আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
61 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম।
একটা গভীর সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে কিছু জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হওয়া এবং আপনার কাছে সুচিন্তিত মতামতের আবেদন।মূল প্রশ্নে যাওয়ার আগে প্রেক্ষাপট টা কিছুটা দীর্ঘ হতে পারে। কিন্তু পুরো গল্পটা জানানো গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো।
আমি দেশের শীর্ষস্থানীয় নামকরা একটা পাব্লিক মেডিকেলের ছাত্রাবাসে থাকি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে হলে বেশ কিছু বিড়াল খাবারের আশায় আনাগোনা করে। কিছু জন্ম থেকেই এখানেই থাকে। অবোঝ প্রানি, তাই যার তার কাছে গিয়ে খাবারের অনুযোগ , ছেলে বিড়াল নিজেদের মধ্যে মারামারি ঝগড়া, অসুস্থ বিড়ালের যত্রতত্র পায়খানা করা সব মিলিয়েই এদের জীবন। খুব যে উন্নত জীবনযাপন করছে তা না, কিন্তু রাস্তাঘাটে লাথিগুতা খাওয়া ,কুকুরের কামড়, চিরকালীন রোগাশকা, জীবানুভর্তি জীবন এর চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো আছে।আমরা কয়েকজন পাগল আছি, সাধ্যমত খাবার দেয়ার চেষ্টা ,অসুস্থ হলে  চিকিৎসার ব্যবস্থার চেষ্টা করি।
গত বছর, সরকার পতনের আগে আমাদের principal, vice principal ছিলেন ফ্যাসিস্টের দোসর। তখন হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা স্যারদের সাথে মিলে প্ল্যান করে হলের সকল বিড়ালকে খাবার সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বস্তা ভরে বাইর ফেলে আসার। তখন কয়েকজন মিলে এর বিরোধিতা করি এবং অবশেষে স্যারদের থামাতে সক্ষম হই। কিন্তু সেই থেকে এই মেয়েগুলোর উপর মানসিক নির্যাতন, বুলিয়িং, তাদের নামে মিথ্যা গীবত চলে আসছে। বারবার হলের ,কলেজের পাব্লিক গ্রুপে গালিগালাজ করে পোস্ট লেখা হয় কেন আমরা এটা হতে দিলাম না। এখন বিড়ালের জন্যে তাদের দুর্ভোগের দায়িত্ব যেন নেই।
অবশেষে আমরা কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নেই বিড়ালগুলোকে স্পে( জরারু ফেলে দেয়া) করানোর যাথে আর সংখ্যাবৃদ্ধি না হয় এবং ছেলে বিড়াল মারামারি / যত্রতত্র হিসু করা বন্ধ করে। সেই সাথে লিটার দিয়ে পটি ট্রেইনিং এবং ভ্যাক্সিন দেয়ানোর।এজন্য ডোনেশন পোস্ট দেয়ার পর একজন ছাত্রী বলছে স্পে করানো জায়েজ না। তাই যেন ফুটো করা বস্তায় ভরে ওদের কোনো এলাকায় ফেলে আসা হয় ওরা টিকে থাকবে আর নেচারাল ইকোসিস্টেম নষ্ট হবেনা।
এখন কথা হলো যেই বিড়ালগুলো জন্ম থেকেই হোস্টেলেই ছিল তার জন্যে নেচারাল হ্যাবিটেন্ট তো এখানেই তাকে অন্য জায়গায় ফেলে আসাটাই তো তার প্রতি অন্যায়। এর মধ্যে কিছু বিড়াল দুর্বল কিছু একদম বাচ্চা।বর্তমানে দুইটি বাচ্চার ফ্লু হয়েছে আমরা চিকিৎসা করাচ্ছি বাইরে ফেলে দিল তো ওরা এই সুবিধা গুলো পাবেনা। আর যেখানে ফেলে আসবে সেখানে যে ওদের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলবেনা তারও তো নিশ্চয়তা নেই। কিছুদিন আগেও জাপানিজ গারডেন আবাসিক এলাকায় এরকম ঘটেছে। তারপর বর্তমান বিড়াল সরালে তো আবারও নতুন স্ট্রে বিড়াল আসবে তখন?   মানলাম হোস্টেলের মেয়েদের অসুবিধা হচ্ছে কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বেস্ট সলুশন কি সেটাই না যেটা দুই পক্ষকেই বেনিফিট দিবে?
অনেক অনেক ধন্যবাদ মনোযোগ দিয়ে আমাদের কষ্টের কথা শোনার জন্যে। আপনার বিজ্ঞ প্রতিক্রিয়ায় অপেক্ষায় রইলাম।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাহ।

1 Answer

0 votes
by (67,470 points)

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/51979/ নং ফাতওয়াতে আমরা বলেছি যে,

