জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
উপরোক্ত আয়াত সমূহে পরিস্কার ভাষায় মেয়েদের অন্যের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে, আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যা পরিস্কার ভাষায় জানাচ্ছে যে, প্রয়োজন ছাড়া মেয়েদের সাথে কথা বলা জায়েজ নয়।
দ্বীনী বা বৈধ কোন জরুরী বিষয় থাকলে পর্দার আড়ালে থেকে কম কথায় শেষ করে নিবে। অযথা কথা বলা হারাম।
★হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি থেকে বর্ণিত,
(إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ الْمَرْأَةَ ، فَإِنْ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مَا يَدْعُوهُ إِلَى نِكَاحِهَا ، فَلْيَفْعَلْ)
যদি কেউ কোনো মহিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে চায়,তাহলে সে যেন যযথাসম্ভব ঐ মহিলাকে দেখে নেয়।(সুনানু আবি দাউদ-২০৮২)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أبي هريرة، قال: كنت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فأتاه رجل فأخبره أنه تزوج امرأة من الأنصار، فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أنظرت إليها؟»، قال: لا، قال: «فاذهب فانظر إليها، فإن في أعين الأنصارشيئا»
তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পাশে বসা ছিলাম।একব্যক্তি এসে বলল, আমি আনসারি এক মহিলাকে বিয়ে করতে চাই।রাসূলুল্লাহ বললেন,তুমি কি পাত্রী দেখেছো?তিনি বললেন,না।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,যাও গিয়ে পাত্রী দেখে আসো।কেননা আনসারীদের চোখে নীল বা এ জাতীয় কিছু থাকে।(সহীহ মুসলিম-১৪২৪)
পাত্র-পাত্রীর পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ ও আলাপ চারিতার কয়েকটি মূলনীতি-
(১)খালওয়াত হতে পারবে না।
(২)মুবাহ বিষয় ব্যতীত অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে না।
(৩)ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকতে হবে।যদি কামভাব জাগ্রত হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যায়,অথবা কোনো একজন উপভোগ করতে শুরু করে নেয়,তাহলে তখন সেটা হারাম হয়ে যাবে।
(৪)মহিলা নরম ভাষায় কথা বলতে পারবে না।
(৫)মহিলা পূর্ণ হেজাব তথা কবজা পর্যন্ত হাত,টাখনু পর্যন্ত পা,এবং মুখ ব্যতীত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখবে।
(৬)প্রয়োজন অতিরিক্ত কথাবর্থা বলা যাবে না।
যখন এই সব শর্ত পাওয়া যাবে, তখনই মূলত পাত্র-পাত্রী পরস্পর আলোচনা ও দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবে।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
পাত্রের বাবা পাত্রী দেখতে পারবেনা।
এটা নাজায়েজ।
সুতরাং চেহারা অনাবৃত রেখে পাত্রের বাবার সামনে যাওয়া জায়জ হবেনা।
তার সামনে গেলে অন্যান্য গায়রে মাহরামদের সামনে যাওয়ার ন্যায় হাত,পা,চেহারা সহ পুরো শরীর সম্পূর্ণ পর্দা করতে হবে।
পাত্রের বাবাকে কুরআন শোনানো যাবেনা।
কুরআন শুধুমাত্র পাত্র ও মহিলা সদস্যরা শুনতে পারবে।
পাত্রের বাবা কোনো প্রশ্ন করলে চেহারা সহ পূর্ণ শরীর ঢেকে করে তার প্রশ্নের জবাব দেয়া যাবে।
★বাজারে গেলে, কলেজে গেলে যাতায়াত কালে বাস,অটো ইত্যাদিতে, ডেলিভারি ম্যান থেকে পার্সেল রিসিভ করতে গেলে পূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে পর্দার আড়ালে থেকে যেমন গায়রে মাহরামদের সাথে প্রয়োজনীয় কথা জায়েজ,ঠিক তেমনিভাবে চেহারা সহ পূর্ণ শরীর ঢেকে অর্থাৎ পূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে পর্দার আড়ালে থেকে পাত্রের বাবার সাথেও প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েজ আছে।
(০২)
কন্ঠের পর্দা সম্পর্কে দলিল জানুনঃ-
https://ifatwa.info/83718/
(০৩)
