আসসালামুয়ালাইকুম। এখানে একজন মেয়ে ডাক্তার হতে গেলে,+ দ্বীনদার হলে,,,,,,, তার যে বিষয় গুলোর সাথে সম্মুখীন হয় তা উল্লেখ করলাম। আশা করছি উত্তর পাব ইন শা আল্লাহ।
বাচ্চাকে আল্লাহ তায়ালা যথেষ্ট রিজিক দেওয়ার পরেও তাকে রেখে ৭/৮ ঘন্টা বাইরে থাকলে তার রিজিক নষ্ট হবে, ফরমুলা খাওয়ানো লাগবে এই ভেবে একটা সেশন গ্যাপ দিতে পারলেও এরপর কি করব!বুয়ার কাছে রেখে সন্তানকে দ্বীনদার বানানোর স্বপ্ন+দ্বায়িত্ব পূরন তো অসম্ভব, কি জবাবদিহি করব কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সেই উত্তর খুজে পাই না।মা-শ্বাশুড়ির ও নিজেস্ব স্বামী-সংসার আছে,কদিন ই বা থাকতে পারেন তারা।এখন কথা বলতে পারেনা,তাও তাকে রেখে ৩/৪ ঘন্টা বাইরে থাকার কথা ভাবলে কলিজা ফেটে যায়,সেখানে ৮/১০ ঘন্টা বাইরে থাকা কিভাবে সম্ভব!ডাক্তাররা মাতৃকালীন ছুটি দেয় অথচ তাদের কোন ছুটি নেই।কিভাবে সব সামলাবো কোন পথ খুজে পাই না।ঘুরে ফিরে দ্বীনেই যেন সব ছাড়!!!
(©দ্বীনি মহিলা ডাক্তারের প্রয়োজনীয়তার সাথে দ্বীনি-মহিলার ডাক্তার হওয়া না-হওয়া বিষয়টা বেশ ঘোলাটে। কারন দুইটা ঃ
১) পরিবেশ ২) মেয়েদের স্বামী সন্তানের হক্ব, সংসার সামলে পড়াশোনা। দ্বিতীয় টা মুখ্য।
একটা দ্বীনি বোন, স্টুডেন্ট লাইফে হোস্টেলে একসাথে দ্বীনি দাওয়াতের কাজ করারও চেষ্টা করতাম, তার থেকে অনেক দ্বীনি বিষয়ে অনুপ্রেরণা পেতাম।
ইন্টার্ন লাইফে এসে ওর ইচ্ছা হল ও সার্জন হবে।
সার্জারি ওর ভাললাগা। মহিলা সার্জনের সত্যিই ঘাটতি। দরকার। ফরজে কেফায়া।
সার্জারি ওয়ার্ডে সে খুব সিনসিয়ারলি কাজ করত। নিকাবী বোনটা ওটি ড্রেসের মাস্ক দিয়েই নিকাব করত।
কিন্তু সার্জন হতে হলে ওটিতে সিনসিয়ার হবার বিকল্প নাই।
মেইন কাজ তো এখানেই।
কিন্তু ওয়াস নেয়ার সময় কনুই পর্যন্ত ধুয়ার প্রয়োজন। দরজা লাগিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে তো ধুয়া যায়।
কিন্তু হেক্সিসল দিতে আরেকজনকে লাগবে। এই কাজটা করতে হবে ওটির ভেতরে। সেই পর্যন্ত কনুই খুলেই আসতে হবে। এদিকে ওটি ভরা মেল ডাক্তার।
হেক্সিসল দিয়ে, গাউন পরলে তবেই না পর্দার অংশ ঢাকা হচ্ছে,তার আগে না।
(এইটুকুর ভয়েই আমি সার্জারিতে ফাকি দিয়েছি। ফরজ তরক করার সাহস হয়নাই। যে এক-দুইদিন ওয়াশ নিয়েছি, কোন এক ফিমেলকে রিকোয়েস্ট করতাম আমার ওয়াশ নেয়ার পর যেন হেক্সিসল আর গাউন টা ওয়াশ নেয়ার রুমের এনে দাঁড়ায়। গাউন পরে ভেতরে আসতাম।)
কিন্তু আমার এই কাজটা রুল মোতাবেক শুদ্ধ না। ওই রুমে পরা গাউন পরে পেশেন্টের পাশে দাঁড়ানো যাবে না। স্টেরাইলিটি ক্ষুন্ন হবে।
আমি তো আসলে দূরে দূরে থাকতাম, তাই আমি এমন করলেও যে মেইন এসিস্ট সে এমনটা করলে সার্জন জীবনেও তাকে এলাউ করবেন না।
ওই বোনের জন্য এক প্রকার বাধ্যবাধকতা আসলো কনুই পর্যন্ত ওপেন করে পুরুষের সামনে আসা।
এটা কি জায়েজ হবে? ❓
এভাবে সার্জারি শেখা হবে? হবে না। তো ওই বোন এতটুকু পর্দার ছাড় দিতে বাধ্য হলেন।
কিছুদিন পর রুল হল ওটিতে ফুলস্লিভ ওটি ড্রেস নিষিদ্ধ। বোনটি ফুল হাতা গুটিয়ে হাফ করে ওটিতে কাজ করে।
ল্যাপকল, এপেডিসেকটমি, কলেসিস্টেকমি সব ওটিতে এসিস্ট করে শিখতে হবে,দেখতে হবে। একটা রোগীর বডি কত বড়? কতই বা জায়গা ৩/৪/৫জন দাড়ানোর?
