আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। শ্রদ্ধেয় শাইখ, নিচের লেখাটা পড়ে আমাকে এর বিস্তারিত সমধান জানালে আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকবো ইন শা আল্লাহ। জাজাকাল্লাহ।
আমি চারমাস চলমান একজন মেয়ে সন্তানের মা,আলহামদুলিল্লাহ। বিয়ে হয়েছে গত বছর অক্টোবর মাসে। পাত্রের আর্থিক অবস্থা ভালো না জেনেও সম্বন্ধ করেছি দ্বীনদ্বারিতার জন্য। বিভিন্ন জনের কাছে খোঁজ নিয়েও খারাপ রেকর্ড পাওয়া যায় নি। বিয়ের আগে পারিবারিক ভাবে পাত্রের সাথে আমার দুইবার সাক্ষাৎ হয়। প্রথম বারে অনেক প্রশ্ন করেছিলাম সেগুলোর উত্তর পাত্র ইসলাম সম্মত ভাবেই দিয়েছিলো। পাত্রের ফ্যামিলির ব্যাপারে সেভাবে খোঁজ নেওয়া হয় নি।যেটুকু হয়েছিল তাতে জানা গিয়েছিল, "তাদের ফ্যামিলির সাথে আমাদের মানানসই হবে না।" খুঁটিনাটি জানা হয় নি। এটাকে আমরা সম্পদের কুফু না মেলার কথা ভেবেছিলাম। আর পাত্রের বোনেরা ১ম যখন দেখতে এসেছিলো পাত্র,ফ্যামিলি এবং নিজেদের ইমানের হালত সম্পর্কে ও ভালো বলেছিলো।তারা সঠিক গাইড লাইন,পরিবেশ না পাওয়াতে দ্বীনকে আকড়ে ধরতে পারতেছেন না। একটু সাপোর্ট প্রয়োজন।
আমাকে নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা এ মাস ও মাস করেছে। কারণ রাখার মতো পরিবেশ নাই।এরমধ্যে আমি ভাবলাম, বেবি নেওয়ার ব্যাপারে।আমার হাসবেন্ড ও রাজি হয়ে যান। আমরা এর আগে কোনো প্রটেকশন নেই নি। নিয়ত ও করি নি। যখন নিয়ত করলাম সে মাসেই বেবি আসলো, আলহামদুলিল্লাহ।
আমাকে নেওয়ার ব্যাপারে দেরি করেন এবং আমাকে নেওয়া হয় যখন আমার গর্ভের বয়স ৪ মাস। সেটাও আমি মোটামুটি জেদ করাতে।
আমি ও বাড়িতে যাওয়ার আগেই যা যোগাযোগ হয়েছে তাতে জানতে পারি,তারা কুসংস্কার আবদ্ধ।
ননদ–
বলেছিলেন তারা আমাদের বাসায় খুব একটা আসবেন না। কিন্তু না! তারা প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসেন। একজন বিধবা ননদ ছিলো আমাদের বাড়িতেই অধিকাংশ সময় থাকতেন এবং তার ছেলেও। এখন ননদের বিয়ে হয়েছে,তার ছেলে থাকে মাঝে মাঝে৷ ছেলে আমার পর্দা সম্পর্কে খুব সচেতন। ননদরা আমার খুব যত্ন করেছেন, বিশেষ করে এই ননদ৷ আমার খানা, গোসল সবদিকে খেয়াল রেখেছেন। আল্লাহ উনাকে উত্তম জাযা দিক।
আমার ছোট ননদের দুই বিয়ে। তার প্রথম সংসারের একটা ছেলে আমাদের বাড়িতেই থাকেন।এবং ২য় সংসারে একটা মেয়ে। তার সাংসারিক খরচ আমার স্বামী দেন।কারণ তার হাসবেন্ড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। অধিকাংশ সময় আমাদের বাড়িতে থাকেন।
তাদের পড়াশুনার প্রাথমিক লেভেলের, তাও সবার না। সবথেকে ভয়ানক বিষয়, তারা আমাদের বাড়িতে আসলে ঘরের মধ্যে ওড়না ছাড়া থাকেন প্রায় সময়। এভাবেই ঘরে চলাফেরা করেন। এভাবে তাদের বাবা-ভাইয়ের সামনেও থাকেন। কোলের বাচ্চাকে মাহরাম পুরুষদের সামনে দুধ খাওয়ান। কোথাও গেলে বোরকা পরেন।
