পরিবারের সদস্যদের পাক- নাপাকি সম্পর্কে গাফিলতিতে নিজের করণীয় কি

Question

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। আমার পরিবারের সদস্যরা দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন। নামায - রোজায় সীমাবদ্ধ তবে এই ইবাদতের বিধান সম্পর্কে জানে না। যেমন: নামায পড়ার জন্য শুধু ওযু করলেই হলো এরকম আরকি।আর আমি আইওএম থেকে ফিকহের কোর্স থেকে পবিত্রতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার পরিবার এসবের কিছুই জানে না।যেমন: একটা নাপাকি কাপড় সেটা তাদের মতে দুইবার ধুলেই হয়ে যায় অবশ্য আমি বলেছিলাম এই ব্যাপারে,তারপরে আমাদের ঘরের পাশেই ছাদ যেখানে মুরগি + রান্নাঘর দুটোই আছে সেখানে মুরগির মল থাকে যেটা পরিষ্কার করা হয় না; আর এই ছাদে কেউ  স্যান্ডেল ব্যবহার করে আবার কেউ করেনা ভেজা পা নিয়ে সেই নাপাকি জায়গায় যাওয়া আসা + ঘরের ভেতর ঢোকে বিশেষ করে আমার বাবা যিনি রাগী + এগুলো শুনবেন না , এছাড়াও আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলো বলে শেষ করা যাবে না।আর যার দরুন আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। এমনিতে বংশগতভাবে আমার রাগ বেশি+ কাউকে কিছু বুঝিয়ে বলতে পারি না।আর আম্মাকে ভেঙ্গেচুরে যা বলি তাতে আম্মা বলেন আমি বেশি বাড়াবাড়ি করছি ।আর তাদের পবিত্রতার ব্যাপারে এতো গাফিলতি চোখের সামনে দেখছি কিন্তু কিছু করতে পারছি না।আর এসবের জন্য আমি একটুতে চিল্লাচিল্লি শুরু করি কারণ আমি বুঝতে পারিনা আমি করবো টা কি।এতে নামায + মানসিকভাবে আমার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। যেমন আমার আম্মু কিছু মাস আগে একহাত হারিয়েছেন এখন একহাতে সব করেন তো ধরেন একটা নাপাকি কাপড় পরিষ্কার করছেন এখন ঐ হাতে রান্না করা থেকে সব করেন ; আম্মুকে বললে করতে দেন না তখন আমি আবার চিল্লাচিল্লি করি তাই এখন আর এইসব চিল্লাচিল্লির ভয়ে বলছিনা।এইতো এসবের জন্য কালকে মারাত্মক পর্যায়ের রাগ দেখালাম বোনের সাথে।আমি জানি আমার এই রাগটা আমার মানসিক চাপের কারণে এসেছে।এখন আমার কি করণীয় ,আমি কি করবো বুঝতে পারছি না ।

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব,

https://ifatwa.info/107126/   নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

শরীয়তে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে কোনো পাক জিনিসকে নাপাক বলার সুযোগ নেই।

যাহা নিম্নোক্ত হাদীস থেকে প্রমানিত হয়।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي خَلَفٍ، قَالَا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، وَعَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ: شُكِيَ إِلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم الرَّجُلُ يَجِدُ الشَّىْءَ فِي الصَّلَاةِ حَتَّى يُخَيَّلَ إِلَيْهِ فَقَالَ " لَا يَنْفَتِلُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا " . - صحيح :

‘আব্বাদ ইবনু তামীম হতে তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করল যে, কখনো সলাতের মধ্যে কিছু একটা সন্দেহ হয় যে, তার অযু হয়ত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, (বায়ু নির্গত হওয়ার) শব্দ না শুনা কিংবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সলাত ছাড়বে না।

বুখারী (অধ্যায়ঃ উযু, অনুঃ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহ বশতঃ উযু করতে হবে না, হাঃ ১৩৭), মুসলিম ৩৬২ (অধ্যায়ঃ হায়িয, অনুঃ পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর উযু নষ্ট হওয়ার সন্দেহ হলেও ঐ অবস্থায় সালাত আদায় করা জায়িয,মিশকাতুল মাসাবিহ ৩০৬)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বলেছেনঃ

ব্যাখ্যা: قَوْلُهٗ (حَتّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَو يَجِدَ رِيْحًا) (যতক্ষণ না সে বায়ু বের হওয়ার শব্দ বা নির্গত বায়ুর গন্ধ পাবে ততক্ষণ নামাজ ছেড়ে আসবে না)। এর অর্থ হলো যতক্ষণ না সে শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়া বা অন্য যে কোন পন্থায় তার বায়ু নির্গত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় ততক্ষণ নামাজ পরিত্যাগ করবে না বা ছেড়ে আসবে না। তবে এতে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য শুধুমাত্র শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়াটিই শর্ত নয়।

