আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
493 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (67 points)
আসসালামু আলাইকুম!

আমি মোটামুটি কয়েক বছর হল হিদায়াত পেয়েছি এবং গত ২ বছর ধরে পর্দা করাসহ সঠিকভাবে ইসলামকে মেনে চলার চেষ্টা করি। আমার একটা সময়ে মেজাজজনিত সমস্যা ছিল এবং আমি অল্পতে অস্থির হয়ে যেতাম। এখন এ ব্যাপারে সতর্ক থাকি কিন্তু সবসময় সম্ভব হয় না। আমি গত ২ বছর ধরে কারো সাথে অনর্থক কথা না বলার চেষ্টা করি। আগে অনেক বহির্মুখী ছিলাম। হঠাৎ করে আমার এ পরিবর্তন মেনে নিতে আমার বাবা মায়ের খুব কষ্ট হয়। তারা ভাবেন আমার কোন বন্ধু নেই। হ্যাঁ সত্যি দ্বীনের পথে চলতে সাহায্য করবে এরকম বন্ধু নেই বললেই চলে। গীবত হয় এমন স্থান ভাল লাগে না। আমার পরিবার মোডারেট মুসলিম। আমার ভাই আমেরিকায় থাকে এবং ইসলামই যে একমাত্র সঠিক ধর্ম এটা বিশ্বাস করে না। আমি এখন বুঝি যে আল্লাহর কাছে কাঁদাতেই প্রকৃত সুখ এবং আল্লাহ সন্তুষ্ট করে দেন এতে। কিন্তু আমি সালাতে কাঁদলেই কেউ না কেউ দেখে ফেলে এবং ঐ যে বাবা মা দুশ্চিন্তা করেন। আবার তাহাজ্জুদেও উঠতে পারি না। আমার বাবা মা আমার কান্না দেখে খুব অশান্তিতে ভোগেন এবং আমাকে রেখে অন্য কোথাও যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। আমাকে সবাই খুব অপরিপক্ক ভাবেন(হয়ত সেটাই)। আবার এটাও ভাবেন যে এত কোরআন পড়ি আর সবসময় দুয়া করি তার পরেও আমি কেন মানসিকভাবে অস্থির থাকি।

আমার বয়স ২২, আমার ভাই সবসময় চান যেন একা একা বিদেশে এসে মাস্টার্স করি যেন স্বাধীনভাবে থাকা শিখি এবং সেই দেশ কোন মুসলিম দেশ হতে পারবে না কারণ আমি নাকি হুজুর(!) হয়ে গিয়েছি। চায় নিজের লাইফ পার্টনার যেন নিজে পছন্দ করি। তিনি চান যেন বিয়ের আগে বিদেশ আসি। আমার বাবা মায়ের বৃদ্ধ বয়সের সন্তান আমি। বাবা মা আমার জন্য ছেলে দেখার শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। আল্লাহর কাছে কাঁদতে গেলেও ধরা পড়ে যাই । বাবা মা আমার কষ্ট দেখে কষ্ট পান। অনেক জাহেলি অনুষ্ঠানে যেতে হয় তাদের সাথে তর্ক করতে পারব না বলে। আবার আমি স্মার্টলি চলি না ও বর্তমানের অন্য মেয়েদের মত জামার সাথে মিলিয়ে হিজাব, বোরখা মেইনটেইন করতে পারিনা (স্টাইলিশ ভাবে) তাই কথা শুনতে হয়। একটা সময় আমি হীনমন্যতায় ভুগতাম ভালো ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কাউকে দেখলে। আমি জানি আমি অবাধ্য সন্তান, আচরণ ভালো করার চেষ্টা করছি। আমার বাবা মা বলেন যে আমি অনেক ভালো ও অনেক সরল।
আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারলাম না। আমার অবস্থা একটু বিবেচনা করে প্লিজ কিছু নাসীহা দিবেন শায়খ? মাহরাম ছাড়া বিদেশ যেতে চাই না(অবশ্যই মুসলিম দেশ), আল্লাহর কাছে কাঁদতে চাই, বাবা মা ও পরিবারের হক আদায় করতে চাই, উত্তম চরিত্রের মানুষ হতে চাই, আত্মবিশ্বাসী হতে চাই, আল্লাহর প্রিয় হতে চাই। আমি জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে পারব না। আমার কথাগুলো ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে জান্নাতে একটা সাম্রাজ্যের মালিক করে দিন। আমীন!