ভাইয়াদের গায়ে গা লেগেই যায়। 'ওটিতে এগুলো মাইন্ড করার কিছু নাই। মাইন্ড করলে এই ন্যারো মাইন্ড নিয়ে সার্জন তো দূরে থাক ডাক্তার হওয়ারই সে যোগ্য না। '
ইসলাম এটা সাপোর্ট করে? ❓
এগুলো ছাড় দিতে দিতে বোনটা পর্দা বলতে মাথায় পেচানো হিজাবটা ছাড়া আর কিছু রাখতে পারেনি।
আর গভীর রাত পর্যন্ত ওটি করে ঘরে ফেরা, নাইট ডিঊটি, পুরুষ পেশেন্ট দেখা, স্টিস দেয়া, ক্যাথেটার করা,ডি আর ই করা (লাস্টের দুইটা ফাকি দিলেও চলতে পারে। অবশ্য ফাঁকি দিলে সেকেন্ড পার্ট পরীক্ষায় পাশ হয়ে সার্জন যাবে কিনা সেটা পরের বিষয়) এসব ব্যাপার বাদই দিলাম। এগুলোর চেয়ে ভাইটাল ইস্যু উপরে এমনিই চলে আসছে।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি আসলেই ফিল করি মহিলা সার্জনের অভাব তথা দ্বীনি সার্জনের অভাবে এই যুগে।
আমি সার্জন কিভাবে হব?❓
নাকি দ্বীনি সার্জন হতে গিয়ে দ্বীনের বিভিন্ন অংশ ছেড়ে দিয়ে যাস্ট সার্জন হয়ে বের হব? ❓
নাকি ৪বছরের জন্য সব ছাড় দিব -'পরে তওবা করে নিয়ে আবার ফুল পর্দা করব ' এই নিয়তে সার্জন হব?
এই চারবছরের মধ্যেই মরে গেলে আমার কি হবে? ❓
আচ্ছা বাদ দিলাম, এটা। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মেডিসিন পছন্দ। ইন্টারনাল মেডিসিন।
মেডিসিনের মহিলা দ্বীনি ডাক্তারেরও অভাব আছে।
আমার বাচ্চা আছে, স্বামী আছে। বাচ্চাদের রেখে মেডিসিনের মত ভাস্ট পড়াশোনা এত সহজে সম্ভব?
চান্স হবে দুনি দুই/এক ঘন্টা পড়ায়? আচ্ছা ধরলাম বাচ্চা রাখার মানুষ আছে। দিনে ৬ঘন্টা দরজা দিয়ে পড়লাম। বাচ্চা এসে দরজার সামনে কাঁদে-
"আম্মু যাবো, আম্মু যাব্বো...." আম্মু কত পড়? একটু কোলে নাও না প্লিইইজ প্লিইজ। আম্মু ক্ষুধা লাগছে....
(মা হয়ে কতক্ষন।ইগনোর করা যায়)
আম্মু মনটা খারাপ। তোমার পাশে বসি?
-বসো।
আম্মু কলমটা দাও।, আম্মু তোমার বইটা পড়তে ইচ্ছা করে। দিয়ে দাও না আমাকে?
