(০১)
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কেফায়া। কিছু লোক যদি তাকে গোসল করিয়ে দেয়, তাহলে সবার পক্ষ থেকে সে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। যদি কেউ তাকে গোসল করিয়ে না দেয়, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৮৬, ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৭০)
মাইয়্যিতকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি সংক্রান্ত শায়েখ সাখাওয়াত হোসেন দাঃবাঃ লিখেছেনঃ
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি হলো—এমন চকিতে তাকে রাখবে, যার ওপর বেজোড়সংখ্যক সুগন্ধি দিয়ে ধুনি দেওয়া হয়েছে। তার সতর তথা পুরুষের ক্ষেত্রে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় দ্বারা আবৃত করবে। এরপর তার শরীর থেকে কাপড় খুলবে। নামাজের অজুর মতো তাকে অজু করাবে। তবে কুলি করাবে না এবং নাকে পানি দেবে না। বরং পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ওই কাপড় দ্বারা মুখ মুছবে। এরপর বরইপাতার সিদ্ধ পানি তার ওপর ঢালা হবে। যদি বরইপাতা ইত্যাদি পাওয়া না যায়, তাহলে বিশুদ্ধ পানি দ্বারা গোসল দেওয়া যাবে। তার মাথা ও দাড়ি সাবান ইত্যাদি দ্বারা ধৌত করা যাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৩২, বুখারি, হাদিস : ১৬২)
,
এরপর তাকে বাঁ পাশ করে রেখে তার ওপর পানি ঢালতে হবে, যাতে নিচেও পানি পৌঁছে। এরপর ডান পাশ করে শুইয়ে পানি ঢালতে হবে, যাতে সেদিকে নিচে পর্যন্ত পানি পৌঁছে। এরপর তাকে ঠেক লাগিয়ে বসানো হবে। পেট বিনম্রভাবে দাবানো হবে। কোনো মলমূত্র বের হলে সেগুলো ধুয়ে দিতে হবে। পুনরায় গোসল দিতে হবে না। এরপর কাপড় দিয়ে মুছে দেবে। (বুখারি, হাদিস : ১৬২, ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৪৫)
,
এরপর তার দাড়িতে ‘হনুত’ এবং সিজদার স্থানগুলোতে কর্পূর দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৮০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ৬৯৫২)
তবে মৃতের নখ ও চুল কাটা যাবে না। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৮৭৬)
,
আর মৃত ব্যক্তি নারী হলে তাকে পরিপূর্ণভাবে সতর আবৃত করে গোসল দেবে। মৃতের মাহরাম বা অন্য নারী ওই মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবে।
মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন পরাবেন
মৃত ব্যক্তিকে কাফন দেওয়া মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮১৯)
,
তাই কমপক্ষে এমন পরিমাণ কাফন পরিধান করাবে, যা দিয়ে মৃত ব্যক্তির পুরো শরীর আবৃত হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৮, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ৬৯৩৭)
মৃত ব্যক্তিকে তার নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন দেবে, যাতে অন্যের হক সংশ্লিষ্ট না থাকে। (বুখারি : ৫/১৪)
,
★পুরুষের সুন্নত কাফন হলো—কমিস, ইজার ও লেফাফা। (মুসলিম, হাদিস : ১৫৬৫, মুআত্তা মুহাম্মদ ২/৮৮)
কাফনের কাপড় সাদা হওয়া উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ৯১৫, মুসলিম, হাদিস : ১৫৬৩)
ইজার মাথা থেকে পা পর্যন্ত হবে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭, মুআত্তা মুহাম্মদ : ২/৮৮)
লেফাফা ইজার থেকে এক হাত লম্বা হবে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭)
কমিস কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত হবে। কমিসে হাতা হবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৬০)
পুরুষকে কাফন পরানোর নিয়ম হলো—প্রথমে লেফাফা রাখবে। তারপর লেফাফার ওপর ইজার রাখবে, অতঃপর কমিস রাখবে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে এর ওপর রেখে প্রথমে কমিস পরাবে। অতঃপর ইজারকে বাঁ দিক থেকে চড়ানো, এরপর ডান দিক থেকে চড়ানো। এরপর বাঁ দিক থেকে লেফাফা মুড়ে দেওয়া, তারপর ডান দিক থেকে লেফাফা মোড়ানো। উভয় দিক থেকে কাফনকে বেঁধে দেওয়া, যাতে কাফন এলোমেলো না হয়ে যায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৪৫, বাদায়ে : ৩/২৫৮)
,
★নারীদের সুন্নত কাফন হলো লেফাফা, ইজার, কমিস, ওড়না ও সিনাবন্দ। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৪৫)
