আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
24 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ উস্তায
১) কিভাবে দুনিয়া বিমূখ হতে পারি? আগে, হিদায়াতের প্রথমদিকে কোনো কিছুর প্রতি কোনো আকর্ষণ ছিলো না। যা ছিলো তাতেই অনেক খুশি এবং সন্তুষ্ট থাকতাম৷ কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে অনুভব করছি আমার চাহিদা শুধু বাড়ছে। অল্পেতুষ্ট থাকতে পারছি না৷ অন্য কারো ভালো জিনিসপত্র দেখলে আমার ও কিনতে ইচ্ছা করে। না চাইতেও হিংসা অনুভব করছি। হিংসা নিয়ে নিজের সাথে খুব যুদ্ধ করছি।
কিভাবে এইসব থেকে মুক্তি পেতে পারি?  কোনো বই বা আলেম এর নির্দিষ্ট বয়ান.... এমন কিছু যদি সাজেস্ট করতেন,,,
২)  কোনো মেয়ের দাদার আপন ভাই কি তার জন্য মাহরাম হবে?
জাযাকাল্লাহ খায়ের কাসিরান

1 Answer

0 votes
by (585,060 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
যুহুদ হল, হারাম থেকে দূরত্ব অবলম্বন করা, বিলাসিতা পরিহার করা, অতিরিক্ত দুনিয়া সম্ভোগ থেকে দুরে থাকা, আল্লাহর আনুগত্যের কাজে অগ্রগামী থাকা এবং আখিরাতের জন্য সর্বোত্তম পাথেয় সংগ্রহ করা।
যুহুদের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কর্ম জীবন।

আখিরাতে যে সব কাজ উপকারে আসবে না সেসব কাজ ত্যাগ করাকে যুহুদ তথা দুনিয়া বিমুখতা বলে।

দুনিয়া বিমুখতা কয়েক প্রকার। হারাম কাজে লিপ্ত না হওয়ার যুহুদ। আর এটি করা ফরযে আইন। দ্বিধা-সংশয়যুক্ত কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। দ্বিধা-সংশয়ের স্তরভেদে এর যুহুদেরও স্তর রয়েছে। দ্বিধা-সংশয় শক্তিশালী হলে তা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব, আর দ্বিধা-সংশয় কম হলে তা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব। আরেক প্রকার যুহুদ হলো অনর্থক কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। যেমন, অনর্থক কথাবার্তা, দৃষ্টি, প্রশ্ন, সাক্ষাৎ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা। আরেক ধরণের যুহুদ হলো মানুষের কাছে কিছু চাওয়া থেকে বিরত থাকা, নফসের ব্যাপারে যুহুদ, তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে নফসের ওপর যে কোনো কাজকে সহজ মনে করা। সবচেয়ে উত্তম যুহুদ হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে কোনো কিছু চাওয়া ও তোমার প্রয়োজন বলা থেকে বিরত থাকা।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ بْنِ قَعْنَبٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ، - يَعْنِي ابْنَ بِلاَلٍ - عَنْ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِالسُّوقِ دَاخِلاً مِنْ بَعْضِ الْعَالِيَةِ وَالنَّاسُ كَنَفَتَهُ فَمَرَّ بِجَدْىٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ ثُمَّ قَالَ " أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ " . فَقَالُوا مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَىْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ قَالَ " أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ " . قَالُوا وَاللَّهِ لَوْ كَانَ حَيًّا كَانَ عَيْبًا فِيهِ لأَنَّهُ أَسَكُّ فَكَيْفَ وَهُوَ مَيِّتٌ فَقَالَ " فَوَاللَّهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ " .

