আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
89 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (18 points)
السَّلَامُ عَلَيْكُم وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ

উস্তাদ, আমি একজন মেয়ে। সহশিক্ষা নিয়ে বড় বিপদে আছি। আমাকে একটু পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন মিন ফাদ্বলিক। আমার পরিস্থিতি জটিল বিধায় পয়েন্ট আকারে বোঝানোর চেষ্টা করছি। লেখা বড় হওয়ায় ক্ষমাপ্রার্থী।
১. আমি কলেজ পর্যন্ত সহশিক্ষায় পড়েছি। আমার পক্ষে আবার সহশিক্ষায় ফিরে যাওয়া আগুনে ঝাপ দেয়ার মতো অবস্থা। আমি সহজেই ফিতনায় পড়ে যাই, গুনাহের দিকে ঝুঁকে যাই এমন একজন নিকৃষ্ট মানুষ। নিজের তাক্বওয়ার প্রতি কোনো বিশ্বাস নাই। তাই সহশিক্ষায় গেলে আমি আমার অবশিষ্ট হায়া, পর্দা দুটোই হারাবার আশঙ্কা করি, মা'আযাল্লহ।


২. গতবছর এইচএসসি দেয়ার পর মা-বাবার কারণে মেডিকেল, ভার্সিটির অনেকগুলো ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি৷ ওখানে টিকার মতো পড়ালেখার ধাচ আমার এমনিতেও নেই, আর সহশিক্ষায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না বলে সিরিয়াসলি পড়িও নি। তাই টিকি নাই। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়েই আমার পর্দার খেলাফ হয়েছে বহুবার। কান মুখ খোলা রেখে পরীক্ষা দিতে হয়েছে, বারবার মহিলা দিয়ে চেক করানোর পরও। আর প্রতি পরীক্ষায় মুখ চেক করা তো আছেই। নিকাব খোলার চেয়েও বড় কথা, ওখানে এতো বেশি ভিড় থাকে হাজার চেষ্টা করেও গায়রে মাহরামের সংস্পর্শ এড়ানো যায় না। কেউ না গেলে কখনোই বুঝবে না কি জঘন্য অবস্থা! তাই শুধু পরীক্ষা দেয়াটাই আমার জন্য বড় ফিতনা।


৩. সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিতে বলছে মেডিকেল আর ভার্সিটিতে। আমি বারবার বলেছি আমার দ্বারা হবে না, আমার আর পড়ায় মন আসছে না৷ কিন্তু মানছে না। টিকবো না আমি জানি, কিন্তু পরীক্ষা দেয়াটাই তো আমার জন্য বিপদ!


৪. আমাদের বাসার কাছাকাছি কোনো মহিলা কলেজ নাই। কয়েকটা মহিলা কলেজ সব শহরে। এখান থেকে শহরে গেলে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে করে যেতে হবে। যেখানে গায়রে মাহরাম এড়ানো যায় না।
৫. আব্বু সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আমাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনো কলেজে পড়াবেই না। পাবলিক বা প্রাইভেটে পড়াবে। অথচ প্রাইভেটে পড়ানোর মতো কোনো সামর্থ্য নেই আব্বুর। এমনিতেই অনেক লোন আর খরচ। কিন্তু তিনি বলছেন, লোন নিয়ে হলেও প্রাইভেটে পড়াবে যদি পাবলিকে না আসি।
৬. বাসার কাছাকাছি কোনো প্রাইভেট ভার্সিটিও নাই। চট্টগ্রামে সহশিক্ষামুক্ত একটাই প্রাইভেট ভার্সিটি আছে, IIUC, যেটা মন্দের ভালো। কিন্তু সেখানে যেতে হলে বাসা থেকে ভোরে বের হতে হবে, ফিরতে হবে সন্ধ্যায়! বাসে করে যেতে হবে।
৫. বাসার কাছাকাছি কোনো মহিলা মাদ্রাসাও নাই। যদিও মাদ্রাসার কথা বলে লাভ নাই। তারা কওমি মাদ্রাসায় জীবনেও ভর্তি করাবে না৷ হয়তো সহশিক্ষাযুক্ত আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করাবে, যদি মাদ্রাসার দিকে ঝুঁকে। তখন বিষয়টা সেই আগের মতোই।


