আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
37 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ উস্তাদ। আমি মেডিকেল শিক্ষার্থী। আমি সহশিক্ষায় পড়াশুনা করি তাই আমি কণ্ঠের পর্দা করতে পারি না। শুধু পোশাকের পর্দা করি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পূর্বপরিচিত (ছোট থেকে চেনে) খালু,মামা, চাচা,ভাই যারা গায়রে মাহরাম, তাদের দেখলে সালাম দেই এবং কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করি। নাহলে তারা আমাকে বেয়াদব এবং অহংকারী মনে করে। কিন্তু এটিতো আমার পর্দার খেলাপ হচ্ছে উস্তাদ। আমার এখন কি করনীয় উস্তাদ? আমি এই বিষয়টি নিয়ে অনেক হতাশায় ভুগি যে আমার শুধু পোশাকের পর্দার তো কোনো মূল্যই থাকছে না। আমি কি তাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে যাব নাকি সালাম দিবো উস্তাদ? কিভাবে আমি আমার এই সামান্য পর্দার প্রচেষ্টাকে রক্ষা করতে পারি সেই বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিবেন উস্তাদ ইনশাআল্লাহ্।

1 Answer

+1 vote
by (59,730 points)

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/85580/  নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

চেহারার পর্দা করাও আবশ্যক। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}


আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলোনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}


আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}


হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেন,

 وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ القُفَّازَيْنِ

আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।’ (বুখারী : ১৮৩৮)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী  যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন।


আয়েশা রাযি. হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবীদের পর্দার যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায় তো বটেই ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন। আয়েশা রাযি. বলেন,

كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهﷺ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.

আমরা ইহরাম অবস্থায় সাল্লাল্লাহু -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ (আবূ দাঊদ : ৫৩৮১; বাইহাকী : ৩৩৮৮)

আসমা বিনত আবী বাকর রাযি. বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের চেহারা আবৃত রাখতাম। (মুস্তাদরাক হাকেম : ১৬৬৪)


ফাতিমা বিনতুল মুনযির রহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাযি.-এর সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম।’ (ইমাম মালেক, মুয়াত্তা: ১/৩২৮; হাকিম, মুসতাদরাক : ১/৪৫৪)


মুফতী মুহাম্মদ শাফী রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেন নি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফী ফকীহগণ গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেননি।’ (মা‘আরিফুল কুরআন : ৭/২১৪)

আরো জানুনঃ

 https://ifatwa.info/9333/


প্রশ্ন হল নারীদের আওয়াজ কি সতরের অন্তর্ভুক্ত?

এ সম্পর্কে উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি হানাফি মাযহাবের উলামাদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে-

হানাফি উলামাদের কিছুসংখ্যকের গবেষকদের বর্ণননামতে নারীদের আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ রেওয়াত মারজুহ(অগ্রগণ্য নয়)।

অন্যদিকে কিছুসংখ্যক গবেষকদের বর্ণনামতে নারী আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।এ রেওয়াত-ই রাজেহ (অগ্রগণ্য) । অর্থাৎ ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে কোমলতা পরিহার করে প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে নারী কথা বলতে পারবে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/1058


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!


প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রয়োজন না হলে তাদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন নেই। এমনি এমনি তাদের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলা যাবে না। এটা জায়েজ হবে না। তবে ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে কোমলতা পরিহার করে প্রয়োজনীয় কথা বলাতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে কোমলতা পরিহার করে প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে নারী কথা বলতে পারবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 209 views
...