বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
4352 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
ঈদ অর্থ আনন্দ।মিলাদ অর্থ জন্ম।ঈদে মীলাদুন্নবী অর্থ নবী সাঃ এর জন্ম উপলক্ষ্যে ঈদ উৎসব।
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্মদিনকে উপলক্ষ্য করে কোনো প্রকার উৎসব বা অনুষ্টানের আয়োজন করা না রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জমানায় প্রচলিত ছিলো,না সাহাবা ও তাবেঈন বা তাদের পরবর্তী যুগে প্রচলিত।বরং ইসলামি স্বর্ণযুগের অনেক পর বাদশা মুজাফফর উদ্দীন খৃষ্টানদের বড়দিনের আদলে তাদের অনুসরণ করে মুসলমানদের জন্য ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রচলন করার অপচেষ্টা করেন।কিন্তু ইরাকের তৎকালিন জনগণ বাদশার ভন্ডামিকে খুবই শক্তভাষায় প্রত্যাখ্যান করেন।
যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে নেই,সেগুলোর প্রচলন বিদআত।হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত
عن أمِّ المؤمنين أم عبدالله عائشةَ رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رَدٌّ))؛ [رواه البخاري ومسلم]، وفي رواية لمسلم: ((من عمِل عملًا ليس عليه أمرنا فهو رَدٌّ)).
মর্মার্থ-দ্বীনে ইসলামে নতুন কিছু আবিস্কার করা,সংযোজিত করার নামই হল বিদআত।
সুতরাং
ইদ-এ-মিলাদুন্নাবী উপলক্ষে মসজিদে দোয়া, মাহফিল,মিলাদ, সবশেষে তবারক দেওয়া। এগুলো বিদআত ও পরিত্যাজ্য।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ঈদে মিলাদুন্নবী অবিশ্বাস করলে সে কাফের কিন্তু পালন করলে বিদআত বিষয়টা্ মূলত এমন নয়।বরং ঈদে মিলাদুন্নবী কে পালন করা বিদ’আত। এবং ঈদে মীলাদুন্নবী নামে বিশেষ কোনো অনুষ্টানের দিকে ইশারা ইঙ্গিত করা বা পৃথক কিছু মনে করা বিদ’আত। একে অস্বীকার করলে কেউ কাফির হবে না। আল্লাহর রাসূল সা. বা রাসূল সা. এর জন্ম মৃত্যু বা উনার জীবনের এমন কোনো বিষয় যা মুতাওয়াতির রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত, এগুলোকে যদি কেউ অস্বীকার করে ,তাহলে অবশ্যই সে কাফির হবে। ঈদে মীলাদুন্নবীকে অস্বীকার করা মানে আল্লাহর রাসূল সা. কে অস্বীকার নয়,যারা ঈদে মীলাদুন্নবী অস্বীকারকে রাসূল অস্বীকারের সাথে মিলায়, তারা ভূলের মধ্যে রয়েছে।
(২)
«النِّكَاحُ حَالَةَ الِاعْتِدَالِ سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةٌ مَرْغُوبَةٌ، وَحَالَةَ التَّوَقَانِ وَاجِبٌ، وَحَالَةَ الْخَوْفِ مِنَ الْجَوْرِ مَكْرُوهٌ.» - «الاختيار لتعليل المختار»
(3/ 82)
স্বাভাবিক অবস্থায় বিয়ে করা সুন্নতে মু’আক্কাদা। আর যিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনায় বিয়ে করা ওয়াজিব। আর স্ত্রীর জুলুম করার আশংকা থাকলে তখন বিয়ে করা মাকরুহ।(আল-এখতিয়ার লি তা’লিলিল মুখতার-৩/৮২)
অথবা এভাবেও বলা যায়,
বিবাহের সামর্থ রয়েছে, আর্থিক শারিরিক উভয় রকম সামর্থ্য রয়েছে,এবং যিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,তাহলে এমতাবস্থায় বিয়ে ওয়াজিব।
বিবাহের সামর্থ্য রয়েছে,তবে যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নাই এমতাবস্থায় বিয়ে করা সুন্নত। এবং স্ত্রীর হক আদায় না করার আশংকা থাকলে তখন বিয়ে করা মাকরুহ।
