আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
23 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)
আসসালামু'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ জানুয়ারিতে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। আমার আব্বা আমার পড়াশোনার দায়িত্বে নেই। আমার বড় বোন আমাকে পড়াচ্ছেন।
আমার কলেজ বাড়ি থেকে প্রায় ৪৪/৪৫ কি.মি. দূরে। আমার পরীক্ষা দিতে খুব ভোরে বের হতে হয় এবং রাতের বেলা ফিরতে হয়। আমার কোন না কোন সালাত ছুটে যাচ্ছে। বাসেও পর্দার নিরাপত্তা নেই, অনেকসময় সিট না পেলে এমন জায়গায় বসে আসতে হয় যেখানে পুরুষ আর পুরুষ বসে থাকে।
নিজেকে গুটিয়ে রেখেও হুটহাট স্পর্শ লেগেই যাচ্ছে। বেশিরভাগ দিন আমার বোনের সাথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। যে কয়দিন ভাই যাবেন সেদিন শুধু মাহরাম পাব। কিন্তু তিনি পর্দা/সালাতের প্রতি সচেতন নন।
এত রাতে এভাবে বেপর্দায়ী যাতায়াত আমাকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। কাউকে কিছু বলতে পারছি না৷ কারণ আমি মরে গেলেও পরীক্ষা দিতে হবে। আমি পড়া বাদ দিতে চেয়েছিলাম, বাসায় বলার পর তারা বলেছেন যেকোন মূল্যে আমাকে পড়তেই হবে।
আমার পড়াশোনায় সমস্যা নেই। পড়তে আগ্রহী আছি, এটা আমার জন্য জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ। পড়তে আমার ভালো লাগে, তবে শুধু সেই পড়াগুলো যাতে আমার আগ্রহ আছে।
আলিম কোর্সের পড়াতে আমার মোটেও সমস্যা হচ্ছে না আলহামদুলিল্লাহ। আমি অল্প পড়েও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ। তবে আমার মনে হচ্ছে আমার বাধ্য হয়ে দুনিয়ামুখী হওয়া এবং এসব কারণে দুশ্চিন্তা কাজ করার কারণে আমি এই পড়ায় পরিপূর্ণ মনোযোগ দিতে পারছি না। আমি যেই লেভেলের আউটপুট আসুক চাইছি তা আসছে না। কারণ আমি তো যেভাবেই হোক আল্লাহর নাফরমানি করে চলেছি।

প্রথমত, বাংলা বিষয়ে আমি আগ্রহী ছিলাম না কখনো।

দ্বিতীয়ত, এটার পড়াতে এমন সব বিষয় আছে যা আমাকে কষ্ট দেয়, বিভ্রান্ত করে।
[উল্লেখ্য যে, আমি বছরখানেক আগে হারাম রিলেশনশিপ থেকে বড় রকমের ধাক্কা খাই। তারপর আমার অবস্থা এতটা খারাপ হয়ে পড়েছিল যে আমি আত্মহত্যা করতে চাচ্ছিলাম। পড়ে আল্লাহই আমাকে নিজ অনুগ্রহে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন আলহামদুলিল্লাহ। নিজের ঈমান ও আখিরাতের জীবনকে বাঁচাতে, দুনিয়ার হায়াতের অবশিষ্ট পথ আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক চলতে পারার জন্য আইওএমে ভর্তি হই।]

বাংলাতে প্রেম আর অশ্লীলতার বিবরণ ছেয়ে আছে। যা কিছু থেকে চিরতরে দূরে সরে যেতে চাইছি তা যেন আমাকে ছাড়ছেই না!
পুনরায় বাড়িতে বলে লাভ নেই। আমার শব্দগুলোর পরিবারে এখন কারোর নিকটেই বিশেষ কোন মূল্য নেই। আমি তাদের উপর নির্ভরশীল তাই।

তৃতীয়ত, কলেজে বাৎসরিক প্রায় ১২ হাজার টাকা দিতে হয়। তারপর ইনকোর্স পরীক্ষার জন্য দৈনিক যাতায়াত খরচও আছে (১০০০৳)। অন্যান্য কাজেও কলেজ যেতে হয়। ফাইনাল পরীক্ষা দেবার ব্যাপারটা তো শোচনীয়।