ননদাইদের সাথে পর্দা নিয়ে সমস্যা হয় না।
⬛ছোট ননদের ছেলে–
তার বয়স আমার থেকে লুকানো হয়েছিল। সেজন্য ছোট ভেবে তাকে আমাদের বাড়িতে এনে কয়েক দিন রেখেছিলাম। আদর যত্ন করেছি।
কিন্তু ছেলেটা বিগড়ে গিয়েছে নানা নানির কারণে। এই বয়সে বৃদ্ধদের মতো আচরণ করে। উনারা বলেন ওর সাথে কিছু আছে। খুবই অস্থির প্রকৃতির। ছোট ছেলে অথচ কিছু হাসিল করার ব্যাপারে আবেগের টেকনিক ভালো জানে। মাছ ধরা থেকে অন্যান্য কাজে বেশ পটু। কিন্তু পড়াশুনা শিখে নি ।৯-১০ বছরে এসেও আলিফ বা অ আ কিছুই শিখে নি৷নূরানী মাদ্রাসা তে দেওয়া হয়েছিলো। উস্তাদরা মাদ্রাসা তে রাখতে চান নি।হোম টিউটর রাখা হয়েছিল।যাকে রাখা হয় সেই ২-৩দিন পড়িয়ে চলে যায়৷ এতোটাই বেয়াদব এই ছেলে! তারা আশা করেছিলেন, আমরা মামিরা তাকে পড়াবো। কিন্তু আমি আর এই ছেলেকে সহ্য করতে পারতেছিলাম না!ছোটদের দুষ্টু বুদ্ধি থাকে,কিন্তু এর মধ্যে শয়তানি বুদ্ধি। আচরণে মনে হচ্ছিল আমাকে পর্দার ব্যাপারেও সচেতন হওয়া উচিত। সেজন্য পর্দার বিষয়ে জোরদার হয়েছি। আমার রুমে আসা নিষেধ। কিন্তু রুম থেকে বের হলে দেখা হয়ে যায়।
পড়ালেখা শিখানোর জন্য তাবিজ আনা হয়েছে।
এই ছেলেকে তার পিতৃ পরিচয় ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে৷যদি ওর বাবার বাড়ি অন্য জায়গায় বলা হয় তাহলে নাকি ও কষ্ট পায়।
আমার দেবর–
বিয়ে হয়েছে তার খালাতো বোনের সাথে।তাদের সম্পর্ক ডিভোর্সের দিকে আগাচ্ছে। প্রথম এক বছর সুন্দর ছিলো। এখানে আমার শ্বশুর বাড়ির কুটনীতি আছে।হয়তো কুফরি করা হয়েছে। স্বামী সাপোর্টিভ না।আমার ঝা কারোর প্রতি কোনো অভিযোগ করে না, শুধু তার স্বামী ছাড়া।
দেবর পড়াশুনা করেনি,কাজ করেন।অন্য জায়গায় থাকেন। বাসায় আসলে পর্দা নিয়ে সমস্যা হয় না৷ খুব সতর্ক। আলহামদুলিল্লাহ
যতোটুকু ধারণা দেবর কুচক্রী না। হিংসা বিদ্বেষ কম। ঝামেলা পছন্দ না৷ সামাজিক নিয়ম মেনে চলেন৷ তবে কারোর ক্ষতি করা হয়তো পছন্দ না। সত্য বলায় ভীত হোন না৷
⬛দেবরের স্ত্রী–
আমাদের কে বিয়ের আগে জানানো হয় নি দেবরের স্ত্রী আছেন। আমাদের বিয়ের পরেও উনার ফোন নাম্বার দিতে গড়িমসি করা হয়েছে।
উনার ভরনপোষণ সহ অন্যান্য দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করা হয় নি। ঝগড়া ঝামেলা লেগেই থাকতো। এক পর্যায়ে উনি শহরে বোনের কাছে গিয়ে জব করেছেন।
আমার ঝা এর বাপের বাড়ি থেকে ১ লাখ টাকা যৌতুক আনা হয়েছিল। ঝা, তার রুমে তাবিজের আলামত পেয়েছেন ৷ আমার ঝা এর সাথে কথা বলতে দেখলে কেউ না কেউ আমাদের কাছে থাকে।
আমার ঝা খুব একটা সাশ্রয়ী না।বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড পছন্দ। রোমান্টিকতা আশা করেন হাসবেন্ড থেকে৷খাছ পর্দা করতেন।বিয়ের পরে পর্দা আস্তে আস্তে বিলীন হতে শুরু করে। এখন মুখ না ঢেকেই রাস্তায় বের হোন! আ'উযুবিল্লাহ!