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলীয়া (অঞ্চল) হতে মদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উভয় পার্শ্বে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার নিকট পৌছলেন। অতঃপর তিনি এর কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে এটা নিতে আগ্রহী হবে। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা উহা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (বিনা পয়সায়) তোমরা কি উহা নিতে আগ্রহী? তারা বললেন, এ যদি জীবিত তে তবুও তো এটা দোষী। কেননা এর কান হচ্ছে ক্ষুদ্র ,ক্ষুদ্র। আর এখন তো তা মৃত, কিভাবে আমরা তা গ্রহণ করব? এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এ তোমাদের নিকট যতটা তুচ্ছ, আল্লাহর নিকট দুনিয়া এর চেয়েও অধিক তুচ্ছ।
(মুসলিম শরীফ ৭১৫০)

عن سهل بن سعد الساعدي رضي الله عنه قال: جاء رجل إلى النبي -صلى الله عليه وآله وسلم- فقال: يا رسول الله، دُلَّنِي على عمل إذا عملته أحبني الله وأحبني الناس؟ «فقال ازهد في الدنيا يحبك الله، وازهد فيما عند الناس يحبك الناس»

সাহাল বিন সা‘দ আস-সায়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যেটা করলে আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং মানুষও আমাকে ভালোবাসবে? তিনি বললেন, “তুমি দুনিয়া বিমুখ হও আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষের নিকট যা আছে তার থেকে বিমুখ হও। এতে মানুষও তোমাকে পছন্দ করবে।” 
(ইবনে মাজাহ)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
দুনিয়া বিমুখ হওয়ার জন্য নিম্নে কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হলোঃ-

★তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করা :

ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ হ’ল তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস। বিশ্বাস দুর্বল হ’লে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন অল্পে তুষ্ট থাকা কষ্টকর হয়ে যায় এবং ঈমানের স্বাদ আস্বাদনও দুরূহ হয়ে পড়ে। অসুস্থ ও দুর্বল শরীরে যেমন জীবনের স্বাদ লাভ করা যায় না, তেমনি দুর্বল ঈমান নিয়ে অল্পে তুষ্টির স্বাদ আস্বাদন করা যায় না। তাই বান্দাকে এই মর্মে দৃঢ় বিশ্বাসী হ’তে হয় যে, তার রূযী জন্মের আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। সে জীবনে যা পায়নি, কখনো তা পাওয়ার ছিল না। আর যা সে পেয়েছে, তা কখনো হারানোর ছিল না। অর্থাৎ আল্লাহ তার ভাগ্যে যা কিছু নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা-ই সে পেয়েছে, পাচ্ছে এবং পাবে। তার রিযিকের সর্বশেষ দানাটি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوْتَ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا وَإِنْ أَبْطَأَ عَنْهَا، ‘কোন প্রাণীই তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না। যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছুটা বিলম্ব হয়’।
ইবনু মাজাহ হা/২১৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৯৮, সনদ ছহীহ।

★সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা :

শিশু যেমন মায়ের কোলে নিশ্চিন্ত থাকে, বান্দা তেমনি আল্লাহর উপর ভরসা করে নির্ভার থাকে। মা কখনো কখনো তার সন্তাকে আদর করে উপরে ছুঁড়ে দেয়, আবার কোলে নেয়। কিন্তু উপরের দিকে ছুঁড়ে দিলে সন্তান কখনো হতাশ হয় না; বরং আনন্দ পেয়ে হাসে। কারণ সে জানে- তার মা তাকে আবার বুকে তুলে নিবে। আল্লাহর কাছে বান্দার অবস্থান অনেকটা সেই শিশু সন্তানের মত। দারিদ্রে্যর কষ্ট, রিযিকের স্বল্পতা, বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট সব কিছুতেই বান্দা আল্লাহর উপর ভরসা করে নিশ্চিন্ত হয়। কেননা সে জানে আল্লাহর সব ফায়ছালার অন্তরালে কল্যাণ নিহিত আছে। ফলে সে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা করেই অল্পে তুষ্ট থাকে। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,مَا مِنِ امْرِئٍ إِلا وَلَهُ أَثَرٌ هُوَ وَاطِؤهُ، وَرِزْقٌ هُوَ آكِلُهُ، وَأَجَلٌ هُوَ بَالِغُهُ، وَحَتْفٌ هُوَ قَاتِلُهُ، حَتَّى لَوْ أَنَّ رَجُلا هَرَبَ مِنْ رِزْقِهِ لاتَّبَعَهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ، كَمَا أَنَّ الْمَوْتَ مُدْرِكٌ مَنْ هَرَبَ مِنْهُ، ‘প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজের পদচিহ্ন মাড়াবে, নির্ধারিত রিযিক ভক্ষণ করবে, জীবনের নির্ধারিত সীমায় উপনীত হবে এবং মৃত্যু তার জীবনাবসান ঘটাবে। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি তার রিযিক থেকে পলায়ন করে, রিযিক তার পিছনে পিছনে ছুটবে এবং তার নাগাল পেয়ে যাবে। যেমনভাবে কেউ মৃত্যু থেকে পলায়ন করলে মৃত্যু তাকে পাকড়াও করে’।
ইবনু আবিদ্দুনয়া, আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৩৯।


