আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
53 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (11 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমার নিম্নের প্রশ্ন নিরপেক্ষভাবে জবাব দেওয়ার অনুরোধ রইলো।

আমার এক আলেমের সাথে একসময় ভালো সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু আমি তার থেকে দূরে সরে গিয়েছি পারস্পরিক মতামতের বিরোধিতার জন্য।

** ঐ আলেমের সাথে আমার সাধারণ মানুষের সমাজ ও আলেম সমাজ নিয়ে কথাবার্তা হয়। সে আলেম আমাকে বলে যারা মেডিকেল এ পড়ে, ইন্জিনিয়ারিং এ পড়ে, সরকারি চাকরি করে তারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এবং আলেমদের পায়খানা থেকেও নগণ্য।
আমি তাকে জবাবে বললাম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী এবং আলেমরা কুরআন এবং হাদিস তাদের মধ্যে ধারণ করার জন্য তারা সম্মানিত। কিন্তু কারো সম্মান বুঝোনোর জন্য অন্যকে ছোট করা শোভা পায় না। সমাজের সবাই সমাজে অবদান রাখে। মসজিদ মাদ্রাসা নিমার্ণে সাধারণ মানুষের ও অবদান রয়েছে। আর কার গ্রহণ যোগ্যতা আল্লাহর কাছে কতটুকু সেটি আমরা জানি না।
তখন উক্ত আলেম আমাকে বলে তার সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখি না এবং আমি তার পায়খানা থেকেও নগণ্য।
আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।
প্রশ্ন ১: উক্ত আলেমের বক্তব্য কি কুরআন হাদিস সমর্থন করে? উনি কি সঠিক?

1 Answer

0 votes
by (574,470 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

অন্যদের থেকে আলেমদের মর্যাদা অধিক বেশি। 

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿۹﴾ 

'বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান? বোধসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।' (যুমার: ০৯)। 

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ ۬ۙ اَمۡ ہَلۡ تَسۡتَوِی الظُّلُمٰتُ وَ النُّوۡرُ ۬ۚ 

 ‘বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অথবা আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?' (রা‘দ: ১৬)।

আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম বা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিবেন। (সূরা মুজাদালা: ১১)।

নবীজি সা. বলেছেন, 'যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না, এবং আলেমদের বা জ্ঞানীদের মর্যাদা-অধিকার বুঝে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।' (মুসনাদে আহমদ: ৫/৩২৩)।

আলেমরা মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। কেননা তারা দ্বীনি ইলম শেখেন এবং অন্য কে শিক্ষা দেন। এই জন্যই নবীজি বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে কুরআন মাজীদ শিখে এবং শিক্ষা দেয়।' (তিরমিজি: ২৯০৭)

নবীজি (সা.) বলেছেন, যদি কেউ কোনো ইলম শিক্ষা দেয়, তবে সেই শিক্ষা অনুসারে যত মানুষ আমল করবে, সকলের সমপরিমাণ সওয়াব ঐ ব্যক্তি লাভ করবে, কিন্তু এতে তাদের সওয়াবের কোনো ঘাটতি হবে না।' (ইবনে মাজাহ: ১/৮৮)। 

অন্য এক হাদীসে নবীজি (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম শিক্ষা দিবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় সওয়াব পাবে, যে তার উপর আমল করবে। তবে আমলকারীর ছওয়াব থেকে সামান্যতমও কমানো হবে না' (ইবনে মাজাহ: ২৪০)

উলামায়ে কেরামগন নবীদের উত্তরাধিকারী। 
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
নবীজি (সা.) বলেছেন, 'আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামকে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যান নি। বরং তারা রেখে গিয়েছেন কেবল ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বিশাল অংশ গ্রহণ করেছে।' (আবু দাউদ: ৩৬৪১)।

আলেমগন আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি। আলেমগণ ইলমে ওহীর বাহক। এই ইলম বা জ্ঞান যে কেউ অর্জন করতে পারে না। আল্লাহ যার কল্যাণ চান এবং যাকে মনোনীত করেন, কেবল সে-ই তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান বা বুঝ দান করেন। (মুসনাদে আহমদ: ৪/৪৭)।

কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, 

یُّؤۡتِی الۡحِکۡمَۃَ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّؤۡتَ الۡحِکۡمَۃَ فَقَدۡ اُوۡتِیَ خَیۡرًا کَثِیۡرًا ؕ وَ مَا یَذَّکَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿۲۶۹﴾

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে উক্ত প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। বস্তুত, জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না' (বাকারা: ২৬৯)।

আলেমদের জন্য সমগ্র সৃষ্টিকুল দোয়া করে।  নবীজি (সা.) বলেছেন, মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদানকারীর জন্য সমগ্র সৃষ্টি; এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করে। (ইবনে মাজাহ: ১৯৭)

আলেমের মর্যাদা ইবাদতকারীর চাইতে অধিক বেশি। নবীজি (সা.) আলেম কে পূর্ণিমার চাঁদের সাথে তুলনা করে বলেছেন, আলেমগণের মর্যাদা আবেদগণের উপর তেমন, যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তারকাসমূহের উপর’। (তিরমিজি: ২৬৮২)। 

অন্য হাদীসে নবীজি (সা.) বলেছেন, আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর তেমন, যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর’। (তিরমিজি: ২৬৮৬)।

আলেমগন আল্লাহর প্রশংসার পাত্র। আলেমদের প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা করেছেন। কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে, মূলত আলেমগণই তাঁকে ভয় করে' (ফাতির: ২৮)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (আলে ইমরা: ১৮)

অন্য আয়াতে এসেছে, পক্ষান্তরে যারা জ্ঞান ও বিদ্যায় অভিজ্ঞ, তারা বলে, আমরা তার প্রতি ইমান এনেছি, সবই আমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে। সত্য কথা এই যে, কোনো জিনিস হতে প্রকৃত শিক্ষা কেবল জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরাই গ্রহণ করে (আলে ইমরান: ৭)।

আলেমের ইলম দ্বারা যতো মানুষ উপকৃত হবে, তিনি সে অনুযায়ী সওয়াব পেতে থাকবেন। এমনকি মৃত্যুর পরেও তার সওয়াব বন্ধ হবে না।

নবীজি সা. বলেছেন, যখন কোনো আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের সওয়াব সে অব্যাহতভাবে পেতে থাকে: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (মুসলিম: ৩/১২৫৫)।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আলেমদের মর্যাদা সাধারণ মানুষদের থেকে বেশি।
তবে উক্ত আলেমের বক্তব্য কোনোভাবেই কুরআন হাদিস সমর্থন করেনা।

এহেন কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (2 points)
প্রশ্নকারী ভাই এর কাছে অনুরোধ:

মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব দা:বা: এর একটি লিখাতে পেয়েছিলাম:

" দাওরা হাদিস পাশ করা মানেই মৌলভি নয়। "

এইজন্য, আমাদের মনে রাখা চাই, মাদ্রাসা থেকে পাশ করে বের হলেই, কিংবা মানুষজন কাউকে আলেম বলে সম্বোধন করলেই উনি আলেম, এইটা ভাবা ১০০% সঠিক নয়। 

প্রকৃত আলেম চিনে,জেনে, বুঝে তারপর-ই উনার/উনাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করা উচিত আমাদের। 

নাহলে, হিতে বিপরীত হবে। আলেম-নামধারী কোনো অল্পবিদ্যার কারো কাছ থেকে উল্টাপাল্টা, শরীয়তের মেজাজ বিরোধী কোনো বক্তব্য, আচরণ চোখে পড়লে তখন অনেকেই ভাববে, আলেম বুঝি এমন-ই !! 

যেইটা আসলে কি ঠিক ? ভন্ড, বদ-আখলাকী আলেম নামধারীদের কারণে প্রকৃত আলেমদের প্রতিও মানুষের খারাপ ধারণা চলে আসবে। যেইটা সুখকর নয়। 

তাই, আমাদের উচিত, এমন আলেম এর সাথে সম্পর্ক করা, যাঁদের ব্যাপারে অন্য বিজ্ঞ আলেমগণ ভালো মত পোষণ করেন, যাঁর বা যাঁদের আখলাক ভালো, যাঁরা সাধারণ মুসলমানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, ব্যঙ্গ করেন না ইত্যাদি। 






আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...