আমার শ্বশুর –
বৃদ্ধ লোক।শ্বাসকষ্ট আছে। সিগারেট খান।ঘরে বসেও খান। ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানেন। নামাজ পড়েন না।সকালে আল্লাহর গূনগান করেন,সুরের মতো। তাবিজে বিশ্বাস করেন।
আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি আলাদা ঘুমান৷ যখন এক জায়গায় হোন, তখনই গালি গালাজ সহ ঝগড়া লেগেই থাকে।
শ্বশুর চান সকালে ৮ টার মধ্যে চা । ক্ষুধা সহ্য করতে পারেন না। দুপুরে ১-২ টার মধ্যে ভাত।
শ্বাশুড়ী নামাজ আদায়ের সময় ভজন টাইপ কথা বেশি বলেন৷ এটা নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়।সবার মতে শ্বশুড় খুব অলস। নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়া পছন্দ করেন না।এ ব্যাপারে শ্বশুর বলেন, আম্মার জন্য কোথাও যাওয়া বাদ দিয়েছেন। রান্না করে খেতে হয়৷শ্বাশুড়ী বেড়াতে চলে যান।
শ্বাশুড়ী বেড়াতে গেলে আমি রান্না করেছি।শ্বশুর সাহায্য করেছে।
শ্বশুর কে কেউ কিছু না দিলে উনিও কাউকে কিছু দেন না। মানুষ চিনতে পারেন খুব সহজে।
আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির কাজকর্ম, তালিমে যাওয়া এসব পছন্দ করেন না। শ্বশুর মিথ্যা বলেন না৷ আমার শ্বশুড়ি মিথ্যা বলেন,যেটা সত্য শ্বশুড় সবার সামনে বলেন। শ্বশুরের মাতুলালয় এর আভিজাত্যপূর্ণ ছাপ তার মধ্যে আছে।
শ্বাশুড়ি —
বলেছিল - উনি মুরব্বি, অসুস্থ। খুব রোজা নামাজ করেন। গ্রাম্য তালিমে যান। বয়স বেশি না,রোগে শোকে বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু বাস্তবে,উনি মোটামুটি জোয়ান। কুড়াল কোপানোরও শক্তি আছে। গরমের সময় ব্লাউজ ছাড়া শাড়ী পরেন। শীতের সময় ও সুয়েটারের উপর থেকে বুকের কাপড় ঠিক রাখেন না৷ রাস্তা ঘাটেও !আমার শ্বাশুড়ি কুধারনা করেন অধিক পরিমাণে।খুবই ছোটমনের মানুষ! আমাদের দরজায়ই মসজিদ! গালি গালাজ লেগেই থাকে!শ্বশুর ও ননদের ছেলের সাথে! ঘর-বাহিরে রাজত্ব।
কিছু গুণ!শ্বাশুড়ী অন্যকে খাওয়ানো,দেওয়া পছন্দ করেন৷ যারা উনার প্রশংসা করে ! একটু খাবার হলেও সবাই ভাগাভাগি করে খান। খুব বেশি মায়া,মৃত-জীবিত সবার জন্য। খুব আবেগী, নাকে কান্না করতে পারেন অতিরিক্ত পর্যায়ে! যা উনার সন্তানদের কাছেও বিরক্তিকর! নাকে কান্না করে ছেলেদের সুদী ঋণ নিতে বাধ্য করেছে!
