আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
28 views
in পবিত্রতা (Purity) by (5 points)
১। নারীদের ইস্তেহাজার মাসআলা অনুযায়ী, কোনো নতুন ওয়াক্ত শুরু হলেই পুরনো ওজু ভেঙ্গে যায়। অর্থাৎ আসরের সময় করা ওজু, মাগরিব শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভেঙ্গে যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য যদি ওজু করা হয়, সেই ওজুও কী ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে ভেঙ্গে যাবে?
যেমনঃ কোনো নারী যদি ইস্তেহাজারত অবস্থায় ৪ঃ৪০ এ তাহাজ্জুদের জন্য ওজু করলো। তাহলে ৪ঃ৫৭ তে যখন ফজরের ওয়াক্ত শুরু হবে, তখন কী তার ওজু ভেঙ্গে যাবে? নাকি সেই ওজু দিয়েই ফজর পড়তে পারবে?

২। রমজান মাসে অনেক সময় সেহরির পর (সুবহে সাদিকের পর) বারবার ঢেঁকুর আসতে থাকে। কোনো কোনো সময় ঢেঁকুরের সাথে তরল খাবারও চলে আসে। কিন্তু, মাঝে মাঝে খাবারটা শুধু গলা পর্যন্ত আসে, মুখের মধ্যে আসে না যে ফেলে দিবো। খাবারটা গলা পর্যন্তই আসে যা ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলতে বাধ্য হই, বা বেখেয়ালে গিলেও ফেলি। এতে কী রোজা ভাঙার সম্ভাবনা আছে? রোজাটি কী পরবর্তীতে কাযা কাফফারা আদায় করতে হবে?

আর মুখ পর্যন্ত চলে আসা তরল খাবার বেখেয়ালে গিলে ফেললেও কী রোজা ভেঙে যাবে?

1 Answer

0 votes
by (71,340 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/81416/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে

কোনো অসুস্থ ব্যক্তি শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হওয়ার জন্য শর্ত হলো,

شرط ثبوت العذر ابتداء أن يستوعب استمراره وقت الصلاة كاملا وهو الأظهر كالانقطاع لا يثبت ما لم يستوعب الوقت كله-

শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হওয়ার জন্য কোনো নামাযের শুরু থেকে শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত উযর স্থায়ী থাকা শর্ত। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৪০)

কোনো ব্যাক্তি মা'যুর প্রমানিত হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী ওয়াক্ত গুলোতে পুরো সময় উক্ত ওযর পাওয়া জরুরি নয়, বরং পরবর্তী প্রতি ওয়াক্তে একবারও যদি উক্ত ওযর পাওয়া যায়, তাহলে সে মা'যুরই থাকবে।  

,

বিস্তারিত জানুনঃ 

https://ifatwa.info/3954/

,

মা'যুরের বিধান ইস্তেহাজা ওয়ালা মহিলার ন্যায়।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ-

عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ أَبِي حُبَيْشٍ إِلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم فَذَكَرَ خَبَرَهَا وَقَالَ " ثُمَّ اغْتَسِلِي ثُمَّ تَوَضَّئِي لِكُلِّ صَلَاةٍ وَصَلِّي "

আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তার ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তারপর গোসল করবে এবং প্রত্যেক সলাতের জন্য অযু করে সলাত আদায় করবে। (আবু দাউদ ২৯৮.ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ ঋতুবতী নারীর হায়িযের ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর রক্ত নির্গত হওয়া প্রসঙ্গে, হাঃ ৬২৪), আহমাদ (৬/৪২, ২৬২)

,

হাদীসে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ جَحْشٍ، اسْتُحِيضَتْ فَأَمَرَهَا النَّبِيُّ صلي الله عليه وسلم أَنْ تَنْتَظِرَ أَيَّامَ أَقْرَائِهَا ثُمَّ تَغْتَسِلُ وَتُصَلِّي فَإِنْ رَأَتْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ تَوَضَّأَتْ وَصَلَّتْ

ইকরিমাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ বিনতু জাহশের ইস্তিহাযা হলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হায়িযের দিনসমূহে (সলাত ইত্যাদির জন্য) অপেক্ষা করার পর গোসল করে সলাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর অযু করে এক ওয়াক্ত সলাত আদায়ের পর রক্ত দেখা গেলে পরের ওয়াক্তের জন্য পুনরায় অযু করে সলাত আদায় করতে বললেন। (আবু দাউদ ৩০৫)