★নিম্ন পর্যায়ের মানুষের দিকে তাকানো :

অল্পে তুষ্ট থাকার অন্যতম একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে নিজের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের লোকদের দিকে তাকানো। সেটা হ’তে পারে ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, দেহ সৌষ্ঠব, গাড়ি-বাড়ি, মান-মর্যাদা, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,

لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ-

‘আমরা তাদের ধনিক শ্রেণীকে যে বিলাসোপকরণ সমূহ দান করেছি, তুমি সেদিকে চোখ তুলে তাকাবে না। আর তাদের ব্যাপারে তুমি দুশ্চিন্তা করো না। ঈমানদারগণের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনত রাখ’ (হিজর ১৫/৮৮)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ فِى الْمَالِ وَالْخَلْقِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُ، ‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখে যাকে ধন-সম্পদ এবং স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে তার উপরে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চাইতে নিমণমানের ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করে’।
বুখারী হা/৬৪৯০; ইবনু হিববান হা/ ৭১২; মিশকাত হা/৫২৪২।

অন্যত্র তিনি বলেন, انْظُرُوا إِلَى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ، وَلَا تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ، فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ، ‘তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিমণ স্তরের লোকের প্রতি তাকাও। তোমাদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের লোকদের দিকে তাকিয়ো না। তাহ’লে এটাই হবে তোমাদের উপরে আল্লাহর নে‘মতকে অবজ্ঞা না করার উপযুক্ত মাধ্যম’।
মুসলিম হা/২৯৬৩; মিশকাত হা/৫২৪২।

★আখেরাতমুখী জীবন গঠন করা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা :

দুনিয়া একটি ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে উপনীত হ’লে বা কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত হ’লে মানুষ কিছুটা বুঝতে পারে যে, পার্থিব জীবন এবং দুনিয়া কেন্দ্রিক আমাদের স্বপ্ন-আশা কতটা মূল্যহীন। এখানে ঈমান ও আমলের মাধ্যমে আখেরাতে মুক্তি পাওয়া মুমিন বান্দার প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে। কিন্তু জীবন যখন দুনিয়ামুখী হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন এর মোহে ডুবে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে এবং পার্থিব যৎসামান্য সামগ্রীতে পরিতুষ্ট থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে যারা আখেরাতমুখী জীবন গঠন করে, আল্লাহ তাদের স্বল্প জীবিকায় প্রভূত বরকত দান করেন। ফলে দুনিয়ার কোন কিছুর জন্য তাদের মনে কোন আক্ষেপ থাকে না এবং হৃদয়-মন অল্পে তুষ্ট থাকে। আর আখেরাতমুখী জীবন যাপনের অর্থ হ’ল- সাধ্যানুযায়ী শরী‘আতের বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করে সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্তত থাকা। কেউ যদি নিজের মধ্যে মৃত্যুর ভাবনা সর্বদা জাগরুক রাখতে পারে যে, আজকের দিনটাই হয়ত আমার শেষ দিন, আজকে অথবা আগামী কালই হয়ত আমি মরে যাব, তাহ’লে দুনিয়ার মোহে সে ডুবে থাকবে না। সহায়-সম্পদের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সে কখনোই চিন্তা-ভাবনা করবে না; বরং অল্পে তুষ্ট থেকে সাধ্য অনুযায়ী পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ে ব্যস্ত থাকবে। 

আল্লাহ বলেন,مَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ، ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কোন অংশ থাকবে না’ (শূরা ৪২/২০)।

★দীর্ঘ আশা-আকাঙক্ষা না করা :