তাদের সাথে পূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে প্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে। খাবারের জন্য ডাকা যাবে।
তবে কোনোক্রমেই চেহারা দেখানো যাবেনা।
(০৪)
একমুষ্টি পরিমান দাড়ি রাখা চার মাযহাব মতে ওয়াজিব।
হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত,
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ – ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : " ﺃﻧﻬﻜﻮﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ﻭﺃﻋﻔﻮﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ "
তরজমাঃ- নবী কারীম সাঃ বলেন,তোমরা গোঁফকে ছাটাই করো ,এবং দাড়িকে বাড়ার জন্য ছেড়ে দাও।
(সহীহ বুখারী-৫৪৪৩,সহীহ মুসলিম-৬০০)
দাড়ি মুন্ডানো হারাম।এবং একমুষ্টি থেকে কম দাড়ি রেখে অবশিষ্ট দাড়ি ছাঁটাই করাও হারাম।
এতে কবীরা গুনাহ হবে।
(জাওয়াহিরুল ফিকহ-৭/১৬০)
عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( خالفوا المشركين وفروا اللحى وأحفوا الشوارب . وكان ابن عمر إذا حج أو اعتمر قبض على لحيته فما فضل أخذه
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।
আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}
,
হাদীস ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী দাড়ি রাখা ওয়াজিব। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোঁচ কাটার ও দাড়ি লম্বা করার আদেশ করেছেন।’
إنه أمر بإحفاء الشوارب وإعفاء اللحية
(সহীহ মুসলিম ১/১২৯)
বিভিন্ন হাদীসে আদেশের শব্দগুলোও বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
خالفوا المشركين، وفروا اللحى واحفوا الشوارب
‘মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি বাড়াও ও মোচ কাট।’
(আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বুখারী ২/৮৭৫)
خالفوا المشركين، واحفوا الشوارب وأوفوا اللحى
‘মুশরিকদের বিরোধিতা কর এবং মোচ কাট ও দাড়ি পূর্ণ কর।’ (ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে মুসলিম ১/১২৯)
انهكوا الشوارب واعفوا اللحى
মোচ উত্তমরূপে কাট এবং দাড়ি লম্বা কর। (ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বুখারী ২/৮৭৫)
جزوا الشوارب وارخوا ا للحى، خالفوا المجوس
মোচ কাট ও দাড়ি ঝুলিয়ে দাও, অগ্নিপূজারীদের বিরোধিতা কর।’ (আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে মুসলিম ১/১২৯)
جاء رجل من المجوس إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم قد حلق اللحية وأطال شاربه فقال له النبي صلى الله عليه وسلم ما هذا؟ قال : هذا في ديننا، قال : لكن في ديننا أن نجز الشارب وأن نعفي اللحية.
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদীস : ২৬০১৩)
کان حلق اللحیۃ محرّما عند ائمۃ المسلمین المجتہدین أبی حنیفۃ، ومالک، والشافعی، وأحمد وغیرھم -رحمہم اللہ تعالیٰ-“․ (المنہل العذب المورود، کتاب الطہارۃ، أقوال العلماء فی حلق اللحیۃ واتفاقہم علی حرمتہ: 1/186، موٴسسۃالتاریخ العربی، بیروت، لبنان)
সারমর্মঃ চার মাযহাব এই বিষয়ে একমত যে সমস্ত মুসলমান মুজতাহিদিনের নিকটে দাড়ি কাটা হারাম।
۔
وأما تقصیرُ اللحیۃ بحیثُ تصیرُ قصیرۃ من القبضۃ، فغیرُ جائزٍ فی المذاھب الأربعۃ“․ (العرف الشذی، کتاب الآداب، باب ما جاء فی تقلیم الأظفار، 4/162، دار الکتب العلمیۃ)
এক মুষ্ঠি থেকে কম রেখে দাড়ি কাটা চার মাযহাবের সম্মতিক্রমে নাজায়েজ।
,
★দাড়ি মুন্ডানো বা এক মুষ্ঠির চেয়ে কম রেখে কাটার গুনাহ সার্বক্ষনিক বান্দার সাথে লেগে থাকে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৫/৫১৯)
(০৫)
এই ওয়েবসাইটে হানাফি ফিকহ অনুসারে উত্তর দেওয়া হয়।
আমরা হানাফি ফিকহ অনুসারে উত্তর দিয়ে থাকি।