আমার বাবা প্রথম বর্ষের সময় হোস্টেল বুকিং দিয়ে মাস মাস ফি দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমাকে ওখানে রাখতেন না।
এখন পড়ার দায়িত্ব বাদ, হোস্টেল ফিও দিচ্ছেন না, সীটও কাটছেন না। এটার বকেয়া ফি-ও দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমি তো আশঙ্কা করছি এটাও আমার বোনকে না দিতে হয়, আপু এত ব্যায় বহন করার সামর্থ্য রাখেন না। নিজের জন্য একবার খরচ করলে আমাদের জন্য পাঁচবার করছেন।

মূলত বাবা কোন কিছুরই দায়িত্ব নিতে নারাজ- ভরণপোষণেরও না, বিয়ে দেবারও না।
আমার বাবা আমাদের ভালো অবস্থানে যাওয়াও সহ্য করতে পারেন না। দ্বীনের ব্যাপারে তো কস্মিনকালেও না, দুনিয়াবী ব্যাপারেও না। আমাকে নিয়ে আপু পরীক্ষা দেওয়াচ্ছেন তাই তিনি আপুকে বিভিন্নভাবে যন্ত্রণা করছেন।
আপুর আয় স্বল্প। তিনি বাড়ির গুটি কয়েকটা খাত বাদে সবকিছুরই খরচ বহন করছেন। তার তো খরচবহন করা দায়িত্ব না তবুও। এখন বাবা বলেন, আমাকে না পড়িয়ে টাকা উনাকে দিতে। তাই আপু যথাসাধ্য উনাকেও বাড়তি টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। তাতেও তিনি সন্তুষ্ট নন। আপুদের জিনিসপত্র পেলে নষ্ট করে ফেলেন। ঘরে সবসময় অশান্তি করতে থাকেন। এতে আপু খুব কষ্ট পান।

আপুদের বয়স ৩৮ এবং ৩৫। বাবা বাড়িতে আসা সমস্ত বিয়ের আলাপ ফিরিয়ে দিয়েছেন। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে কেউ বাদ নেই যে উনাকে এ ব্যাপারে বুঝান নি। উনি দূর্ব্যবহার করেছেন সবার সাথে। সবার আড়ালে বলেন, বিয়ে না দিয়ে আমাদেরকে পচিয়ে মারবেন। আমাদের প্রতি কেন তার এত রোষ, এত ঘৃণা -আমার জানা নেই।

দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের মা এবং বাকি মাহরামরাও আমাদের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়ান। এখানে আমার বিয়ের কোন সুযোগই নেই।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর নিজ ছায়া ব্যতীত অন্য কোনও ছায়া রাখেনি আমাদের মাথার উপর যা আমাদেরকে সান্ত্বনা দিবে। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।

এই বাংলায় অনার্স আমার কোন কাজে আসবে কি না জানি না। আমি গতানুগতিক চাকরি করব না ইনশাআল্লাহ। নিজে পর্দার মধ্যে থেকে কিছু করব ইনশাআল্লাহ।
এইচএসসি পর্যন্ত সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডে ছিলাম। জিপিএ ভালো আলহামদুলিল্লাহ।

আমার স্কুল জীবন থেকে ইংরেজিতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো অবস্থান আছে। আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে ইনশাআল্লাহ ভালোভাবে চেষ্টা করলে আইইএলটিএসে একটা ভালো স্কোর করতে পারব। আল্লাহ চাইলে এটা আমার স্কলারশিপ পেতে সহায়ক হবে।

বিয়ের আশা নেই। পড়তেও হচ্ছে। এটাও নিশ্চিত যে পড়া শেষে আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে ফ্রী-মিক্সিং চাকরির জন্য জোরচাপ দিবেন।