খুবই জেদি! মিথ্যা বলেন প্রচুর!কুফরি -কুসংকারে ভরপুর! রিয়া খুব(এটাই আমার শ্বশুরের পছন্দ না। আমার শ্বাশুড়ি আমল করে করে সেটা মানুষের কাছে বলতেই থাকেন৷ যেন আমল করেনই মানুষকে বলার জন্য।ওয়াক্তের নামাজ ওয়াক্তে পড়েন না। যোহর কাযা করেন খুব৷ গিয়ে আসরে স্বলাত পড়েন।)
উনি তালিম থেকে যা শিখেছেন এর বাহিরে অন্যকিছু শিখতে চান না। নিজের ভুল শুধরান না, বরং ভুলই মনে করেন না।আমি প্রথম দিকে উনাদের দাওয়াহ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, উনাদের সাথে মিলেছি। কিন্তু উনারা শুধু উনাদের দিকেই টানে আমাকে। গীবত, নানান অহেতুক গল্প, হাসি তামাশা।
আমার শ্বশুর এবং দেবর তার বংসের কথা বলে, আমার শ্বশুড়ির বংশের মানুষের থেকে এতো খারাপ মানুষ কখনো দেখেন নি।
আমি এর মধ্যে কয়েকবার বিরক্ত হয়ে আব্বুর কাছে চলে গিয়েছিলাম। প্রতিবারই আশা নিয়ে ফিরেছিলাম। এবার ভেবেছিলাম নিজের মতো করর নিজের রুম টা গুছিয়ে নেব। সেটাতেও তার সমস্যা। আমাকে পারসোনাল স্পেস দিতে চান না৷ আমি উনাকে সুযোগ না দিয়ে নিজের মতো থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু এতে দাম্পত্য জীবন, বাবু ইফেক্টেড হয়।
ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে -
শ্বশুর বলেন ছেলে-মেয়ে সব উনার পক্ষের করেছেন।আমার শ্বশুর কে ছেলে মেয়ে কেউ পছন্দ করেন না৷ একটা খাবার সব ছেলে মেয়েকে নিয়ে খাবে। না হয় সবকিছু রেখে দিবেন। আমার বিধবা ননদ যখন এখানে ছিলো তাদের মধ্যে মিল ছিলো না৷ দুজনেই আমার কাছে দুজনের দোষ বলতো। ননদকে বলেন স্বামীকে খেয়ে এখন আমাকে খেতে আসছে।
শ্বশুরের ক্ষেত্রে -
সহ্য করতে পারেন না। তার খাওয়া দাওয়া কিছুই সহ্য না। সম্মান করেন না।এক নাগাড়ে দুইজনে ১-২ ঘণ্টা গালি-গালাজ সহ ঝগড়া করেন, কোনো সমাধানে যেতে পারেন না। সকাল,সন্ধ্যা, দুপুর, রাত মিলিয়ে কয়েক বার ঝগড়া হয়।
ননদের ছেলের ক্ষেত্রে–
এর মাছ ধরা সহ আজেবাজে কাজে প্রশ্রয় দেন।পড়াশুনা করে না এই ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। এই ছেলেকেও খুব গালি গালাজ করে। আদর আহ্লাদ করে এখন ও ভাত খায়িয়ে দেন।শ্বাশুড়িকে কিছু খেতে দিলে এই ছেলেকে খাওয়াবে, ঘরের খাবার ও।
আমার স্বামীর ক্ষেত্রে –
শ্বাশুড়ীর ২ ছেলে মেয়ে আগে মারা যায়।১০ বছর পরে সন্তান হয়।৫ মেয়ে হয়। উনি একটা ছেলের জন্য আশা করেন৷ তাহাজ্জুদে খুব কান্না করতেন। উনি এতো কেঁদেছেন একটা ছেলের জন্য তাতে নাকি গাছের পাতাও উনার সাথে কেঁদেছে, উপমা!
আমার স্বামী আমাকে যে ভালোনাসেন এটা উনি সহ্য করতে পারেন না! দীর্ঘশ্বাস, আফসোস করেন খুব। আমার স্বামীকে উনাদের সাথে কখনোই ভালো ভাবে কথা বলতে দেখি নি। কারণ উনার মা -বাবা আমার স্বামীর সকল উত্তম কাজে বাঁধা সৃষ্টি করেন। তাদের সম্পর্ক খুব একটা ভালো না। আমি এসে আমার স্বামীকে উত্তম ব্যবহারের জন্য বুঝিয়ে এসেছি। কাজ হচ্ছে না৷
এদিকে আমার শ্বাশুড়ি এমন করেন যেন আমাকে আনার কারনেই উনাদের মা ছেলের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে৷
আমার স্বামী
জেনারেল, অনার্স কম্পিলিট,মুদির ব্যবসায়ী,কুরআন শিখান(ফি নিয়ে,১০-১২ হাজার এভারেজ আয় হয়)।চরমোনাই পন্থী।
৫ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সহিত আদায় করার চেষ্টা করেন। জুব্বা,দাঁড়ি,টুপি আছে।মানুষ কে কষ্ট দিতে পারে না ৷ ব্যবস্যা এবং নানা কারণে সুদী ঋণ তুলেছেন।বিধবা বোনের মাসনা করাতেও সুদি ঋণ । অনেক চেষ্টা করেছি তাও বিয়ের পরে ২ বার সুদী ঋণ তুলেছে।