গেল নিয়ে। একটু পর দেখলাম ছিড়ে দাগিয়ে শেষ।
এগুলো ভাইটাল ইস্যু না। কোনমতে১/২ বছর সুপার ডুপার পড়া দিয়ে চান্স পেলাম হয়ত।
তারপর চারবছরের কোর্স। নাইট ডিউটি। বাসায় হাসবেন্ড একা। বাচ্চারা রাতে মা ছাড়া ঘুমাতে পারে না।
এটাও না হয় ইগনোর করলাম।
মেডিসিন মানে হ্যাভি ডিউটি। এর মাঝে আবার পড়া, এক্সাম। যেন তেন পড়ায় মেডিসিন পাশ হয়না। হ্যাভি ডিউটি দিয়ে পুরুষ ডাক্তারেরা দরজা লাগিয়ে পড়াশোনা করে।
আর মহিলা ডাক্তারের বাসায় এসে সংসার দেখতে হয়। বাচ্চাদের পড়াশোনা,সুবিধা অসুবিধা দেখতে হয়।
বাচ্চা ফুল টাইম মা/শাশুড়ী /কাজের বুয়ার কাছে ফেলে রাখার জিনিস না। কাউকে যদি আল্লাহ দুই বা ততোধিক বাচ্চা দেন, এটা ৫০+ বয়স্ক মা / শাশুড়ীর পক্ষে সামলানো অনেক কঠিন কাজ। এই বয়সে অধঃগামী এনার্জি নিয়ে তাদের খেদমত পাওয়া জরুরি হয়ে যায়।বাচ্চা পালা অনেক পরিশ্রমের কাজ। কুলিয়ে না-পারলে উনারাও মুখ ফুটে বলেই ফেলেন 'বাবা আর পারিনা'।
আর 'দ্বিনী মহিলার বাচ্চা তরবিয়ত একটা ফরজ দ্বায়িত্ব।' এটা সিনসিয়ারলি পালন করে 'দ্বীনি -বাচ্চা' গড়ে তোলা -এটা দিনে দুই এক ঘন্টা সময় দিয়ে সম্ভব? ❓
মা ডিউটিতে থাকাকালীন বুয়ার কাছে, অন্যদের কাছে, আশেপাশের বাচ্চাদের কাছে ৬/১২ ঘন্টা যে বদদ্বিনি শিখবে তার ব্যাক আপ দুই ঘন্টায় হবেনা।
ঘরে মায়ের ফুলটাইম তরবিয়ত ছাড়া বাচ্চা দ্বীনি মেন্টালিটি বড় হবে, প্রতিটা কাজ সুন্নাহ মোতাবেক করবে, মাসনুন দুয়া পড়বে- এটা আমি মানতে পারছিনা মা হিসেবে। যারা মা হননি তারা আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখতে পারেন।
মাদ্রাসা ঠেলে দিয়ে আসলে ইলম হয়,আমলে উঠানো এত ইজি না। যদি মাদ্রাসায় রেখে এসে দায়িত্ব শেষ করে ফেললাম তবে আমি মা হিসেবে কি তরবিয়ত দিলাম?
আমার মেয়ে সন্তানকে হাতছাড়া করে দেয়ার পর এই ফিতনার যুগে তার ইজ্জত আব্রু নষ্ট হলে, সে বিপথগামী হলে সে দায় কে নেবে?
সন্তানকে ইগনোর করে ক্যারিয়ার আকড়ে ধরা একটা আইডিয়াল 'মুসলিমাহ(দ্বীনি) মা এর বৈশিষ্ট্য?
উম্মাহর সন্তানদের দ্বীনি তরবিয়ত না হলে ডিসট্যাক্ট মানষিকতার উম্মাহর এর মধ্যে দ্বীনি-চিকিৎসার পরিবেশ শুধুমাত্র গরু মেরে জুতা দান ছাড়া আর কিছু বলতে পারছিনা।
❓
হয়ত বিয়েই করলাম অনেক দেরিতে ৩০ বয়স পার করে । বাচ্চা নিলামই না পড়ব বলে। কিন্তু পাঁচ বছর পর আমার বাচ্চা হবে এই গ্যারান্টি আমাকে কে দেবে? পড়ার জন্য বাচ্চা নেবে না এমন দ্বীনি বোন দেখিনি অবশ্য। এটাও দ্বীনি মহিলার বৈশিষ্ট্য না।
আর স্বামীর হক্ব জিনিসটা একটা মহিলার যে পরিমান আদায় করার কথা, যে পরিমান তাঁর খেদমত করার কথা সেটা মেডিসিন পড়ে, ফুলটাইম বিজি থেকে সম্ভব?
