আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তায,
আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আর কিছু পরামর্শ ও নসীহত চাইছি। একটু লম্বা করে লিখলাম-
আমার বিয়ের ৫-৬ মাস হলো মাত্র। আমি কখনো এমন মাইন্ডসেট নিয়ে আসিনি যে, আমার শশুর-শাশুড়ি থেকে আলাদা থাকবো। বিয়ের পর থেকে তাদের সাথে আদব, ভালো আচরণ, হাসিখুশি চলাফেরা সবকিছু বজায় রেখে চলি। রান্নার কাজে হেল্প করি। সংসারের সকল দায়িত্ব শিখে নেয়া ও পালন করার চেষ্টা করি। তারাও অনেক উদার ও মহান আচরণ করেছেন আমার সাথে। আমার স্বামী একজন দ্বীনদার মানুষ এবং আমিও দ্বীন দেখেই বিয়ে করেছি, দ্বীনের পথে আমিও চলার চেষ্টা করি। কিন্তু রিসেন্ট, আমার শশুর-শাশুড়ি আমার পিতামাতা রিলেটেড কটু কথা/খোঁচা কথা শুনাইছেন। বিয়ের সময় বাবার বাড়ি থেকে কিছু দেয়নি, সামাজিকতার উদাহরণ, ঈদের সময় পোশাক না দেয়া, আমার পিতামাতার ম্যানারস নাই ইত্যাদি অনেক কথা। উল্লেখ্য আমার পরিবার ও আমার শশুড়বাড়ির পরিবার কঠোরভাবে দ্বীন মানেন না (আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দান করুন আমিন)। সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে তারা একটি পাঞ্জাবি চুরি করার অপবাদ দিয়েছে আমার ভাইকে। এখন তাদের প্রতি আমার আর ভালো লাগা কাজ করে না, মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে তাদেরকে। তবুও আমি হাসিখুশি চলার চেষ্টা করি তাদের সাথে, আসলে মায়াও লাগে মাঝে মাঝে। আপাতত তারাও আমার সাথে খারাপ আচরণ কিছু করতেছে না, আমার সাথে ভালোই চলতেছেন। কিন্তু মন থেকে তাদের এইসব মেন্টালিটি আমি মুছতে পারছি না। আর তাছাড়া এখানে পর্দার কিছু সমস্যা হয়। আমার শশুড় একদিন উনার পিঠ মুছে দিতে বলেছিলো। আমি আসলে তাদের সাথে থাকতে এখন নাখোশ, কিন্তু নারাজ নই। কারণ আমার স্বামী যেন আরামে তাদের হক আদায় করতে পারে তাই আমি সহ্য করছি, রাজি হয়ে আছি। আমি জানি, ইসলামে একক পরিবার সাপোর্ট করে, আর আমি তাদের খেদমত করতে বাধ্যও নই। আর যদি আমি আর আমার স্বামী তাদের থেকে দূরে কোথাও আলাদা অবস্থান করি তাহলে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। আমার শাশুড়ী এখনো কর্মঠ, রান্নাবান্না সব নিজেই করতে পারেন। শশুড়ও রিসেন্টলি হার্ট অ্যাটাক করেছেন, কিন্তু বাজার সদাই তিনিই করেন। মানা করলেও কথা শোনেন না। বাসায় আমার দেবর আর জা আছে। জা চাকরি করে। আমার স্বামী আর দেবর আপাতত পরিবারের বাজার সদাই বা এমন কোনো দায়িত্ব পালন করেন না, টুকটাক হঠাৎ করেন, সারাদিন চাকরি করেই তাদের সময় যায়। আর তাছাড়া শশুর-শাশুড়ি নিজেও তাদেরকে সাংসারিক কাজ করতে চাপ দেন না, আদরে যত্নে রাখেন। সবমিলিয়ে আমি মনে করি, আমরা আলাদা হইলে তাদের চলাফেরায় তেমন অসুবিধা হবে না। আর তাছাড়া আমাদের ঘরের কাজ করার জন্য প্রতিদিন একজন বোয়া আসেন, তবুও যদি আমার স্বামী তাদের জন্য আলাদা খাদিমা ঠিক করে দেয় তাহলে আমরা দূরে থাকতে সমস্যা হওয়ার কথা না।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আমি রাসুল ﷺ এর দেশে যেতে চাই। কিন্তু আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আপাতত যাওয়া অসম্ভব। আল্লাহর উপর তাওয়াককুল আছে, আল্লাহ ব্যবস্থা করলেই সম্ভব যেকোনো উছিলায়। সৌদি আরবে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়া যায় নারীদেরও। এখন পুনরায় সার্কুলার এসেছে। আমি সব ইনফরমেশন নিয়ে দেখেছি, আমার স্বামীর পিএইচডি এপ্লাই করার সুযোগ আছে আর আমার অনার্স এপ্লাই করার সুযোগ আছে। এবং আল্লাহ চাইলে আমাদের দুজনেরই চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমনকি উনি পিএইচডি শেষ করে ওই দেশে জব পাইলে থেকে যেতেও পারবে, সাথে উনার ফ্যামিলি হিসেবে আমিও থেকে যেতে পারবো। ওই দেশে সহশিক্ষাও নাই। এখন এই সুযোগটাকে সফল করতে আমার অনেক ইচ্ছে হচ্ছে। আমি আল্লাহর কাছে দু'আ করতেছি, ভিক্ষা চাইতেছি। এক্ষেত্রে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পাশাপাশি আমি আমার শশুর-শাশুড়ি থেকেও আলাদা অবস্থান করতে পারবো। যদিও তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবো ইনশাআল্লাহ। আর স্কলারশিপে পড়তে গেলে মাসিক বৃত্তি থেকে আমরা পরিবারকে টাকাও পাঠাতে পারবে, খাদিমা ঠিক করে দিতে পারবো। এভাবে দূরে গেলে আলাদা হওয়ার কোনো দাঙ্গা হাঙ্গামাও হবে না। সবদিক মিলিয়ে আমি এই পথটাই চাচ্ছি। আরেকবার আমি বিয়ের আগে সৌদি স্কলারশিপ এপ্লাই করতে চাইছিলাম, কিন্তু আইওএমের ইফতা বিভাগ থেকে মাহরাম ছাড়া সফর জায়েজ হবে না জেনে তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করেছিলাম। এবার যেহেতু মাহরামসহ সুযোগ আছে তাহলে ইস্তেখারা করে এবং আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করে এগিয়ে যাওয়া উচিত না?
এখন আমার এই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কিছু প্রশ্ন-
১. শশুর-শাশুড়ির কটু কথা শুনে মন খারাপ হওয়ায় আমার স্বামী আমাকে স্বান্তনা দিয়েছে, সবর করতে বলেছে। কিন্তু আবার এটাও বলেছিলো যদি আমি সহ্য করতে না পারি তাহলে নাকি আমাকে আলাদা রেখে তিনি মা-বাবার কাছে থাকবে তাদের হক পূরণের জন্য। এটার শরয়ী দিকনির্দেশনা কি? স্ত্রীর সাথে থেকে পিতামাতার খেদমত দূর থেকে করা যায় না? নাকি স্ত্রীকে দূরে ফেলে রাখা যায়?
২. স্কলারশিপের ব্যাপারে পরামর্শ কি উস্তায? আমি কি আমার স্বামীকে বুঝিয়ে দুজনে এভাবে যাওয়াটা ভালো হবে?
৩. আর দূরে থেকে ছেলেদের জন্য পিতামাতার সেবা করার নমুনা কেমন? মানে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে টাকা পাঠিয়ে তাদেরকে যাবতীয় সকলকিছুর সুব্যাবস্থা করে দিলে হবে না? শারীরিক খেদমত নিজে করার সুযোগ না থাকলে কি গোনাহ হবে?
৪. আমার রুমের বেলকনিতে পর্দা দিয়ে আবৃত করতে মন চায় আমার। কিন্তু আমার শাশুড়ী এখানে অনেক ছোট ছোট গাছ লাগিয়েছেন শখ করে। আর তিনি এটাকে বাড়াবাড়ি মনে করবে। অথচ আমার কাপড় শোকানোর জন্য বেলকনিই একমাত্র জায়গা। এই অবস্থায় কি করবো আমি?
৫. আমার বিয়েতে ফাতেমি মোহর নির্ধারণ করা হয়েছিলো। শশুর শাশুড়ি আমার জন্য প্রায় দেড় লাখ টাকার স্বর্ণ দিছেন। আমার স্বামী বলেছে এটা মোহর হিসেবে আর বাকি টাকা তিনি আস্তে আস্তে দিবে। (বাকি টাকা না দিলেও আমার সমস্যা নাই, মন থেকে মাফ দেয়া আমার)। কিন্তু আমার শাশুড়ী সেদিন আমাকে কথা শোনানোর সময় বলছিলো সামাজিকতা মেইনটেইন করতে গয়না দিছেন, এগুলো মোহর না। এখন আমি কি এগুলোকে মোহর ধরতে পারবো? তাহলে কি আমার স্বামীর তরফ থেকে মোহর পুরোটাই বাকি রয়ে গেছে? যদিও আমি এটা মাফ করে দিয়েছি, কারণ আমার স্বামী তো আমাকে ইচ্ছাকৃত মোহর না দিয়ে হক নষ্ট করেনি। গয়নাটা তো উনার ইখতিয়ারে না, উনার পরিবারের দেয়া। নাকি এই গয়নাকে আমি আমার মোহর ধরতে পারবো?