বাহিরে উনার বেশ সুনাম৷ নাম ডাক। কিন্তু বাসায় উনি সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ করেন না। বাসায় মিউজিক, বেপর্দেগী, কুফরি
,কুসংস্কার, গালি-গালাজ,অপচয় সবকিছু হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে তার কোনো সম্বিৎ নেই৷ অথচ কর্তা উনি। ৫ বোনের পরে ছোট ভাই হওয়াতে উনার সুন্নাহ পালনকে ফ্যামিলির মানুষ মনে করেম উনি ছোট সেজন্য কিছু বুঝে না। উনি হয়তো বিরক্ত হয়েই উনার ফ্যামিলি তে দাওয়াহ এর কাজ করেন না। আমাকে বলেন দাওয়াহ দিতে। কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি।বুঝাতে গেলে ভুল বুঝে।
উনি ঝামেলা পছন্দ করেন না। উনার ফ্যামিলি উল্টো।উনি অনেক কুটিল বুদ্ধি রাখেন। সহজ সরল ভাবে চলেন। হাসি খুশী প্রানোচ্ছ্বল।
শুরু থেকেই আমার প্রতি খুব মুহাব্বত করেছেন। ছোট ছোট এফোর্ট দিয়ে খুশী রাখার চেষ্টা করেন।
উনি চান আমি সেজেগুজে থাকবো!একটু রোমাঞ্চ করবো! আমি এগুলো বিয়ের পরে চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাবু আসার পরে এগুলো পারি নি।একতো শরীর ভালো না। আবার এখন বাবু আছে। তাকে সামলে কিছুই পারি না।এদিকে শ্বশুর বাড়ির রান্না খাওয়ার রুটিনেও আমি কম্ফোর্ট না। ১২ টায়ও রান্না করতে যান না।শ্বাশুড়ি ৩ বেলা ঘুরতে বের হয়। বাবুকে নিয়ে আমি শুধু কাটাকাটি, ধোয়ামোছা করতে পারি। একটা ভয়ানক সত্যি কথা হলো সাজার জন্য নূন্যতম যেসব জিনিস প্রয়োজন আমার কাছে তাও নেই!
বিয়ে হয়েছে সুন্নাহ মেনে মসজিদে। আমাদের দিক থেকে কোনো প্রেশার ছিলো না। দেনমোহর পাত্রের সামর্থ্যের মধ্যে হয়৷ পাত্র এক লাখ টাকা দেনমোহর ধরে আদায় করে না। এমনকি বিয়ের ১০ দিন পরে আমাদের বাড়িতে আসে তখন ও দেনমোহর নিয়ে আসে নি! বিয়ের পরে আমাদের ফোনে কথা হয়। তখন জানান নি দেনমোহর না নিয়ে আসবে। উনি আমার রুমে আসেন। আমি যদি আগেই বুঝতে পারতাম হয়তো উনাকে রুম থেকে বের করে দিতাম!
এরপর উনার ব্যবসার টাকা দিয়ে আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সেটা আবার উনাকে কর্যে হাসানাহ দেই। সেই টাকা কয়েক ঘন্টা পরে দেনমোহর হিসেবে নিয়ে উনাকে কর্যে হাসানাহ দেই! এভাবেই আদায় হয় আমার দেনমোহর। যখন দেখতে এসেছিলো বলেছিলো ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর জমিয়েছে। সেটা নগদ আদায় করবে। ৫ টাকাই নাহয় দেনমোহর ধরতো। আমাদের থেকে কিছু বলা হতো না।
স্বামী বলেছে অন্তর এবং দৃষ্টিকে বেগনা নারী থেকে হেফাজত করেন৷ অথচ উনি সবার সাথেই কথা বলেন।
উনি সবার সবকিছু বুঝলেও আমার দিকে কিছুটা বেখবর।যদিও মনে করেন আমার হক্ব আদায় হচ্ছে। আবার চেষ্টা ও করেন খুশী রাখার। আমি বুঝে উঠতে পারি বা উনাকে।
স্বাভাবিকভাবে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক।খুব হাসিখুশী থাকি। কিন্তু সিরিয়াস কথা হলেই মনোমালিন্য হয়ে যায়।বিষয় টা এমন যে, কেউ সত্য মেনে নিতে পারি না। উনি মনে করেন উনিই সব করেন। আমি কোনো এফোর্ট দেই না। আর আমার মনে হয় এতটা সার্কিফাইজ করতেছি তবুও!উনি কথা বলা অফ করে দেন।কিন্তু আমি কথা না বললে আমাকে হাসিয়ে দেন। সবকিছু ঠিক করে নেন। তবে সিরিয়াস বিষয়ে উনার মর্জিই শেষ।
উনি আমাকে আমার ফ্যামিলিকে কনভিন্স করে আব্বুর থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। সিজারের ফুল পেমেন্ট আব্বু দিয়েছেন।