বাইরের দেশে স্ট্রাগল করতে হয় অনেক। তারপরেও দূরে থাকলে আমি আশা করছি ইনশাআল্লাহ আমার দ্বীনের জন্য এবং আমার বোনের জন্য কিছুটা সহজ হবে। ইউকে তে মুসলিমদের কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
স্কলারশিপ পেলে পড়াশোনা এবং অন্যান্য খরচাপাতি থেকেও আলহামদুলিল্লাহ রেহাই পাব। ছোট বেলা থেকে একান্ত প্রয়োজন মোতাবেক খরচ করতে শিখেছি আলহামদুলিল্লাহ। সেক্ষেত্রে এটা সহায়ক হতে পারে।

মাহরাম ব্যতীত দূরে সফর হারাম, তাই আমি দ্বিধায় পড়ে গেছি উস্তাদ।
দেশে থেকেও তো গুনাহ হচ্ছে, নিজের মতো করে দ্বীন মেইনটেইন করতে পারছি না। আপুও আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। উনি বলছেন, আমার একটা দিক লেগে গেলে উনি শান্তি হবেন। মাহরাম ছাড়া তো বিয়ে দিতে পারবেন না, তাই চাচ্ছেন আমার একটা চাকরি হোক। কিন্তু উনার এ ব্যাপারে দ্বীনি বুঝ নেই।

বাড়িতে থেকেও দ্বীনের উপর অটল থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
যখন বাসায় কেউ থাকেন না/ঘুমে থাকেন ঐ মুহূর্তগুলো একটু শান্তিতে থাকি। একটু ধীরে স্থিরে নামাজও পড়তে পারিনা, সবাই বলেন আমি এত করলে একদিন ছেড়ে দিব, অবিরত এসব শুনতে শুনতে এসব আমাকে প্রভাবিত করে ফেলছে। আমি এখন অটোমেটিক খুব দ্রুত নামাজ পড়ে ফেলি। কোন শান্তি খুঁজে পাই না। এমন আরও অনেক কিছুই ২৪/৭ ঘটতে থাকে।
আমার ছোট আপু দ্বীনের বুঝ পেয়েছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে। পারিবারিক পরিবেশের যাতাকলে দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছেন। তখন আমার দ্বীনের বুঝ ছিল না, অনেক কিছু না বুঝে বলে ফেলতাম। শুধু বিচ্যুতই হননি, তিনি এমন হয়ে গেছেন যে পুরোই বখে গিয়েছেন। উনাকে দেখলে আমার হৃদয়ে ভয়, আতঙ্ক, ব্যাথা আর  দুশ্চিন্তা কাজ করে!
উনার মতো আমিও একটু একটু করে হেদায়েত খুইয়ে ফেলছি। আমি আপুর মতো বিচ্যুত হতে চাই না! আমি চাই আমাকে দেখে আমার আপু ও পরিবারের সবাই নিজেকে বদলে নিক।
আল্লাহ আপুকেসহ আমার পরিবারের সবাইকে হেদায়েত দিক। আমীন।

দিন দিন আমার স্টাডি গ্যাপ বাড়ছে। এখন সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে। পরবর্তীতে পড়াশোনার জন্য আমি বাইরের দেশে যেতে পারব না।

এখন আমি বুঝতে পারছি না উস্তাদ আসলেই আমার কি করা উচিৎ?

আমি কি দেশেই এভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাব?

নাকি আমি বাইরের দেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার জন্য চলে যাব?

1 Answer

0 votes
ago by (62,490 points)

 

জবাবঃ-

https://ifatwa.info/86286/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো নারীর জন্য দুরবর্তি সফর (৭৮ কিলোমিটার)  মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর করা জায়েজ নেই।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ اكْتُتِبْتُ فِىْ غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِىْ حَاجَّةً قَالَ: اِذْهَبْ فَاحْجُجْ مَعَ اِمْرَأَتِكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

 [‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন পুরুষ যেন কক্ষনো কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় নির্জনে একত্র না হয়, আর কোন স্ত্রীলোক যেন কক্ষনো আপন কোন মাহরাম ব্যতীত একাকিনী সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হয়েছে। আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজের উদ্দেশে বের হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ/হজ করো। (সহীহ : বুখারী ৩০০৬, মুসলিম ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০১৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৭৫৭)

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ الثَّقَفِيُّ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ مُسْلِمَةٍ تُسَافِرُ مَسِيرَةَ لَيْلَةٍ، إِلَّا وَمَعَهَا رَجُلٌ ذُو حُرْمَةٍ مِنْهَا

