আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
108 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (7 points)
আসসালামু আলাইকুম শ্রদ্ধেয় শায়খ, আমি অজ্ঞতাবশত ৪৮ মাইলের বেশি দুরত্বে একটি সনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম।মূলত এখানে ভর্তি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সহশিক্ষা এড়ানো। এখানে মেইল এবং ফিমেইল ক্যাম্পাস আলাদা ছিল।পরবর্তীতে যখন জানতে পারি ৪৮ মাইলের বেশি দুরত্বে নারীদের মাহরাম ব্যাতীত একাকি ভ্রমণ হারাম তখন খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি।অনেক ডিপ্রেশনে চলে যাই কারণ আমার পরিবার আমার সমস্যা বুঝবে না যেহেতু তাঁদের দ্বীনি বুঝ নেই।আব্বুও অসুস্থ এবং অন্যান্য মাহরামরা এমন কেউ নেই যে ভ্রমণে আমাকে সঙ্গ দিতে পারবে।অনেক ডিপ্রেশনে চলে যাই এটা ভেবে যে এই ইলম অর্জন তো ফরজ না অথচ এটার জন্যই হারাম কাজ করতে হচ্ছে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বিয়ের চেষ্টা করি কিন্তু বিয়ে হয়নি শেষ পর্যন্ত এটাও অনেক সমস্যা কারণ পরিবার দ্বীনি না।আমি কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু মিথ্যা বলে অনেকটা নাটকীয় ভাবে তাঁদেরকে আতঙ্কিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বাদ দিই।আমি যতদূর জানি হারাম থেকে বাচতে মিথ্যা বলা ক্ষেত্রবিশেষে ওয়াজিব (এ বিষয়ে যদিও স্পষ্ট জ্ঞান নেই এবং আমি কোনো আলেমের থেকে এ বিষয়ে পরামর্শও নিইনি।)এখন আমার মনে হচ্ছে মিথ্যা বলা ভুল হলো কিনা।কারণ এই মিথ্যা বলাতে পরিবারের লোকজন সহজেই বিশ্বাস করে নেয় যেহেতু আমি তারা জানত মিথ্যা বলিনা এবং কখনো ঠকায়নি।পরবর্তীতে তাঁরা অনেক চিন্তিত হয় আমি বাসায় ফেরার আগ পর্যন্ত সপ্তাহ খানেক তাঁরা অনেক চিন্তিত ছিল এবং দুশ্চিন্তায় কান্নাকাটি ও করেছে।কিন্তু আমি হারাম থেকে বাঁচতে তাঁদের ইমোশন ইউজ করেছি।আমি আমার পিতামাতাকে চিন্তিত করেছি, কাঁদিয়েছি।একারণে আমার খুব গিল্টিফিলিং হয়।এখন আমি চিন্তিত এর জন্য কি আমি গুনাহগার হয়েছি?উল্লেখ্য যে পুরোটা মিথ্যা বলিনি সত্যকে অতিরঞ্জিত করে বলেছি এবং সেটার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আরো বেশ কিছু মিথ্যা নাটকীয় ভাবে বলেছি।আমি বিষয় টা নিয়ে চিন্তিত শায়খ, আমাকে জানাবেন আমি গুনাহগার হয়েছি কিনা মিন ফাদ্বলিক।

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


মিথ্যা কথা বলা শরীয়ত অনুমোদিত নয়। 
নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলা হারাম। 
শরিয়তে সত্যকে সর্বত্রই উৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস আনে।
যদিও শরয়ী কিছু ওযরের কারনে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ। 
তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে সত্য বলাই শরিয়তের মৌল দর্শনের দাবি।

পবিত্র কুরআন শরিফে এসেছে   
لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ [٣:٦١
তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। {সূর আলেইমরান-৬১}

হাদিস শরিফে এসেছে,
 সাফওয়ান ইবন সুলাইম বলেন,
قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ : أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ جَبَانًا ؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ بَخِيلًا؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ كَذَّابًا ؟ فَقَالَ: ( لَا )
রসুলুল্লাহ ﷺ -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কাপুরুষ হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, না। (মুয়াত্তা মালিক ২/৯৯০) অর্থাৎ মুমিনের বিভিন্ন চারিত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে, তবু সে মিথ্যা বলতে পারে না।