উনি আব্বুকে দিয়ে ২ লাখ টাকা ঋণ তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা হয় নি । এতে আমাদের ভালোবাসায় কমতি হয় নি, আলহামদুলিল্লাহ।
ঋণ সহ অন্যান্য বিষয়ে অনেক মিথ্যা কথা বলেছেন।আমাকে হ্যাপি রাখতে এমন করেন। কিন্তু এর কোনো প্রয়োজন নেই। উনাকে আমি বিশ্বাস করি না।না হলে আব্বু ঋণ তোলা ছাড়াই ম্যানেজ করে দিতে পারতো।
উনি স্বলাতে, দ্বীনি হালাকাহ তে এটেন্ড নিয়ে যেমন আগ্রহী অন্যান্য বিষয়ে তেমন না।
উনি হাইজিন মেইনটেইন, প্যারেন্টিং, পরিচ্ছন্নতা, বাহিরে ম্যানেজ করতে পারলেও ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্ট পারেন না৷ এসব বিষয়ে খুব অসচেতন। যদিও ব্যস্ততা ও প্রচুর৷ এসব নিয়ে টুকটাক ঝামেলা হয়েই থাকে৷ দেখা যায় আমিই খুব অবাধ্য হই ।
কতো হারাম কাজ হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে জায়েজ না জায়েজ খুঁজে। দেবরকে ভাত বেড়ে দেওয়া নিয়ে একদিন কনভিন্স করতেছিলো,আমার ফোন দিয়ে দেবরকে কল দেওয়ার ব্যাপারে বলতেছিলো। দেবর আমার ফোনে কল দিয়ে আম্মার সাথে কথা বলবে সেজন্য। এসব বিষয় নিয়ে আমিই অবাধ্য হই।
উনি উত্তম বিষয়ে গুরুত্ব কম দেন৷
নিজের টাকা নেই। অথচ সুদে টাকা এনে কতো ভাবে যে খরচ করে!
আমি-
জেনারেল পড়ুয়া।একাদশ শ্রেণিতে থাকাকালীণ দ্বীনকে বুঝতে পেরে পড়াশুনা ছেড়ে দেই। কয়েকটা মাদ্রাসা ঘুরে একটা আবাসিক মাদ্রাসা তে ভর্তি হই৷ সেখানে পরিবেশের সাথে মানাতে না পেরে বাসায় চলে আসি৷অনলাইনে মাদ্রাসা তে ভর্তি হই। দ্বীনে ফিরেই আব্বু আম্মুকে বিয়ের পাত্র দেখার জন্য বলি। তবে দু'আ করতে পারতাম না নিজেকে প্রস্তুত মনে হতো না। শেষে হযরত আপনার একটা লেকচার শুনে সব পড়াশুনা বাদ দিয়ে তিলাওয়াহ, কিতাব পাঠ এবং দু'আতে মনোযোগ দেই। এরপর ২০২৩ এর ১৩ অক্টোবর বিয়ে হয়।
আমি খুব জেদি। যেটা ঠিক সেটাতে অনড় থাকবো।ভুল হলে সেটাতে অনড় থাকি না।
দ্বীন-দুনিয়া সব আমল ধীরে ধীরে,সময় নিয়ে সুন্দর ভাবে করা পছন্দ। খুঁতখুঁতে স্বভাবের। পরিচ্ছন্নতা পছন্দ। যেখানে উত্তম কিছু করার সুযোগ থাকে উত্তম টাই বেছে নেওয়ার চেষ্টা করি।
সঠিক কথা মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করি। তবে আমার পর্দা অথবা আমার প্রেইভেসির ব্যাপারে ২ বার বুঝালেও না বুঝলে ৩য় বার ধমকের সুরে বলি৷ এতেই কাজ হয়। আমার কাছে সত্য সত্যই,ভুল ভুলই।তা আমি করি অথবা অন্য কেউ। লোকে কি বলবে এই ভয় আমার নেই বলা যায়।দুনিয়ার প্রতি লোভ নেই,আলহামদুলিল্লাহ। তবে রাগ বেশি! গুনাহ তো হয় কতো!নিজেকে প্রমাণ করতে পছন্দ করি না।
আমার ফ্যামিলি কখনো কিছু চাপিয়ে দেননি। সব সময় ভরসা দিয়েছেন।দ্বীনে ফেরার প্রথম ২-৩ মাস বুঝেন নি। পরে সব বিষয়ে সাপোর্ট করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের বাসায় আম্মু আমি খাছ পর্দা করি। আম্মু লজ্জাশীলা, ভদ্র শান্ত, দয়ালু মানুষ। আব্বু আমাদের দাদু বাড়ির সবার থেকে ভিন্ন। আব্বুই আমার আইডল ছোটবেলা থেকে।যদিও আব্বু অসৎ সঙ্গে পরে ডাচ বাংলা ব্যাংক দিয়ে ফেলেন৷ এখন ভুল বুঝতে পেরে ছাড়তে চান। সম্ভব হচ্ছে না। হারাম খাবার সেজন্য না খেয়ে রোজা রেখেছি কতো। খাবার যেটুকু না হলেই নয় ততোটুকু খেয়েছি। দ্বীনে ফিরে মাসের পর মাস ছেড়া বোরকা পরে বাহিরে গিয়েছি৷ কতো কি সুব হান আল্লাহ! এখন আমার স্বামী সুদী ঋণ নেওয়া মানুষ!