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিম নারীর জন্য সাথে মাহরাম (যার সাথে বিবাহ হারাম এমন আত্মীয়) ছাড়া এক রাতের রাস্তা সফর করা বৈধ নয়। (আবু দাউদ ১৭২৩)

বিস্তারিত জানুনঃ  https://ifatwa.info/44857/

https://ifatwa.info/67521/  নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যেফিৎনার আশংকা না থাকলে সফরের দূরত্বের চেয়ে কম (অর্থাৎ তিনদিন তিনরাত দূরত্বের জায়গা অথবা ৭৭ (এক বর্ণনায় ৮২.৫) কিলোমিটারের চেয়ে কম) দূরত্ব মহিলার জন্য মাহরাম ব্যতীত সফর করা বৈধ রয়েছে। শায়খাইন রাহ তথা ইমাম আবু হানিফা রাহ ও ইমাম আবু ইউসুফ রাহ থেকে বর্ণিত রয়েছে,একদিন একরাত দূরত্বের জায়গা থেকে কম হলে তথা (৭৭÷৩=২৫.৬)২৫.৬ কিলোমিটার বা তার চেয়ে কম পরিমাণ জায়গা হলে মহিলা মাহরাম ব্যতীত সফর করতে পারবে।অন্যথায় পারবে না। বর্তমান এই ফিতনার যুগে  নিম্নোক্ত মতামত-ই ফাতাওয়া তথা শরয়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্য।তবে এখানেও ফিতনার আশঙ্কা না থাকা চাই।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।(কিতাবুন-নাওয়াযিল;১৫/৪১৭)এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/212

**বিশেষ প্রয়োজনে মহিলারা মাহরাম ব্যতিত কাছাকাছি বাজারে যেতে পারবে। অবশ্যই সম্পূর্ণ পর্দাকে রক্ষা করে যেতে হবে। তবে মাহরাম ছাড়া মহিলারা সফরের দূরত্ব সমপরিমাণ কোথাও যেতে পারবেন না।

হ্যা,স্থান-কাল-পাত্র বেধে সময়ের  প্রয়োজনে ফুকাহায়ে কিরামগন সহজতার স্বার্থে আসল হুকুম থেকে সরে এসে তার বিপরীত সাময়িক হুকুম মাঝেমধ্যে প্রয়োগ করে থাকেন। একেই পরিভাষায় জরুরত বলে। জরুরত বা সময়ের চাহিদায় অনেক বিধিত সিদ্বান্তকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক পরিবর্তন করে দেয়।

এরকম কিছু ফিকহী মূলনীতি 'উসূলে ফিকহ' এর কিতাবাদিতে সবিস্তারে বর্ণিত আছে,তন্মধ্যে কিছু মূলনীতি হল।

 যথাক্রমেঃ-

 ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﺤﻈﻮﺭﺍﺕ(প্রয়োজন অনেক নিষিদ্ধ জিনিষকে বৈধ করে দেয়)

এটা একাটা নীতিসিদ্ধ মৌলিক ফিকহী ক্বায়দা/ধারা যা কোরআন এবং হাদিসের থেকে চয়ন করা হয়েছে।

মাহরাম ব্যতীত কোন নারীর একাকী দূরে সফরে কিংবা বিদেশে গমন করা নিষিদ্ধ। নারীর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান ও ফেৎনা থেকে প্রতিরক্ষার জন্যই ইসলামের এই নীতি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মেয়েরা মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না এবং মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জ করতে যেতে চাচ্ছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তার সাথেই যাও (বুখারী হা/১৮৬২; মুসলিম হা/১৩৪১)।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