অধিক পাওয়ার আকাঙ্খা ও দীর্ঘ আশা অল্পে তুষ্ট জীবন যাপনে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক। মানুষের আশা-আকাঙ্খা যত দীর্ঘ হয়, তার অল্পে তুষ্ট থাকার পথ ততটাই রুদ্ধ হয়ে যায়। আমরা কত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি, কত স্বপ্ন দেখি যেন আমরা আরো অনেক দিন বেঁচে থাকব। কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না যে, এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুদীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষা আমাদেরকে মৃত্যু থেকে গাফেল রাখে এবং আখেরাত বিমুখ করে তোলে। আল্লাহ বলেন,ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ، ‘ছাড় ওদেরকে। ওরা খানা-পিনা করতে থাকুক আর দুনিয়া ভোগ করতে থাকুক। আশা-আকাঙ্ক্ষা ওদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। অতঃপর শীঘ্র ওরা জানতে পারবে’ (হিজ্র ১৫/৩)। আব্দুর রহমান সা‘দী (রহঃ) বলেন, এই আয়াতে দুনিয়াদারদের ধমক দেওয়া হয়েছে। কেননা দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকা ও দীর্ঘ আশার কারণে মানুষ আখেরাত থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে’।

★সম্পদ জমানোর চিন্তা-ভাবনা পরিত্যাগ করা :

যার মধ্যে টাকা-পয়সা জমানোর এবং ব্যাংক-ব্যালেন্স করার প্রবণতা থাকে, সে খুব কমই অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে। কেননা সম্পদ পুঞ্জিভূত করার মানসিকতা সবসময় তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সম্পদ তার হস্তগত হ’লেও সে খুশি থাকতে পারে না। সেকারণ ইসলাম মানুষকে সবসময় সম্পদ সঞ্চয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে এবং দান-ছাদাক্বাহ করতে উৎসাহিত করেছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অসুস্থ বেলাল (রাঃ)-কে দেখেতে গেলেন। বেলাল (রাঃ)-এর কাছে এক স্ত্তপ খেজুর দেখে রাসূল (ছাঃ) বললেন, مَا هَذَا يَا بِلَالُ؟ ‘বেলাল! এসব কি?’ বেলাল বললেন, شَيْءٌ ادَّخَرْتُهُ لِغَدٍ، ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এটা আমি আগামীকালের জন্য জমা করে রেখেছি’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, أَمَا تَخْشَى أَنْ تَرَى لَهُ غَدًا بخارا فِي نَار جَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْفِقْ بِلَالُ وَلَا تَخْشَ مِنْ ذِي الْعَرْشِ إِقْلَالًا، ‘তুমি কি কাল ক্বিয়ামতের দিনে এর থেকে জাহান্নামের তাপ অনুভবের ভয় করছ না? বেলাল! এসব তুমি দান করে দাও। আরশের মালিকের কাছে ভুখা-নাঙ্গা থাকার ভয় করো না’।
ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০২৪; ছহীহুত তারগীব হা/৯২২; মিশকাত হা/১৮৮৫।

★লোভ ত্যাগ করা ও অন্যের সম্পদ থেকে নির্মোহ থাকা :

মানুষের জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব অনস্বীকার্য। এদেরকে ভালো কাজে নিয়োজিত না রাখলে ব্যক্তির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। ষড়রিপুর অন্যতম হ’ল লোভ। অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের জন্য লোভ পরিহার করা আবশ্যক। কেননা লোভ-লালসা দ্বীন-দুনিয়া উভয়ের জন্য হুমকি স্বরূপ। যা ইহকাল ও পরকালে মানুষকে অধঃপতনের অতল তলে নিক্ষেপ করে। আল্লাহ বলেন,وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنْ الْخُلَطَاء لَيَبْغِي بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ، ‘শরীকদের অনেকে (এভাবে) একে অপরের প্রতি যুলুম করে থাকে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৪)।

★বিলাসী জীবন পরিহার করা :

