বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
সহসাই আমাদের সামনে একটি প্রশ্ন আসে যে,
পুরুষ কর্তৃক নন মাহরামকে দেখা এবং নারী কর্তৃক নন মাহরাম কে দেখা কি সমান?
উত্তরে বলা হবে, না,সমান নয়।বরং উভয়ের বিধি-বিধানের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
পুরুষের জন্য নন মাহরাম মহিলার সবকিছুই পর্দার অন্তর্ভুক্ত।বিনা প্রয়োজনে কোনো পরুষ নন মাহরাম কোনো মহিলার চেহরার দিকে থাকাতে পারবে না। এমনকি নন মাহরাম কোনো মহিলার আওয়াজও শুনতে পারবে না।
কিন্তু ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে মহিলার জন্য নন মাহরাম পুরুষের নাভী থেকে নিয়ে হাটু পর্যন্ত ব্যতীত শরীরের অন্যান্য অংশ দেখার অনুমোদন রয়েছে।তবে ফিতনার আশঙ্কা থাকলে মহিলা তার চক্ষুকে অবশ্যই নিচু করে রাখবেন।
কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ হযরত আয়েশা রাযি কে হাবলী গোলামদের খেলাধুলা দেখার সুযোগ দিয়েছিলেন।
যেমন বর্ণিত রয়েছে,হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ الحَبَشُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ، فَسَتَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا أَنْظُرُ، فَمَا زِلْتُ أَنْظُرُ حَتَّى كُنْتُ أَنَا أَنْصَرِفُ»، فَاقْدُرُوا قَدْرَ الجَارِيَةِ الحَدِيثَةِ السِّنِّ، تَسْمَع ُاللَّهْوَ
একদিন হাবশীরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে ছিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পার কোন বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে।(সহীহ-বুখারী--শামেলা নুসখা-৫১৯০,আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮০৮,ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১১)
এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ ও খুলাফায়ে রাশিদিনদের যামানায় মহিলারা মসজিদে আসতেন,এবং নামাযে শরীক হতেন।যেমন বর্ণিত রয়েছে,উম্মু সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ قَامَ النِّسَاءُ حِينَ يَقْضِي تَسْلِيمَهُ، وَيَمْكُثُ هُوَ فِي مَقَامِهِ يَسِيرًا قَبْلَ أَنْ يَقُومَ»، قَالَ: نَرَى - وَاللَّهُ أَعْلَمُ - أَنَّ ذَلِكَ كَانَ لِكَيْ يَنْصَرِفَ النِّسَاءُ، قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الرِّجَالِ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন, তখন মহিলারা তাঁর সালাম শেষ করার পর উঠে যেতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ানোর পূর্বে স্বীয় স্থানে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন। রাবী যুহরী (রহ.) বলেন, আমাদের মনে হয়, তা এজন্য যে, অবশ্য আল্লাহ্ ভাল জানেন, যাতে পুরুষদের যাবার পূর্বেই নারীরা চলে যেতে পারে।(সহীহ বুখারী-শামেলা নুসখা-৮৭০,আধুনিক প্রকাশনীঃ৮২১,ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮২৮)
আনাস (ইবনু মালিক) (রাযি.) হতে বর্ণিত।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِ أُمِّ سُلَيْمٍ، فَقُمْتُ وَيَتِيمٌ خَلْفَهُ وَأُمّ سُلَيْمٍ خَلْفَنَا»
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সুলাইম (রাযি.)-এর ঘরে সালাত আদায় করেন। আমি এবং একটি ইয়াতীম তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম আর উম্মু সুলাইম (রাযি.) আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন।(সহীহ বুখারী(শামেলা নুসখা-৮৭১,আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮২২,ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮২৯)
উক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে,যখন মহিলারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এবং তৎপরবর্তী সময়ে মসজিদে উপস্থিত হতেন,তখন অবশ্যই মহিলাদের দৃষ্টি পুরুষদের উপর নিবিষ্ট হতো।কেননা চক্ষু খোলা রাখা ব্যতীত তো রাস্তায় চলাচল করা যাবে না।{কিতাবুল ফাতাওয়া-৬/১০১}
শিক্ষার স্বার্থে মহিলার জন্য পুরুষ শিক্ষককে দেখার অনুমোদন রয়েছে। তবে এটা জরুরত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। {ফাতাওয়ায়ে উসমানি-১/১৬৯}
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
586
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলব,
১. ফিতনার আশংকা না থাকলে মহিলাদের জন্য পুরুষের ভিডিও ওয়াজ, হামদ, তেলাওয়াত দেখা জায়েজ আছে ।
২.ফিতনার আশংকা না থাকলে মহিলারা পুরুষের অডিও ওয়াজ, হামদ, তেলাওয়াত শুনতে পারবে।
৩.কিন্তু পুরুষের জন্য মহিলাদের ভিডিও, অডিও ওয়াজ, হামদ, তেলাওয়াত শুনা বা দেখা জায়েজ হবে না।