আসসালামু আলাইকুম উস্তায। কিছুদিন আগেও প্রশ্ন করেছিলাম যে আমার পরিবারে বাবা মায়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয় যেটা আমাকে ছোট বেলা থেকেই হ্যাম্পার্ড করেছে। যেটা এখনো খুব খারাপভাবে চলমান।এই মর্মে পরামর্শ চায়লে আই ফতোয়া থেকে আমাকে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দোয়া করার পরামর্শ দেয়া হয়। আমি চেষ্টা করেছি যথেষ্ট দোয়া করার, সূরা বাকারা পড়ার আরও যা যা করা যায়।
বিষয় হলো বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া আগে থেকেই দেখে আসতেছি কিন্তু বাবাকে কখনো এতোটা খারাপ ভাবিনি। সেদিন শুনলাম আমার বাবা অন্য কোথাও একটা বিয়ে করেছে। যাইহোক, কিন্তু তিনি বিয়ে করলেও তার যে ইনকাম ছিলো তা দিয়ে কখনোই দুই ফ্যামিলি চালানোর এবিলিটি ছিলোনা। আমার মায়ের বিয়ের আগে কিছু জামানো টাকা ছিলো, আর কিছু নানা দিয়েছিলো। এই গুলোকে ইনভেস্ট এর মাধ্যমে টাকা বাড়িয়ে বাড়িয়ে আর আমার বাবার ইনকাম দিয়েই আমাদের সংসার চলছিলো। আমরা তিন বোন।ভাই নেই। আমিই বড়। মাঝ খানে কিছু সময় বাবার ইনকাম একটু বারে। সেই টাকা দিয়ে গ্রামে ৫ তলা একটা বাড়ি করা হয় মোটোটি অনেক টাকা খরচ করে। এই বাড়ির পিছনে আমার নানার দেয়া কিছু টাকাও আছে।তাই বাড়িটা আমার মায়ের আর বাবার নামে ভাগাভাগি করে করা হয়। যাইহোক, চলছিলো সবই ভালো। মহামারি করোনার পর কিছু ঝামেলায় আমার বাবা চাকরি ছেড়ে দেয়। বাড়ির উপর ২০ লাখ টাকা লোন উঠিয়ে একটা বিজনেস দেয়। কিন্তু বিজনেস ধরে রাখেনা। সেই টাকা নিয়ে অন্য একটা বিয়ে করেছে সেই মহিলাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে, রেস্ট্রুরেন্টে খেয়েছে etc. এমন কি সংসার চালানোর খরচ নেই,বিজনেস করবে হেনতেন বলে আমার মায়ের সকল জমানো টাকা নেয়, আমার মায়ের সহ আমাদের যে একটু আধটু গোল্ডের জিনিস ছিলো, যেমন আমার ছোট এক জোরা কানের দুল ছিলো, আমার বোনদের এক জোরা করে ছিলো, আর আমার মায়ের কিছু ছিলো এইসব বন্ধক দেয়, দিয়ে টাকা নেয় বলে ঢাকায় এসে বিজনেস করে কিন্তু আসলে তা না। কিছুই করেনি। সব টাকা ঐ মহিলাকে দিয়েছে। গ্রামে আমার মায়ের নামে জমি ছিলো সেটাও বিক্রি করেছে বিভিন্ন অজুহাতে সে টাকাও ঐভাবে নষ্ট করেছে। আর আমাদের খরচ তো কখনো আমার বাবার টাকায় দেয়-ই নি। আমাকে পড়াচ্ছে এটা আমার মা নানা বাড়ি থেকে যে সম্পদ পেয়েছে উত্তরাধীকার সূত্রে সেটা দিয়ে। আর সবসময় আমাদের বলে এসেছে, "আমার ইনকাম দিয়ে তো হয়না তাই তোর মায়ের টা দিয়ে খরচ দিতে বল।" তারপর বাড়ির এই লোন বুঝানোর জন্য যে টাকা দিতে হয় এসব টাকা মা ম্যানেজ করে আমার বাবাকে ব্যাংকে জমা দিতে বলেছে। কিন্তু কিছুই জমা দেয়নি আমার বাবা।সব টাকা ঐ মহিলাকে নিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। পরে আর আমার মায়ের কাছেও টাকা নেই, বাবার কাছে তো আগে থেকেই টাকা নেই। মাঝখানে বাবা ঐ মহিলার সাথে ফোনে কথা বলতে গিয়ে মায়ের সাথে ধরাও পরেছে, এরপর স্বীকার করেছে এসব কাহিনী। এখন আর টাকা দিতে পারেনা দেখে ঐ মহিলা বাবাকে ভয় দিছে টাকা না দিলে ক্ষতি করবে, মেরে ফেলবে।এই জন্য ভয় পেয়ে এখন আমার মায়ের কাছে এসে বলেছে তালাক করিয়ে দিতে। যাইহোক তালাক করিয়ে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমার বাবা এখন আবার আমার মায়ের পিছন পিছন ঘুরতেছে যেনো 20 লাখ টাকার কিস্তিকে ট্রান্সফার করে 30 লাখ করে দেয়। কী যেনো কি প্রসেস আছে আমি এসব বুঝিনা। কিন্তু এখন আমার মা দিবেন না, বলেছে না দিলে আমার মাকে তালাক দিবে। আমার মা বলেছেন তিনি বাড়িটা বিক্রি করে তার অংশের টাকা নিয়ে আমার বাবার কাছ থেকে চলে যাবেন। কিন্তু এতো বড় একটা বাড়ির গ্রাহক পাওয়া সহজ কথা নয়। আবার গ্রামে। এই হলো হালত এখনকার। আমার বাবার মেয়েদের পিছনে ছোটার এসব কাহিনী ছোট থেকেই শুনতেছি আমি।সবসময় এমন করে।
