আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
48 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (17 points)
আসসালামু আলাইকুম, আমার কিছু প্রশ্ন ছিল।

১) বেদীন কাওকে বিয়ে করলে গুনাহ হবে কিনা? যেহেতু হাদিসে দীনদারিতাকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে?

২) স্ত্রী যদি দীনদার না হয়, সে যদি পর্দা না করে, হালাল-হারাম মেনে না চলে, এ ক্ষেত্রে কি স্বামীর ও গুনাহ হবে? যদি স্বামী তাকে এসব থেকে দূরে থাকতে বলে তাও যদি স্ত্রী বিরত না থাকে তাহলেও কি গুনাহ হবে কিনা স্বামীর?

৩) স্ত্রীর বেপর্দায় চলা থেকে স্বামী যদি বাধা দেয়, কিন্তু স্ত্রী যদি না মানে তবুও, সেক্ষেত্রে কি স্বামী দাইয়্যুস হবে?

৪) জেনেশুনে বেদীন কাওকে বিয়ে করা উচিত হবে কিনা?
৫) অনেক মেয়ে পুরোপুরি পর্দা না করলেও মুখে মাস্ক পড়ে মুখ ঢেকে রাখে,  সাধারণ বোরকা পড়ে এভাবে কি তাদের পর্দা হয়? এখন দেখা যায় যে মুখে মাস্ক লাগালে মেয়েদের আরো আকর্ষণীয় দেখা যায় বেশি। সেক্ষেত্রে কি পর্দা হবে?

৬) মেয়েরা যদি বোরকার মধ্যে যেকোনো এক কালারের বোরকা পড়ে, কালো কালার বাদে; যেমন গোলাপী রঙ বা যেকোনো এক কালারের বোরকা পড়লে কি পর্দা হবেনা?

৭) মেয়েরা যদি পর-পুরুষের সামনেও সালোয়ার কামিজ পড়া থাকে, তবে মুখ ঢাকা থাকে সেক্ষেত্রে মেয়ের কি গুনাহ হবে?

৮) বর্তমানে অনেক মেয়ে বাসায় সালাত আদায়ের জন্য ঢিলেঢালা আলাদা পোশাক বানাউ, দেখা যায় সালোয়ার কামিজ পড়া থাকলেও, অল-ওভার প্রিন্টের একটা জিলবাব জাতীয় কিছু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখে এটা কি জায়েজ আছে?

৯) মেয়েরা কি তাদের মামা শ্বশুর, আপন মামা এদের সাথে টুকটাক কথাবার্তা যেমন, কেমন আছেন, খাওয়া দাওয়া করছেন কিনা এই ধরণের কথা বলতে পারবে?

১০) বেদীন কাওকে বিয়ে করলে স্ত্রী যদি গান শুনে, পর্দা না করে, এইসবের জন্য কি সরাসরি স্বামীর ও গুনাহ হবে কিনা? এটা সাধারণ অবস্থার কথা জানতে চাচ্ছি, স্বামী যদি স্ত্রীকে নিষেধ ও না করে বিরত থাকতে না বলে। সেক্ষেত্রে বিধান কি?

১১)  পুরোপুরি প্র‍্যাক্টিসিং নয় এমন কেও- যেমন হয়তো নামাজ/রোজা করে, কিন্তু পর্দার ব্যাপারে শুধু মুরুব্বিদের সামনে পড়লেই বা কোনো পুরুষের সামনে পড়ে গেলে জাস্ট মাথায় কাপড় দেয়, বা শরীর একটু ঢেকেঢুকে রাখে এমন মেয়ে বিয়ে করা যাবে? যেহেতু বর্তমান জামানায় কেউ-ই পুরোপুরি দ্বীনদার নয়। সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিয়ের পরও শরয়ী পর্দা না করে সেক্ষেত্রে স্বামীর গুনাহ হবে কিনা?

1 Answer

0 votes
by (612,390 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
বেদ্বীন ব্যাক্তি যেহেতু মুসলিম,তাই তাকেও বিবাহ করা জায়েজ আছে।
এতে গুনাহ হবেনা।

(০২)
দাইয়ুস ব্যাক্তি জান্নাতে যেতে পারবেনা।
তার উপর জান্নাত হারাম। 

দাইয়ুস সে ব্যক্তিকেই বলা হয়, যে তার পরিবার পরিজনকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করেন না।
অর্থাৎ-যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেপর্দা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকেও দাইউস বলা হয়। 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে, “আল্লাহ তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়”[ মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯ ]

আরো জানুনঃ- 

হাদীস শরীফে  এসেছে

أن عبد الله بن عمر يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول ( كلكم راع وكلكم مسؤول عن رعيته الإمام راع ومسؤول عن رعيته والرجل راع في أهله وهو مسؤول عن رعيته والمرأة راعية في بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها والخادم راع في مال سيده ومسؤول عن رعيته

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন-প্রতিটি ব্যক্তিই দায়িত্বশীল। প্রতিটি ব্যক্তিই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমামগণ দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষগণ তাদের পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। মহিলাগণ স্বীয় স্বামীর গৃহের দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। দাস-দাসীগণ দায়িত্বশীল তার মনিবের সম্পদের ব্যাপারে, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৮৫৩
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৮২৮
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৪৮৯
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৯৩০
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৪৯৫
মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৫৩৭৭
মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২৯৫১
মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৭৪৫
মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১০৩)

