ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/86410/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
তাকদীর বিষয়ে আলোচনা করার অনুমতি নেই। হাদীসে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা
এসেছে-
حَدَّثَنَا
يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ دَخَلَ
عَلَى عَائِشَةَ، فَذَكَرَ لَهَا شَيْئًا مِنَ الْقَدَرِ، فَقَالَتْ: سَمِعْتُ
رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ تَكَلَّمَ فِي
شَيْءٍ مِنَ الْقَدَرِ سُئِلَ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ
يَتَكَلَّمْ فِيهِ لَمْ يُسْأَلْ عَنْهُ»
হযরত ইয়াহইয়া বনি আব্দুল্লাহ বিন আবী মুলাইকা তার পিতা থেকে
বর্ণনা করেন, তিনি একদা হযরত আয়শা রাঃ এর নিকট গেলেন। তখন তিনি তাকদীর বিষয়ে
তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন, তখন হযরত আয়শা রাঃ বলেন, আমি রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি তাকদীর
বিষয়ে কথা বলে, কিয়ামতের ময়দানে এ কারণে সে জিজ্ঞাসিত হবে। আর যে এ বিষয়ে আলোচনা
না করবে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৪}
তাকদীর বিষয়ে প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, গবেষণা করা সম্পূর্ণ
হারাম। আমাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটিতেই মগ্ন থাকা উচিত। তাকদীর এটি আল্লাহ তাআলার
গোপন রহস্য। এ রহস্য সম্পর্কে কোন ফেরেশতা বা কোন নবীও ওয়াকিফহাল নন। তাই এ বিষয়ে আমাদের
চিন্তা ফিকির করা নিজের ঈমানের ক্ষতি করা ছাড়া
আর কোন ফায়দা নেই। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা ও আলোচনা করা থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুমিনের
জন্য আবশ্যক।
আরেক হাদীসে এসেছে-
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَنَازَعُ فِي القَدَرِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ،
حَتَّى كَأَنَّمَا فُقِئَ فِي وَجْنَتَيْهِ الرُّمَّانُ، فَقَالَ: أَبِهَذَا
أُمِرْتُمْ أَمْ بِهَذَا أُرْسِلْتُ إِلَيْكُمْ؟ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ
قَبْلَكُمْ حِينَ تَنَازَعُوا فِي هَذَا الأَمْرِ، عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ أَلاَّ
تَتَنَازَعُوا فِيهِ.
হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। একদা রাসূল সাঃ আমাদের কাছে
আসলেন এমতাবস্থায় যে, আমরা তাকদীর বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন রাসূল সা. প্রচন্ড রেগে
গেলেন। রাগে চেহারা আনারের মত রক্তিম বর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, তোমরা এ এসব
করতে আদিষ্ট হয়েছো? নাকি আমি এসবের জন্য আবির্ভূত হয়েছি? ইতোপূর্বের লোকজন
এ বিষয়ে আলোচনা করে ধ্বংস হয়েছে,
আমি তোমাদের দৃঢ়তার সাথে বলছি, তোমরা এ বিষয়ে
বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। {তিরমিজী,
হাদীস নং-২১৩৩}
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কোন কাজ করতে বাধ্য করেন না। বরং দুনিয়াতে
তাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যেহেতু সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। তাই তিনি
আগে লিখে রেখেছেন বান্দা কী করবে?