নারীদের কাফন দেওয়ার পদ্ধতি হলো—প্রথমে লেফাফা বিছাবে। লেফাফার ওপর ইজার, তার ওপর কমিস বিছাবে। প্রথমে কমিস পরাবে। চুলগুচ্ছকে দুই ভাগ করে সিনার দুই পাশে কমিসের ওপর রেখে দেওয়া। এরপর ওড়না মাথার ওপর রাখা। ওড়না পেঁচানোও যাবে না, বাঁধাও যাবে না। বরং শুধু রেখে দিতে হবে। এরপর ইজারকে প্রথমে বাঁ দিক থেকে, তারপর ডান দিক থেকে পেঁচিয়ে সিনার দিক থেকে বেঁধে দেওয়া। অতঃপর লেফাফা পেঁচিয়ে দেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৫২, ২৬৪, আবু দাউদ : ২৭৪৫)
,
জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম
জানাজার নামাজে ইমাম মৃত ব্যক্তির বক্ষ বরাবর দাঁড়াবে। (বুখারি, হাদিস : ১২৪৬)
ইমামের পেছনে মুক্তাদিদের কাতার হবে। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩১০২)
সবাই আল্লাহর ইবাদত হিসেবে জানাজার ফরজ আদায়ের নিয়ত করবে। (বুখারি, হাদিস : ১)
উল্লেখ্য, নিয়ত মনে মনে করা ফরজ। মুখে পড়া ফরজ নয়। তাই মনে মনে শুধু এতটুকু নিয়ত করলেই হবে যে জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া, চার তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে আদায় করছি। নামাজ আল্লাহর জন্য, দোয়া মাইয়্যেতের জন্য।
এরপর তাকবিরে তাহরিমা বলবে এবং কান পর্যন্ত হাত উঠাবে। এরপর ছানা পড়বে। এরপর তাকবির বলে দরুদ পাঠ করবে। এই তাকবিরে হাত ওঠাবে না। তারপর তৃতীয় তাকবির বলে মৃত ব্যক্তি ও মুসলমানদের জন্য দোয়া করবে। তখনো হাত ওঠাবে না। তারপর চতুর্থ তাকবির বলবে। তখনো হাত ওঠাবে না। (দারাকুতনি : ১৮৫৩, ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৯৫)
অতঃপর ডান ও বাঁ দিকে সালাম ফেরাবে। (সুনানে কুবরা : ৭২৩৮)
,
ইমাম তাকবির উচ্চৈঃস্বরে বলবে এবং বাকি দোয়া-দরুদ অনুচ্চৈঃস্বরে পড়বে। মুক্তাদিরা সবই অনুচ্চৈঃস্বরে পড়বে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৮৪, সুনানে কুবরা, হাদিস : ৭৪৩৩)
প্রথম তাকবিরের পর ছানা পড়বে।
২য় তাকবিরের পর দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পড়া। (আমাদের নামাজে যেই দরুদ পড়ি) তৃতীয় তাকবিরের পর দোয়া পড়া। (ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৯৫)
৪র্থ তাকবিরের পর উভয় দিকে সালাম ফিরানো।
,
কবর কমপক্ষে কোমর পরিমাণ গভীর হওয়া মুস্তাহাব। তার চেয়ে বেশি হলে আরো উত্তম। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮০০)
কবরকে ‘লাহাদ’ বানানো উত্তম। যদি মাটি নরম হয়, তবে ‘শক’ বানানো যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৬)
মৃত ব্যক্তিকে কবরে ডান পাশ করে কিবলামুখী রাখা। মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় ‘বিসমিল্লাহি ওয়ালা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ’ বলা।
,
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর কাফনের গিরা খুলে দেওয়া।
মৃত ব্যক্তি নারী হলে তাকে কবরে রাখার সময় পর্দা দেওয়া। আর পুরুষ হলে কবরে পর্দা না দেওয়া।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর ওপরে কাঁচা ইট বা বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে আগে কবরের মুখ বন্ধ করে দেওয়া। পাকা ইট দেওয়া মাকরুহ। যদি কাঁচা ইট বা বাঁশ ইত্যাদি পাওয়া না যায়, তবে পাকা ইট দেওয়া মাকরুহ নয়।
মৃত ব্যক্তির দাফনে শরিক সবাই নিজের উভয় হাতে কবরে তিনবার মাটি দেওয়া মুস্তাহাব।
আরো জানুনঃ
,
(০২)
রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল ইলম, যদ্বারা মানুষ উপকার পায়, এবং তৃতীয় হল, নেক সন্তানের দুআ। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৮৪৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৮০, মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১]
ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা যায়ঃ
১
মৃতের নামে সদকা করা।
২
কুরবানী করা।
৩
মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।
৪
মৃতের জন্য দুআ করা।
৫
ইস্তিগফার করা।
৬
হজ্ব করা।
ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত।
,
এছাড়াও দ্বীনি মাদ্রাসায় কিতাব দান করতে পারেন।
,
বিস্তারিত জানুনঃ