৭. আমার বয়স ২১+ বিয়ে নিয়ে আপাতত ভাবছেন না উনারা। আর দ্বীনদার পাত্র দেখবে এমন আশা করেও লাভ নাই। বিয়ের পরও জেনারেল পড়াবে এমন পাত্র চায় তারা।
৮. আমি জানি আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে ঘরে থাকা৷ কিন্তু ঘরে থাকার ব্যাপারটাই উনারা মেনে নিতে পারছেন না। কোথাও না কোথাও পড়তেই হবে অফলাইনেই। আর সেটা অবশ্যই মানসম্মত সার্টিফিকেটওয়ালা হতে হবে, যেখানে সেখানে পড়া যাবে না। এটাই মূল সমস্যা।
৯. আমি অনলাইনে ফরযে আইনের একটা ফ্রি কোর্স করেছি এবং আরেকটা চলমান৷ এগুলো তাদের আগোচরে করি আর রেকর্ডেড কোর্স। লাইভ ক্লাসে অংশ নিতে পারবো না বিধায় আর নিয়মিত বেতন দিতে পারবো না বিধায় বড় পরিসরে কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি। উনারাও করাবেন না। বলে দেখেছিলাম।


১০. মা বাবার আনুগত্যের বিষয়টা ভেবে অনেককিছু নীরবে সহ্য করে যাই। কি করা উচিত বুঝিও না অনেকসময়৷ আজকে সকালেও আব্বু মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন প্রেশারের কারণে। উনারা খুব দুশ্চিন্তা করেন আমার দুনিয়াবি ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু আমার আখিরাত নিয়ে নিজেকেই ভাবতে হয়।


১১. আমি ঘরে থাকতে চাই, ইসলাম নিয়ে পড়তে চাই, সহশিক্ষায় যেতে চাই না এগুলো সব উনারা বুঝেন। কিন্তু মেনে নিতে চান না। ইমোশনালি বুঝাতে চাইলে উল্টা রেগে যান। আসলে যারা ইচ্ছাকৃত অবুঝ, তাদেরকে কোনোভাবে বোঝানো সম্ভব না।


আমাকে একটু পরামর্শ দিন। এই মুহুর্তে কি করা উচিত? সাতদিনের মধ্যে আমাকে আমার সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে আব্বু। আমার মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই যদিও। তবুও আমি চাই, যা করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন সেটাই জানাতে, মানুক আর না মানুক৷ আজকে থেকে ইস্তেখারাও শুরু করবো ইন শা আল্লাহ। আমাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করুন মিন ফাদ্বলিক, একজন মু'মিনাহর করণীয় কি এমতাবস্থায়?


جزاك الله خيرا في الدنيا والأخرة

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/13774/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।  (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

★ একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات     জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন  কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গের শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
(ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১)

★এ শর্ত পুরোপুরি ভাবে মেনে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া জায়েজ আছে।
,
সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
আপনার বয়স যেহেতু ২১+ আর এভাবে পড়াশোনা করতে গেলে দ্বীনের পথ থেকে ছিটকে পড়ার আশংকা করেন,সুতরাং আপনি আপনার বাবাকে দ্রুত বিবাহের কথা জানাবেন। তারা যেনো কোনো দ্বীনদার পাত্রের সাথে দ্রুত আপনার বিবাহ দেয়।
প্রয়োজনে পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে আপনার বাবাকে আপনার বিবাহের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝাবেন।

এতে আপনার বাবা রাজী না হলে সেক্ষেত্রে চট্টগ্রামে সহশিক্ষামুক্ত যে প্রাইভেট ভার্সিটি আছে,সেখানে ভর্তি হতে রাজী হবেন।
যথাসম্ভব ফিতনাহ মুক্ত থেকে যাতায়াত করে পড়াশোনা করবেন।
আল্লাহ তায়ালা আপনার সহায় হোন,আমিন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...