অন্যদের থেকে আলেমদের মর্যাদা অধিক বেশি।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿۹﴾
'বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান? বোধসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।' (যুমার: ০৯)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ ۬ۙ اَمۡ ہَلۡ تَسۡتَوِی الظُّلُمٰتُ وَ النُّوۡرُ ۬ۚ
‘বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অথবা আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?' (রা‘দ: ১৬)।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম বা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিবেন। (সূরা মুজাদালা: ১১)।
নবীজি সা. বলেছেন, 'যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না, এবং আলেমদের বা জ্ঞানীদের মর্যাদা-অধিকার বুঝে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।' (মুসনাদে আহমদ: ৫/৩২৩)।
আলেমরা মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। কেননা তারা দ্বীনি ইলম শেখেন এবং অন্য কে শিক্ষা দেন। এই জন্যই নবীজি বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে কুরআন মাজীদ শিখে এবং শিক্ষা দেয়।' (তিরমিজি: ২৯০৭)
নবীজি (সা.) বলেছেন, যদি কেউ কোনো ইলম শিক্ষা দেয়, তবে সেই শিক্ষা অনুসারে যত মানুষ আমল করবে, সকলের সমপরিমাণ সওয়াব ঐ ব্যক্তি লাভ করবে, কিন্তু এতে তাদের সওয়াবের কোনো ঘাটতি হবে না।' (ইবনে মাজাহ: ১/৮৮)।
অন্য এক হাদীসে নবীজি (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম শিক্ষা দিবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় সওয়াব পাবে, যে তার উপর আমল করবে। তবে আমলকারীর ছওয়াব থেকে সামান্যতমও কমানো হবে না' (ইবনে মাজাহ: ২৪০)
উলামায়ে কেরামগন নবীদের উত্তরাধিকারী।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
নবীজি (সা.) বলেছেন, 'আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামকে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যান নি। বরং তারা রেখে গিয়েছেন কেবল ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বিশাল অংশ গ্রহণ করেছে।' (আবু দাউদ: ৩৬৪১)।
আলেমগন আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি। আলেমগণ ইলমে ওহীর বাহক। এই ইলম বা জ্ঞান যে কেউ অর্জন করতে পারে না। আল্লাহ যার কল্যাণ চান এবং যাকে মনোনীত করেন, কেবল সে-ই তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান বা বুঝ দান করেন। (মুসনাদে আহমদ: ৪/৪৭)।
কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে,
یُّؤۡتِی الۡحِکۡمَۃَ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّؤۡتَ الۡحِکۡمَۃَ فَقَدۡ اُوۡتِیَ خَیۡرًا کَثِیۡرًا ؕ وَ مَا یَذَّکَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿۲۶۹﴾
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে উক্ত প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। বস্তুত, জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না' (বাকারা: ২৬৯)।
আলেমদের জন্য সমগ্র সৃষ্টিকুল দোয়া করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদানকারীর জন্য সমগ্র সৃষ্টি; এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করে। (ইবনে মাজাহ: ১৯৭)
আলেমের মর্যাদা ইবাদতকারীর চাইতে অধিক বেশি। নবীজি (সা.) আলেম কে পূর্ণিমার চাঁদের সাথে তুলনা করে বলেছেন, আলেমগণের মর্যাদা আবেদগণের উপর তেমন, যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তারকাসমূহের উপর’। (তিরমিজি: ২৬৮২)।
অন্য হাদীসে নবীজি (সা.) বলেছেন, আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর তেমন, যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর’। (তিরমিজি: ২৬৮৬)।
আলেমগন আল্লাহর প্রশংসার পাত্র। আলেমদের প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা করেছেন। কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে, মূলত আলেমগণই তাঁকে ভয় করে' (ফাতির: ২৮)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (আলে ইমরা: ১৮)
অন্য আয়াতে এসেছে, পক্ষান্তরে যারা জ্ঞান ও বিদ্যায় অভিজ্ঞ, তারা বলে, আমরা তার প্রতি ইমান এনেছি, সবই আমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে। সত্য কথা এই যে, কোনো জিনিস হতে প্রকৃত শিক্ষা কেবল জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরাই গ্রহণ করে (আলে ইমরান: ৭)।
আলেমের ইলম দ্বারা যতো মানুষ উপকৃত হবে, তিনি সে অনুযায়ী সওয়াব পেতে থাকবেন। এমনকি মৃত্যুর পরেও তার সওয়াব বন্ধ হবে না।
নবীজি সা. বলেছেন, যখন কোনো আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের সওয়াব সে অব্যাহতভাবে পেতে থাকে: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (মুসলিম: ৩/১২৫৫)।