জবাবঃ-
গ্রহণযোগ্য ফাতাওয়া গ্রন্থ 'ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায়' নামাযের সুন্নাত ক্বেরাত সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে,
سنتها حالة الاضطرار في السفر وهو أن يدخله خوف أو عجلة في سيره أن يقرأ بفاتحة الكتاب وأي سورة شاء وحالة الاضطرار في الحضر وهو ضيق الوقت أو الخوف على نفس أو مال أن يقرأ قدر ما لا يفوته الوقت أو الأمن. هكذا في الزاهدي.
নামাযে সুন্নাত ক্বেরাত সমূহঃ
সফর অবস্থায় ইজতেরার এর (অপারগতার) সময়ে তথা ভয়ভীতি বা তারাতারি রাস্তা অতিক্রমের ব্যস্ততার সময়ে ক্বেরাতের সুন্নাত হচ্ছে,
(ফরয নামাযের প্রত্যেক প্রথম দুই রা'কাতে)
সূরায়ে ফাতেহার সাথে যেকোনো একটি সূরা পড়ে নেয়া।
আর মুক্বিম অবস্থায় (তথা বাড়িতে অবস্থানের সময়) ইজতেরার বা অপারগতার অর্থ হল,
নামাযের সময় অতি সংক্ষিপ্ত হওয়া,অথবা নিজ জান বা মালের উপর ভয় হওয়া।
তখন এই অবস্থায় কেরাতের সুন্নাত হল যে,এই পরিমাণ ক্বেরাত পড়া যাতে করে নামাযের ওয়াক্ত বা নিরাপত্তা/প্রশান্তিতে কোনো ব্যঘাত না ঘটে।
وسنتها حالة الاختيار في السفر بأن كان في الوقت سعة وهو في أمنة وقرار أن يقرأ في الفجر سورة البروج أو مثلها ليحصل الجمع بين مراعاة سنة القراءة وتخفيفها المرخص في السفر. كذا في شرح منية المصلي لابن أمير الحاج وفي الظهر مثله وفي العصر والعشاء دونه وفي المغرب بالقصار جدا هكذا في الزاهدي.
সফরে প্রশান্তির সময়,তথা নামাযের ওয়াক্তে যথেষ্ট প্রশস্ততা রয়েছে বা উক্ত মুসাফির ব্যক্তি নিরাপধ ও প্রশান্তিতে অাছে।তখন উক্ত মুসাফির ফজরের নামাযে সূরায়ে বুরুজ বা তার মত কোনো সূরা পড়ে নেবে।যাতে করে সুন্নাত ক্বেরাত ও সফর অবস্থায় শীতিলযোগ্য বিধানের মধ্যে সামঞ্জস্যসাধন হয়ে যায়।
(শরহে মুনয়াতুল মুসাল্লি-ইবনে আমীরিল হাজ্ব)
ঠিক এভাবে যোহরের নামাযে পড়ে নেবে।
আর আসর ও ঈশার নামাযে এর থেকে কিছুট কম আয়াত তেলাওয়াত করবে।আর মাগরিবের নামাযে কেসার তথা ছোট্ট ছোট্ট সূরা পড়ে নেবে।(যাহেদী)
وسنتها في الحضر أن يقرأ في الفجر في الركعتين بأربعين أو خمسين آية سوى فاتحة الكتاب وفي الظهر ذكر في الجامع الصغير مثل الفجر وذكر في الأصل أو دونه وفي العصر والعشاء في الركعتين عشرين آية سوى فاتحة الكتاب وفي المغرب يقرأ في كل ركعة سورة قصيرة. هكذا في المحيط واستحسنوا في الحضر طوال المفصل في الفجر والظهر وأوساطه في العصر والعشاء وقصاره في المغرب. كذا في الوقاية.
হালতে ঈক্বামত তথা বাড়ীতে অবস্থানের সময় ফজরের দুনু রাকাতে সূরায়ে ফাতেহা ব্যতীত সর্বনিম্ন ৪০ বা ৫০ আয়াত করে পড়া সুন্নাত।
জোহরের নামাযে জা'মে সগীরের বর্ণনা অনুযায়ী ফজরের মতই ক্বেরাত পড়া সুন্নাত।
আর মাবসূতের বর্ণনা অনুযায়ী এর থেকে কম পড়া সুন্নাত।
আসর আর ঈশার প্রথম দুই রাকাতে সূরায়ে ফাতেহা ব্যতীত সর্বনিম্ন ২০ আয়াত করে পড়া সুন্নাত।
আর মাগরিবের প্রথম দুই রাকাতে ছোট্ট ছোট্ট সূরা পড়া সুন্নাত।(মুহীত)
ফুকাহায়ে কেরামগণ মুস্তাহাব মনে করেন যে,ফজর ও যোহরের নামাযে তিওয়ালে মুফাস্সাল থেকে পড়া হবে।আর আসর ও ঈশার নামাযে আওসাতে মুফাস্সাল থেকে পড়া হবে।
আর মাগরিবের নামাযে কেসারে মুফাস্সাল থেকে পড়া হবে।
وطوال المفصل من الحجرات إلى البروج والأوساط من سورة البروج إلى لم يكن والقصار من سورة لم يكن إلى الآخر. هكذا في المحيط والوقاية ومنية المصلي
তিওয়ালে মুফাস্সালঃ
২৬পারার ৪৯ নং সূরা,সূরায়ে হুজুরাত থেকে ৩০পারার ৮৫ নং সূরা,সূরায়ে বুরুজ পর্যন্ত।
আওসাতে মুফাস্সালঃ
৩০ পারার ৮৫ নং সূরা, সূরায়ে বুরুজ থেকে ৩০ পারার ৯৮নং সূরা, সূরায়ে বাইয়্যিনাহ পর্যন্ত।
কেসারে মুফাস্সালঃ
৩০ পারার ৯৮ নং সূরা, সূরায়ে বাইয়্যিনাহ থেকে কুরাআনে কারীমের শেষ পর্যন্ত।
(মুহীত,ওয়াক্বায়াহ,মুনয়াতুল মুসাল্লি)
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৭৭
এই হল নামাযের সুন্নাত ক্বেরাত।
তাছাড়া কোরআনে কারীমের যেকোনো সূরা যেকোনো নামাযে পড়া যায়,এতেকরে নামায হয়ে যাবে।
সর্বনিম্ন একটি বড় আয়াত বা তিনটি ছোট আয়াত এক রাকা'তে পড়ে নিলেই নামাযের কেরাতের ফরযিয়্যাত আদায় হয়ে যায়।নামায বিশুদ্ধ হয়ে যায়।যদিও তা সুন্নাতের খেলাফ হয়েছে।
বড় সূরার প্রথমভাগ বা মধ্যভাগ অথবা শেষভাগ তথা কুরআনে কারীমের যেকোনো জায়গা থেকে পড়া যাবে।তবে এক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় রাকা'তের মধ্যকার আয়াতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পড়তে হবে।
অন্যথায় মাকরুহে তানযিহি হবে।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
মুফতী ইমদাদুল হক
সিলেট,বাংলাদেশ।