আব্বুর বাসায় কুফরি নেই। দাদু বিশ্বাস করেন, কিন্তু তাবিজ রাখতে বা নিতে পারেন না আমাদের জন্য। মেহমান কেউ মিউজিক বাজালে থামিয়ে দেওয়া হয়। পুরুষরা সামনের রুম গুলোতেই থাকে৷ ছবি কার্টুন নেই। অপচয় নেই।আম্মু হিসেবী, আগে থেকেই।
আমি আর আমার স্বামী সম্পর্কে আসছি-
আমি নিজেকে গরীবি হালতে মানাতেও প্রস্তুত ছিলাম।সম্পদ ওয়ালা সম্বন্ধ অনেক এসেছে সেগুলো আমাদের পক্ষ থেকে রিজেক্ট করা হয়েছে।
বিয়ের পরে লম্বা সময় বাবার বাড়ি থেকেছি। আমাকে স্বর্ণ দেওয়া হয়েছে একটা নাকফুল। সবকিছু মিলিয়ে এক বছরে আমার ক্ষেত্রে উনার ২০-৩০ হাজার টাকাও খরচ হয় নি।খানা,ড্রেস, ডক্টর চেক সহ সবকিছু।
শ্বশুড় বাড়িতে এক বছরে ৩ মাস ও থাকা হয় নি। ৪ টা প্রিন্টের ড্রেস দিয়েই কেটে যাচ্ছে। সাথে আব্বুর দেওয়া পুরনো ড্রেস। কোনো কিছুতেই উনার সামর্থের বাহিরে চাইনি। আমার বড় সমস্যা আমি চাইতে পারি না!
পর্দা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। তবে আমি কম্ফোর্টলি থাকতে পারি না শ্বশুর বাড়িতে। বাচ্চার মায়ের যেমন খাওয়া দাওয়া প্রয়োজন কিছুই হয়না।বাবার বাড়িতে সবকিছু যেমন available শ্বশুড় বাড়িতে তেমন না। সবকিছুতে সামাজিক নিয়ম, কুসংস্কার টানা হয়৷
স্বামীকে যদি বলি ঝাল খেলে গ্যাস বেড়ে যেতে পারে,পোল্ট্রি না খাওয়ার জন্য তখন উনি বলবে এসব কুসংস্কার, আমি মানি না। কথার দ্বারা বুঝাতে চান এসব মানা যাবে না। উনি যেমন খান আমাকেও সেভাবে খেতে হবে।
এমনটা না যে,আমি উনাকে প্রেশার দেই আমাকে ভালো খাবার এনে দিতে। তবুও!
রাতে খাওয়ার পরে দাঁত ব্রাশ করবে না। বাহির থেকে এসে মুখ ধুবে না। বাসি খাবার খাবে। পঁচা গন্ধ বুঝেই না! আমি এমন লাইফস্টাইলে মোটেও পরিচিত না। এসব মেনে নিতে পারি না!