হযরত ইবনে উমর থেকে বর্ণিত,

عن ابن عمر رضي الله عنهما قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم : ( دخلتِ امرأةٌ النارَ في هِرَّة حبَسَتْها، لا هي أطعَمَتْها ولا هي ترَكَتْها تأكُلُ مِن خَشَاش الأرض حتى ماتَتْ )

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক নারী একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছিল, সে তাকে বেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খাবারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে যমীনের পোকা মাকড় খেতে পারত। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রেও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। (সহীহ বোখারী-৩৩১৮,সহীহ মুসলিম-২২৪২)

,

হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, এ হাদিস থেকে বিড়াল পালা ও বিড়ালকে বেধে রাখা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়, যদি তাকে খানাপিনা দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়।  (ফাতহুল বারি : ৬/৪১২)

,

পশু-পাখিকে নিয়মিত খাবার - পানি ও চিকিৎসা দিয়ে খাচায় বন্দী করে সুন্দরভাবে পরিচর্যা করে লালন-পালন করা জায়েয। কিন্তু এক্ষেত্রে যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে। পরিচর্যা করতে না পারলে অথবা বন্দি করে রাখার কারণে কষ্ট পেলে খাচায় আটকে রাখা জায়েয হবে না। বরং ছেড়ে দিতে হবে। ( রদ্দুল মুহতার ৬/৪০১)

,

কিছু সাহাবী থেকে খাচায় পাখি লালন-পালন করা প্রমাণিত রয়েছে। হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ ابْنُ الزّبَيْرِ بِمَكّةَ وَأَصْحَابُ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَحْمِلُونَ الطّيْرَ فِي الْأَقْفَاصِ.

আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. মক্কায় ছিলেন। তখন সাহাবীগণ খাচায় পাখি রাখতেন। (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৩৮৩)

,

অন্য এক হাদীসে রয়েছে-

عن أَنَسٍ: قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَحْسَنَ النَّاسِ خُلُقًا وَكَانَ لِي أَخٌ يُقَالُ لَهُ أَبُو عُمَيْر، وقال أحبه فَطِيمٌ وَكَانَ إِذَا جَاءَ قَالَ: يَا أَبَا عُمَيْرٍ، مَا فَعَلَ النُّغيْرُ نُغَرٌ كَانَ يَلْعَبُ بِهِ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবার চেয়ে অধিক সদাচারী ছিলেন। আমার একজন ভাই ছিল; তাকে আবূ ‘উমায়র’ বলে ডাকা হতো। আমার অনুমান যে, সে তখন মায়ের দুধ খেতো না। যখনই সে তাঁর নিকট আসতো, তিনি বলতেনঃ হে আবূ ‘উমায়র! তোমার নুগায়র কি করছে? সে নুগায়র পাখিটা নিয়ে খেলতো। (বুখারী হাদীস নং ৬২০৩; মুসলিম ,২১৫০)

,

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করেন-

قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَإِنَّ لَنَا فِي البَهَائِمِ أَجْرًا؟ قَالَ: «فِي كُلِّ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ

হে আল্লাহর রাসূল! জীব জন্তুর জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, প্রত্যেক দয়ার্দ্র হৃদয়ের অধিকারীদের জন্য পুরস্কার আছে। {বুখারী, হাদীস নং-২৩৬৩}

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

,

১. না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিড়ালকে নিউটার বানানো জায়েজ হবে না। আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/56183/

,

২. নিয়মিত খাবার - পানি ও চিকিৎসা দিয়ে সুন্দরভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে বিড়াল পোষা জায়েজ এবং বিড়ালকে টাকা-পয়সা দিয়ে খাবার কিনে খাওয়ালেও সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের জন্য বিড়াল পোষা জায়েজ এবং বিড়ালকে নিয়মিত খাবার খাওয়ানোর কারণে আপনারা সওয়াবও পাবেন ইনশাআল্লাহ। তবে যদি বিড়াল  প্রতিবেশীদের কোনো ক্ষতি করতে থাকে। ফলে প্রতিবেশীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে, তাই এই ছুরতে আপনাদের জন্য করনীয় হবে সেই বিড়ালকে অন্য দূর এলাকায় ছেড়ে আসা। এখানে যেই বিড়ালগুলো স্বাভাবিক ভাবে সুস্থ আপাতত সেইগুলো অন্য এলাকায় ছেড়ে আসতে পারেন। কারণ, এখানে বিড়ালকে মহব্বত করতে গিয়ে যেনো কোনো মানুষের কষ্ট না হয় বা ক্ষতি না হয় সেই দিকেও খেয়াল করতে হবে।

 অথবা বড় খাচার মধ্যে বন্দি করে রাখা এবং নিয়মিত খাবার-পানি দেওয়া। একান্ত কখনও ছেড়ে দিলে তার দিকে দৃষ্টি রাখা। যাতে করে অন্যের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...