এ হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, শারী‘আতের কোন বিষয়ে সন্দেহের মাধ্যমে সুনিশ্চিত বিষয় বাতিল হয়ে যাবে না। অতএব যার সন্দেহ হবে বায়ু নির্গত হয়েছে কিনা তবে সে তার অজু ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত থাকবে। নিশ্চিত না হাওয়া পর্যন্ত এ সন্দেহ তার কোন ক্ষতি করবে না। আর এটি অন্যান্য বিষয়েও সমভাবে প্রযোজ্য।

আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ,লিখেন,

اﻟْﻘَﺎﻋِﺪَﺓُ اﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔُ: اﻟْﻴَﻘِﻴﻦُ ﻻَ ﻳَﺰُﻭﻝُ ﺑِﺎﻟﺸَّﻚِّ

ﻭَﺩَﻟِﻴﻠُﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺭَﻭَاﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻣَﺮْﻓُﻮﻋًﺎ {ﺇﺫَا ﻭَﺟَﺪَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓَﺄَﺷْﻜَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻲْءٌ ﺃَﻡْ ﻻَ ﻓَﻼَ ﻳَﺨْﺮُﺟَﻦَّ ﻣِﻦْ اﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺣَﺘَّﻰ

ﻳَﺴْﻤَﻊَ ﺻَﻮْﺗًﺎ، ﺃَﻭْ ﻳَﺠِﺪَ ﺭِﻳﺤًﺎ}

ভাবার্থঃতৃতীয় উসূল,ঈয়াক্বিন(দৃঢ় বিশ্বাস)সন্দের দ্বারা খতম হয় না।[তথা কারো কোনো বিষয় সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে, সে বিষয় সম্পর্কে বিপরিত কোনো সন্দেহের উদ্রেক হলে পূর্ব বিশ্বাসের কোনো ক্ষতি হবে না।অর্থাৎ নতুন করে জন্ম নেয়া সন্দেহ অগ্রহণযোগ্য ]

মুসলিম শরীফের সনদে বর্ণিত হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত হাদীস তার  উজ্জল দৃষ্টান্ত।

হাদীসটি এই, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যদি কারো তার পায়ুপথে কিছু বের হওয়ার সন্দেহ হয়।এবং উক্ত বের হওয়া না হওয়া নিয়ে সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়।তাহলে সে যেন মসজিদ থেকে (অজু করার নিমিত্তে) বের না হয়,যতক্ষণ না সে বায়ুর আওয়াজ শুনছে বা এর দুর্গন্ধ তার নাকে আসছে।(আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাইর;১/৪৭)............ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/293

শরীয়তের বিধান হলো কাপড়ে/ চাদরে নাপাকি লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রত্যেকবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধোয়ার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে তাতে কোনো দোষ নেই। এতেই চাদর কিংবা কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে।  (হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃষ্ঠা নং ১৬১, বেহেশতি জিওর ২/৭৭ )

কাপড়ে অদৃশ্যমান নাজাসত লাগলে, কাপড়কে তিনবার ধৌত করে তিনবারই নিংড়াতে হতে।এবং শেষ বার একটু শক্তভাবে নিংড়ানো হবে যাতে করে পরবর্তীতে আর কোনো পানি বাহির না হয়।(ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া;২/৫৭৪,জা'মেউল ফাতাওয়া;৫/১৬৭)

আরো জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/118

وغير المرئية بغسلهاثلاثا والعصر كل مرة

অদৃশ্যমান নাপাক বস্তু তিন বার ধৌত করতে হবে।এবং প্রত্যেকবার নিংড়াতে হবে। (নুরুল ইযাহ ৫৬)

উল্লেখ্য, তিনবারের কথা বলা হয়, যাতে সন্দেহ না থাকে। অন্যথায় যদি প্রবাহমান পানি যেমন, নদী, পুকুরে বা টেপের পানিতে এত বেশি করে ধোয়া হয়, যাতে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে যায় তাহলে তা পাক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তিনবার নিংড়িয়ে ধোয়া জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৩ আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৭ শরহুল মুনইয়া ১৮৩)

আরো জানুনঃ

https://ifatwa.info/8939/

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

০১. আপনি নিজে সর্বদা সতর্কতার সাথে চলবেন।

০২. হেকমত ও ভালোবাসার সাথে পরিবারের বাকি সদস্যদেরকে দ্বীনের মৌলিক ইলম সম্পর্কে অবগত করার চেষ্টা করতে হবে। নিজে না পারলে নিকটস্থ দ্বীনদার কোন রিলেটিভের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। অযথায় বা সামান্য কারণে পিতামাতার সাথে খারাপ ব্যবহার করা কোন ভাবেই জায়েয হবে না।