আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
63 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (13 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
জনৈক ব্যক্তির সাথে তার প্রথম স্ত্রীর এক তালাক হলে, ইদ্দত থাকাকালীন সে প্রথম স্ত্রীর বাচ্চাদের লালনপালনের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর প্রথম স্ত্রী জানতে পেরে ফেরত আসেন।
প্রথম স্ত্রীর দেনমোহর ছিলো ৩০০০০ টাকা। উক্ত লোক প্রথম পর্যায়ে ৩০০০ টাকা দেন, এবং পরবর্তীতে ২০০০০ টাকার স্বর্ণের গয়না বানান। যেই গয়নাটি তিনি চেয়েছিলেন একটু দাম বাড়লে স্ত্রীকে দিবেন, তাহলে মোহর পুরোটা শোধ হবে। এভাবে তিনি গয়নাটি দেন।
- প্রশ্ন হচ্ছে, পরবর্তীতে তাকে বাকী দেনমোহর শোধ করতে হবে?
দ্বিতীয় স্ত্রীর মোহর ছিলো ১০,০০০ টাকা। কিন্তু বিয়ের তিনমাস পর দ্বিতীয় স্ত্রী আর সংসার করতে রাজী হয় না। কারণ সে চাচ্ছিলো প্রথম স্ত্রীর সাথে তালাক হোক। আর লোকটি চেয়েছিল যেহেতু বাচ্চা আছে তাই প্রথম জনকে আরেকটা সুযোগ দিতে। কিন্তু দ্বিতীয় জন মানছিলো না। পরে হাজবেন্ডকে মিথ্যে বলে বাবার বাসায় যাওয়ার অজুহাতে স্বামীর থেকে তিন চারদিন সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর যোগাযোগ করে তালাক চায়। কিন্তু উক্ত লোকটি তালাক দিতে চায় না। কারণ দ্বিতীয়জন অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। সে বারবার তালাক চায়লেও লোকটি তালাক দেয় না। পরবর্তীতে খুব জোরাজোরি করলে তালাক দিয়ে দেয়।
লোকটির দ্বিতীয় বিয়ে করতে টাকা পয়সা বাবদ ভালোই খরচ হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটি নিজে থেকে তালাক চায়। এটি কি খোলা তালাক বলে বিবেচিত হবে? কারণ মেয়ে নিজেই তালাক চেয়েছে, আর ছেলে তালাক দিতে চায়নি। বাচ্চা হয়ে তালাক পতিত হওয়ার পরও উক্ত লোক বাচ্চার জন্য তাকে আবার বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, আলাদা বাসায় রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সে রাজি হয়নি। দ্বিতীয় স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে কিনা?


এই ঘটনার এক বছর পর প্রথম স্ত্রী সেপারেশনে যায় আবার। বাচ্চা থাকে লোকটির কাছে। প্রথম স্ত্রী পুলিশ দিয়ে থানায় ডেকে বাচ্চা হস্তগত করার চেষ্টা করলে সবাই বলে আলেম নিয়ে বসতে। কিন্তু সেই মহিলা কিছুতেই বসেনি। এরপর আবার পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে দুইটি বাচ্চায় হস্তগত করেন। তখন লোকটি ওই মজলিসে তিন তালাক দেয় প্রথম জনকে। পুলিশ বাচ্চার ভরণপোষণ কে দিবে জিজ্ঞেস করলে বাচ্চার মা খালা বলে ভরণপোষণ বাচ্চার মা খালারা দেবে। এই চুক্তির উপর জোর করে লোকটিকে দিয়ে সইও করানো হয়। এরপর লোকটির সাথে তার বাচ্চার দীর্ঘ ছয় সাতমাস কথা বলতে দেয় না।
আর দ্বিতীয়জনও একই কাজ করে। বাচ্চাকে ধরতে পর্যন্ত দেয়নি কখনও, বাস্তবে দেখতেও দেয়নি। তিনি দাবি করেন মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা একসাথে যেন দেওয়া হয় মেয়ে বাবদ। কিন্তু লোকটির ইনকাম কম। টাকা যা হাতে থাকতো দ্বিতীয় প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিতো বাট তার চাহিদা বাড়তেই থাকতো। হিসাব চাইলে হিসাবও দিতো না যে টাকা মেয়ে বাবদ খরচ হচ্ছে নাকি অন্য বাবদ। এভাবে বিভিন্ন সময় টাকা দিতে দিতে কোনো হিসাব পায় না, চাইলেও খারাপ ব্যবহার করে; এরপর সে খরচ পাঠানো বন্ধ করে।
এদিকে ডিভোর্সের কয়েকমাস পর, ভরণপোষণের চুক্তি করার পর প্রথমজন ভরণপোষণের দাবী করেন। কিন্তু সে কোনোপ্রকার যোগাযোগ করাবে না বাবার সাথে। আবার টাকা পাঠানোরও উপায় নাই। কিন্তু প্রথম স্ত্রী তাকে বাচ্চাদের হক্ব নষ্টকারী বলেন সবার কাছে।
এক্ষেত্রে লোকটির করণীয় কি? আল্লাহ তো সব দেখছেন, যদি স্ত্রী চুক্তি করে বাচ্চা নিয়ে যায় আর বাবার সাথেও যোগাযোগ না করায় তবে লোকটি কি হক্ব নষ্টকারী বলে বিবেচিত হবে? তাকে কি আখিরাতে জবাবদিহি করতে হবে? অনুরূপ দ্বিতীয় স্ত্রী সব জায়গা থেকে ব্লক করে রাখে, তার সাথেও ডিল করার উপায় নেই। ডিল করতে বসলেও সুস্থ মস্তিষ্কে দুইজনের একজনও আগায় না। বাবা যেকোনো সময় তাদের ভরণপোষণ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু তিনি চান বাচ্চাদের দেখতে, আদর করতে; তবে মায়েরা এ শর্তে কিছুতেই রাজি নন। এক্ষেত্রে লোকটি কি করতে পারে? আমি তার তৃতীয়, বর্তমানে একমাত্র স্ত্রী বলছি। আমার কথার মধ্যে কোনো মিথ্যা কথা নেই। অনুগ্রহ করে সঠিক সমাধান দিবেন ইনশাআল্লাহ। জাঝাকুমুল্লহু খয়রন।

