আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
545 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (61 points)
১. বিভিন্ন হাদীসে দেখতে পাই পানি খাওয়ার সময় পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলা এবং ফু দেয়ার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি রুকইয়্যাহ করার জন্য বিভিন্ন সূরা কিংবা দুআ পাঠ করে পানিতে ফু দিতে হয় সেক্ষেত্রে করণীয় কি?
২. বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায় কারো নজর জনিত সমস্যা হলে পান পাতা তেল মেখে কি কি যেন পড়ে সারা শরীরে বুলিয়ে সেটি আগুনে পোড়ানো হয় এটি কি শারীয়া বহির্ভূত হবে? আর যদি একই উপায়ে বিভিন্ন সূরা ও দুআ পাঠ করে উক্ত কাজ টি করা হয় সেটি কি ঠিক হবে?

৩. ওয়াজিব গুন্নাহ কি তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে ওয়াজিব নাকি দুআর ক্ষেত্রেও গুন্নাহ করা জরুরি?  নাকি দুআর ক্ষেত্রে ছেড়ে দিলেও সমস্যা নেই? যেমন দরুদ, আত্তাহিয়াত।

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ عَنْ يَحْيٰى عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ وَإِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَمْسَحْ ذَكَرَه“ بِيَمِينِه„ وَإِذَا تَمَسَّحَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِهِ.

‘আবদুল্লাহর পিতা আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন পানি পান করবে সে যেন তখন পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে। আর তোমাদের কেউ যখন প্রস্রাব করে, সে যেন ডান হাতে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং তোমাদের কেউ যখন শৌচ কার্য করে তখন সে যেন ডান হাতে তা না করে।  [বুখারী ১৫৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৫)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,

হাদীসে পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় নাবী ﷺ কতইনা সূক্ষ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। এর কারণ হল, পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করলে যে কোন মুহূর্তে পানি শ্বাসনালীর মধ্যে প্রবেশ করে শ্বাস আদান-প্রদানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অনুরূপভাবে নাকের নালীর মধ্যে পানি প্রবেশ করতে পারে। ফলে নাক ও মাথার পর্দার মধ্যে ফুলা ধরতে পারে।

হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পানীয় পানকালে তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। একটি লোক নিবেদন করল, ‘পানপাত্রে (যদি) আমি খড়কুটো দেখতে পাই?’ তিনি বলেন, ‘তাহলে তা ঢেলে ফেলে দাও।’ সে নিবেদন করল, ‘এক শ্বাসে পানি পান করে আমার তৃপ্তি হয় না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি পেয়ালা মুখ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে নিঃশ্বাস গ্রহণ করো।’ (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ৭৬৯)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪২৮)
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন, 
★উক্ত হাদীস গুলো থেকে বুঝা যায় যে রাসুল সাঃ এর নিষেধাজ্ঞা পানি পান করার সময়ে পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলা ও তাতে ফুঁ না দেওয়া।
,
★আর এই নিষেধ হারামের পর্যায়ে নয়,যে কেহ যদি এটি না মানে,তাহলে তার গুনাহ হবে,বিষয়টি এমন নয়।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে শরীয়ত সম্মত পন্থায় রুকইয়্যাহ করা জায়েজ আছে।
,
(০২)
এখানে https://ifatwa.info/2218/ উল্লেখিত শর্তের ভিত্তিতে যদি একাজ করা হয়,তাহলে জায়েজ আছে।

,
(০৩)
কোনো গুনাহ হবেনা।
,
মোল্লা আলী কারি রহ. বলেন,

وينبغي أن تراعى جميع قواعدهم وجوباً فيما يتغير به المبنى، ويفسد به المعنى، واستحباباً فيما يحسن به اللفظ، أو يستحسن به النطق حال الأداء – شرح الجزرية” (ص/20)

“সে সব ক্ষেত্রে কারিদের (তাজবিদের) নিয়ম-কানুনগুলো আবশ্যিকভাবে লক্ষ রাখা উচিৎ, যে সব ক্ষেত্রে শব্দের গঠন পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি অর্থেরও বিকৃতি ঘটে এবং এবং সে সব ক্ষেত্রে এগুলোর প্রতি লক্ষ রাখা উত্তম যে সব ক্ষেত্রে শব্দটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয় বা পড়ার সময় উচ্চাণরটা সুন্দর হয়।” (শারহুল জাযারিয়া, পৃষ্ঠা ২০)

শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন,

أما التجويد فليس بواجب، التجويد تحسين للفظ فقط، وتحسين اللفظ بالقرآن لا شك أنه خير، وأنه أتم في حسن القراءة، لكن الوجوب بحيث نقول من لم يقرأ القرآن بالتجويد فهو آثم قول لا دليل عليه، بل الدليل على خلافه”

“আর তাজবিদ ওয়াজিব নয়। তাজবিদ শব্দকে সুন্দর করে মাত্র। কুরআনের শব্দকে সুন্দর করা নি:সন্দেহে কল্যাণকর। এটি কিরাআতকে সুন্দর করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গতা দান করে। কিন্তু তাজবিদকে ওয়াজিব বলা অর্থাৎ “এ কথা বলা যে, যে ব্যক্তি তাজবিদ অনুযায়ী কুরআন পড়বে না সে গুনাহগার হবে” এর পক্ষে কোনও দলিল নাই। বরং এর বিপরীতেই দলিল রয়েছে।”

শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. বলেন:

“তাজবিদ ও কিরাআতবিদগণ কর্তৃক উল্লেখিত তাজবিদের নিয়ম-কানুনগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া ভালো। এটি কিরাআত সুন্দর করার অন্তর্গত। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ »

“তোমরা সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত কর।” [হাদিসটি ইমাম আহমদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী ও হাকেম রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং তা সহীহ]

সুতরাং যদি গুন্নাহ, তারকিক (বারিক/চিকন করা), তাফখিম (পোর/মোটা করা) ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় তাহলে তা উত্তম। কিন্তু আমার কাছে যা মনে হয় এটা আবশ্যক নয়-যদি স্পষ্টভাবে ত্রটি-বিচ্যুতি ছাড়া পাঠ করে।”

 শাইখ সালেহ আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,

“قراءة القرآن بالتجويد مستحبة من غير إفراط، وليست واجبة، وإنما الواجب تجويد القرآن من اللحن والخطأ في الإعراب”

“তাজবিদ সহ কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। তবে এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। এটা ওয়াজিব নয়। বরং ওয়াজিব হল, ইরাব (উচ্চারণ ও প্রকাশ করা) এর ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত করে সুন্দরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা।”


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

+1 vote
1 answer 188 views
...