আমার আসলে প্রচুর ঘৃণা জমে গেছে। দোয়াও করতে ইচ্ছে করেনা আর উনাদের জন্য। কিন্তু বাবা মা যেমনই হোক ইসলামে তো তাদের প্রায়োরিটি অনেক উস্তায। কি করা উচিত উস্তায এখন আমার? সব শুনে খুব রাগ হয়েছে। বাবার সাথে কথা বলিনি এসব শুনে এখনো। আমি তো তাদের সাথে থাকিনা। মেসে থাকি। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করেনা। অনেক দিন থেকে যাইও না। ঈদেও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। এইদিকে আমার খরচ দেয়ার মতো টাকাও তাদের কাছে নেই। আমারও কোনো ইনকাম সোর্স নেই। আমার ইচ্ছে করে ফোন দিয়ে বাবার উপর খুব চিল্লাতে কিন্তু আমি যদি এমনটা করি তাহলে তো আল্লাহ অসন্তষ্ট হবেন। তাই কিছুই বলিনা। কিছুই ভালো লাগছেনা উস্তায। বাড়ি থেকে ছোট বোনটা শুধু ফোন করে আমাকে,বলে যে বাড়িতে প্রতিদিনই মারামারি বা ঝগড়া হয়। এমন কোনো রিলেটিভও নেই যে যারা একটু হেল্প করবে। কেউ নেই। আমি কি করবো উস্তায? মাকে কি সাজেশন দেবো? তিনি আমার কাছে সাজেশন চান।
দ্বীনের বুঝ পাওয়ার পর থেকে জেনারেল পড়াশোনার বিষয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করেছি। B.SC নার্সিং পড়ি,3rd year running। এখানে কোনো পর্দা করা যায়না। কোনো পর্দার অপশন নেই। ড্রেস কোড আছে ঐটা পরতে হয়। হাত মোজা পা মোজা পরা যায়না। নিকাব পরা যায়না, স্টুডেন্ট অবস্থায় হসপিটালে ডিউটি থাকে তাই নন মাহারামকে সেবা দিতে হয়। নাইট করতে হয়। প্রাইভেট হসপিটালে পড়ি। পর্দার কোনো পরিবেশই নেই। ভেবেছিলাম ছেড়ে দিবো। দ্বীনদার দেখে বিয়ে করবো। পরিবারকে দাওয়া দিচ্ছিলাম আমার বাবা মায়ের টুকটাক ঝগড়ার মধ্যেই। বলছিলাম বুঝিয়ে যে আর পড়তে চাইনা, দ্বীনদার ছেলে দেখে যেনো বিয়ে দিয়ে দেয়। ছেলেও দেখছিলো তারা কিন্তু ছেলে নামাজ পড়ে কিনা এই ন্যূনতম খোঁজটাও নিতেন না, শুধু সেলারী দেখতেন, আর আমাকে বলতেন বিয়ের পর যেনো আমি ইসলামিক বানিয়ে নিই ছেলেকে। কি আর বলবো ! এসব নিয়ে বাড়িতে আমার দ্বন্দ চলছিলো। আমি অর্ধেক দ্বীনে বায়োডাটা দিয়েছিলাম কিন্তু ডিউটি আর ক্লাস অবস্থায় নিকাব,হাত মোজা পা মোজা পরিনা দেখে আমার বায়োডাটা এপ্রুভ করেনি। আহলিয়াতে বায়োডাটা দিয়েছিলাম। সেরকম কোনো রেসপন্স আসেনি। এভাবেই চলছিলো। জেনারেল পড়াশোনায় আর মন বসছিলোনা। ঠিক মতো কলেজে না গেলে ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে দিবেনা জেনেও কলেজে যাইনা ঠিকঠাক। মনটা থাকতে চায়না আর এই পরিবেশে। আমার জীবনে এসব চলতে চলতেই এখন বাবার বিষয়টা সামনে আসে। এখন আমার বিয়ে করতেও ভয় লাগছে, যত বায়োডাটা লিস্টে রেখেছিলাম সব ডিলিট করে দিছি। কি করবো আমি বুঝতছিনা। জেনারেলেও থাকতে ইচ্ছে করছেনা, আবার এখন পরিবেশ পরিস্থিতি খুব জটিল। আবার ভাবছি আমার ফ্যামিলি হিস্ট্রি শুনলে কোনো দ্বীনদার ছেলেও আমাকে বিয়ে করতে চায়বেনা। আবার ভয়ও করছে বিয়েটাকে। অনেক বিবাহিত বোনরাও বলে সবসময় ম্যারেড লাইফ ভালো হয়না।
কি করি উস্তায? কি করতে পারি? একটু মাশোওয়ারা করুন। বাবা মায়ের বিষয়টা নিয়েই বা কি করি, জেনারেল পড়াশোনা ছাড়াটা কতটা যৌক্তিক ! পরিবারের এসব ঋণ... আমি করবো এখন?