এটাই তাকদীর। আর আল্লাহর এ লিখে রাখা বান্দার কর্মের উপর কোন
প্রভাব সৃষ্টি করে না। তাই, বান্দা তার কর্ম অনুপাতে ফল পাবে।
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আমাদের আকীদা রাখতে হবে যে ভালো মন্দ সবই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ
থেকেই হয়। এসবই আগে থেকেই তাকদীরে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালাও বান্দার কর্ম সম্পর্কে মহাজ্ঞানি হওয়ার কারনে অনেক আগে থেকেই তার কর্ম সম্পর্কে অবগত
রয়েছেন।
আর তাহা লিখে রেখেছেন। যেমন অলস ছাত্রের
অবস্থা দেখে শিক্ষক আগে থেকেই বলে দেয় যে তুমি ফেইল করবে, আর সে ফেইল করে।
এক্ষেত্রে সে নিজেই দোষী, শিক্ষক নয়। আরেকটি উদাহরণ, যেমন কেহ সুইসাইড করেছে। এটিও তার তাকদীরে লেখা ছিলো।
তার এই সুইসাইড এর জন্য আল্লাহ তায়ালা দায়ী নয়, বান্দাই দায়ী। মানুষ যে সুইসাইড করবে,সেটি আল্লাহ তায়ালা মহাজ্ঞানি হওয়ার কারনে আগে থেকেই জানেন। আল্লাহ তায়ালা ঠিক করে রেখছেন বিধায় সে সুইসাইড করছে, বিষয়টি এমন নহে। বরং তার মন্দ ও ভালো কাজ উভয়টিরই ইখতিয়ার ছিলো,কিন্তু সে এ
মন্দ কাজ করবে বলে আগে থেকে আল্লাহ জানতেন। আল্লাহর জানার কারনেই সে সুইসাইড করছে, বিষয়টি এমন নহে। যেমন মারাত্মক রোগিকে দেখে ডাক্তার বলে দেন যে সে আর এ কদিন
বেচে থাকেব। তো এখানে ডাক্তারের বলার কারনেই সে মারা যায়, বিষয়টি এমন নয়।
,
আল্লাহ তায়ালাও বান্দার কর্ম সম্পর্কে মহাজ্ঞানি হওয়ার কারনে অনেক আগে থেকেই তার কর্ম সম্পর্কে অবগত
রয়েছেন। তবে বান্দাহকে পূর্ণ ইখতিয়ার দিয়েছেন। সে স্বাধীন ভাবেই
চলতে পারবে। ইচ্ছামত যেকোনো কাজ করতে পারবে।
বিস্তারিত জানুনঃ
https://ifatwa.info/10263/
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
বান্দা যে গোনাহের কাজ করে এর জন্য দায়ী বান্দা নিজে। আল্লাহ
তাআলা নন। কারণ, গোনাহের কাজ করতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বাধ্য করেন না। বরং
তাকে স্বাধীন করে রাখা হয়েছে। সে ইচ্ছে করলে পূণ্যের কাজ করতে পারে, ইচ্ছে করলেই
গোনাহের কাজ করতে পারে।
বাকি আল্লাহ যেহেতু সর্ববিষয়ে জ্ঞাত, তাই বান্দা কী
করবে? তা আল্লাহ তাআলা জানেন। এ কারণে আগেই তা তাক্বদীরে লিখে রাখা
হয়েছে। তাক্বদীরে লিখে রাখাটা বান্দার কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব সৃষ্টি
করে না। এ কারণে বান্দার কাজের পুরস্কার ও শাস্তি তার নিজেরই কর্মের ফল।
যেমন ধরেন,
একজন বাবার দুইজন সন্তান। বাবা দুই সন্তানকে একটি কাজ করতে আদেশ
করলেন। বাবা জানেন একজন সন্তান কাজটি করবে। অন্যজন করবে না। কারণ, তিনি সন্তানদের
স্বভাব ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানেন। তাই নির্দেশটি দেবার পরই আরেকজনকে বলে দিলেন যে, আমার এ সন্তান
কাজটি সুন্দর করে করবে, আর অপর সন্তান কাজটি করবে না। পরে দেখা গেল
বাস্তবেই তা’ই হয়েছে। তো বাবার আগের মন্তব্যটি সন্তানদের
কাজ করা ও না করার উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করেনি। কারণ, তিনি একজনকে
কাজ করতে বাধ্য ও অন্যজনকে না করতে বাধ্য করেননি। বরং তিনি সন্তানদের প্রকৃতি ও স্বভাব
সম্পর্কে জ্ঞাত হবার কারণে আগেই অনুধাবন করে মন্তব্যটি করেছিলেন। তাই কাজ করা ও না
করার যিম্মাদার সন্তান হবে। বাবার আগের করা মন্তব্যটি নয়। বাবা শুধু নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে এমনটি মন্তব্য আগেই মন্তব্যটি
করে রেখেছিলেন।
তেমনি আল্লাহ তাআলা আমাদের স্বভাব প্রকৃতি এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে
পূর্ণাঙ্গ ওয়াকিফহাল। এ কারণেই তিনি আগেই আমাদের তাক্বদীর লিখে রেখেছেন।
সেই লিখে রাখাটা আমাদের কর্মের কোন দায়ভার বহন করে না। কারণ, তিনি আমাদেরকে
স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। আমাদের দ্বারা জোরপূর্বক তিনি ভালো কাজ যেমন করান না। তেমনি
কাউকে দিয়ে জোরপূর্বক আমাদের গোনাহ করতে বাধ্য করেন না। বরং আমরা ভালো ও মন্দ কাজ করতে স্বাধীন। তাই মন্দ ও গোনাহের
কাজের যিম্মাদার আমরা নিজেই। এর দায়ভারও আমাদের উপরই বর্তাবে। আল্লাহ তাআলাকে বা তাক্বদীরকে
এ কারনে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। (কিছু তথ্য সংগৃহীত)