আবুল ফরয ইবনুল জাওযী রাহ বলেনঃ

ﻭﺿﺎﺑﻄﻪ ﺃﻥ ﻛﻞ ﻣﻘﺼﻮﺩ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻻ ﻳﻤﻜﻦ ﺍﻟﺘﻮﺻﻞ ﺇﻟﻴﻪ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ، ﻓﻬﻮ ﻣﺒﺎﺡ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺩ ﻣﺒﺎﺣﺎ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻭﺍﺟﺒﺎ، ﻓﻬﻮ ﻭﺍﺟﺐ 

প্রত্যেক ঐ ভালো উদ্দেশ্য যে পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় ব্যতীত পৌছা  প্রায় অসম্ভব, সেখানে মিথ্যা বলা বৈধ।মাকসাদ(উদ্দেশ্য) মুবাহ হলে,মিথ্যা বলা মুবাহ।মাকসাদ ওয়াজিব হলে মিথ্যা বলা ওয়াজিব
(ফাতাওয়া দারাল ইফতা আল-মিছরিয়্যাহ)

কোন সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যার আশ্রয় ব্যতিরেকে সাধন সম্ভবপর হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে সে সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যা বলা ছাড়া সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা বৈধ। পরন্তু যদি বাঞ্ছিত লক্ষ্য বৈধ পর্যায়ের হয়, তাহলে মিথ্যা বলা বৈধ হবে। 

বিস্তারিত জানুনঃ 

ইমাম নববী রাহ বলেনঃ
ﻓﻜﻞ ﻣﻘﺼﻮﺩ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻳﻤﻜﻦ ﺗﺤﺼﻴﻠﻪ ﺑﻐﻴﺮ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻳﺤﺮﻡ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻓﻴﻪ، ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻤﻜﻦ ﺗﺤﺼﻴﻠﻪ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ ﺟﺎﺯ ﺍﻟﻜﺬﺏ، ﺛﻢ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺗﺤﺼﻴﻞ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺩ ﻣﺒﺎﺣﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻣﺒﺎﺣﺎ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻭﺍﺟﺒﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻭﺍﺟﺒﺎ

প্রত্যেক ঐ প্রশংসনীয় মাকসাদ(উদ্দেশ্য)যাতে মিথ্যা ব্যতীত পৌছা সম্ভব, সেখানে মিথ্যা বলা হারাম।কিন্তু যদি তাতে মিথ্যা ব্যতীত পৌছা সম্ভব না হয়,তাহলে সেথায় মিথ্যা বলা জায়েয। যদি উক্ত মাকসাদ অর্জন করা মুবাহ হয় তাহলে মিথ্যা বলে উক্ত মাকসাদ অর্জন করা মুবাহ।আর যদি মাকসাদ অর্জন করা ওয়াজিব হয় তাহলে মিথ্যা বলে তা অর্জন করা ওয়াজিব।(রিয়াযুস সালেহিন-২৫৯)

বিস্তারিত জানুনঃ  

https://ifatwa.info/644/

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
প্রশ্নের বিবরণ মতে কিছুটা মিথ্যা বলা বৈধ হলেও আপনি অতিরিক্ত  যাহা কিছু করেছেন,এতে গুনাহ হয়েছে।

আপনি সপ্তাহ খানিক তাদের টেনশনে রেখেছিলেন,
তারা দুশ্চিন্তায় কান্নাকাটি ও করেছে। আপনি তাঁদের ইমোশন ইউজ করেছেন। পিতামাতাকে চিন্তিত করেছেন, কাঁদিয়েছেন।

সুতরাং আপনার গুনাহ হয়েছে।
মহান আল্লাহর কাছে খালেস দিলে তওবা করে নিবেন।
পিতা মাতাকে কষ্ট দেয়ার কারনে তাদের থেকেও মাফ চেয়ে নিবেন।
এখানে তারা আপনার মিথ্যার বিষয়ে অবগত না হলে, তাদের কাছে মাফ চাওয়ার সময় মিথ্যার বিষয় স্পষ্ট করা আবশ্যক হবেনা।

আপনি স্বাভাবিক ভাবে নিজের ভুলের মাফ চাইবেন।

""জীবনে চলতে ফিরতে তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি,আমাকে মাফ করে দিও""। 

এভাবে বললেও হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...