,

হাদীসে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ سُمَىٍّ، مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ أَنَّ الْقَعْقَاعَ، وَزَيْدَ بْنَ أَسْلَمَ، أَرْسَلَاهُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ يَسْأَلُهُ كَيْفَ تَغْتَسِلُ الْمُسْتَحَاضَةُ فَقَالَ تَغْتَسِلُ مِنْ ظُهْرٍ إِلَى ظُهْرٍ، وَتَتَوَضَّأُ لِكُلِّ صَلَاةٍ، فَإِنْ غَلَبَهَا الدَّمُ اسْتَثْفَرَتْ بِثَوْبٍ

আবূ বাকর (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সুমাই সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘কা‘আ এবং যায়িদ ইবনু আসলাম (রহঃ) সুমাইকে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাবের নিকট পাঠালেন। যাতে সুমাই তাকে জিজ্ঞেস করেন, মুস্তাহাযা কিভাবে গোসল করবে? সাঈদ (রাঃ) বললেন, মুস্তাহাযা গোসল করবে যুহর থেকে যুহর পর্যন্ত (অর্থাৎ প্রত্যেক যুহর সলাতের পূর্বে গোসল করবে) আর ওযু করবে প্রত্যেক সলাতের জন্য। যদি অত্যধিক রক্তস্রাব হয় তাহলে যেন কাপড়ের পট্টি পরিধান করে। (আবু দাউদ ৩০১)

,

https://ifatwa.info/67537/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

লিকুরিয়া রোগ যা মহিলাদের জরায়ুতে হয়।

যার অর্থ হল জরায়ু থেকে সাদাস্রাব নির্গত হওয়া।

সাদাস্রাব নাপাক। যা নির্গত হলে অজু চলে যায়। কাপড়ের যে অংশে লাগবে সেটুকু ধৌত করতে হবে। তা নাজাসতে গলিজা। এক দিরহামের বেশী হলে নামায হবে না।

,

এই সাদাস্রাব নির্গত হওয়া দুই প্রকার।

(ক) সাদাস্রাব মাঝেমধ্যে নির্গত হয়। অর্থাৎ হঠাৎ জরায়ুতে চলে আসে। এমতাবস্থায় যদি হঠাৎ নামাযের মধ্যে বা নামাযের পূর্বে নির্গত হয়, তখন কাপড় পাল্টিয়ে লজ্জাস্থান ধৌত করা পূর্বক নতুন করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। তারপর পূনরায় নামায পড়তে হবে।

,

(খ) যদি কোনো এক নামাযের পূর্ণ ওয়াক্ত ধারাবাহিক সাদাস্রাব নির্গত হতে থাকে। যেমন মাগরিবের নামাযের পূর্ণ ওয়াক্ত তথা ১ঘন্টা ৩০মিনিট ধারাবাহিক সাদাস্রাব নির্গত হতে থাকে। তাহলে এমতাবস্থায় উনাকে মা'যুর গণ্য করে মা'যুরের হুকুম উনার উপর আরোপ করা হবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/50

,

শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হওয়ার জন্য কোনো নামাযের শুরু থেকে শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত ওযর স্থায়ী থাকা শর্ত। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৪০)

সুতরাং একবার মাযুর প্রমাণিত হওয়ার পর প্রতি ওয়াক্তে নুন্যতম একবার হলেও যদি উক্ত ওযর পাওয়া যায়, তাহলে আপনি এখনো মা'যুর আছেন। আপনি মাযুর হিসেবে কন্টিনিউ করতে পারবেন।

,

তবে হ্যাঁ কোনো সময় যদি এমন হয় যে পুরো ওয়াক্তের মধ্যে একবারও উক্ত ওযর পাওয়া যায়নি, সে ক্ষেত্রে তখন আপনি সুস্থ বলে বিবেচিত হবেন। সেই সময় আপনি স্বাভাবিক অবস্থা ধরে অজু করে নামাজ আদায় করবেন।

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

,

১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে আবার তাকে অযু করতে হবে। কারণ, এশা, বিতর ও তাজ্জুদের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।

২. মুখের ভিতর না আসলে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি খাবার মুখে চলে আসে অত:পর তা অসর্তকাবশত বা বেখেয়ালে গিলে ফেলা হয় (রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায়) তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এই ক্ষেত্রে শুধু কাযা করলেই হবে। কাফফারা আসবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...