বিলাসী জীবন মানুষকে বস্ত্তবাদী করে তোলে এবং তাকে কখনো অল্পে তুষ্ট থাকতে দেয় না। সেকারণ নবী-রাসূল এবং যুগ-যুগান্তরে তাঁদের সনিষ্ঠ অনুসারীগণ বিলাসী জীবনকে অপসন্দ করেছেন এবং অনাড়ম্বর সাধা-সিধে জীবন যাপনকে বেছে নিয়েছেন। কেননা মানুষ যখন বস্ত্তবাদী হয়ে পড়ে এবং পার্থিব জীবন উপভোগে মনোনিবেশ করে তখন তার হৃদয় থেকে অল্পেতুষ্টি বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর বাস্তবতা হ’ল- মানুষ যতই ক্ষমতাশালী ও বিত্তবান হোক না কেন, তার বিলাসী জীবন বেশি দিন টেকসই হয় না। তাই দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সফরে গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে সামান্য কষ্ট স্বীকার করে আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য পাথেয় সঞ্চয় করাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। দুনিয়াতে মানুষ যতই সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক না কেন, আখেরাতের তুলনায় তা একেবারেই মূল্যহীন। এটা উপলব্ধি করার জন্য একটি হাদীছ উল্লেখ করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য থেকে দুনিয়ার সর্বাধিক সুখী ও বিলাসী জীবন যাপন করেছে, এমন লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে চুবিয়ে উঠানো হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো আরাম-আয়েশ দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না, আল্লাহর কসম, হে আমার রব! অতঃপর জান্নাতবাসীদের মধ্য থেকে এমন এক লোককে উপস্থিত করা হবে, যে দুনিয়াতে সবচাইতে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে এক মুহূর্তের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে আবার বের করা হবে। তারপর জিজ্ঞেস করা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো দুঃখ-কষ্ট দেখেছ এবং তুমি কি কখনো বিপদাপদের মুখোমুখী হয়েছ? সে বলবে, না আল্লাহর কসম, হে আমার রব! আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে পতিত হইনি। আর কখনো কোন কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি’।
মুসলিম হা/২৮০৭; মিশকাত হা/৫৬৬৯।

★কুরআন অনুধাবন করা :

সাধারণভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং তা অনুধাবন করা এক নয়। অর্থ না বুঝে কুরআন তেলাওয়াতে অশেষ নেকী অর্জিত হ’লেও, কেবল তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল হয়নি; বরং তা অনুধাবন করে উপদেশ হাছিল করা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে জীবনজুড়ে বরকত নাযিল হয়। অধিকাংশ মানুষ কুরআন তেলাওয়াত করেও তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে না, কেবল অনুধাবন না করার কারণে। সেকারণ বান্দার কর্তব্য হ’ল বোঝার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা। আল্লাহ বলেন, كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ، ‘এটি এক বরকতমন্ডিত কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি। যাতে লোকেরা এর আয়াত সমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৯)। 

★রিযিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করা :

আল্লাহর প্রতি যার ভরসা কম, সে রিযিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি পেরেশান থাকে। যে যত বেশী রিযিকের দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে, তার পক্ষে অল্পে তুষ্ট থাকা তত বেশী সহজ হবে। কিন্তু শয়তান সবসময় মানুষকে রিযিক সংকোচনের ভয় দেখায় ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উৎকণ্ঠিত করে তোলে। আবূ যার গিফারী (রাঃ) বলেন, ‘মানুষ যদি কুরআনের একটি আয়াতকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরতে পারত, তাহ’লে এই আয়াতটাই তার জন্য যথেষ্ট হ’ত। অতঃপর তিনি তেলাওয়াত করেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন, আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক প্রদান করেন’ (ত্বালাক্ব ৬৫/২-৩)।

★আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা :

আল্লাহর তাওফীক্ব ছাড়া বান্দা কোন কিছু লাভ করতে পারে না। তাই বান্দার কর্তব্য হ’ল অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অল্পে তুষ্ট থাকার জন্য এই দো‘আটি পড়তেন,اللهُمَّ اجْعَلْ رِزْقَ آلِ مُحَمَّدٍ قُوتًا، ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের পরিবারকে জীবনধারণোপযোগী রিযিক প্রদান করুন’।
মুসলিম হা/১০৫৫; ইবনু মাজাহ হা/৪১৩৯; মিশকাত হা/৫১৬৪।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

(০২)
কোনো মেয়ের দাদার আপন ভাই তার জন্য মাহরাম হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...