(৩)
يَمْحُو اللّهُ مَا يَشَاء وَيُثْبِتُ وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ
আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন এবং মূলগ্রন্থ তাঁর কাছেই রয়েছে।(সূরা রাদ-৩৯)
তাফসীরে জালালাইন কিতাবে এ আয়াতের তাফসীর এভাবে বর্ণিত রয়েছে,
{يَمْحُو اللَّه} مِنْهُ {مَا يَشَاء وَيُثْبِت} بِالتَّخْفِيفِ وَالتَّشْدِيد فِيهِ مَا يَشَاء مِنْ الْأَحْكَام وَغَيْرهَا {وَعِنْده أُمّ الْكِتَاب} أَصْله الَّذِي لَا يَتَغَيَّر مِنْهُ شَيْء وَهُوَ مَا كَتَبَهُ فِي الْأَزَل
এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলছেন, আল্লাহর ইচ্ছা আল্লাহ কোন বিধানকে পৃথিবীতে বাকী রাখবেন আর কোন বিধানকে রহিত করে দিবেন। পূর্ববর্তী অনেক কিতাবকে আল্লাহ তা’আলা রহিত করে দিয়েছেন। অনেক শরীয়তকে রহিত করে দিয়েছেন। লাইহে মাহফুযে পরিবর্তনের কথা আল্লাহ বলছেন না। বরং কিছু বিধি-বিধানকে আল্লাহ রহিত করে দিবেন।
(৪)
জান্নাত একটি কিন্তু তার দরজা আটটি।
দলীল নিম্নোক্ত হাদিসটি:
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : فِى الْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ مِنْهَا : بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانَ لَا يَدْخُلُه إِلَّا الصَّائِمُوْنَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
সাহল ইবনে সা‘দ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ‘রাইয়ান’ নামে একটি দরজা রয়েছে। সিয়াম পালনকারীগণ ছাড়া এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
জাহান্নাম একটি কিন্তু তার দরজা সাতটি:
দলীল: আল্লাহ বলেন:
وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ – لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ
“তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। এর সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্যে এক একটি পৃথক দল আছে।” (সূরা হিজর ৪৩ ও ৪৪ নং আয়াত)
মুফাসসিরগণ বলেন: উপর নিচ করে সাতটি স্তরে জাহান্নামের দরজাগুলো অবস্থিত। ইবলিস শয়তানের অনুসারীরা তাদের আমল অনুযায়ী উক্ত দরজাগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
জান্নাতের স্তরসংখ্যা ১০০টি:
জান্নাতে একশটি স্তর আছে আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে এত দূরত্ব আছে যতটা দূরত্ব আছে আকাশ ও জমিনের মাঝে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
في الجنَّةِ مائةَ درجةٍ ما بينَ كلِّ درجَتينِ كما بينَ السَّماءِ والأرضِ ، والفِردوسُ أعلاها درجةً ، ومنها تُفجَّرُ أنهارُ الجنَّةِ الأربعَةِ ، ومِن فوقِها يكونُ العرشُ ، فإذا سألتُمُ اللَّهَ فاسأَلوه الفِردوسَ
“জান্নাতে একশটি স্তর আছে। প্রত্যেক স্তরের মাঝে দূরত্ব হল আকাশ ও জমিনের দূরত্বের সমান। আর ফেরদাউস তার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে আছে। আর সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝর্ণা প্রবহমান। এর উপরে রয়েছে আরশ। তোমরা আল্লাহ্র নিকট জান্নাতের জন্য দু’আ করলে জান্নাতুল ফেরদাউসের জন্য দু’আ করবে’। (তিরমিযী- কিতাবুল জান্নাহ, সহীহ-আলবানী, সহীহুত তিরমিযী, হা/২৫৩১)
[তাফসীরে মুয়াসসার]