ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ
بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
মানুষকে পাপে লিপ্ত করে তার নফসের প্ররোচনা। শয়তান মানুষকে পাপের দিকে আগ্রহী করে
আর প্ররোচনা দেয় নফস। নফসের প্ররোচনা,
শয়তানের প্রচেষ্টায় একজন মানুষ
গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়েন।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের
পালনকর্তার,মানুষের অধিপতির, মানুষের
মা’বুদের তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন
করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের
মধ্য থেকে। (সূরা নাস, আয়াত : ১-৪)
এই সূরার আলোকে আলেমরা বলে থাকেন,
শয়তান শুধু মানুষকে ধোঁকা
বা কুমন্ত্রণা দেয় না, শয়তানের মতো নফসও মানুষকে কুমন্ত্রণা
দিয়ে থাকে। আর এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন নফসের
অনিষ্ট থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয়
চাই, আমার নফসের অনিষ্ট থেকে,
শয়তানের অনিষ্ট থেকেও এবং
তার জাল থেকেও।’ (আবু দাউদ: ৫০৬৭, তিরমিযী: ৩৩৯২, মুসনাদে
আহমাদ: ১/৯)
তাই নফসের ধোঁকা ও প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। পবিত্র কোরআনে নফসের ধোঁকা
সম্পর্কে হজরত ইউসুফ আ. -এর বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে এভাবে—
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ
بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ
আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়-আমার
পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল,দয়ালু।
(সূরা ইউসুফ, আয়াত : ৫৩)
নফসের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে কিছু পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে—
বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ
নফসের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। পবিত্র কোরআনে
বর্ণিত হয়েছে,
أُولَٰئِكَ جَزَاؤُهُم مَّغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ
تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَنِعْمَ أَجْرُ
الْعَامِلِينَ وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا
فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا
لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ
مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ
তারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর
জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ
ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য
হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।
তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার
তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য
কতইনা চমৎকার প্রতিদান। (সূরা আলে ইমরান,
আয়াত :১৩৫-১৩৬)
ভাল মানুষের সাহচর্য গ্রহণ
আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং আলেম,
দ্বীনদার এবং আল্লাহর সঙ্গে
ভালো সম্পর্ক এমন ব্যক্তি সান্নিধ্য গ্রহণের চেষ্টা করা এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। ভাল মানুষের সাহচর্য
গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে সহায়ক হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ
الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ,আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা
তওবা, আয়াত :১১৯)
আল্লাহর স্মরণ
আল্লাহ তায়ালাকে সব সময় স্মরণ করতে হবে। এবং মনে রাখতে হবে তিনি প্রতি মুহূর্তে
আমাকে দেখছেন। আমার সব কাজে হিসাব নেবেন। এই ধারণা অন্তরে বদ্ধমূল রাখলে নফস ধোঁকা
দিলেও তা পাপের দিকে ধাবিত করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
মৃতুর স্মরণ
যেকোনো মুহুর্তে মৃত্যু হতে পারে অন্তরে এই বিশ্বাস অটুট রাখতে হবে। মনে করতে
হবে গুনাহ করা অবস্থায় মারা গেলে কী হবে?
আল্লাহর সামনে কীভাবে মুখ দেখাবো!
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ
الْهَوَىٰ فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ
الْمَأْوَىٰ
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী
থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে,তার ঠিকানা হবে জান্নাত। (সূরা
নাযিয়াত, আয়াত : ৪০-৪১)
নবী-সাহাবী, মুসলিম মনীষীদের জীবনী পড়া
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী, সাহাবায়েকেরাম
ঈমানদীপ্ত ঘটনা, এবং বুজুর্গ আলেম, মুসলিম
মনীষীদের জীবনী বেশি বেশি পড়তে হবে। এতে করে অন্তর থেকে পাপাচারের চিন্তা দূর হবে ইনশাআল্লাহ।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ
قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَىٰ
رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
যারা ঈমানদার,তারা এমন যে,যখন
আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন
তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় রবের প্রতি ভরসা পোষণ করে। (সূরা আনফাল, আয়াত
: ২)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো
অর্জন করার আপ্রাণ চেষ্টা করুন। পিতা মাতার খেদমতের উদ্দেশ্যৈ হালাল পন্থায় দুনিয়াবী পড়াশুনা করা জায়েয আছে। এবিষয়ে
স্থানীয় আলেমদের সাথে পরামর্শ করে আরো বিস্তারিত জানতে পারেন ইনশাআল্লাহ।