1 Answer

0 votes
by (62,670 points)

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/9646/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

মহর উভয় মিলেই নির্ধারণ করবে। পাত্রপক্ষ এবং পাত্রীপক্ষ উভয় পক্ষ মিলে সমঝোতার ভিত্তিতে মহর নির্ধারণ করবে।


মহর দাতা মূলত পাত্র এবং গ্রহিতা মূলত পাত্রী। এই দুজনের অনুমতিক্রমে উভয়ের পরিবারের লোকজন মহর নির্ধারণ করবে। ক্রয়-বিক্রয়ের মত যেকোনো একপক্ষ প্রথমে মহরের প্রস্তাব দিবে এবং অন্যপক্ষ মহরের প্রস্তাবকে গ্রহণ করে নিবে। যদি পাত্রীপক্ষ বেশী মহরের দাবী করে, তাহলে পাত্রপক্ষ চাইলে তাদের দাবীকে মানতে পারে, আবার চাইলে মহরকে কম করারও প্রস্তাব দিতে পারে এবং সম্ভব না হলে, সেখানে রিশতা না জুড়তে পারে। সেটা পাত্র পক্ষের সম্পূর্ণ নিজস্ব অধীকার। মহরের আলোচনা উঠার পর যে বিয়ে করতেই হবে, বিষয়টা আসলে এমন নয়, বরং তাদের ভাঙ্গা গড়ার অধীকার থাকবে।

মহর যতটুকু পরিশোধ করা যায়, ততটুকু হওয়াই কাম্য ও উচিৎ।


https://www.ifatwa.info/7155/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

মহর সম্পর্কে দু রকম বক্তব্য পাওয়া যায়,

মহর উসূল ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাঃ হযরত আলীকে ফাতেমার ঘরে প্রবেশ করতে দেননি। দ্বিতীয় হাদীসে হযরত আয়েশা রাযি মহর পরিশোধ ব্যতীত ভিন্ন একজনকে তার স্ত্রীর নিকট প্রেরণ করেছেন।

عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: لما تزوج علي فاطمة رضي الله عنها أراد أن يدخل بها، فمنعه رسول الله ﷺ حتى يعطيها شيئًا، فقال: ليس لي شيء، فقال عليه الصلاة والسلام: أعطها درعك، فأعطاها درعه ثم دخل بها. أخرجه أبو داود


٣٣٧٦ - أَخْبَرَنَا هَارُونُ بْنُ إِسْحَقَ، عَنْ عَبْدَةَ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: لَمَّا تَزَوَّجَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَاطِمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْطِهَا شَيْئًا» قَالَ: مَا عِنْدِي، قَالَ: «فَأَيْنَ دِرْعُكَ الْحُطَمِيَّةُ؟» أخرجه النسائي


أما الحديث الآخر وهو: عن عائشة رضي الله عنها قالت: "أمرني رسول الله ﷺ أن أدخل امرأةً على زوجها قبل أن يعطيها شيئًا"، أخرجه أبو داود،

সুতরাং এই উভয় হাদীসকে সামনে রেখে বলা যায় যে, মহর সম্পূর্ণ স্ত্রীর হক। স্ত্রী যদি চায় যে, মহর পরিশোধ ব্যতীত সে স্বামীকে কাছে আসতে দেবে না, তাহলে স্বামী কাছে যেতে পারবে না।কিন্তু যদি স্ত্রী অনুমতি দিয়ে দেয়, তাহলে মহর পরিশোধ ব্যতীতও স্বামী তার স্ত্রীর নিকট পৌছতে পারবে।

এ বিধান হলো যদি বিয়ের সময় আলোচনা থাকে যে, মহর তারাতারি পরিশোধিত হবে। কিন্তু যদি আলোচনা থাকে যে, মহর বাকীতে পরিশোধ করা হবে, তাহলে এমতাবস্থায় স্ত্রী তার স্বামীকে মহরের পরিশোধের জন্য আটকাতে পারবেনা।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!


১. প্রথম স্ত্রীকে মহর বাবদ ঐ গহনা দেওয়ার সময় সেটার দাম কতো ছিলো? সেটা উল্লেখ করা নেই।

যদি ২০ হাজার বা তার আশ পাশে হয় তাহলে অবশ্যই বাকী মহরের টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে।


২. যেহেতু দ্বিতীয় স্ত্রীর তালাকের সময় মহরের কথা আলোচনা হয়নি। তাই তাকে তার পুরো মহরের টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে।

৩. এখন স্বামীর জন্য করণীয় হলো যে, তিনি (অন্য কারো মাধ্যমে। কারণ, নিজে সরাসরি যোগাযোগ করতে গেলে ফিতনার কারণ হতে পারে) সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সন্তানদের ভরণ-পোষন দেওয়ার জন্য। তারপরও যোগাযোগ করা সম্ভব না হলে তখন ভিন্ন কথা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...