★যে স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য,তার নামাজ কবুল হয়না।

https://ifatwa.info/83301/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

رواه الحاكم في "المستدرك" (7330) عن ابن عمر رضي الله عنهما، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اثنان لا تجاوز صلاتهما رءوسهما: عبد آبق من مواليه حتى يرجع، وامرأة عصت زوجها حتى ترجع  وصححه الألباني في صحيح الجامع برقم 136

রাসূল (ছাঃ) বলেন, দু’জন ব্যক্তির ছালাত তার মাথা অতিক্রম করবে না (কবুল হবে না)। (১) যে দাস তার মালিক হ’তে পলায়ন করেছে যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। (২) অবাধ্য স্ত্রী যতক্ষণ না সে আনুগত্যে ফিরে আসে (হাকেম হা/৭২৩০; ছহীহাহ হা/২৮৮; ছহীহুত তারগীব হা/১৮৮৮)। 

মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,

 ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ [النساء: ٣٤] 

পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাজতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান। [সূরা আন-নিসা: ৩৪] 

স্ত্রী অবাধ্য হলে বাধ্য করার জন্য করনীয়ঃ-

প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে উপদেশ দেওয়া ।
খুব ভালো ভাবে নিজে বুঝানো,তাতে কাজ না হলে মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝানো।
স্ত্রী বাবার বাসার মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝানো।
তাতে কাজ না হলে দ্বিতীয় পদক্ষেপ বিছানা পরিত্যাগ করা ।
তাকে আলাদা বিছানায় থাকতে দেয়া।
প্রয়োজনে আলাদা রুমেও থাকতে পারেন।

এতে কাজ না হলে কিছুদিনের জন্য বাবার বাসায় রেখে আসতে পারেন।

তাতেও কাজ না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ মৃদু প্রহার করা। 
,
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, وَاضْرِبُوهُنَّ এবং তাদেরকে প্রহার করবে। 

এর তাফসীরে হাফেয ইবন কাসীর [রহ.] বলেন, যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোনো কাজ না হয়, স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে। 

বিস্তারিত জানুনঃ- 

স্ত্রীকে সংশোধন করার বিস্তারিত পদ্ধতি জানুনঃ- 
https://ifatwa.info/52178/

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত সূরাতে স্বামীরও গুনাহ হবে এক্ষেত্রে স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে হবে। 

এক্ষেত্রে স্ত্রীকে বাধ্য করার জন্য ও পূর্ণ শরীয়তের উপর চালানোর জন্য উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতেই হবে।

এরপরে কাজ না হলে স্বামী চাইলে সেই স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে,এতে তার গুনাহ হবেনা।

(০৩)
এক্ষেত্রে স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন না করলে স্বামী দাইয়ুস হবে।

(০৪)
উচিত নয়।
তবে সে দ্বীনদার হওয়ার ওয়াদা দিলে সেক্ষেত্রে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তাকে বিবাহ করা যেতে পারে।

(০৫)
সেক্ষেত্রে পূর্ণ পর্দা হবেনা।

(০৬)
পর্দা হবে।

তবে শর্ত হল ঢিলেঢালা হতে হবে।  আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, এমন বোরকা পরিধান করা যাবেনা।

(০৭)
সেই সালওয়ার কামিজ যদি ঢিলেঢালা হয়,আকর্ষণ সৃষ্টিকারী না হয়,হাত পা চেহারা সহ পূর্ণ শরীর আবৃত থাকে,সেক্ষেত্রে মেয়ের গুনাহ হবেনা।

(০৮)
জায়েজ আছে।

(০৯)
আপন মামার সাথে তো কথা বলতে পারবে।
মামা শশুরের সাথে অপ্রয়োজনে কথা বলতে পারবেনা।

বিশেষ প্রয়োজনে কথা বলতে হলে সেক্ষেত্রে পর্দার আড়ালে থেকে প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারবে।

তবে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা যাবেনা,হাসি ঠাট্রা করা যাবেনা।

উল্লেখ্য, নারীদের জন্য গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলতে গিয়ে কর্কশ ভাষায় কথা বলা সবচেয়ে ভালো। 
সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে নয়।

তবে এক্ষেত্রে কর্কশ ভাষায় কথা বলা সমস্যাকর বা বিরক্তিকর মনে হলে বা এভাবে কথা বলতে না পারলে সেক্ষেত্রে মুখের ওপর হাত রেখে কণ্ঠ বিকৃত করে পর্দার আড়ালে থেকে প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারবে।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(১০)
এমতাবস্থায় স্বামীরও গুনাহ হবে।

(১১)
তাকে বিবাহ করা উচিত নয়।
তবে সে দ্বীনদার হওয়ার ওয়াদা দিলে সেক্ষেত্রে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তাকে বিবাহ করা যেতে পারে।

স্ত্রী যদি বিয়ের পরও শরয়ী পর্দা না করে সেক্ষেত্রে স্বামীর গুনাহ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...