ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব:-
https://ifatwa.info/37078/?show=37078#q37078
নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তালাক খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا
كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ
وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى
الطَّلاَقُ " .
কাসীর ইবন উবায়দ
.......... ইবন উমার (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা
করেছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নিকৃষ্টতম হালাল বস্তু
হল তালাক। (আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০,
যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।)
এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক
রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক
পতিত হয়ে যায়।
হাদীসে এসেছে-
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ”
ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ،
وَالرَّجْعَةُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য
হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ,
হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস নং-২১৯৪}
*****প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই
তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে, আবার কেনায়া শব্দ,
ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও
হতে পারে। কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ
বলে তালাক দেওয়া।
★★শরিয়তের পরিভাষায় প্রশ্নে
উল্লেখিত জাতীয় শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা
তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া
তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷
সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা
বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে
যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)
হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ
وَالضَّرْبُ
الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ
دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا
الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ:
اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ
الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی
بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً،
وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ،
وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ،
وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ
حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي
الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ
طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا
الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی
إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ،
وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ
يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ
السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.
احمد
بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان
للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان
الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية
সারমর্মঃ কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে দিলাম,
যা খুশি তাই করো, তুমি মুক্ত,
তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো, তাহলে এটিও কেনায়া তালাক। কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ
দ্বারা যেটা হয়। কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক।
আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
وفي
حالة الغضب يصدق في جميع ذلك لاحتمال الرد والسب إلا فيما يصلح للطلاق ولا يصلح
للرد والشتم كقوله اعتدي واختاري وأمرك بيدك فإنه لا يصدق فيها كذا في
الهداية............... وفي الينابيع ألحق
أبو يوسف - رحمه الله تعالى - بالخمسة ستة أخرى وهي الأربعة المتقدمة وزاد خالعتك
والحقي بأهلك هكذا في غاية السروجي.
রাগের অবস্থাঃ- রাগের অবস্থায় স্বামী
তালাকের নিয়তকে অস্বীকার করলে স্বামীর উক্ত বক্তব্য-কে সত্যায়ন করা হবে। কেননা সেই
শব্দ সমূহে গালিগালাজ ও স্ত্রীর তালাকের আবেদন-কে
ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ বিদ্যমান রয়েছে।
তবে যেই সমস্ত শব্দাবলীতে শুধুমাত্র
তালাকের অর্থ বিদ্যমান রয়েছে। গালিগালাজ বা (স্ত্রীর তালাকের আবেদন) ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ
বিদ্যমান না থাকে,তাহলে সেই সমস্ত শব্দাবলীর
বেলায় স্বামীর অস্বীকার-কে সত্যায়ন করা হবে না। বরং তালাক পতিত হবে।
যেমন- তুমি ইদ্দত গণনা করো, তুমি পছন্দ করো,
তোমার বিষয় তোমার হাতে, ইত্যাদি। সুতরাং এমন শব্দাবলীর বেলায় স্বামীর অস্বীকারকে সত্যায়ন
করা যাবে না,বরং তালাক পতিত হবে। (হেদায়া) ইমাম
আবু ইউসুফ রাহ পূর্ববর্তী পাঁচের সাথে আরো দুইটি শব্দ সংযোগ করেন, তখন সর্বমোট ছয়টি শব্দ হয়। সেই দুইটি হল, আমি তোমার সাথে খোলা করলাম,
তুমি তোমার পরিবারবর্গের
সাথে মিলিত হয়ে যাও। (গায়াতুস-সুরুজী) (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩৭৫)
★কেনায়া বাক্যের উদাহরণ
অনেক রয়েছেঃ তোমাকে আমি ছেড়ে দিলাম,
যা খুশি তাই করো, তুমি মুক্ত,
তুমি খালি, তুমি স্বাধীন,
তুমি ইদ্দত গণনা করো, তুমি পছন্দ করো,
তোমার বিষয় তোমার হাতে, তুমি স্বামী খুজো,
তুমি স্বামী তালাশ করো, তোমার রশি তোমার ঘাড়ে,
তুমি তোমার পরিবারের সাথে
যুক্ত হও, আমি তোমার পরিবারের কাছে তোমাকে দিয়ে দিলাম, আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম, তুমি আমার সামনে পর্দা করো,
তুমি আমার সামনে খিমার
পরিধান করো, চেহারা ঢাকো, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরো জানুনঃ
https://ifatwa.info/7162/
https://ifatwa.info/7406/
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
ভাই/বোন!
উক্ত কথা যদি তালাকের নিয়ত ছাড়া
বলা হয় তাহলে তালাক পতিত হবে না। কিন্তু প্রকৃত অর্থেই যদি উক্ত কথা বলার সময় তালাকের
নিয়ত থাকে তাহলে তালাকে কেনায়া হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে কেনায়া
বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত বাক্য বলার সময়
স্বামী যদি তালাকের নিয়ত করে তাহলে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে। এমতাবস্থায় তারা
সংসার করতে চাইলে তাদের পুনরায় বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে।