ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব,
https://ifatwa.info/13052/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ
সহিহ হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ
صَوَّرَهَا نَفْسٌ فَيُعَذِِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ
‘প্রত্যেক ছবিনির্মাতা জাহান্নামে যাবে, তার নির্মিত প্রতিটি ছবি পরিবর্তে
একটি করে প্রাণ সৃষ্টি করা হবে, যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে
থাকবে।’ (বুখারী ২২২৫, ৫৯৬৩, মুসলিম ৫৬৬২)
প্রচলিত ফটো স্টুডিওগুলোর অধিকাংশ কাজই নাজায়েয।
মানুষ সাধারণত শখের বশবর্তী হয়ে ছবি তোলে। বড় বড় ছবি টানানো হয়, বেপর্দা নারীর ছবি তোলা হয়। এসবই
নাজায়েয। তাই এ ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ও নাজায়েয। সুতরাং ঐ ব্যক্তির দাওয়াত গ্রহণ না
করা ঠিকই হয়েছে। অবশ্য পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং এর চেয়ে ছোট ছবি, যা অফিসিয়াল প্রয়োজনে তোলা হয় তা জায়েয এবং এ থেকে অর্জিত আয়ও জায়েয। কিন্তু
স্টুডিওতে এর পরিমাণ খুবই কম। তাই স্টুডিওতে আপনার অধিকাংশ কাজ নাজায়েয এবং অধিকাংশ
উপার্জনও নাজায়েয। অতএব আপনার কর্তব্য এ ব্যবসা বাদ দিয়ে অন্য কোনো হালাল ব্যবসা করা।
তবে যদি স্টুডিওটি এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারেন
যে, তাতে শুধু
মানুষের পাসপোর্ট বা স্ট্যাম্প সাইজের প্রয়োজনীয় ছবিই তোলা হবে, যেমন কোনো কোনো ভূমি রেজিষ্ট্রি অফিসে দেখা যায়; তাহলে
সেক্ষেত্রে ঐ কাজ জায়েয হবে এবং এর ইনকামও হালাল হবে।
(খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৮; মাজমাউল আনহুর ৩/৫৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫০; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৬৪)
ছবি প্রয়োজন ছাড়া তোলা, সংরক্ষণ করা, প্রকাশ করা, ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে সব ইমাম ও ফিকহ বিশেষজ্ঞ
ও সমকালীন মুফতিদের মতে হারাম। তবে পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট তৈরি বা এজাতীয় বিশেষ
প্রয়োজনে ফটো তোলা, সংরক্ষণ করা, প্রকাশ
করা, ব্যবহার করা যায়। (ফিকহি মাকালাত; তকি উসমানী : ৪/১২৩)
বিনা প্রয়োজনে কোন প্রাণীর ছবি প্রস্তুত করার পর
প্রস্তুতকারীর জন্য যেমন তার মূল্য নেয়া নাজায়িয তেমনি ক্রয়কারীর জন্য তার মূল্য দেয়াও
নাজায়িয, এজন্য স্টুডিও
ইত্যাদিতে ছবি বানানোর কাজে চাকুরী করাও নাজায়িয। তবে চিত্রকর ছবি বানাতে যে রং ইত্যাদি
ব্যয় করেছে তার মূল্য দিয়ে দিবে। (শামী ১/৬৫১)
এ বিষয়ে আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞাসা
করা হলে তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,
تصوير ذوات الأرواح حرام والكسب حرام
‘প্রাণীর ছবি বানানো হারাম এবং এর উপার্জনও হারাম।’
(ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা লিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা, ফাতওয়া নং ৬৪০২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
যে ছবি তোলা জায়েজ আছে,তার ইনকাম জায়েজ আছে। যে ছবি তোলা
জায়েজ নেই, তার ইনকামও জায়েজ নেই। প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কোনো
পুরুষের পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট তৈরি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম পালনার্থে ছবি, এ জাতীয় বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা
সেটার বিনিময় জায়েজ আছে।
তবে কোনো গায়রে মাহরাম বালেগাহ বা বালেগাহ হওয়ার নিকটবর্তি কোনো মহিলার ছবি তোলা জায়েজ নেই। এক্ষেত্রে কোনো
মহিলা সেই ছবি তুলে সেটি ইডিট ইত্যাদি করে বের করে নিবে। কোনো পুরুষ সে কাজ করবেনা।
সুতরাং উপরোক্ত বিবরণ থেকে আপনার প্রশ্নের সমাধান হলো, যেসব জিনিস
সরাসরি দেখা জায়েজ প্রয়োজনের খাতিরে সেগুলোর ছবি যুক্ত করা , কাটছাঁট বা
এডিটিং করার অবকাশ আছে। কিন্তু যেগুলো সরাসরি দেখা জায়েজ নাই সেগুলোর ছবি যুক্ত বা
এডিট করাও জায়েজ নাই।
তবে বর্তমানে যত্রতত্র ডিজিটাল ছবির যেই মহামারি
শুরু হয়েছে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে, খাহেশ পূরনার্থে, কিংবা যেখানে
ছবি না হলেও চলে এমন ক্ষেত্রেও ছবির অযাচিত ব্যবহার কিছুতেই জায়েজ হতে পারে না। আল্লাহ
তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।