(প্লিজ আনম্যারিড কেউ এইখানে পন্ডিতি করবেন না।)
কয়েকটা বোনের স্বামী অন্য নারী আসক্ত শুনেছিলাম। সেই পুরুষগুলো সিম্পলি উত্তর দিয়েছে-
'তুমি আমাকে টাইম দাওনি। '
দোষ দেয়া যায় ওই পুরুষকে? আমি দিব না। আল্লাহ অযথা চারটা পর্যন্ত বিয়ে জায়েজ করেননি। তারা সৃষ্টিগতভাবে এমনই,এটা দোষ না। তাদের অধিকার আছে ফুলটাইম যতক্ষন কাজ ছাড়া ঘরে থাকবে বউকে চোখের সামনে পাওয়ার।
আমি নাইট ডিউটিতে গেলে তার জন্য বাসায় অন্য আরেকজন বউ রেখে যাবো- এই টেকনিক মাথায় নিয়ে বাংলাদেশী কয়জন দ্বীনি বোন আছে ডাক্তারিতে সিনসিয়ার হবেন?
আর প্রাইমারিলি সতীন মেনে নিলেও বাংলাদেশী মেয়েদের মেন্টালিটি প্রাকৃতিক/সামাজিক/ভৌগলিক যে কারনেই হোক 'একসাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো' এমন না হয়ে জীবন রণক্ষেত্র হয়ে যেতেই দেখেছি। এটাই বাস্তবতা। (এখানে কেউ মাসনা সুলাসা নিয়ে তর্ক করতে আসবেন না। এটা বিয়ের গ্রুপ না। যা সামাজিক বাস্তবতা তাই বলেছি)
যদি তাই না হয়, তবে স্বামীর প্রয়োজন যা স্ত্রী ছাড়া কেউ পুরন করতে পারবে না তার আঞ্জাম দিতে না পারাতে যে গুনাহ হবে, হক নষ্ট তার দায় কে নেবে?
স্বামী যদি স্ত্রীর অতি ব্যস্ততায় গুনাহে জড়িয়ে পড়ে তার দায় কে নেবে?❓
(ধরেছি মাত্র ৪ বছর।আসলে চার বছরে কিছুই হয়না।এটাই বাস্তবতা। কিছু সময় পর যদিও ওয়ার্কলোড কমে আসে,তবু সেই কিছু সময় ও অনেক কিছু। যেহেতু মৃত্যু অনেক কাছে,তাই প্রতিটা দিনই ভাইটাল একটা দ্বীন বোঝা মানুষের কাছে। )
------এই প্রশ্নগুলো উত্তর দ্বীনি বোনদের কাছে নেই। সমাধানও দিতে পারেনা কেউ।
এজন্য দ্বীনি ডাক্তাররা সবাই সর্টকাট কিছু করে।ব্যসিকে পড়ে, নয়ত রেডিওলজি। অথবা কেউ ছোট খাটো কিছু করে। জিপি করে।
আর মহিলা ডাক্তার নিজেদের জন্য দরকার হলে যেসব মহিলা (দ্বীনি হোক না হোক) অলরেডি পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে এ পথ পাড়ি দিয়েই ফেলেছেন তাদের স্মরনাপন্ন হই।
তাহলে সার্জন, মেডিসিনের ডাক্তার দ্বীনি মহিলা কিভাবে তৈরি হবে? বিষয়টা সমাধান কোথায়?
প্লিজ আমার প্রবলেম ধরিয়ে দেয়া পয়েন্ট গুলোর জন্য কিছু করুন। আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট,আনম্যারিড, নন-মেডিকেল পারর্সন রা এই বাস্তবতাগুলো জানেনা।
শুধু ফতোয়া বা জায়েজ বা প্রয়োজন বলে রেখে দিলে তো সমাধান হয়ে যাচ্ছেনা।
আমরা মন থেকে চাই উম্মাহর খেদমত করতে। সেই সাথে অবশ্যই মহিলা হিসেবে নিজের উপর থাকা ফরজ দায়িত্বগুলো ঠিকঠাক পালন করতে।)
মেসেজ টি বড় হওয়ায় আফওয়ান। আমি একটি সরকারি মেডিকেলে ৪র্থ বর্ষে পড়ছি।এই বিষয় গুলো আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায়,,,একজন মেয়ে কিভাবে মেডিকেলে পড়ে তার দ্বীন রক্ষা করবে?
এর সমাধান কি?