বিশেষ প্রয়োজনে মহিলারা মাহরাম ব্যতিত কাছাকাছি কোন জায়গায় যেতে পারবে। অবশ্যই সম্পূর্ণ পর্দাকে রক্ষা করে যেতে হবে। যদি কারো কোনো মাহরাম না থাকে, তাহলে তিনি নেককার মহিলাদের সাথে সফর করার চেষ্টা করবেন। উনি/উনারা দিনের প্রথমাংশে সফর শুরু করবেন, যাতে করে সন্ধ্যার পূর্বেই গন্তব্যস্থলে পৌছে যেতে পারেন। সর্বপ্রথম তিনি নেককারদের জামাতের অনুসন্ধান করবেন, না পেলে অন্তত পরিবেশ নিরাপদ দেখে সফর শুরু করার চেষ্টা করবেন। ফিতনার আশংকা থাকলে কিন্তু উনি/উনারা কোনো সফর করতে পারবেন না।

সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে ঐ বোনের জন্য মাহরামের সাথে বিদেশে অবস্থান করা জায়েয আছে। তবে নিজ দেশ থেকে গমনকালে তার সাথে কোন একজন মাহরাম থাকা আবশ্যক, যিনি তাকে বিদেশে অবস্থানরত মাহরামের নিকট পৌঁছে দিবেন। কারণ, মাহরাম ব্যতীত কোন নারীর একাকী দূরে সফরে কিংবা বিদেশে গমন করা নিষিদ্ধ।

তবে কিছু স্কালার বলেছেন যে, যদি ঐ মহিলার এমন কোন মাহরাম না থাকে যে তার সাথে সফর করবে এবং বিকল্প কোনো রাস্তাও নাই তার জন্য, এমতাবস্থায় ঐ বোন অপারগ ও নিরোপায় হয়ে পরিচিত এমন কোনো গায়রে মাহরামের সাথে সফর করতে পারবে, যার সাথে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে। শর্ত হল, সর্বদা নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে, অন্তরে ইস্তেগফার রাখতে হবে এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত কথাকে এড়িয়ে যেতে হবে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

ছেলে/মেয়ে যদি সবদিক থেকে উপযুক্ত হয়, বাবা-মা বা অভিভাবক বিয়ে দিতে সম্মত না হয় তবে গুনাহ থেকে বাঁচতে করণীয় হলো-

প্রথমত : আপন বাবা-মা এবং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিয়ের জন্য তাদেরকে রাজি করানোর চেষ্টা করা। পরিবারের সবার সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে যদি বিয়ে হয় তাবে তা নিঃসন্দেহে অতি উত্তম। এতে পারিবারিক সৌহার্দ ও সম্প্রতি অটুট থাকে।

 

দ্বিতীয়ত : বাবা-মা ও পরিবারের লোকজন যদি বিয়ের সম্মতি না দেয় তবে অশ্লীলতা, অবৈধ যৌনাচার ও নানা পাপাচার থেকে আত্মরক্ষার স্বার্থে নিজ সিদ্ধান্তে পছন্দনীয় মেয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে করা। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে উপযুক্ত ছেলের এভাবে বিয়ে করায় কোনো দোষ নেই।

কারণ ইসলাম কোনো পুরুষের বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য তার বাবা বা অভিভাবকের অনুমতি নেওয়াকে শর্ত করেনি। যেমনটি নারীর বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য অভিভাবকের সম্মতি শর্ত।

তৃতীয়ত : পারিবারিক শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য আলাদা সংসার গড়ে তুলুন। ইসলামি শরিয়তে এটিও দোষণীয় নয়।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য বাবাকে না জানিয়েও বিয়ে করতে পারবেন। এতে বিবাহ হয়ে যাবে। তবে পরিবারকে বুঝানোর জন্য সর্বাত্নক চ্ষ্টো করতে হবে। প্রয়োজনে বোন, নানা-নানী, দাদা-দাদী বা ভিন্ন কোন আস্থাভাজন দ্বীনদার মুরব্বীর মাধ্যমে মা বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করতে থাকুন ও আল্লাহ তায়ালার নিকট খুব বেশী পরিমাণে দোয়া করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্য সব কিছু সহজ করুন।

বিস্তারিত জানুনঃ https://ifatwa.info/6551/

 মুসলিম নারীদের বিদেশে যাওয়া বিধান জানুনঃ-  https://www.ifatwa.info/93117/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
ago by (9 points)
https://ifatwa.info/110522/

হুজুর এই প্রশ্নের জবাব দিয়েন কষ্ট করে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...