উনি খেলা দেখবে,বেপর্দা নারীদের ছবি সমেত কোনো পোস্ট পেলে সেটা পোস্ট করবে। মাঝে মাঝে নিজের ছবি তুলবে।এসব নিয়ে একটু ঝামেলা হয়। আমি হুটহাট রেগে যাই, মেজাজ খারাপ লাগে এই বিষয় গুলো কেন বুঝে না সেজন্য। আর উনি আমি রেগে গেলে চুপ থাকেন।
আমাকে প্রেগ্ন্যাসিতে অনেক হেল্প করেছে। এখন ও হেল্প করার চেষ্টা করেন।
ইদানীং উনি আমার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেন। তার কারণ আমি বিরক্তিকর আচরণ করি,দোষারোপ করি বা আমার কষ্ট টা শেয়ার করি। এইসব পরিবেশের ইফেক্ট। এটার ব্যাড ইফেক্ট মেয়েটার উপরেও পরতে শুরু করেছে৷
শায়েখ,আমি এই পরিবেশে মোটেই থাকতে পারতেছি না। কিছুতেই সবর করতে পারতেছি না৷ আমার মন সব সময় অস্থির থাকে৷ পরিবেশের খারাপ ইফেক্ট আমার দ্বীনে পরেছে। আদব,আখলাক, আমল সবকিছুতে৷ এসব ভাবতে গেলেই অস্থির হয়ে যাই। কিভাবে এখানে নিজের দ্বীন টিকিয়ে রাখবো।
আমার স্বামীর অনেক ভালো গুণ আছে৷ এগুলো আমাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু এটাও সত্য উনার যেসব গুণ আমার অপছন্দ সেগুলো একটু ভালোবাসায় বদলানো সম্ভব, ইন শা আল্লাহ।সেজন্য একটা ভালো পরিবেশ প্রয়োজন।
শায়েখ এখানে আলাদা হাড়ি-পাতিল করেও থাকা সম্ভব না। আর এমন করাও হবে না। আমার মূল সমস্যা পরিবেশ নিয়ে৷ আমার এমন পরিবেশে দম আটকে আসে।
আমার ব্লাক ম্যাজিকের ৯০% মিল এসেছে।আবার আমার শ্বাশুড়ি চান আমার স্বামী আমাকে শাসন করুক। এতো আদর যত্ন না করুক। সে বিষয়ে উস্কানি দেন। উনি চান যেন আমার স্বামীর ভয়ে আমি উনার সব কথা শুনি,উনাকে ভয় পেয়ে উনার কুসংস্কার থেকে সব ভুল ত্রুটি মেনে নেই।
আমার দেবর-
একমাস কাজ করে টাকা দেয় আমার স্বামীর কাছে।তো পরে ২ মাস বাড়িতে থেকে ঘুরে ফিরে খান,আড্ডা দেন। সে বলেছে সে একসাথে খাবে আর এমনই করবে। আলাদা হবে না।যখন ইচ্ছে করবে কাজ করবে ইচ্ছে না করলে এভাবে বাসায় এসে ঘুরে ফিরে খাবে৷
আমার স্বামীকে অনেক বুঝিয়েছি, নিজেও বুঝেন আমাদের এখান থেকে বের হওয়া উচিত। বলেন ও৷ কিন্তু উনি হয়তো সমাজের ভয় করেন, আব্বা আম্মাকে কষ্ট দেওয়ার ভয়,(অথচ উনার আব্বা আম্মা এমন করেন যে থামাতে গেলে উনার আরো বাজে ব্যবহার করতে হয়,দূরে গেলে কিছুটা তো সুরাহ হবে) আরো বলেন বাড়ি ঘর গুছিয়েছ এসব ছেড়ে যেতে পারবেন না।
এমন অবস্থায় আমার স্বামীর অবাধ্য হয়ে /তার রাগান্বিত অবস্থা /মনে কষ্ট দিয়ে আব্বুর খরচে শ্বশুর বাড়ির এলাকায় বাসা নিয়ে থাকা যাবে? আমি বিশ্বাস করতেছি উনি অবশ্যই আমাদের কাছে চলে যাবেন৷ ইন শা আল্লাহ
উদ্দেশ্য আমার স্বামীকে এমন পরিবেশ থেকে বের করে স্বস্তিপূর্ণ স্থান দেওয়া। নিজেদের আদব আখলাক দ্বীন ঠিক করা। সাথে স্বামীর পরিবারের মানুষকে দূরে থেকে একটু একটু করে দাওয়াহ দেওয়া। কাছে থেকে এটা সম্ভব না। কারণ আমি নিজেই মানসিক ভাবে বিগড়ে থাকি। নিজের উন্নতি করা প্রয়োজন। সন্তানকে একটা সুন্দর পরিবেশ দেওয়া, দ্বীন রক্ষা।