1 Answer

0 votes
by (590,550 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
দ্বীন-শরীয়ত সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখে এবং i.o.m এর প্রতি আশ্বস্ত দেখে আমরা যারপরনাই আনন্দিত।আল্লাহ পাক আপনাকে দ্বীনের উপর সর্বদা অঠল-অবিচল থাকার তৌফিক দান করুক।আ'মলী জিন্দেগি গঠন করার তৌফিক দান করুক।সেই প্রত্যাশা ও কামনা আমরা হৃদয়ে লালন করি ।আল্লাহ আপনাকেও জান্নাতে একটা সাম্রাজ্যের মালিক করে দিন। আমীন!

গোনাহের কাজ ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত কাজে মাতাপিতার বিধিনিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহিসসালাম বলেছেন,
ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ
গোনাহের কাজে কারো অনুসরণ করা যাবে না,অনুসরণ একমাত্র নেককাজ সমূহেই করা যাবে।(সহীহ বুখারী-৭২৫৭,সহীহ মুসলিম-১৮৪০)

অন্যত্র বর্ণিত আছে
ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ
আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)

যে সমস্ত বিষয় মাতাপিতার ফায়দাদায়ক এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকর নয়,সে সমস্ত বিষয়ে মাতাপিতার অনুসরণ ওয়াজিব।যদি মাতাপিতা জন্য ফায়দাদায়ক না হয় বা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হয়,সে সমস্ত বিষয়ে মাতাপিতা আদেশ নিষেধের অনুসরণ ওয়াজিব নয়।

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
ﻭﻳﻠﺰﻡ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻃﺎﻋﺔ ﻭﺍﻟﺪﻳﻪ ﻓﻲ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻌﺼﻴﺔ ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻧﺎ ﻓﺎﺳﻘﻴﻦ ... ﻭﻫﺬﺍ ﻓﻴﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻨﻔﻌﺔ ﻟﻬﻤﺎ ، ﻭﻻ ﺿﺮﺭ ﻋﻠﻴﻪ " ﺍﻧﺘﻬﻰ .
মাতাপিতা আদেশ নিষেধের অনুসরণ সন্তানের জন্য তখনই ওয়াজিব যখন তা কোনো গোনাহের কাজ হবে না।যদি ও তারা ফাসিক হোক না কেন? উপরোক্ত হুকুম তখনই যখন তা মাতাপিতার জন্য ফায়দাদায়ক হবে,এবং সন্তানের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে না।(সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হলে শরীয়ত কর্তৃক বৈধ জিনিষেও মাতাপিতার অনুসরণ ওয়াজিব হবে না)(আল-ইখতিয়ারাত-১১৪)

চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ 'আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়' রয়েছে,
" ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﻴﻦ - ﻣﻤّﻦ ﺗﺠﺐ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ – ﻛﺎﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ، ﻭﺍﻟﺰّﻭﺝ ، ﻭﻭﻻﺓ ﺍﻷﻣﺮ : ﻓﺈﻥّ ﻭﺟﻮﺏ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ ﻣﻘﻴّﺪ ﺑﺄﻥ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ، ﺇﺫ ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻟﻤﺨﻠﻮﻕ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
যাদের আদেশ-নিষেধ এর অনুসরণ শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব।যেমন-মাতাপিতা,স্বামী,সরকারী বিধিনিষেধ,এর অনুসরণ ওয়াজিব।
এ হুকুম ব্যাপক হারে প্রযোজ্য হবে না বরং ঐ সময়-ই প্রযোজ্য হবে যখন তা গুনাহের কাজ হবে না।কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(২৮/৩২৭)

আপনি সুন্নাতে নববীকে শক্তভাবে আকড়ে ধরবেন।আপনি যেভাবে আ’মল চালিয়ে যাচ্ছেন,সেভাবে আ’মল গুলো চালিয়ে যান। মাতাপিতা ভাইকে হেকমত ও নম্রতার সাথে বুঝাতে থাকেন। কল্যাণ আপনার পদচুম্বন করবেই ইনশা'আল্লাহ।বেশী বেশী আল্লাহর যিকির করবেন।কেননা যিকির মনের মধ্যের শান্তি নিয়ে আসে।
আপনি নিয়মিত ধারাবাহিক আল্লাহর যিকির করতে থাকবেন-দেখবেন মন শান্ত হবে।
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।(সূরা রা'দ-২৮)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (67 points)
আল্লাহর কাছে কীভাবে কাঁদা যায় যাতে অন্য কেউ দেখে না ফেলে (ধরে নিন তাহাজ্জুদে কাঁদতে গেলেও অন্য কেউ দেখে ফেলে) ?
by (590,550 points)
কান্নার আওয়াজ কেউ শুনলে যদি অসুবিধে হয়,তাহলে আওয়াজ না করে,নিরবে চোখের পানি ফেলবেন।নিরবে কান্না করাই অধিক সওয়াবকে সম্ভাবনাময় করে তুলে।

নিরবে নিভৃতে কাদবেন।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...