নেবার বদলে বাছুরটি নিয়ে নিবে উভয়ের সন্তুষ্টিতে। এভাবে চলতে থাকলে এতে কোন শরয়ী বিধিনিষেধ নেই।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতি শরীয়ত সম্মত না হওয়ায় উক্ত লভ্যাংশ নেওয়া জায়েজ হবে না।

হ্যাঁ,  পশু বাবদ তার যত খরচ হয়েছে সমস্ত খরচের অর্ধেক আপনি পরিশোধ করলে, সেক্ষেত্রে যে লাভ বাকি থাকবে তার অর্ধেক আপনি তার সন্তুষ্টিতে নিতে পারেন।

(০২)
হিসাব কাটাকাটি না করে দুধ বিক্রি বাবদ কত টাকা হয়েছে আর চিকিৎসা বাবদ কত টাকা খরচ হয়েছিল, সব হিসাব খাতায় লিখে শরৎ শরীয়ত সম্মত ভাবে কাজ করতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...